মেন্যু
muhammad al-fatih

মুহাম্মদ আল-ফাতিহ

অনুবাদক : মাহদি হাসান
সম্পাদক : আবদুল্লাহ আল মাসউদ
পৃষ্ঠা : 256, কভার : হার্ড কভার
ভাষা : বাংলা
তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি রোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল কনস্টান্টিনোপল। এর বিজয়ের ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, মুসলিমদের সেই সেনাবাহিনী ও সেনাপতি কতইনা উত্তম, যারা কনস্টান্টিনোপল জয় করবে। ফলে... আরো পড়ুন
পরিমাণ

234  320 (27% ছাড়ে)

পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
Get it on Google Play

10 রিভিউ এবং রেটিং - মুহাম্মদ আল-ফাতিহ

5.0
Based on 10 reviews
5 star
100%
4 star
0%
3 star
0%
2 star
0%
1 star
0%
 আপনার রিভিউটি লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  1. 5 out of 5

    মুহাম্মদ রুবেল মিয়া:

    #মুহাম্মদ_প্রিয়জন_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_০৫

    রাতের আঁধার কাটিয়ে, নিস্তব্ধতা ভাঙিয়ে, ঘুমকে ছুটি দিয়ে সমুদ্রের জাহাজকে ডাঙা দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কিছু জানবাজ! ওদিকে মিনজানিক তোপের মাধ্যমে শত্রুর সীমানায় গোলা ফেলছে আরো কিছু জানবাজ! যুদ্ধের ময়দানে মুখোমুখি লড়াইরত আরো কিছু জানবাজ! আরো বিভিন্ন দিকে বিভিন্ন কায়দায় যুদ্ধরত আছে আরো অনেক জানবাজ! এদিকে তাদের সুলতান এক রণাঙ্গন থেকে অন্য রণাঙ্গন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, সৈন্যদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, আক্রমণের ছক কষছেন…

    হ্যা, এমনই চাক্ষুষ কাহিনী বলে মনে হবে আপনার কাছে! যখন আপনি মুহাম্মদ পাবলিকেশন কর্তৃক প্রকাশিত “সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ” পড়বেন তখন মুসলিম ইতিহাসের সুযোগ্য এই সুলতানের কীর্তিগুলো আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে। যেমনটা আমার উঠেছে।

    1 out of 2 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  2. 5 out of 5

    Fuad farhan:

    সৌভাগ্যের এই অমূল্য রতন পায় কয়জনে! মাত্র উনিশ বছর বয়সে! বিজয় করেছেন কনস্টান্টিনোপল! হয়েছেন ‘আল-ফাতিহ’; পশ্চিমারা যাকে চিনে ‘দ্য কনকোয়েরার’ নামে। মনের কুঠুরিতে তার ছবি এঁকেই হয়ত প্রিয়নবী বলেছিলেন, ‘কনস্টান্টিনোপল বিজয় হবে। বিজয়ী সেই সেনাপতি কতই না উত্তম!’

    ইতিহাসের আকাশে চিত্রাঙ্কন করেছেন অবিস্মরণীয় এক বিজয়-কৌশল। পানির জাহাজ ডাঙায় চড়িয়ে দখল করেছেন রোমানদের শৌর্যবীর্যের প্রতীক কনস্টান্টিনোপল। ইতিহাসের এই মহানায়কের জীবনচিত্র আঁকতেই আলী সাল্লাবীর উপহার ‘মুহাম্মাদ আল-ফাতিহ’। দালিলিক উপস্থাপন লেখকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

    প্রথম অধ্যায়ে প্রতিষ্ঠাতা উসমান থেকে ছয় সুলতানের জীবনকথা বলেছেন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমাদের মহানায়ককে নিয়ে বলেছেন সবিস্তরে। তার গুণাবলী, বিজয়াভিযান ও গৃহীত কর্মপন্থা সহ জীবনের খুঁটিনাটি সব। অনুবাদ সাবলীল। গুণমান সন্তুষজনক।

    2 out of 2 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  3. 5 out of 5

    আব্দুর রহমান:

    আমরা অন্য সব ইসলামি বই পড়লেও ইতিহাস বিষয়ে পাঠকদের  কেমন জানি অনীহা কাজ করে। অথচ মুসলমানদের রয়েছে কত শত গৌরবোজ্জল ইতিহাস। মুসলিম শাসকদের বীরত্বপূর্ণ কাহিনী। কিন্তু আজ আমরা ভূলে গেছি সেই গৌরবময় অতীত। বলা হয়ে থাকে মুসলমানদের অধঃপতনের সবচেয়ে বড় কারন হচ্ছে আত্মপরিচয় ভুলে যাওয়া। ব্যাপারটা মনে হয় আসলেই তাই। তা না হলে আমরা দিন দিন আজ কেন এত অধপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছি? মুসলমানরা কেন সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে? আমরা কি শিক্ষা নিতে পারিনা আমাদের হারানো সেই গৌরবময় ইতিহাস থেকে ।
    অটোম্যান সম্রাজ্য সেই ইতিহাসেরই এক স্বরনীয় নাম। আর অটোম্যান সম্রাজ্যের একজন অন্যতম শাসক হলেন সুলতান “মুহাম্মদ আল ফাতিহ” । যার উপর ভিত্তি করেই মুহাম্মদ পাবলিকেশন প্রকাশ করেছে মুহাম্মদ পাবলিকেশন প্রকাশ করেছে “মুহাম্মদ আল ফাতিহ” বইটি। বইটির মূল লেখক ড: আলী মুহাম্মদ সাল্লাবি। অনুবাদ করেছেন মাহদি হাসান।
    ,
    বইটিতে দুটি অধ্যায় রয়েছে।  এর মধ্যে প্রথম অধ্যায়ে
    এই অধ্যায়ে উসমানি খিলাফতের প্রথমদিকের ছয় জন  সুলতানের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে । তারা হলেন সুলতান উসমান, সুলতান উরখান, সুলতান মুরাদ, সুলতান বায়েজিদ, সুলতান প্রথম মুহাম্মদ, ও সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ
    দ্বিতীয় অধ্যায়ের পুরোটা আবর্তিত হয়েছে সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ কে ঘিরে। যিনি ছিলেন সপ্তম উসমানীয় সুলতান।
    তার শাসনামলেই কনস্টান্টিনোপল বিজিত হয়।  কনস্টান্টিনোপল বিজয় মুহাম্মদ আল ফাতিহ এর জন্য মোটেই সহজ ছিলো না। এর জন্য তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে বহু সংকটময় পরিস্থিতি। কনস্টান্টিনোপল  বিজয়ের পর মুহাম্মদ আল ফাতিহ রাজধানী এর্দিন শহর থেকে সরিয়ে কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে আসেন। অনেক ইতিহাসবিদের মতে মুহাম্মদ আল ফাতিহ এর সময়ে উসমানি সাম্রাজ্যের মুসলমানগন যে শান্তিসুখে ছিল, অন্য কারও সময়ে তা হয়নি।
    ,
    ব্যক্তিগত অনুভূতি:-
    লেখক ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি মুহাম্মদ আল ফাতিহ বইটিকে নির্ভরযোগ্য তত্ত্ব ও তথ্যের আলোকে সুনিপুনভাবে সাজিয়েছেন। অনুবাদ ও সম্পাদনাও খুবই চমৎকার হয়েছে। লেখা পড়তে গিয়ে একবারের জন্যও মনে হয়নি যে অনুবাদ পড়ছি। বরং যথেষ্ট সহজ ও সাবলীল, ও বোধগম্য ভাষায় রচিত রচিত বলে মনে হয়েছে। । মুহাম্মদ আল ফাতিহ এর সংগ্রাম মুখর জীবন, ইতিহাস, ও কর্মপন্থার কথাই বর্ণিত হয়েছে বইয়ের অধিকাংশ পৃষ্ঠা ব্যাপী। যেসব পাঠকের মুসলিম সমাজের গৌরবময়  ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই তাদের জানার ক্ষেত্রে বইটি খুবই ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করি। কারন এটা শুধু ইতিহাসের বই না এর সাথে মিশে আছে মুসলমানদের সোনালী অতীত । সব মিলিয়ে বইটি খুবই ভালো এবং উপকারী।
    তাই এ জাতীয় গ্রন্থ ইসলামী মনোভাবাপন্ন সকলের জন্য একবার হলেও পড়া উচিৎ।
    12 out of 12 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  4. 5 out of 5

    mr.tahmid:

    মুহাম্মাদ আল ফাতিহ ছিলেন উসমানি সালতানাতের উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। তার সময়টা ছিল মুসলিমদের শৌর্যবীর্যের উৎকর্ষের সময়কাল।
    প্রথমেই বলি বইয়ের কোয়ালিটি নিয়ে। অফ হোয়াইট দামি পারটেক্স কাগজে ছাপা বই। বাঁধাই, পৃষ্ঠাসজ্জা, ফন্ট – সব জায়গায় যত্নের ছোঁয়া।পৃষ্ঠাসজ্জাতে খুব বেশি ডিজাইন করা হয়নি, তবে উন্নত রুচির মিশেল এখানে বইয়ের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। লেখার ফন্ট স্ট্যান্ডার্ড রাখা হয়েছে, খুব বেশি গ্যাপ না হওয়ায় ভালো লেগেছে। প্রত্যেক অধ্যায়ের আগে এক পেজ গ্যাপ রেখে শিরোনাম দেয়া হয়েছে, যেমনটা আমরা বিদেশী বইগুলোতে দেখি। প্রচ্ছদটাও খুব সুন্দর। ঐতিহাসিক কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের একটি ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেই সম্ভবত প্রচ্ছদটা করা হয়েছে, ভালো লেগছে ব্যাপারটা। সাইড ফ্ল্যাপে সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতি দেয়া হয়েছে। যারা সাল্লাবিকে চিনেন না, তারা এতে উপকৃত হবেন।

    প্রকাশক শুরুতেই খুব সুন্দরভাবে বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় উল্লেখ করেছেন যা বইতে কি আছে তা সম্পর্কে পাঠককে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিবে। সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসউদ ভাই ইদানীং যে বই-ই সম্পাদনা করেন শুরুতে অত্যন্ত যত্নের সাথে জ্ঞানগর্ভ লেখা উপহার দিন। উনার পর্যালোচনালব্ধ বস্তুনিষ্ঠ লেখা পড়ে ইলমের খোরাক মেটানো যায়। উনার লেখা খেয়াল করে পড়ি । নিঃসন্দেহে আমার মত পাঠকদের জন্য তা অনেক উপকারী।
    এ বইতে সম্পাদক সাহেব ড. সাল্লাবির ইতিহাসের বই লেখার মূল তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। সংক্ষেপে শাইখ সাল্লাবির লেখনীর মূল বিশেষত্ব হচ্ছেঃ
    ক) কোন ঘটনার পেছনের মূল কারণ খুঁজে আনতে পারেন।
    খ) প্রতিটি চরিত্রের বিশ্লেষণ করতে পারেন কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এবং চারিত্রিক গুনাবলী বের করে আনতে পারেন।
    গ) অরিয়েন্টালিস্টদের ইতিহাসবিকৃতির জবাব দিয়ে সত্য ইতিহাস আলাদা করে দেখান।
    ঘ) ইসলামি ইতিহাসের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর ইসলামি ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেন কুরআন সুন্নাহর আলোকে।
    অনুবাদক মহোদয়ও খুব সরল, সংক্ষিপ্ত কিন্তু সুন্দর ভূমিকা টেনেছেন। এবার আসি ‘লেখকের কথা অংশে। লেখক এ অংশে এ বইটি লেখার পেছনে কারণ এবং উনার নিজের ইসলামি ইতিহাস লেখার পদ্ধতি কিরুপ তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
    লেখক যে ইসলামের ইতিহাস লিখতে গিয়ে ইতিহাসের ঘটনা কুরআন হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তাও তুলে আনেন- এটা তিনি কেন ও কীভাবে করেন তারও একটা বিবরণ তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি প্রাচ্যবিদদের ইসলামি ইতিহাস রচনায় অসততা ও জোচ্চুরির দিকটাও হালকা আলোচনা করেছেন।
    এছাড়াও কেন ইতিহাস বর্ণনায় শারঈ উৎস ব্যবহার করা এবং আকিদার আলোকে ঐতিহাসিক কাহিনী ব্যাখ্যা করা কুরআনীয় তরিকা তা লেখক কোরআন থেকে কিছু সুন্দর উদাহারণের সাহায্যে প্রকাশ করেছেন।এই বইতে লেখকের নিজের কলাম পড়ে বুঝতে পারলাম ড সাল্লাবি সাহেব কিভাবে নিজের উলুমুল কোরআনের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ইসলামের ইতিহাস রচনায় পারঙ্গম হয়েছেন। আপনারা পড়লেও বুঝবেন, বিস্তারিত বলছিনা। নিঃসন্দেহে ইসলামি ইতিহাসবেত্তাদের মধ্যে ড সাল্লাবি একজন বিস্ময়কর প্রতিভা।

    সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতিঃ
    শায়খ সাল্লাবির জন্ম লিবিয়ায়, পড়াশোনা সৌদি আরব ও সুদানে। দীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুল আদ-দ্বীন বিভাগ এবং ‎‎দাওয়া বিভাগ থেকে ব্যাচেলরস অব আর্টসে ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ‎‎১৯৯৬ সালে উসুল আদ-দ্বীন বিভাগ থেকে তাফসীর, উলুমুল কুরআন ‎বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রিপ্রাপ্ত হন। তিনি ১৯৯৯ সালে উম্মে দুরমান ইসলামী ‎বিশ্ববিদ্যালয়, সুদান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ‎
    শায়খ সাল্লাবির ইসলামের ইতিহাস নিয়ে রচিত বইগুলো মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়। অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ ও ইলমি গভীরতায় লেখা বইগুলো অনূদিত হয়েছে নানা ভাষায়।

    অটোমানদের রাজত্বে প্রবেশ- আমরা এখন মূল বইয়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। অটোমানদের রাজত্বে প্রবেশ করছি। শুরুতেই লেখক অটোমান সাম্রাজ্য গোড়াপত্তনের কঠিন দিনগুলোর বাস্তবতা তুলে নাটকীয় ভূমিকার মাধ্যমে বই শুরু করেছেন।
    সময়টা খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী। তাতারদের উপর্যুপরি আক্রমণে প্রায় লণ্ডভণ্ড মুসলিম সাম্রাজ্য, বাগদাদ পদানত হল হালাকু খার। মুসলিমদের জন্য সময়টা খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা মানুষ অল্পই বুঝে। এমন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে জন্ম হল উসমানের, যিনি হবেন এমন এক মুসলিম সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা যারা পরবর্তী প্রায় ৬০০ বছর মুসলিমবিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করবে, ছড়িয়ে পড়বে ইউরোপ, এশিয়া আর আফ্রিকায়। এমন নাটকীয় ভূমিকার মাঝেই লেখক নিজের জাদু দেখাতে শুরু করেছেন। আল্লাহর পরিকল্পনা যে মানুষ বুঝতে পারে না আর আল্লাহ যখন কিছু চান তার উপকরণ ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেন এই মূলনীতিগুলো যেসব কুরআনের আয়াতে লিপিবদ্ধ আছে লেখক কাহিনীর মাঝে মাঝে সেসব আয়াত তুলে এনেছেন। অসাধারণ! আমি সাল্লাবির লেখা পছন্দ করতে শুরু করেছি শুরুতেই।

    প্রথম অধ্যায়- অমিততেজ উসমানি শার্দূলেরা-
    বইটি মোটাদাগে দুইটি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথম অধ্যায়ে সুলতান উসমান, উরখান, প্রথম মুরাদ, প্রথম বায়োজিদ, প্রথম মুহাম্মাদ, দ্বিতীয় মুরাদ – এই ছয় সুলতানের কাহিনী উঠে এসেছে।
    যারা উসমানি সালতানাত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তারা জানেন যে প্রথম দিকের সুলতানরাই ছিলেন উসমানি সুলতানদের মাঝে আসল হীরা। তারা ছিলেন আল্লাহওয়ালা মানুষ, বীর মুজাহিদ, উত্তম শাসক। তাই বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে কাহিনীর দাবীই ছিল যে কীভাবে উসমানি সাম্রাজ্যের সূত্রপাত হল এবং কীভাবেই শাসনক্ষমতা সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহের নিকট গেল তা প্রথমে আলোচনা করে নেয়া।
    i) #বীরপুরুষ_উসমান- প্রথমেই উসমান রাহিমাহুল্লাহকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে, যিনি ছিলেন উসমানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। আল্লাহর দাওয়াত জমিনে ছড়িয়ে দেয়ার মানসেই যার যাত্রা শুরু হয়েছিল। তার চারিত্রিক গুণাবলীর মধ্যে বীরত্ব, প্রজ্ঞা, ইখলাস, সবর, ঈমানি জজবা, ন্যায়পরায়ণতা, বিশ্বস্ততা ও আল্লাহর সন্তুস্টি কামনা করা- এই ৮টি গুণ নিয়ে সুন্দর কিন্তু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।
    উসমানের জীবনের অংশে সবচেয়ে বেশি লেখক আলোচনা করেছেন উসমানের অসিয়ত নিয়ে। মৃত্যুর সময় পুত্র উরখানকে কিছু সোনালি অসিয়ত করে যান উসমান। এ অসিয়তগুলোই ছিল পরবর্তীতে শাসকদের জন্য সংবিধান স্বরুপ। শায়খ সাল্লাবি স্বমহিমায় আবারো প্রত্যেক অসিয়তের এনালাইসিস করেছেন শারঈ উৎস থেকে। লেখক কুরআনের দলিল, হাদীস, নবীদের কাহিনী ইত্যাদি আলোচনা করে এ অসিয়তনামা থেকে উসুল বের করে এনেছেন এবং দেখিয়ে দিয়েছেন যে তা কুরআন সুন্নাহর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। লেখক কখনো সাইয়িদ কুতুব, মওদুদি, ইবনুল কাইয়িমদের মত আলেমদের বক্তব্য, আবার কখনো জুলকারনাইনের জীবন থেকেও উদাহারণ টেনেছেন।
    লেখক প্রমাণ করেছেন যে উসমানি সালতানাতের শুরুর দিনগুলো থেকেই তা ছিল এক ধর্মীয় আন্দোলন। এটি নিছক রাজ্য দখলের অভিযান ছিল না। এছাড়া জনগণের প্রতি শাসকদের হক এবং জনগণের হক কি কি তাও আলোচনা করেছেন লেখক। উসমানের অসিয়ত থেকে প্রত্যেক শাসকের জন্য শিক্ষা রয়েছে।
    ii) #সুশাসক_সুলতান_উরখান- যোগ্য পিতার সুযোগ্য সন্তান উরখান। দূরদর্শী ও সুশাসক। উরখান স্থায়ী সেনাবাহিনীর গোড়াপত্তন করেন। এছাড়া জেনিসারি বাহিনীও গঠন করেন। জেনিসারি বাহিনী নিয়ে প্রাচ্যবিদদের অভিযোগ ও তথ্যবিকৃতি নিয়ে লেখক আলোচনা করেছেন।
    প্রাচ্যবিদদের বিকৃত তথ্যমতে জেনিসারিরা মূলত খৃষ্টান বাবা-মা হারা সন্তান যাদেরকে সুলতান তুলে এনে ছোটবেলা জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে ভর্তি করিয়েছেন, মুসলিম বানিয়েছেন। এ দাবী যে ভুল তা লেখক অতি সুন্দর করে প্রমাণ করে সত্য কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন।
    সুলতান উরখান নিজের এলাকায় জনগণের জন্য উত্তম জীবনের ব্যবস্থা করতে চেস্টার কমতি করেন নি। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার, কাঠামোগত উন্নয়ন- সবদিকেই তিনি ছিলেন একজন যোগ্য নেতা। লেখক উরখানের শাসনের কিছু মূলনীতিও তুলে এনেছেন।
    iii) #শহীদ_সুলতান_মুরাদঃ অটোমান সুলতানদের মধ্যে আমার প্রিয় একজন ব্যক্তি হলেন সুলতান মুরাদ। প্রায় ৩০ বছর সাম্রাজ্য পরিচালনা করে কসোভার যুদ্ধে শহীদ হন। তখন উসমানি সুলতানেরা নিজেই যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থাকতেন। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা সুলতান মুরাদের প্রিয় বাসনা ছিল। তার জীবন থেকে অনেক অণুপ্রাণিত হওয়া যায়। তার সময়ে উসমানি সাম্রাজ্য ব্যাপক সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। তবে এই বইয়ে তার কাহিনী অনেক সংক্ষিপ্ত কলেবরে লেখা হয়েছে। আরেকটু বিস্তারিত হলে আরো ভালো লাগতো। তার চারিত্রিক গুণাবলীও আরেকটু বড় আকারে আশা করেছিলাম।
    iv) #সুলতান_বায়োজিদ_ইলদ্রিম_দ্যা_থাণ্ডারবোল্ট- পিতার মতই বীরপুরুষ ছিলেন। ক্রুসেডারদের বার বার রুখে দিয়েছিলেন। তার শাসনের সময় উসমানিয়রা সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করে এবং তারপর হঠাৎ দপ করে নিচে পতিত হয়। এটাই আল্লাহর সুন্নাহ। এভাবেই আল্লাহ তার বান্দাদের পরীক্ষা করে তাদের মাঝ থেকে সেরাদের বেঁছে নেন।
    #তইমুর_লং- এ অংশে তইমুর লং ও বায়োজিদের সংঘাতের কাহিনী অতি সংক্ষেপে আলোচিত হয়েছে। পাশাপাশি তইমুর লং যে মুসলিম ছিলেন সেদিকেও ইংগিত দেয়া হয়েছে। তইমুর লং এর কিছু চারিত্রিক গুণাবলীও অতি সংক্ষেপে লেখক লিপিবদ্ধ করেছেন। বায়েজিদের তাড়াহুড়োজনিত পরাজয়ের পেছনে মূল কারণ ছিল সুকৌশলী তইমুরের মেধা।
    v) #বিচক্ষণ_সুলতান_মুহাম্মাদ_জালবি- বায়েজিদের পতনের পর উসমানি সাম্রাজ্যে কালো ছায়া নেমে আসে। গ্রিহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে রাস্ট্রে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনেন সুলতান প্রথম মুহাম্মাদ। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ ও দূরদর্শী ছিলেন। আল্লাহ তাকে দ্বারা দুঃসময়ের দিনে উসমানি সাম্রাজ্যকে সাহায্য করেছেন, নতুবা এ সাম্রাজ্য টিকতে পারত না, সুলতান বায়েজিদের পতনের পর গৃহযুদ্ধে বিলীন হয়ে যেত। বইয়ে তাকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত কিন্তু প্রয়োজনীয় আলোচনা লিপিবদ্ধ হয়েছে।

    vi) #দুনিয়াবিমুখ_সুলতান_দ্বিতীয়_মুরাদ- সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহের পিতা। মহান মুজাহিদ, ধার্মিক ও যাহিদ ব্যক্তি। সাম্রাজ্য ছেড়ে দুইবার নির্জনবাসে গিয়েও সাম্রাজ্য টিকানোর দাবিতে ফিরে আসেন। কসোভার দ্বিতীয় যুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব ও দক্ষতায় ক্রুসেডারদের পতন করেন। অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহও দমন করেন। মূলত তার সময়ের ব্যাকআপ পাওয়ার কারণেই সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ সুগঠিত সাম্রাজ্য পেয়ে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের কাজ সহজভাভে করতে পেরেছেন। সুলতান দ্বিতীয় মুরাদেরও এ শহর বিজয়ের ইচ্ছা ছিল, কিন্তু রাজ্যে বিদ্রোহ শুরু হয়ে যাওয়ার সেনাবাহিনী ফিরিয়ে আনতে হয়। বইয়ে সুলতানের সংক্ষিপ্ত কাহিনী, গুণাবলি ও অসিয়ত যুক্ত হয়েছে।

    দ্বিতীয় অধায়- সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ
    এই অংশই সমগ্র বইয়ের প্রাণ। বইয়ের প্রথম অধ্যায় পড়েই যথেস্ট ভালো লেগেছিল। দ্বিতীয় অধ্যায়ে ভালোলাগা মুগ্ধতায় পরিণত হয়ে যায়।
    মঞ্চ তখন প্রস্তুত। সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহের শাসনকালের ইতিহাস আমাদের সামনে। এমন সুলতান যিনি ছিলেন সুলতান উসমানের মত প্রজ্ঞাবান, উরহানের মত বিচক্ষণ, প্রথম মুরাদের মত ধর্মপ্রাণ, বায়েজিদের মত তেজস্বী, প্রথম মুহাম্মাদের মত বিচক্ষণ এবং দ্বিতীয় মুরাদের মত বিজয়ী। পূর্বপুরষদের অনুরুপ গুণাবলি সব যেন তার মাঝেই এসে জমা হয়েছিল। তিনি ছিলেন উসমানিদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী, বীর ও উত্তম একজন সুলতান।
    দ্বিতীয় অধ্যায়ে মোট ৭টি পরিচ্ছেদে বইয়ের আলোচনা হয়েছে।
    i) প্রথম পরিচ্ছেদ: সুলতান ফাতিহ ও বিজয়কাহিনী-
    প্রথম পরিচ্ছেদ এতই উত্তেজনাময় যে এক বসাতেই পড়তে হয়েছে। সুলতান ফাতিহের শিক্ষা, শাসনগ্রহণ, প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও সেনাবাহিনী জোরদার করা, কনস্টানিপল অভিযানের আগের ইতিহাস থেকে শুরু করে এই পরিচ্ছেদেই আলোচিত হয়েছে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনী। সুবহানাল্লাহ, দুই মাসের অবরোধে শত বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে অবশেষে এসেছে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়, সত্যে পরিণত হয়েছে নবীজির (স) ভবিষ্যৎবাণী। এ বিজয়ের কাহিনী আমি কিছু বলবনা, বইতে পড়বেন। এ পরিচ্ছেদে আরো পাবেন সুলতানের প্রস্তুতি, সামরিক মেধার পরিচয় ও পরাজিত বাহিনীর সাথে মানবিক আচরণের ইতিহাস।
    ii) দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ- নেপথ্যের নায়ক
    প্রত্যেক গল্পেরই একজন নেপথ্যের নায়ক থাকে। কনস্টান্টিনোপল বিজয়েরও একজন মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। তিনি শায়খ আক শামসুদ্দিন। এ মহান আলেম ছোটবেলা থেকেই সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহকে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের মহান ফযিলতের কথা বলে উৎসাহিত করতে থাকেন। তাই সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহের মনে অল্প বয়স থেকেই এ শহর বিজয়ের বাসনা জেগে উঠে। সুলতান হওয়ার পরেও শায়খ সবসময় সুলতানকে উৎসাহ দিয়েছেন, বিজয় অভিযানে সেনাবাহিনীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে পাশে থেকেছেন ও আল্লাহর কাছে বিনিত চিত্তে দোআ করেছেন বিজয়ের জন্য। এই মহান শায়খের সংক্ষিপ্ত জীবনী যেন এ বই থেকে বোনাস প্রাপ্তি।
    iii)তৃতীয় পরিচ্ছেদঃ ইউরোপ ও ইসলামি বিশ্বে কন্টান্টিনোপল বিজয়ের প্রভাব
    এ পরিচ্ছেদ পড়ে খুব গর্ব হয়, তৃপ্তি লাগে। সুলতানের চিঠি আশেপাশের সকল মুসলিম রাজ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। হারামাইন শরিফের ইমামগণও আল্লাহর প্রশংসা করছেন এ মহান বিজয়ের ঘটনা পড়ে। সমস্ত উম্মাহ উৎসব করছে। আহ, কি সেই দিন!
    এ পরিচ্ছেদে মিশরের সুলতানের নিকট সুলতান ফাতিহের চিঠি ও এর জবাব। এবং, হারামাইন শরীফের ইমামগণের নিকট প্রেরিত চিঠি ও এর জবাব যুক্ত হয়েছে। এগুলো পড়ে সেময়ের মুসলিম বিশ্বের উসমানিদের প্রতি ভক্তি ও মর্যাদা সম্পর্কে জানা যায়। যারাই আল্লাহর দ্বীনকে উঁচু করবে আল্লাহ এভাবেই তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন আর কাফিরদের হতাশা বাড়িয়ে দিবেন। কনস্টান্টিনোপলের পতনে খ্রিস্টানদের মাঝে নেমে আসে হতাশার ছায়া।
    iv) চতুর্থ পরিচ্ছেদ- বিজয়ের কারণ ও উপকরণসমূহ
    ইতিহাসের একটি শিক্ষা হচ্ছে মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। তবে সাল্লাবির বই এর ব্যতিক্রম। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে উপকারী শিক্ষা বের করে আনতে এতই পটু যে তার রচিত ইতিহাসের বইগুলো শিক্ষণীয় বইতে রুপান্তরিত হয়। এই পরিচ্ছেদে তেমনিভাবে শাইখ উসমানিদের বিজয়ের কারণ ও উপকরণসমূহ আলোচনা করেছেন।
    উসমানি সৈন্যদের যেসব বিষয়ে মৌলিক শিক্ষা দেয়া হত, উসমানি সাম্রাজ্যের আলেমগণের দাওয়াতের মূল বিষয় যা ছিল, যমিনে আল্লাহর শরিয়ত বাস্তবায়ন করলে আল্লাহ যেসব বিষয় দান করেন- মূলত, এসব বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ ও দালিলিক আলোচনা এ পরিচ্ছেদে উঠে এসেছে। মূলত আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস, সব কিছুর কৃতিত্ব আল্লাহর দিকে ন্যস্ত করা ও নশ্বর দুনিয়াবী জীবনের বাস্তবতা – এসব ব্যাপারগুলোই উসমানি সংস্কৃতি ও বিশ্বাসকে পরিচালিত করতো।
    আবারও যমিনে মুসলিমগণ বিজয়ী হতে হলে কি কি পন্থা অবলম্বন করতে হবে আমরা কি বুঝতে পারছি?
    v) পঞ্চম পরিচ্ছেদ- সুলতান ফাতিহের বিশেষ গুণাবলি
    এ পরিচ্ছেদে সুলতানের বীরত্ব, সহনশীলতা, বিরল মেধা, অবিচলতা, ন্যায়পরায়ণতা প্রভৃতি গুণাবলী ও তা সম্পর্কিত নানা কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
    vi) ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ- সুলতানের ঐতিহ্যবাহী কার্যক্রম
    সুলতানের নানা প্রশাসনিক ও সেবামূলক কার্যক্রম, জ্ঞানের প্রচার প্রসারে অবদান, সুসংগঠিত সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠায় অবদান ও যমিনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য করা বিভিন্ন কাজের বিবরণ এ পরিচ্ছেদে দেয়া হয়েছে।
    vii) সপ্তম পরিচ্ছেদ- মৃত্যু ও অসিয়ত
    মৃত্যুর আগে সুলতান নিজ ছেলেকে অসিয়ত করে যান। শায়খ সাল্লাবি এসব অসিয়ত থেকে দেখে যান এসব উপদেশাবলী সুলতান নিজে প্রথমে নিজের সাম্রাজ্যে বাস্তবায়ন করেন। এজন্যই আল্লাহ সুলতানকে বিজয় দান করেছেন। এসব অসিয়তকে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট কুরআন সুন্নাহর দলিল সহকারে ব্যাখ্যা করে শায়খ সাল্লাবি এ বইকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন নিঃসন্দেহে।
    এই পরিচ্ছেদে ইসলামের বিজয় কখন বাঁধাপ্রাপ্ত হয়, কেন উসমানিদের এক সময় পরাজয় বরণ করতে হল সে বিষয়েও হালকা আলোকপাত করেছেন লেখক। পরিশেষে সুলতানের মৃত্যুর কাহিনী ও সমগ্র বিশ্বে তার প্রভাব আলোচনা করে সুন্দর এ বইটি সমাপ্ত হয়েছে।
    পরিশিষ্টে ৩৫ টি পয়েন্টে সমগ্র বইর কাহিনীকে সংক্ষেপে তুলে আনা হয়ে পুনঃপর্যালোচনার জন্য।
    একটি #মজার ঘটনা-
    এ পরিচ্ছেদে সুলতানের শৈশবকালের একটি মজার ঘটনাও এসেছে। মুহাম্মাদ আল ফাতিহ আমাদের মতই ছোটবেলায় দুষ্টূ ছিলেন, পড়ালেখা করতেন না। পিতা সুলতান মুরাদ অনেক উস্তাদের কাছে দিলেও কেউ তাকে পড়া শিখাতে পারে নি। তখন সুলতান মুরাদ ছেলেকে শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রখ্যাত শাইখ কাওরানিকে নিযুক্ত করেন ও শাইখের হাতে নিজেই বেত দিয়ে দেন। শাইখকে দেখেই মুহাম্মাদ আল ফাতিহ অবজ্ঞাভরে মুচকি হাসি দেন। ভাবখানা যেন, কত শাইখ আসল গেল এখন ইনি আসছে পড়াইতে। কিন্তু, শাইখ কাওরানিও ঝানু উস্তাদ। সুলতানপুত্র হলেও রক্ষা নাই, সেখানেই তাকে বেত দিয়ে বেদম প্রহার শুরু করলেন। পরবর্তীতে এই শাইখের কাছেই মুহাম্মাদ আল ফাতিহের পড়ালেখা শুরু হয় এবং অল্পদিনেই তিনি খুবই মেধাবী ছাত্র হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন।
    এবং, একটি #আক্ষেপ-
    সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ মাত্র ৫২ বছর বেঁচেছেন। এ অল্প সময়েই তিনি এমন কাজ করে গেছেন যা তাকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছে। আরো কিছুকাল বাঁচলে হয়ত ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হত। মূলত, সে সময়কালেই আমরা আন্দালুসিয়া হারাই। সুলতান ফাতিহ মৃত্যুর আগে ইতালির রোম শহর বিজয়ের ভাল সম্ভাবনা ছিল। সম্ভাবনা ছিল ফ্রান্স, পর্তুগাল বিজয়ের পর স্পেনও পুনরুদ্ধারের। কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। আলহামদুলিল্লাহ্আলা কুল্লি হাল।
    #অনুবাদের_মান- বিস্ময়করভাবে অনুবাদের মান যথেস্ট ভাল হয়েছে। অনুবাদ-সম্পাদনা শেষে যে বই আমাদের হাতে উঠে এসেছে, তা পড়ে তেমন আপত্তি থাকবেনা পাঠকের।অনুবাদক ভাবানুবাদের আশ্রয় নেন নি, বরং আক্ষরিক অনুবাদ করেছেন। এতে অনেক জায়গায় মূল আরবি বইর একটা স্বাদ পাওয়া গেলেও কিছু জায়গায় বিদঘুটে হয়ে গেছে। যেমন- ১০৫ নং পাতায় লিখেছেন ‘সন্দেহের প্রতিবন্ধক বিশ্বাসের অধিকারী ছিলেন’। ভাবানুবাদ করে যদি লেখা যেত যে- তার বিশ্বাসের সামনে সকল সন্দেহ চুরমার হয়ে যেত, তবে পড়তে একটু বোধগম্য লাগত।
    আবার কিছু জায়গায় বাক্যে অধিক বাহুল্য তথা গুরুচণ্ডালি দোষ ছিল। যেমন- ৪৮ নং পাতায় লিখেছেন- ‘তারা ছিল একদল যোদ্ধাদের দল’। এখানে হওয়া উচিত ছিল- তারা ছিল একদল যোদ্ধা।
    এছাড়াও ভূমিকাতে ও অল্প কিছু স্থানে সম্বন্ধ পদে কিছু সমস্যা হয়েছিল। তবে এগুলো খুব বেশি মাত্রায় ছিল না। প্রথম কিছু পাতার পড়ে এধরনের সমস্যাও অনেক কমে গিয়েছিল। সবমিলিয়ে বইয়ের শুরুর দশ শতাংশ অংশে অনুবাদ একটু নড়বড়ে ছিল, কিন্তু বাকি বইর অনুবাদ অনেক ভাল হয়েছিল। ভাল লেগেছে। অনুবাদক বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে একটু পড়াশোনা করলে আরো ভাল করবেন বলে দৃঢ়ভাবে মনে করি।

    #বইটির_শক্তিশালী_দিক-
    i) কোয়ালিটি প্রিমিয়াম ছিল। কাগজ, পেজ সেটআপ, বাইন্ডিং, প্রচ্ছদ- সবকিছুই উন্নতমানের। ডায়েরি বাইন্ডিং এর সাথে ফ্ল্যাপ কাভার দেয়ার আরো ভালো লেগেছে। নতুন প্রকাশনী হিসেবে মুহম্মদ পাবলিকেশন যা করেছে, অন্য প্রকাশনীদের এই কোয়ালিটির বই আনতে তুলনামূলক অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছে।
    ii) আধুনিক বানানরীতি ও প্রমিত বাংলা শব্দচয়ন।
    iii) প্রয়োজনীয় ফুটনোট যুক্ত ছিল।
    iv) সাল্লাবির বই পড়লে শুধু ইতিহাস জানা যায় না, ইতিহাস থেকে শিক্ষা লাভ করা যায়। এটাই এ বইয়ের সবচেয়ে শক্তিশালি দিক।
    v) প্রয়োজনীয় স্থানে ম্যাপ ও উপকারী টীকা ছিল।

    বইয়ের_যেসব_জিনিস_আরো_ভাল_হতে_পারত-
    i) লেখক অনেক জায়গায় কাহিনী অত্যন্ত সংক্ষেপে বর্ণণা করেছেন। আসলে লেখকের মূল টার্গেট অডিয়েন্স হচ্ছেন ইসলামপ্রিয় পাঠকেরা। তাই উসমানী সাম্রাজ্য যখন আপসে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে বা ভাইয়ে ভাইয়ে রেষারেষি করেছে, এসব ঘটনা তিনি বেশি দীর্ঘ করেন নি। তবে মূল ঘটনা লুকানও নি। এই বইয়ে সুলতান মুরাদ এর কাহিনী আরেকটূ বড় হলে ভাল লাগত।
    ii) কিছু ক্ষেত্রে লেখকের থেকে আরেকটু দালিলিক উপস্থাপনা দরকারি ছিল। যেমন- জেনিসারি বাহিনীদের ব্যাপারে প্রাচ্যবিদদের উত্থাপিত আপত্তির জবাবে কিংবা তইমুর লং মুসলমান ছিলেন এ দাবীর স্বপক্ষে। কিন্তু মুহাম্মাদ আল ফাতিহকে নিয়ে রচিত বই বলেই হয়ত লেখক কাহিনী দীর্ঘায়িত করেন নি।
    তবে আমি মনে করি, অন্তত অন্য মুসলিম ঐতিহাসিক যারা লেখকের মত ব্যক্ত করেছেন তাদের কিতাবের রেফারেন্স টানলে উপস্থাপনা সমৃদ্ধ হত। বিশেষ করে জেনিসারি বাহিনীর ব্যাপারে লেখক যেসব মুসলিম ঐতিহাসিক প্রাচ্যবিদদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন তাদের নাম উল্লেখ করলেও সঠিক ইতিহাস কোন কোন ঐতিহাসিক লিখে গেছেন তা ফুটনোটের এক দুইটি রেফারেন্স ছাড়া তেমন উল্লেখ করেন নি। অবশ্য পরিশিষ্টে এ বিষয়ে খুবই উপকারী দুইটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করে এ অভাব খানিকটা পুষিয়ে দিয়েছেন।
    iii) অনুবাদক ঐতিহাসিক স্থানের আরবি নাম ব্যবহার করেছেন। পাশাপাশি ইংরেজি নাম ব্রাকেটে তুলে দিলে হয়ত সুবিধা হত। অবশ্য ঐতিহাসিক স্থান বা ব্যক্তির নামকরণের বর্তমান সমসাময়িক নাম তুলে আনা বেশ গবেষণালব্ধ কাজ বটে।
    iv) বইয়ের ব্যাক কভারে বড় করে কিউ আর কোড দেয়া। কিন্তু কোডটি স্ক্যান করলে বইটির ISBN নাম্বারে ডায়েল অপশন আসে। বর্তমানে অধিকাংশ প্রকাশনীর কিউ আর কোড স্ক্যান করলে প্রকাশনীর সাইট বা ফেসবুক পেজ বা রকমারি পেজে যায়। মুহাম্মদ প্রকাশনীর এ জিনিসটা দেখা উচিত।
    v) বইয়ে সামান্য মুদ্রণপ্রমাদ ছিল যা আশা করি আগামী সংস্করণে শুধরে নেয়া হবে। আমি কিছু নোট রেখেছি, ইনশাআল্লাহ প্রকাশককে প্রেরণ করবো।
    vii) বইয়ের নামকরণ মুহাম্মদ আল ফাতিহ করা হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি শব্দটা হবে মুহাম্মাদ। উপরন্তু, সম্পাদক সাহেবও মুহাম্মাদ শব্দটি ব্যাবহার করেছেন।
    ১২। রেটিংঃ সবমিলিয়ে আমি ১০ এ ৯ মার্ক দিব। অনুবাদে সামান্য যেসব সমস্যা ছিল তা না থাকলে দশে দশ দিতাম। সবমিলিয়ে খুবই ভাল বই। নতুন প্রকাশনী হিসেবে কাজটা খুবই উত্তম হয়েছে বলা যায়।

    বইয়ের #ভালোলাগা কিছু অংশ-
    ৬২ পৃষ্ঠায় লেখক লিখেন,
    “যেহতু ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করে দুটি দলের মাধ্যমে। আলেম এবং শাসকদের মাধ্যমে। তাই লোকেরা তাদের অনুসরণ করবে। এই দুইদলের কল্যাণের মাধ্যমেই জগতের কল্যাণ হবে এবং তাদের অবনতির মাধ্যমেই জগতের অবনতি হবে।”
    ২৩৮ পৃষ্ঠায় লেখক লিখেন,
    “অনেক সম্প্রদায় শরিয়তের আদেশ বিনষ্ট করা ও শরিয়তবিরোধী নিকৃষ্ট কাজে লিপ্ত হওয়ায় দুনিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এর ফলেই মুসলিমদের পরস্পরের মাঝে যুদ্ধ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের নিজেদের ওপর এবং সম্পদের ওপর সীমালঙ্ঘন অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনিভাবে শত্রু এবং তাদের শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইসলাম এবং মুসলিমদের থেকে আল্লাহর সাহায্য অদৃশ্য হয়ে যায়।…উসমানি সাম্রাজ্যের শেষভাগে এসে এমনটিই হয়েছিল।”
    এছাড়া ১৭৯ পৃষ্ঠায় মিশরের সুলতানের কাছে পাঠানো চিঠিটিও অনেক ভাল লেগেছে।

    4 out of 7 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  5. 5 out of 5

    তাইফুর:

    একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য জানা খুব জরুরী। বইটি খুবই তথ্যবহুল লেখা ।
    5 out of 6 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
Top