মেন্যু
ilmer valobashay chirokumar ulamaye keram

ইলমের ভালোবাসায় চিরকুমার উলামায়ে কেরাম

পৃষ্ঠা : 352, কভার : হার্ড কভার, সংস্করণ : 1st Published, 2016
এ এক অন্য ইতিহাস। একদল জ্ঞানপাগলের ইতিহাস। কলাল্লাহ আর কলার রাসূল-এর ভালোবাসা যাঁদের সংসারজগতে উঁকি-ঝুকির অবসর দেয়নি, তাঁদের বিস্ময়কর জীবনগল্প আর রোদে হাঁটার ইতিহাস। যাঁরা বউয়ের সঙ্গে নয়; বইয়ের সঙ্গে... আরো পড়ুন

Out of stock

পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন

1 রিভিউ এবং রেটিং - ইলমের ভালোবাসায় চিরকুমার উলামায়ে কেরাম

4.0
Based on 1 review
5 star
0%
4 star
100%
3 star
0%
2 star
0%
1 star
0%
 আপনার রিভিউটি লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  1. 4 out of 5

    মানসূর আহমাদ:

    ‘ইলমের ভালোবাসায় চিরকুমার উলামায়ে কেরাম’ বইটি আরববিশ্বে সাড়া জাগানো গ্রন্থ ‘العلماء العزاب’-এর বাংলা অনুবাদ। জগৎ জয় করা যেসব শ্রেষ্ঠ আলেম শুধু ইলমের ভালোবাসায় এবং ইলম-সাধনায় গভীরভাবে নিমগ্ন থাকার কারণে বিয়ে করতে পারেননি কিংবা করেননি, তাঁদের মহান জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে।

    তবে বেশ বড় কলেবরের এই বইয়ে সকল চিরকুমার আলেমের জীবনালেখ্য তুলে ধরা হয়নি; একজন বিদূষী মহিলাসহ পঁয়ত্রিশ জনের জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। ‘মাত্র পঁয়ত্রিশ জনের স্তুতিগান’ বলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ, বইটিতে এমন কিছু মনীষীর জীবনালেখ্য ওঠে এসেছে, যাঁদের নাম শুনলে চমকে যেতে হয়! বিস্ময়ে চোখ কপালে ওঠে যেতে চায়— ‘এঁরাও বিয়ে করেননি!!’ বিশর হাফি, আবু আলি ফারেসি, ইমাম ইবনে জারির তাবারি, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইমাম নববি, জারুল্লাহ জমখশরি, ইবনুল আনবারি এবং আবুল ওয়াফা আফগানি প্রমুখের জীবনগল্পে সুশোভিত হয়েছে বইটির পাতাগুলি।

    এ সম্পর্কে গ্রন্থকার আবদুল ফাত্তাহ রাহিমাহুল্লাহ নিজে বলেন—
    “বক্ষমান গ্রন্থটি একটি সংক্ষিপ্ত রচনামাত্র। তাতে আমি ওই সকল উলামায়ে কেরামের জীবনী উল্লেখ করার প্রয়াস পেয়েছি, যারা বিবাহ বর্জন করার গুণে গুণান্বিত। এতে আমি এ গুণের সকল আলেমের জীবনী উল্লেখ করিনি। সেটা আমার অভিপ্রায়ও নয়। আমি কেবল প্রসিদ্ধ অবিবাহিত উলামায়ে কেরামের মধ্য থেকে সৎ, সালেহ, নেতৃস্থানীয় বড় বড় কয়েকজনের জীবন থেকে কিছু দিক তুলে ধরেছি। …”

    জ্ঞান-সাধনায় নিমগ্নতার কারণে যাঁরা নারীর প্রেমময় সান্নিধ্য থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন; ইলমের প্রেমে বুঁদ হয়ে যাঁরা একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গ জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন; যাঁদের মর্যাদা ছিল সুপ্রতিষ্ঠিত; যাঁদের ইলমি প্রসিদ্ধি ছিল দিগন্ত-বিস্তৃত; যাঁদের জিন্দেগির আবে হায়াত ছিল ইলম, তাঁদেরই মহান জীবনের কিছু চিত্র আঁকা হয়েছে এ বইয়ে।

    বইটি পড়লে বিয়ের বাসনা ছাড়তে হবে কিংবা বইটি লেখা হয়েছে বৈরাগ্যবাদের দিকে আহবান করার জন্য— এমনটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, ‘বিয়ের চেয়ে নফল ইবাদতে লিপ্ত থাকা উত্তম’ অভিমত পোষণকারী ইমাম শাফিয়ি রাহিমাহুল্লাহও কিন্তু বিয়ে করেছিলেন। সর্বোপরি লেখক স্বয়ং বিবাহিত— একজন আদর্শ স্বামী এবং আদর্শ বাবা ছিলেন।

    যদি বৈরাগ্যের প্রতি আহবান করা উদ্দেশ্য না হয়, তাহলে লেখক কোন উদ্দেশ্যে এ ধরনের বই লিখলেন— এমন প্রশ্ন মনে উত্থাপিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এর জবাবে লেখক স্বয়ং বলছেন—
    “পূর্বসূরিদের কাছে ইলমের মর্যাদা কী ছিলো? ইলমের জন্য তাদের আগ্রহ উদ্দীপনা কেমন ছিলো? কীভাবে তারা ইলমের জন্য নিজেকে মিটিয়ে দিয়েছেন? পৃথিবীর অন্য সব বস্তুর তুলনায় ইলমকে কতটুকু প্রাধান্য দিয়েছেন? কীভাবে তারা জীবনের প্রয়োজনীয় তাকিদেও সাড়া না দিয়ে ইলমের অধ্যাবসায়ে লিপ্ত ছিলেন? বর্তমান সময়ের তালিবুল ইলমগণ যাতে তা অনুধাবন করতে পারে এ উদ্দেশ্যেই এ গ্রন্থটি রচনা করেছি।… ”

    পরিচিতি ও প্রসিদ্ধি থাকার কারণে লেখক রাহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে তেমন কিছু বলার প্রয়োজন অনুভব করছি না। তবে নবীন পাঠকদের উদ্দেশে কটি কথা তুলে ধরছি। ইলমের ময়দানে অল্প সময়েই নিজের একটা শ্রেষ্ঠত্বের আসন করে নেওয়া লেখক ছিলেন আরববিশ্বের ক্ষণজন্মা আলেম মনীষা। ছিলেন গত শতাব্দীর অন্যতম সেরা মুহাদ্দিস। বেশকিছু বিখ্যাত গ্রন্থের জন্য তিনি পাঠকমহলে সমাদৃত ও প্রশংসিত। লেখা পড়লেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অনুবাদকের ভাষায়—
    “আবু গুদ্দাহ রহ. নশ্বর জীবনের বিচারে এখন আমাদের মাঝে আর নেই, এটা যেমন সত্য তেমনি এটাও সত্য যে, তিনি আছেন আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায়, আমাদের চেতনায়, প্রেরণায়, অনুভবে এবং আমাদের প্রার্থনায়। তিনি আছেন তাঁর বিপুল কর্ম ও কীর্তির মধ্যে, আমাদের জন্য রেখে যাওয়া তাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও চিন্তা-সম্পদের মধ্যে।”

    বইটির শব্দ, ভাষাশৈলি এবং বাক্যগঠন চমৎকার। অনুবাদও বেশ সাবলীল। তবে অনেক জায়গায় শাব্দিক অনুবাদের কারণেই বোধহয় কিছুটা খাপছাড়া খাপছাড়া লাগে। অনুবাদক যদি ভাবানুবাদের দিকে আরেকটু ঝুঁকতেন এবং বাক্যবিন্যাসে আরেকটু প্রচেষ্টার সাক্ষর রাখতেন, তাহলে তাঁর অনুবাদকর্মটি উপরের দিকে আরেকটি লাফ দিত বলে আমার বিশ্বাস।

    বইটিতে আছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু টীকাভাষ্য। অনেক বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে এসব টীকায়। যাঁদের কথা গল্পাকারে বলা হয়েছে, তাঁদের জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও টীকায় তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও তাঁদের রচনা এবং যেসব গ্রন্থে তাঁদের জীবনী উল্লেখ হয়েছে, অনেক জায়গায় সেসব বইয়ের নামও দেওয়া হয়েছে।

    বিবাহবর্জন সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কঠিন সতর্কবাণী থাকা সত্ত্বেও এত বড় বড় শ্রেষ্ঠ আলেম কেন বিয়ে করেননি— এমন প্রশ্নের উত্তর বইয়ের নামেই আছে। তবে গ্রন্থকার রাহিমাহুল্লাহ ‘উলামায়ে কেরামের কৌমার্য : কারণ ও রহস্য’ শিরোনামে একটি ভূমিকা লিখে সে সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। বইয়ের শুরুতেই পাঠকের কাছে বিষয়টা খোলাসা করে দিয়েছেন, যাতে আর সন্দেহ ও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে না হয়।
    বইটির শেষে ‘যবনিকা’ শিরোনামে সুন্দর একটা উপসংহারও পাঠকদের উপহার দেওয়া হয়েছে। যা সবারই ভালো লাগবে।
    বইটি সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে লব্ধপ্রতিষ্ঠ অনুবাদক মাওলানা আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন—
    “এ এক অন্য ইতিহাস। একদল জ্ঞানপাগলের ইতিহাস। কলাল্লাহ আর কলার রাসূল-এর ভালোবাসা যাঁদের সংসারজগতে উঁকি-ঝুকির অবসর দেয়নি, তাঁদের বিস্ময়কর জীবনগল্প আর রোদে হাঁটার ইতিহাস। যাঁরা বউয়ের সঙ্গে নয়; বইয়ের সঙ্গে সংসার পেতেছিলেন তাঁদের কিছু টুকরো গল্প আর খণ্ডিত সময়ের ইতিহাস।…”

    ইলমের ভালোবাসা হৃদয়ে ধারণ করতে; ইলমের প্রেমে বুঁদ হয়ে পড়ে থাকতে বইটি হতে পারে শ্রেষ্ঠ অবলম্বন। ইলমের ভালোবাসায় চিরকুমার না-ই হোন, তবে ইলম-সাধনায় আরো মনোনিবেশ করতে প্রেরণা যোগাবে বইটি। জৈবিক চাহিদা ও লোভ-লালসার ছড়াছড়ির এ যুগে বইটি স্মরণ করিয়ে দেবে ইলম ও আমলের নুরানি যুগের কথা। হাজির করবে জুহদ ও তাকওয়ার চমৎকৃত এক উদ্যানে। তাই চমৎকার এ বইটি নিয়ে আজই বসে যান। আর হারিয়ে যান জ্ঞানপাগলদের রাজ্যে। ইলমের সৌরভে সুরভিত হোন আপনিও!

    বি. দ্র. বইটিতে প্রচুর ভুল আছে। বিশেষত বানানভুল সীমাতিরিক্ত।

    14 out of 14 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
Top