মেন্যু
tawhid protisthar shongrame

তাওহিদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে

প্রকাশনী : শব্দতরু
বিন্যাস: শাইখ উবায়দুর রহমান মুরাবিত ভূমিকা: শাইখ রাবি হাসানি নদবি পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৭৫ তাওহিদ আকিদার এমন গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট, যার গ্রহণ দিয়ে থাকে পারলৌকিক মুক্তি এবং যার বর্জন প্রদান করে জাহান্নামের স্থায়িত্বের গ্যারান্টি। যা... আরো পড়ুন
পরিমাণ

69  96 (28% ছাড়ে)

পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
Get it on Google Play

4 রিভিউ এবং রেটিং - তাওহিদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে

5.0
Based on 4 reviews
5 star
100%
4 star
0%
3 star
0%
2 star
0%
1 star
0%
 আপনার রিভিউটি লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  1. 5 out of 5

    দ্বীন মুহাম্মাদ শেখ:

    ▪ প্রাককথন :

    চলুন শুরুতেই পবিত্র কুরআনের ‘সূরা সফ’ এর ৯ নং আয়াতটি একটু দেখে নিই।

    هو الذي ارسل رسوله بالهدی ودين الحق ليظهره علی الدين کله ولو کره المشرکون-

    ” তিনিই সেই সত্ত্বা, যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন যাতে তিনি অন্যান্য দ্বীনের ওপর একে বিজয়ী করতে পারেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।”

    কী ইবরাহীম (আ:), কী মুসা (আ:) কিংবা ঈসা (আ:) অথবা মুহাম্মাদ (স:) – সকল নবী ও রাসূলের মিশন ছিল একটাই – তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা। জ্বী, এটাই। আল্লাহর জমিনে সকল দ্বীনকে পরাভূত করে কেবল আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যেই যুগে যুগে প্রেরিত হয়েছেন অসংখ্য নবী ও রাসূল (আ:)। তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যেই ছিল তাদের সবটুকু চেষ্টাসাধনা। কেউ সয়েছেন অকথ্য নির্যাতন, কেউ ঝরিয়েছেন রক্ত, কেউবা দিয়েছেন জীবন – কারন একটাই, “তাওহীদ প্রতিষ্ঠা”। এই তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যেই ইবরাহীম (আ:) নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন জ্বলন্ত অগ্নিতে। এই তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যেই মুসা-ঈসা (আ:) সয়েছেন অকথ্য নির্যাতন। তায়েফে-উহুদে রক্ত ঝরিয়েছেন হযরত মুহাম্মাদ (সা:) কেবল এই তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যেই।

    এই তাওহীদ প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাঁধা হচ্ছে শিরক, কুফর, বিদআত, উদাসীনতা। এগুলোর মূলোৎপাটন করে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যেই পুরোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন আম্বিয়ায়ে কিরামরা। এখন তাঁরা নেই, কারো আসার পথও রুদ্ধ। হযরত মুহাম্মাদ (সা:) এর মধ্য দিয়ে নবুয়াতের দ্বার রুদ্ধ হয়ে গেছে। তাই বলে কি তাওহীদ প্রতিষ্ঠার দায়িত্বের ইতি ঘটেছে? না, একটুও না। এই গুরুদায়িত্ব এখন আমাদের ওপর, বিশেষকরে উলামায়ে কিরামের ওপর। কেননা –

    ان العلماء ورثة النبياء-

    “নিশ্চয়ই আলেমগণ নবীদের ওয়ারিশ। ” ( সুনানে তিরমিজি : ২৬৮২)

    সুতরাং একবিংশ শতাব্দীর এই ক্রান্তিলগ্নে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দৃঢ়পদ হতে হবে আলেম সমাজকে। চলুন, আজ আমরা এমন একটি বইয়ের সাথে পরিচিত হই, যাতে রয়েছে তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় আমাদের জন্যে, বিশেষকরে আলেম সমাজের জন্যে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।

    ▪ লেখক পরিচিতি:

    সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহি:) – উর্দু ভাষায় ইসলামি সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ৫ই ডিসেম্বর, ১৯১৩ সালে সাহরানপুরের রায়বেরেলিতে জন্মগ্রহণ করেন। আরবি ও উর্দু ভাষায় বহুগ্রন্থ প্রণেতা, আলী মিয়া (রহি:), ছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে শ্রদ্ধেয় এবং গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিত্ব। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে আলী নদভী তাঁর রচিত গ্রন্থ “মা যা খাসিরাল ‘আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমীন” (মুসলামানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?) -এর জন্য মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে আলী নদভী দুবাইয়ে বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন। আলী মিয়াঁ ১৯৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তাকে রায়বেরেলিতেই দাফন করা হয়।

    ▪ বিস্তারিত আলোচনা :

    বইটির শুরুতেই উবায়দুর রহমান মুরাবিতের ‘মুখবন্ধ’, মুহাম্মাদ রাবি হাসানি নদবির ‘প্রারম্ভিকা’, ‘লেখকের কথা’ শিরোনামে লেখক আবুল হাসান আলী নদবি (রহি:) এর অত্র বই নিয়ে মন্তব্য, অতঃপর ইবনে মুশাররফের ‘প্রকাশকের কথা’ উল্লেখ করা হয়েছে।

    অতঃপর মূল বইটিকে ৭টি অধ্যায়ে বিভক্ত করে উদ্দিষ্ট আলোচনা এগিয়ে নেয়া হয়েছে। । চলুন এক নজরে অধ্যায়গুলো দেখে নিই:

    ১. আলিমগণের দায়িত্ব
    ২. শিরক
    ৩. কুফর
    ৪. বিদআত
    ৫. উদাসীনতা
    ৬. নবীগণের উত্তরসূরিদের কাজ
    ৭. দ্বীনের ধারক এবং শরিয়াহর রক্ষকদের অপরিহার্য দায়িত্ব

    এবার ইনশাআল্লাহ আমরা প্রতিটি অধ্যায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।

    ▪ ১. আলিমগণের দায়িত্ব :

    আলোচনার শুরুতেই সুনানে তিরমিজির ২৬৮২ নং হাদিসটি উল্লেখ করেছি। আপনাকে অনুরোধ করছি, হাদিসটি একটু দেখে নিন। হাদিসটি কি অনুধাবন করতে পেরেছেন? তাহলে এবার আপনিই বলুন, আলিমগণের দায়িত্ব কী? জ্বি ঠিক বলেছেন। নবীদের উত্তরাধিকারী হিসেবে আলিমদের দায়িত্বও ঠিক সেটাই, যা ছিল নবীদের (আ:) দায়িত্ব। নবীদের দায়িত্ব কী ছিলো? মহান আল্লাহ বলেন,

    “আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তার প্রতিই এ প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কোরো।” (সূরা আম্বিয়া : ২৫)

    “তিনিই সেই সত্ত্বা, যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন যাতে তিনি অন্যান্য দ্বীনের ওপর একে বিজয়ী করতে পারেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” (সূরা সফ : ০৯)

    বইটির শুরুতেই আলেমদের দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে – তাওহীদের প্রচার।

    জ্বি, তাওহীদের প্রচারই হচ্ছে আলেমদের প্রধান দায়িত্ব। তাওহীদ কী? ‘তাওহীদের তত্ত্বকথা’ শিরোনামে সম্মানিত লেখক নিজেই উল্লেখ করেছেন,

    “বিশুদ্ধ দ্বীন বা তাওহীদ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তায়ালার বিশুদ্ধ ইবাদাত এবং পরিপূর্ণ আনুগত্য – যা নিরেট তাঁরই প্রাপ্য – নিজ সত্তায় বাস্তবায়ন করা এবং অন্যদের মধ্যেও বাস্তবায়ন করার জন্য চেষ্টা-পরিশ্রম ব্যয় করা।”

    সুতরাং আলেমদের দায়িত্ব হচ্ছে, তাওহীদ প্রচার-প্রসার এবং তা প্রতিষ্ঠার জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

    ▪ তাওহীদের প্রতিবন্ধকতাসমূহ:

    তাওহীদ প্রতিষ্ঠার পথে কিছু প্রতিবন্ধক বিষয় রয়েছে। লেখক সেই বিষয়গুলোকে ৪ ভাগে ভাগ করেছেন।

    > শিরক
    > কুফর
    > বিদআত
    > উদাসীনতা

    পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে এগুলো লেখক বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং এগুলো প্রতিরোধে আলেমদের দায়িত্ব বাতলে দিয়েছেন।

    ▪ ২. শিরক:

    লেখক এ অধ্যায়ের শুরুতেই ‘শিরকের তত্ত্বকথা’ শিরোনামে শিরকের সংজ্ঞা অল্প কথায় সাবলীলভাবে ব্যক্ত করেছেন। অতঃপর লেখক দেখিয়েছেন যে, শিরক এক স্বতন্ত্র দ্বীন এবং ইসলামের বিপরীতে পূর্ণাঙ্গ শাসনব্যবস্থা। কোনো ভূখণ্ডে আল্লাহর দ্বীন এবং শিরক কখনই একই সাথে বাস্তবায়িত হতে পারে না। হয় শিরক, না হয় তাওহীদ।

    শিরকের জমিতে তাওহীদের বীজ কখনই চাষ হয় না। এ সম্পর্কে লেখক বলেছেন,

    “যতক্ষণ পর্যন্ত ভূমি থেকে শিরকের সকল শিকড় উৎপাটন না করা হবে, সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম সব কনা উপড়ে না ফেলা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর দ্বীনের বীজ বপন করা সম্ভব নয়।”

    এ অধ্যায়ে লেখক দৃঢ়তার সাথে দেখিয়েছেন যে, আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে গেলে প্রথমেই খুঁজে খুঁজে শিরক ও জাহিলিয়্যাতের শিকড় বের করে এনে তা ছুড়ে ফেলতে হবে। তারপরেই কেবল তাওহীদ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে অনেক শ্রম এবং সময়ের প্রয়োজন পড়বে। এমনকি হয়তো কখনো এত শ্রমের পরেও কেবল দুই একজন সাথী পাওয়া যাবে। তবুও এতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে এবং আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় অটল ও অনড় হতে হবে।

    ▪ ৩. কুফর :

    ‘কুফরের তত্ত্বকথা’ শিরোনামে লেখক এ অধ্যায়ের শুরুতে কুফরের পরিচয় দিয়েছেন। এ অধ্যায়ে লেখক বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিচ্ছেদ এনেছেন যা আমাদের বিশেষভাবে আলেমদের জেনে রাখা একান্ত আবশ্যক। আসুন সংক্ষেপে আমরা এগুলো জেনে নিই।

    তাগুত কী?

    অনুবাদক এখানে ২২ নং টীকায় তাগুতের সংজ্ঞায় ইমাম তাবারী (রহি:) এর কওল উল্লেখ করেছেন। ইমাম তাবারী (রহি:) বলেন,

    “আমার মতে তাগুতের সঠিক সংজ্ঞা হলো, তাগুত হলো সে, যে আল্লাহর ওপর সীমালঙ্ঘন করে। ফলে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার উপাসনা করা হয় – তার পক্ষ থেকে উপাসনাকারীকে বাধ্য করার কারণে অথবা উপাসনাকারীর তার প্রতি আনুগত্য থাকার কারণে।”

    ইসলামের বিশুদ্ধতার নিদর্শন হলো, ইমানের প্রতি ভালোবাসা, কুফর ও জাহিলিয়্যাতের প্রতি ঘৃণা পোষণ করা। এ ব্যাপারে সহিহ বুখারীর ১৬ নং হাদিসটি লেখক এখানে উল্লেখ করেছেন।

    অতঃপর লেখক জাহিলিয়্যাতের একটি নিদর্শন উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো – আল্লাহর বিধানের ওপর পুরনো রসম-রেওয়াজ ও পূর্বপুরুষের আচারপ্রথাকে অগ্রাধিকার দেয়া।

    কুফর এক স্বতন্ত্র দ্বীন। আজকাল অনেককেই দেখা যায় কুফর বা কাফেরের প্রতি শিথিল। অথচ কুফরের ক্ষেত্রে কোনো ধরণের শিথিলতা গ্রহণযোগ্য নয়। নবীরা (আ:) সর্বদাই কুফরের প্রতি ছিলেন কঠোর। কুফরকে বিনাশ করতেই ব্যয় করেছেন পুরোটা জীবন। আর নবীদের উত্তরসূরি হিসেবে আলেমদের দায়িত্বও এটাই এবং তারাও কুফরের বিরুদ্ধে সদা সরব।

    এখানে লেখক কুফর বিনাশে আলেমদের কিছু প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন:

    ১. বিধবাবিবাহের প্রতি ঘৃণা পোষণকারীদের বিরুদ্ধে উদ্যোগী হয়ে ওঠা।
    ২. বোনদের মিরাস বঞ্চিত করার ব্যাপারে সজাগ হওয়া।
    ৩. মানব রচিত আইনের মাধ্যমে বিচারকার্য পরিচালনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
    ৪. অমুসলিমদের উৎসব-অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিষেধ করা। ইত্যাদি।

    আর এ কথা ধ্রুবসত্য, যখন নবীওয়ালা কাজ আলেমগণ করতে যাবেন, তখন নবীদের মতই কিছু পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন। সেগুলো কী? এবার লেখক সে সম্পর্কে বলছেন –

    ১. বিদ্রূপাত্মক আচরণের মুখোমুখি হওয়া।
    ২. হাসিতামাশার পাত্র হওয়া।
    ৩. তাচ্ছিল্যপূর্ণ ট্যাগ লাগানো। যেমন: নগরের ফকিহ, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি লালনকারী, খোদায়ি সেনা ইত্যাদি।

    ▪ ৪. বিদআত:

    একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। লেখক অধ্যায়ের শুরুতেই বিদআতের চমৎকার সংজ্ঞা দিয়েছেন। বর্তমানে আমরা বিদআতের সংজ্ঞায় হয় বাড়াবাড়ি, না হয় ছাড়াছাড়ি করে থাকি। লেখকের ভাষায় বিদআত হচ্ছে তাই, যা সাওয়াব ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়, দ্বীনি বিধানের মত যত্নের সাথে দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছুর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

    অতঃপর লেখক গুরুত্বপূর্ণ দু’টি শিরোনাম এনেছেন – “বিদআত উদ্ভাবন দ্বীনের পরিপূর্ণতা অস্বীকার করার নামান্তর”, “বিদআত রাসূলুল্লাহ (সা:) এর শানে রিসালাতের ওপর অপবাদ”। আসলেই তাই। বিদআত যেনো পরোক্ষভাবে এটাই বলতে চায় যে, দ্বীন তো পরিপূর্ণ নয়। তাই নতুন কিছু বিষয়ের উদ্ভাবন প্রয়োজন, যা দ্বীন এবং রিসালাতকে পরিপূর্ণ করবে। নাউজুবিল্লাহ।

    এরপর লেখক বিদআতের সংকীর্ণতা ও জটিলতা দেখিয়েছেন। বিদআতের সংযোজন ক্রমেই দীর্ঘায়িত হয়। ফলে একসময় সে আমলটি সবার জনে করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহর দ্বীনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সমগ্র পৃথিবীর জন্যে তা অভিন্ন। অপরদিকে বিদআতের মধ্যে একতা ও অভিন্নতা নেই। বিদআত প্রত্যেক অঞ্চলের আঞ্চলিক ছাঁচে তৈরি।

    এরপরের শিরোনাম “বিদআতের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর কঠোর সতর্কবাণী”। রাসূল (সা:) বিদআতের ফলাফল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,

    اياکم والامور المحدثات، فان کل بدعة ضلالة-

    “তোমরা সকল নবোদ্ভাবিত বিষয় (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, প্রত্যেক বিদআত গোমরাহি। আর প্রত্যেক গোমরাহি জাহান্নামে যাবে।” ( সুনানু ইবনে মাজাহ : ৪২)

    বিদআত একটি ভয়ঙ্কর বিষয়। যেখানেই এর প্রচলন হবে, সেখানেই সুন্নাতের বিদায় হবে। আর এ যেনো দ্বীনকে নিজের বাবার সম্পত্তিরূপে ব্যাবহার করা। এ জন্যেই রাসূল (সা:), সাহাবায়ে কিরাম, আইম্মায়ে কিরাম এবং হকপন্থি আলেমগণ বিদআতের ব্যাপারে ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। লেখক বইটির এ অংশে এ বিষয়গুলোই স্পষ্ট করেছেন।

    ▪ ৫. উদাসীনতা :

    আমাদের অনেকেই সরাসরি শিরক-কুফরের সাথে জড়িত নয়। কিন্তু দ্বীনের ব্যাপারে বড্ড গাফেল বা উদাসীন। দ্বীনের ব্যাপারে এহেন উদাসীনতা প্রকারান্তরে দ্বীনহীনতারই নামান্তর। লেখক এ অধ্যায়ের শুরুতেই উদাসীনতার কুফল উল্লেখ করেছেন। যেমন :

    ১. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
    ২. পার্থিব চিন্তায় মত্ত থাকা।
    ৩. দ্বীনি বোধ-অনুভূতি হারিয়ে ফেলা।
    ৪. হালাল-হারামের পার্থক্য না করা।
    ৫. নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত থাকা। ইত্যাদি।

    এবার লেখক উদাসীনতার ব্যাপারে ইসলামের নিষেধাজ্ঞা উল্লেখ করেছেন। এখানে লেখক সূরা হাশরের ১৯ নং, সূরা ইউনুসের ৭ নং আয়াত উল্লেখ করে নিজের মতামতকে আরো শক্তিশালী করেছেন।

    ▪ ৬. নবীগণের উত্তরসূরিদের কাজ:

    নবীগণের উত্তরসূরি হিসেবে আলেমদের কাজ কী? নবীওয়ালা কাজ। হ্যাঁ, তাই। এ অধ্যায়ে সংক্ষেপে আলেমদের কিছু দায়িত্ব আলোচিত হয়েছে। এছাড়াও এ অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে কয়েকজন শ্রদ্ধেয় মহান মনিষীর কর্মধারা।

    – হযরত হাসান বসরি (রহি:)
    – ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহি:)
    – মুহাদ্দিস ইবনুল জাওযী (রহি:)
    – হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (রহি:)

    উপরোক্ত মনিষীদের জীবনে রয়েছে দ্বীনের উজ্জ্বল প্রতিফলন। তাদের কেউ অন্তর বিগলিত করার মত নসীহতে শ্রোতাদের কাঁদাতেন, আবার কেউ তেজোদৃপ্ত ভাষণে শ্রোতাদের জাগাতেন। শিরক, কুফর, বিদআতের বিরুদ্ধে ছিলেন তাঁরা সদা জাগ্রত। সয়েছেন কত নির্যাতন! পার্থিব স্বার্থকে দু’ পায়ে দলেছেন, সবকিছুর ওপর কেবল আখিরাতকেই দিয়েছেন প্রাধান্য। শাসকগোষ্ঠী কোনোকালেই ইসলামের অগ্রযাত্রাকে সহ্য করেনি। হকপন্থি আলেমদের ওপর চালিয়েছেন অমানবিক নির্যাতন। “আলেমগণের সঙ্গে শাসকগোষ্ঠীর আচরণ” শীর্ষক শিরোনামে লেখক তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।

    ▪ ৭. দ্বীনের ধারক ও শরিয়াহর রক্ষকদের অপরিহার্য দায়িত্ব :

    এ অধ্যায়ে লেখক আলেমদের অতিব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দায়িত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন:

    ১. দ্বীনের সংরক্ষণ:

    শিরক, কুফর, বিদআত ও উদাসীনতার মোকাবেলা করে দ্বীনকে যথাযথভাবে সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চালানোই আলেমদের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব। সংরক্ষণের এ দায়িত্বের জন্যেই করতে হবে জিহাদ। জিহাদের মাধ্যমেই শিরক-কুফরের আখড়া গুড়িয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে হবে তাওহীদ, সংরক্ষণ করতে হবে দ্বীন।

    ২. দ্বীন প্রচার:

    রাসূল (সা:) এর বাণী, “আমার থেকে একটিমাত্র আয়াত হলেও পৌঁছে দাও।” দ্বীনের দাওয়াত দ্বীন সংরক্ষণের অন্যতম উপায়। আলেমদের এক গুরু দায়িত্ব হচ্ছে দ্বীনের দাওয়াতকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া। এমনো জায়গা আছে, যেখানকার লোকেরা এখনো দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ। তাদের নিকটে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেবার দায়িত্ব আলেমদেরই।

    ৩. দ্বীন শিক্ষা:

    কুরআন এবং হাদিস হলো ইসলামি শক্তির মূল উৎস। শিরক, কুফর, বিদআত ও উদাসীনতার গায়ে সবচে’ কার্যকর আঘাত হলো কুরআন ও হাদিসের জ্ঞানার্জন এবং তার প্রচার। তাই দ্বীন শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে আলেমদেরকেই।

    ৪. একতা ও অভিন্নতা:

    সকল নবীর দাওয়াত ছিল এক ও অভিন্ন। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে আলেমদের মধ্যেও থাকতে হবে একতা ও অভিন্নতা। যেই দ্বীনের যে অংশে কাজ করুক, সবার উদ্দেশ্যই এক। আর তাই সকল ভেদাভেদ ভুলে সবার মাঝে প্রতিষ্ঠা করতে হবে ঐক্য।

    আলহামদুলিল্লাহ্‌, আমরা বইটি শেষ করলাম।

    ▪ মন্তব্য :

    বইটির প্রচ্ছদ, পৃষ্ঠাসজ্জা, বাঁধাই এক কথায় অসাধারণ। দুই একটা বানানবিভ্রাট ব্যতীত সমালোচনার জন্যে তেমনকোনো ভুল চোখে পড়েনি।

    ▪ পরিশিষ্ট :

    বর্তমান জামানায় শিরক, কুফর, বিদআত ও উদাসীনতা আসন গেড়েছে বেশ পোক্তভাবেই। এগুলোর মূলোৎপাটনে এগিয়ে আসতে হবে আলেমদেরকেই। গুড়িয়ে দিতে হবে এগুলোর আখড়া। মহান আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন দ্বীনের পথে। লেখক আলী মিয়া (রহি:) এবং এ বইটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম প্রতিদান দিন।আমীন।

    3 out of 3 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  2. 5 out of 5

    জুবায়ের আহমাদ:

    নবীগণ দুনিয়াতে সর্বপ্রথম তাওহীদের প্রচার করেছেন। একত্ববাদের দিকে মানুষকে ডেকেছেন। বক্ষমাণ গ্রন্থটি আমাদের কে এই তাওহীদ প্রতিষ্ঠার কথাই বলবে। বলবে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সমূহ প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কেও। সেইসাথে আরো বলবে আলিমদের দায়িত্ব কর্তব্য, এবং তাদের অপরিহার্য কর্মপদ্ধতি সম্পর্কেও। আচ্ছা, চলুন তাহলে বইয়ের আঙিনায়……

    পাঠ-পর্যালোচনা
    ________________________
    স্বাভাবিক বইয়ের মতোই লেখকের কথা, ভূমিকা দিয়ে বই শুরু হয়। মূল আলোচনা শুরু হয় ২২ পৃষ্ঠা থেকে। বইয়ের শুরুতেই আলোচনা করা হয় তাওহিদের সংজ্ঞা, পরিচয় এবং তাওহিদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সমূহ প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে। লেখক মোট চারটি প্রতিবন্ধকতা নিয়ে করেছেন বিস্তারিত। চারটি বিষয় হলো-
    -শিরক
    -কুফর
    -বিদআত
    -উদাসীনতা

    প্রতিটা বিষয়ের পরিচয়, গোড়ার কথা, বিশ্লেষণ হয় সাবলীল বর্ণনায়। প্রতিটা আলোচনাই কোরআন হাদীসের আলোকে এবং বিশ্লেষণধর্মী।বিশেষত প্রথম তিনটি বিষয়ের আলোচনায় রয়েছে অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জন্য অমূল্য উপহার।

    এই চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষে আরো দুটি শিরোনামে গুরত্বপূর্ণ দুটি বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রথম বিষয়টি ‘নবীগণের উত্তরসূরিদের কাজ’। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো ‘দ্বীনের ধারক এবং শরিয়াহর রক্ষকদের অপরিহার্য দায়িত্ব’। এই দুই শিরোনামের আলোচনাগুলো বেশ উপকারী এবং কার্যকরী।

    লেখক ও লেখা
    ____________________

    সায়্যিদ আবুল হাসান আলি নদভী। আলি মিয়া নামে প্রসিদ্ধ। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন হিন্দুস্তানের এই ক্ষণজন্মা মনীষী। আরবি এবং উর্দু সাহিত্যে ছিলেন সমান পারদর্শী। ‘মা জা খাসিরাল আলামত বিইনহিতাতিল মুসলিমিন’, তার অমর গ্রন্থ। বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কারসহ আরো বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন কর্মজীবনে। এই মহা মনীষী ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তাঁর কবর শান্তির আবাস বানিয়ে দিন। আমিন।

    আলি মিয়া নদীর রচনায় ছিলো উজ্জীবনী শক্তি। আজীবন তিনি ইসলামি ইতিহাস, গবেষণা, সাহিত্য নিয়ে লিখে গেছেন বিরতিহীন ভাবে৷ সেই ধারাবাহিকতায় লিখেছেন অমর গ্রন্থ ‘দীনে হক আরও উলামায়ে রব্বানী শিরক ও বিদআত কে খেলাফ কিউঁ। এ বইয়েও যথারীতি তিনি তাঁর ক্ষুরধার কলমের শক্তি দেখিয়েছেন। সাবলীল উপস্থাপনা এবং দালিলিক আলোচনায় সৃষ্টি করেছন এক অনবদ্য গ্রন্থ। আয়াতে কারিমা এবং হাদিসের সমাহার ঘটিয়েছেন এই বইয়ের পাতায় পাতায়।

    অনুবাদক ও অনুবাদ
    _____________________
    আলি হাসান উসামা। মেধাবী তরুণ আলিম। লেখালেখির ময়দানে সরব রয়েছেন। ফিতনার বজ্রধ্বনি, সুরা ফাতিহার আলোকে মানহাজ ইত্যাদি মৌলিক গ্রন্থের রচয়িতা। তাঁর দক্ষ হাতে অনুবাদ হয়েছে বহু গ্রন্থ। সেইসাথে তার সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যাও অনেক। দরস-তাদরিসের পাশাপাশি ওয়াজের ময়দানে নিজেকে সরব রেখেছেন, সেইসাথে লেখালেখির ময়দানেও।
    এই বইয়ের অনুবাদে তিনি তার মূল ধারায় থেকে অনুবাদ করেছেন। সাবলীল অনুবাদে লিখে গেছেন খুব সহজে। ঝরঝরে অনুবাদ আর মজবুত গাঁথুনির উপর এক সুখপাঠ্য অনুবাদের ইমারত নির্মাণ করেছেন এই বইতে। সেইসাথে বইয়ের টিকায় তূলনামূলক কঠিন বিষয়গুলোকে সহজ করে উপস্থাপন করেছেন। যা বইয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।

    বিশেষ ভালো লাগার
    _____________________
    বিশেষ ভালো লাগার এজন্য বললাম, স্বাভাবিক ভালো লাগার মধ্যে কিছু বিশেষ ভালো লাগার বিষয় থাকে।

    ➤ প্রয়োজনীয় এবং তূলনামূলক কঠিন বিষয়গুলোকে টীকায় সহজভাবে উল্লেখকরণ।
    ➤ সুন্দর-দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ।
    ➤ সাবলীল অনুবাদ।
    ➤ মূল শিরোনামের ক্ষেত্রে অসাধারণ ফ্রন্টের ব্যবহার। সেইসাথে পুরো বইয়ের ফ্রন্ট ও বেশ সুন্দর।

    অসংগতি
    ____________
    ➤ মূল শিরোনামের আওতায় যে উপশিরোনামে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো মূল শিরোনামের মতোই মোটা করে লেখা হয়েছে। মনে হয় যেনো এগুলো বড় কোন শিরোনাম। বড় করে লেখার কারণে শিরোনামের আধিক্য হয়েছে -এমন মনে হয়। অথচ বাস্তবতা এর বিপরীত।
    ➤ কিছু জায়গায় বাক্য খুব দীর্ঘ হয়েছে। যা রুচিশীল পাঠকের বিরক্তির কারণ হবে।
    ➤ আরবীতে إله শব্দের হরকতে খাড়া জবরের পরিবর্তে স্বাভাবিক জবর দেওয়া হয়েছে ।إلَهٌ লেখা হয়েছে ।(আমার জানামতে) যেটা স্পটতই ভুল। আয়াতের হরকতের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সতর্কতা জরুরী।
    ➤ কিছু জায়গার অনুবাদ একটু দুর্বোধ্য মনে হয়েছে।
    ➤ কিছু জায়গায় টাইপিং মিস্টেক হয়েছে।

    প্রকাশনী
    __________________
    শব্দতরু প্রকাশনী একটি রুচিশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। সৃজনশীলতা এবং সৃষ্টিশীলতায় তারা ইতোমধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। নিফাক থেকে বাঁচুন, গোনাহ মাফের উপায়, তাওহিদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সহ অসংখ্য পাঠকপ্রিয় গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। অনুবাদ, সম্পাদনা, বইয়ের কোয়ালিটি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বরাবরই পাঠক শব্দতরুর কাজের উপর ভরসা করে থাকেন। এ বইয়ের ক্ষেত্রেও তাই। এই বইতেও তাদের অসাধারণ কাজের ছাপ স্পষ্ট প্রতিভাত হয়েছে।

    বইটি কাদের জন্য
    ____________________
    সাধরণ মানুষদের তুলনায় বইটি আলি মদের জন্য বেশী লাভজনক হবে। দীনের জ্ঞান সম্পর্কে যারা একদম অজ্ঞ তাদের জন্য এই বই বিশেষ উপকারী হবে না। যারা তাওহিদ, শরিয়াহ, ইসলামের মৌলিক বিধিনিষেধ সম্পর্কে জ্ঞাত তাদের জন্য বইটি হবে অসাধারণ উপহার।

    বইটি কেন পড়াবেন ?
    ____________________
    তাওহিদ হলো দীনের স্তম্ভ। জমিনের বুকে তাওহিদ প্রতিষ্ঠার বিকল্প কিছু নেই। এ বই আপনাকে তাওহিদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সমূহ প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে ব্যাপক ধারনা দিবে, সেই সাথে জানাবে কর্মপদ্ধতি সম্পর্কেও। তাওহিদের পরিচয়,শিরক-কুফর-বিদআত ইত্যাদির পরিচয় জানতে এই বই সহায়ক হবে। তাই আকিদাহর মহাবিপর্যয় প্রতিরোধে,শরিয়াহর পূর্ণ বাস্তবায়নে, তাওহিদ প্রতিষ্ঠার আবশ্যিক সংগ্রামে পাথেয় হিসেবে কিছু গুরত্বপূর্ণ বিষয় পেতে বইটি আজই খুলে বসুন।

    শেষকথা
    __________________
    আকিদাহর শক্তিশালী বিনির্মাণ ছাড়া জমিনের বুকে দিনের পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। নবিগণের ওয়ারিশ হিসেবে তাওহিদ প্রতিষ্ঠায় এই বইটি সকলের জন্য উপকারী একটি বই। এই বইয়ের যা কিছু ভালো তা সংশ্লিষ্ট সকলের নাজাতের উসিলা হোক এই কামনা।

    2 out of 2 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  3. 5 out of 5

    abdur0rahman99:

    বর্তমানে আলেম সমাজের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তার তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে কেমন যেন উদাসীন। তাওহিদ কেন্দ্রিক নীতিমালা উপলক্ষ্য করেই সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রচনা করেছেন ” দ্বীনে হক আওর উলামায়ে রব্বানি শিরক ও বিদআত কে খেলাফ কিউঁ ” নামক একটি মহামূল্যবান বই। বিজ্ঞ অনুবাদক আলী হাসান ওসামা কতৃক বাংলায় অনুবাদের পর যার নাম হয়েছে ” তাওহীদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে “।
    এক্ষণে আমি বইটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করতে চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ-
    .
    সার-সংক্ষেপঃ-
    বইটিকে বিজ্ঞ লেখক সায়্যিদ আবুল হাসান নদভী (রহ:) সাতটি অধ্যায়ে বিভক্ত করে আলোচনা করেছেন। এবং সেই সাথে আলোচনার সুবিধার্থে প্রতিটি অধ্যায়ে যুক্ত করেছেন বিভিন্ন পরিচ্ছেদ। এক্ষনে আমি অধ্যায়গুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করতে চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ-
    .
    ১। আলিমগণের দায়িত্বঃ-
    এ অধ্যায়ে লেখক আলিমগণের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কেননা রাসূল (স:) যেহেতু সর্বশেষ নবী তাই তার পরে আর কোন নবী-রাসূল পৃথিবীতে আসবে না। এমতাবস্থায় মুসলিম উম্মাহকে তাওহীদের দিকে আহব্বান করতে আলেম ওলামাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা আলিমগন গণ হলেন নবীদের ওয়ারিশ স্বরুপ। এরপর তাওহিদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সমূহ আলোচনা করেছেন।
    .
    ২। শিরকঃ-
    তাওহীদ ও শিরক পরস্পর বিপরীতমূখী দুটি বিষয়। শিরক হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে কোনো বিষয়ে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা বা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করা। শিরকমুক্ত বিশ্বাসের নামই তাওহীদ। শিরক হলো একটি স্বতন্ত্র দ্বীন। কাজেই যেখানে শিরকের বীজ নিহিত থাকবে সেখানে কখনোই তাওহীদ প্রতিষ্ঠা হবে না।
    .
    ৩। কুফরঃ-
    এই অধ্যায়ে কুফর সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা স্থান পেয়েছে। কুফর হলো আল্লাহ তায়ালার কোন বিধানকে মৌখিক বা প্রায়োগিক ভাবে অস্বীকার করার নাম। এ অধ্যায়ে আরো পাওয়া যাবে তাগুতের পরিচয়, কুফর একটি দ্বীন, জাহিলিয়াতের প্রতি ঘৃণা প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা। অধ্যায়ের শেষে লেখক আলিমদের কে কুফরের বিরুদ্ধে সর্বদা সরব থাকার জন্য বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
    .
    ৩। বিদআতঃ-
    বিদআত হলো ইসলামি শরীয়তে এমন কিছু বিধিবিধান যুক্ত করা যার অনুমোদন ইসলাম কখনো দেয় নি। কাজেই কোন বিদআত সৃষ্টি করা মানে নতুনভাবে শরীয়ত প্রণয়নের নামান্তর। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে ইসলামী শরীয়ত কখনো পরিবর্তন হবে না। তাই বিদআতকারীদের জন্য রাসূল (স:) কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন ” যে ব্যক্তি ইসলামী শরীয়তে কোন বিদআত সৃষ্টি কিরলো সে আমাদের দলভুক্ত নয়। অধ্যায়ের শেষে লেখক বিদআত সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরাম, ইমামগণ ও বিরুদ্ধবাদীদের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
    .
    ৪। উদাসীনতাঃ-
    আমরা দুনিয়াবী কাজগুলো খুব নিখুঁতভাবে করতে চেষ্টা করলেও আল্লাহর  ইবাদতের ব্যাপারে বেশ উদাসীন। এইসব উদাসীনতা সম্পর্কে সতর্কবাণী উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন “আর তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা বলে, ‘শ্রবণ করলাম’ অথচ তারা শ্রবণ করে না ( সূরা আনফাল :আয়াত ২৯)  এছাড়াও দ্বীনের পথে ফিরতে হলে উদাসীনগণ যেসব প্রতিবন্ধকতার সমুক্ষীন হন তা আলোচনা করা হয়েছে।
    .
    ৫। নবীগণের উত্তরসূরিদের কাজঃ-
    আলেমগণ যেহেতু নবীদের উত্তরসূরি। তাই আলেমদেরকে  নবী রাসূলদের অনুপস্থিতিতে তাদের রেখে যাওয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। ইতিহাস পড়লে দেখা যায় রাসূল (স:) এর পর অনেক মনিষী ও আলেম দুনিয়ায় আগমন করেছেন। যেমন – হযরত হাসান বসরি (রহি:), ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহি:),মুহাদ্দিস ইবনুল জাওযী (রহি:), হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (রহি:) সহ আরো অনেকে। যাদের দুনিয়াবী আচার আচরণ ছিল সম্পূর্ণ আখিরাত কেন্দ্রিক। তারা ছিলেন  শিরক, কুফর বিদআত সহ সকল বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে সদা প্রস্তুত। এজন্য শাসকগোষ্ঠী কতৃক তাদের নানারকম ভাবে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তবুও তারা আল্লাহর দেয়া বিধান পালন করতে পিছপা হননি।

    ৭. দ্বীনের ধারক ও শরিয়াহর রক্ষকদের অপরিহার্য দায়িত্বঃ-
    এটি বইয়ের সর্বশেষ অধ্যায়। এ অধ্যায়ে লেখক দ্বীনের ধারক ও শরীয়াহ সংরক্ষকদের অপরিসার্য কিছু দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো-
    —শিরক কুফর বিদ আতের বিরুদ্ধে আলেমদের সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। যাতে মুসলমানদের ইমান ও আকিদা বিনষ্ট না হয়।
    —সর্বাবস্থায় আল্লাহ ইসলামের প্রচার ও প্রসার অব্যহত রাখতে হবে। যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছেনি আলিমদেরকে তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছাতে হবে।
    — আলিমদের কুরআন হাদীসের প্রচার ও প্রসারের  জন্য দ্বীনি শিক্ষা কার্যক্রম অব্যহত রাখতে হবে।
    — সর্বাবস্থায় মুসলমানদের পরস্পরের মাঝে একটা ধরে রাখার কোন বিকল্প নেই। তাই সকল ভেদাভেদ ভুলে সকল মুসলমানদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা হওয়া জরুরী।
    .
    ▶ বইটি কেন পড়বেন এবং কি পাবেন?
    ১। আপনি যদি তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভাবে জানতে চান তাহলে বইটি আপনার জন্য।
    ২। আল্লাহর ইবাদত করলে তা পরিশুদ্ধ ভাবে করছি কি না তার মাপকাঠি হিসেবে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে বইটি।
    ৩। আপনি যদি সংক্ষিপ্ত পরিসরে শিরক, কুফর, বিদআত সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে চান তাহলে বইটি অবশ্যই পড়ুন।
    ৪। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দুনিয়াতে আল্লাহর একত্ববাদের উপর কিভাবে অটল থাকবেন তার দিক-নির্দেশনা পাবেন বইতে।
    .
    ▶ ব্যক্তিগত অনুভূতিঃ-
    বইটি সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও এর ভিতরে আছে বিস্স্তৃত জ্ঞানের মনিমুক্ত। বইটির কভার, প্রচ্ছদ, বাইন্ডিং, ও ভিতরের পাতা মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর।ব্যক্তিগত অনূভুতি যদি বলতে হয় তাহলে বলবো বইটি এককথায় অসাধারন। সহজ, সাবলীল, ও বোধগম্য ভাষায় রচিত।সব ধরনের জটিলতা এড়িয়ে ইসলামকে সরল সাবলীল ভাষার তিনি উপস্থাপন করেছেন। বইয়ের প্রতিটি পাতায় রয়েছে লেখকের কঠোর পরিশ্রমের ছোয়া।
    বইটি পড়তে গিয়ে কখনো মনে হয়নি যে অনুবাদ পড়ছি।বরং মৌলিক লেখা মনে হয়েছে। বইতে তাওহিদ সম্পর্কে বেশকিছু মৌলিক দিক লেখক সাবলীল ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
    বইটি পাঠ করে যেকোনো পাঠক উপকৃত হবেন এবং তাওহিদ  বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা হবে ইনশাআল্লাহ। তাই ইসলামী মনোভাবাপন্ন সকলের জন্য বইটি একবার হলেও পড়ুন আর জীবনকে রাঙিয়ে তুলুন আল্লাহর একত্ববাদের আলোকে।
    ,
    ▶ সমালোচনাঃ-
    বইতে সমালোচনা করার মত তেমন কিছু নেই। তবে-
    ১। বইতে বেশকিছু বানান বিভ্রাট ও মুদ্রন ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে।
    ২। বইতে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা থাকায় কিছু কিছু জায়গার অনুবাদ বুঝতে কষ্ট হচ্ছে।
    .
    ▶শেষ কথাঃ-
    পরিশেষে বলতে হয় বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তাওহিদ নিয়ে এত সুন্দর একটি বই লেখার আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বইয়ের লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক এবং পাঠক সহ  সবাইকে কবুল করুন।

    1 out of 1 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  4. 5 out of 5

    আব্দুর রহমান:

    বর্তমানে আলেম সমাজের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তার তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে কেমন যেন উদাসীন। তাওহিদ কেন্দ্রিক নীতিমালা উপলক্ষ্য করেই সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রচনা করেছেন ” দ্বীনে হক আওর উলামায়ে রব্বানি শিরক ও বিদআত কে খেলাফ কিউঁ ” নামক একটি মহামূল্যবান বই। বিজ্ঞ অনুবাদক আলী হাসান ওসামা কতৃক বাংলায় অনুবাদের পর যার নাম হয়েছে ” তাওহীদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে “।
    এক্ষণে আমি বইটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করতে চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ-
    .
    সার-সংক্ষেপঃ-
    বইটিকে বিজ্ঞ লেখক সায়্যিদ আবুল হাসান নদভী (রহ:) সাতটি অধ্যায়ে বিভক্ত করে আলোচনা করেছেন। এবং সেই সাথে আলোচনার সুবিধার্থে প্রতিটি অধ্যায়ে যুক্ত করেছেন বিভিন্ন পরিচ্ছেদ। এক্ষনে আমি অধ্যায়গুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করতে চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ-
    .
    ১। আলিমগণের দায়িত্বঃ-
    এ অধ্যায়ে লেখক আলিমগণের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কেননা রাসূল (স:) যেহেতু সর্বশেষ নবী তাই তার পরে আর কোন নবী-রাসূল পৃথিবীতে আসবে না। এমতাবস্থায় মুসলিম উম্মাহকে তাওহীদের দিকে আহব্বান করতে আলেম ওলামাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা আলিমগন গণ হলেন নবীদের ওয়ারিশ স্বরুপ। এরপর তাওহিদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সমূহ আলোচনা করেছেন।
    .
    ২। শিরকঃ-
    তাওহীদ ও শিরক পরস্পর বিপরীতমূখী দুটি বিষয়। শিরক হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে কোনো বিষয়ে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা বা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করা। শিরকমুক্ত বিশ্বাসের নামই তাওহীদ। শিরক হলো একটি স্বতন্ত্র দ্বীন। কাজেই যেখানে শিরকের বীজ নিহিত থাকবে সেখানে কখনোই তাওহীদ প্রতিষ্ঠা হবে না।
    .
    ৩। কুফরঃ-
    এই অধ্যায়ে কুফর সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা স্থান পেয়েছে। কুফর হলো আল্লাহ তায়ালার কোন বিধানকে মৌখিক বা প্রায়োগিক ভাবে অস্বীকার করার নাম। এ অধ্যায়ে আরো পাওয়া যাবে তাগুতের পরিচয়, কুফর একটি দ্বীন, জাহিলিয়াতের প্রতি ঘৃণা প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা। অধ্যায়ের শেষে লেখক আলিমদের কে কুফরের বিরুদ্ধে সর্বদা সরব থাকার জন্য বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
    .
    ৩। বিদআতঃ-
    বিদআত হলো ইসলামি শরীয়তে এমন কিছু বিধিবিধান যুক্ত করা যার অনুমোদন ইসলাম কখনো দেয় নি। কাজেই কোন বিদআত সৃষ্টি করা মানে নতুনভাবে শরীয়ত প্রণয়নের নামান্তর। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে ইসলামী শরীয়ত কখনো পরিবর্তন হবে না। তাই বিদআতকারীদের জন্য রাসূল (স:) কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন ” যে ব্যক্তি ইসলামী শরীয়তে কোন বিদআত সৃষ্টি কিরলো সে আমাদের দলভুক্ত নয়। অধ্যায়ের শেষে লেখক বিদআত সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরাম, ইমামগণ ও বিরুদ্ধবাদীদের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
    .
    ৪। উদাসীনতাঃ-
    আমরা দুনিয়াবী কাজগুলো খুব নিখুঁতভাবে করতে চেষ্টা করলেও আল্লাহর  ইবাদতের ব্যাপারে বেশ উদাসীন। এইসব উদাসীনতা সম্পর্কে সতর্কবাণী উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন “আর তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা বলে, ‘শ্রবণ করলাম’ অথচ তারা শ্রবণ করে না ( সূরা আনফাল :আয়াত ২৯)  এছাড়াও দ্বীনের পথে ফিরতে হলে উদাসীনগণ যেসব প্রতিবন্ধকতার সমুক্ষীন হন তা আলোচনা করা হয়েছে।
    .
    ৫। নবীগণের উত্তরসূরিদের কাজঃ-
    আলেমগণ যেহেতু নবীদের উত্তরসূরি। তাই আলেমদেরকে  নবী রাসূলদের অনুপস্থিতিতে তাদের রেখে যাওয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। ইতিহাস পড়লে দেখা যায় রাসূল (স:) এর পর অনেক মনিষী ও আলেম দুনিয়ায় আগমন করেছেন। যেমন – হযরত হাসান বসরি (রহি:), ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহি:),মুহাদ্দিস ইবনুল জাওযী (রহি:), হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (রহি:) সহ আরো অনেকে। যাদের দুনিয়াবী আচার আচরণ ছিল সম্পূর্ণ আখিরাত কেন্দ্রিক। তারা ছিলেন  শিরক, কুফর বিদআত সহ সকল বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে সদা প্রস্তুত। এজন্য শাসকগোষ্ঠী কতৃক তাদের নানারকম ভাবে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তবুও তারা আল্লাহর দেয়া বিধান পালন করতে পিছপা হননি।

    ৭. দ্বীনের ধারক ও শরিয়াহর রক্ষকদের অপরিহার্য দায়িত্বঃ-
    এটি বইয়ের সর্বশেষ অধ্যায়। এ অধ্যায়ে লেখক দ্বীনের ধারক ও শরীয়াহ সংরক্ষকদের অপরিসার্য কিছু দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো-
    —শিরক কুফর বিদ আতের বিরুদ্ধে আলেমদের সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। যাতে মুসলমানদের ইমান ও আকিদা বিনষ্ট না হয়।
    —সর্বাবস্থায় আল্লাহ ইসলামের প্রচার ও প্রসার অব্যহত রাখতে হবে। যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছেনি আলিমদেরকে তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছাতে হবে।
    — আলিমদের কুরআন হাদীসের প্রচার ও প্রসারের  জন্য দ্বীনি শিক্ষা কার্যক্রম অব্যহত রাখতে হবে।
    — সর্বাবস্থায় মুসলমানদের পরস্পরের মাঝে একটা ধরে রাখার কোন বিকল্প নেই। তাই সকল ভেদাভেদ ভুলে সকল মুসলমানদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা হওয়া জরুরী।
    .
    বইটি কেন পড়বেন এবং কি পাবেন?
    ১। আপনি যদি তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভাবে জানতে চান তাহলে বইটি আপনার জন্য।
    ২। আল্লাহর ইবাদত করলে তা পরিশুদ্ধ ভাবে করছি কি না তার মাপকাঠি হিসেবে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে বইটি।
    ৩। আপনি যদি সংক্ষিপ্ত পরিসরে শিরক, কুফর, বিদআত সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে চান তাহলে বইটি অবশ্যই পড়ুন।
    ৪। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দুনিয়াতে আল্লাহর একত্ববাদের উপর কিভাবে অটল থাকবেন তার দিক-নির্দেশনা পাবেন বইতে।
    .
    ব্যক্তিগত অনুভূতিঃ-
    বইটি সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও এর ভিতরে আছে বিস্স্তৃত জ্ঞানের মনিমুক্ত। বইটির কভার, প্রচ্ছদ, বাইন্ডিং, ও ভিতরের পাতা মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর।ব্যক্তিগত অনূভুতি যদি বলতে হয় তাহলে বলবো বইটি এককথায় অসাধারন। সহজ, সাবলীল, ও বোধগম্য ভাষায় রচিত।সব ধরনের জটিলতা এড়িয়ে ইসলামকে সরল সাবলীল ভাষার তিনি উপস্থাপন করেছেন। বইয়ের প্রতিটি পাতায় রয়েছে লেখকের কঠোর পরিশ্রমের ছোয়া।
    বইটি পড়তে গিয়ে কখনো মনে হয়নি যে অনুবাদ পড়ছি।বরং মৌলিক লেখা মনে হয়েছে। বইতে তাওহিদ সম্পর্কে বেশকিছু মৌলিক দিক লেখক সাবলীল ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
    বইটি পাঠ করে যেকোনো পাঠক উপকৃত হবেন এবং তাওহিদ  বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা হবে ইনশাআল্লাহ। তাই ইসলামী মনোভাবাপন্ন সকলের জন্য বইটি একবার হলেও পড়ুন আর জীবনকে রাঙিয়ে তুলুন আল্লাহর একত্ববাদের আলোকে।
    ,
    সমালোচনাঃ-
    বইতে সমালোচনা করার মত তেমন কিছু নেই। তবে-
    ১। বইতে বেশকিছু বানান বিভ্রাট ও মুদ্রন ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে।
    ২। বইতে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা থাকায় কিছু কিছু জায়গার অনুবাদ বুঝতে কষ্ট হচ্ছে।
    .
    শেষ কথাঃ-
    পরিশেষে বলতে হয় বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তাওহিদ নিয়ে এত সুন্দর একটি বই লেখার আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বইয়ের লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক এবং পাঠক সহ  সবাইকে কবুল করুন।

    1 out of 2 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
Top