মেন্যু
srostha dhormo jibon

স্রষ্টা ধর্ম জীবন

অনুবাদক : কবির আনোয়ার, মাসুদ শরীফ, মোদাসদের বিল্লাহ, সানজিদা শারমিন
সম্পাদক : আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক, ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী, শরীফ আবু হায়াত অপু
পৃষ্ঠা : 84, কভার : পেপার ব্যাক, সংস্করণ : 1st Published, 2013
আইএসবিএন : 9789843376763, ভাষা : বাংলা
অধুনা চিন্তাবিদদের অনেকেই মনে করেন বর্তমান পৃথিবীতে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দু বা মুসলিম নয় বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মহীনেরা। ধর্মহীনতার সংজ্ঞা সংশয়াতীত নয়। সাংস্কৃতিকভাবে নাস্তিকেরাও নিজেদের সাথে একটি ধর্মের সংলগ্নতা রক্ষা করেন। এই... আরো পড়ুন
পরিমাণ

110 

পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
Get it on Google Play

3 রিভিউ এবং রেটিং - স্রষ্টা ধর্ম জীবন

5.0
Based on 3 reviews
5 star
100%
4 star
0%
3 star
0%
2 star
0%
1 star
0%
 আপনার রিভিউটি লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  1. 5 out of 5

    mohammadhosen3231:

    রিক্ত হাতে মানুষের পদার্পণ, শূণ্যকে আপন করে নিয়ে মানুষের জীবনাচরণ। মানুষ জীবনকে বুঝতে চায়, শিখতে চায় জীবনের মূলমন্ত্র, দেখতে চায় এক বর্ণিল পথচলার স্বপ্ন। তার আশা, আকাঙ্খা, স্বপ্ন, ভালোবাসা সবটাই জীবনকে ঘিরে। মাঝে মাঝে তার উচ্চাকাঙ্খা তাকে টপকে আরো উঁচুতে উঠতে চায়, ছুঁতে চায় নীলাকাশ! সে পার্থিব সুখ চায়, উপভোগ করতে চায় জীবনকে। উপভোগকারী ও উপভোগ্যের মাঝে দ্বন্দ্ব নেই, বরং আছে গভীর সখ্যতা। কারণ কর্তা যেভাবে চায় কর্ম সেভাবেই হতে বাধ্য!
    কিন্তু গোলযোগ বাঁধে অন্যখানে। আনন্দঘন পথচলায় পথের সংকীর্ণতায় তার মনে প্রশ্ন জাগে–জীবন কি খালি সংকীর্ণতাকে টপকে আনন্দকে ছোঁয়ার প্রতিযোগিতা? নাকি আরো বেশি কিছু?
    বিবেক তার হৃদয়ে প্রশ্ন তুলতে চায়—‘তবে এ জীবনের উদ্দেশ্য কি? ক্রীড়াচ্ছলে জীবনকে উপভোগ করার জন্যই কি এই মূল্যবান প্রাণের সৃষ্টি?’
    এ জীবনের আদৌ-কি কোন উদ্দেশ্য আছে? জীবন কি উপভোগকারীর উপরেও কারো প্রতি কৃতজ্ঞতার বাঁধনে আবদ্ধ? নাকি নির্ভাবনার সাহচার্যে উপভোগ্যের গাম্ভীর্যে শুধু হেসে খেলে পার করে দিলেই হল?
    ‘স্রষ্টা ধর্ম জীবন’ দিবে এই প্রশ্নের উত্তর।
    যদি উত্তর আসে–হ্যাঁ, উদ্দেশ্য আছে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দায়িত্ববোধ আছে।
    কি সেই উদ্দেশ্য? কিভাবে মিলবে তার হদিস?
    যদিবা উত্তর আসে–সে তোমার সামনেই আছে। চোখ মেলে একবার চারপাশটা দেখ, স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে চাও?
    তাই যদি হয় তবে এতো ধর্ম কেন? আর কোন ধর্মই বা সত্য, কোন জীবনবিধান স্রষ্টার? কিভাবে চিনব স্রষ্টাকে? কিভাবে খুঁজে পাব তাঁর প্রেরিত ধর্মকে?
    ‘স্রষ্টা ধর্ম জীবন’ তার পথ দেখাবে!
    “তিনি যা করেন সে ব্যপারে তাকে প্রশ্ন করা হবে না, বরং প্রশ্ন করা হবে তাদেরকেই!”—আল কুরআন, (২১:২৩)
    .
    [বইকথন]
    বইটি লেখেকরে কয়েকটি ছোট বইয়ের অনুবাদ। বইটিতে তিনটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। তিনটি অধ্যায়ে এসেছে তিনটি ভিন্নধারার লেখা— জীবন নিয়ে, স্রষ্টা নিয়ে, আর ধর্ম নিয়ে।
    লেখক প্রথমেই দেখিয়েছেন এ জীবন কোন উদ্দেশ্যহীন নৌকা নয়। জীবনের ও আছে একটি সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য, আছে সুনির্দিষ্ট গন্তব্য। উদ্দেশ্য দেখাতে গিয়ে লেখক টেনেছেন স্রষ্টাতত্ত্বকে। বাতলে দিয়েছেন স্রষ্টাকে চিনার ও বুঝার পথ। আর সবশেষে তিনি বলেছেন সত্য ধর্মকে নিয়ে, সত্য ধর্মের বৈশিষ্ট্য নিয়ে, ধর্ম পালনের উপকারিতা নিয়ে। একইসাথে তিনি মূলোৎপাটন করেছেন কিছু মডারেট ধার্মিকের ভ্রান্ত বিশ্বাস।
    .
    [বইটি যাদের জন্য]
    আধুনিক চিন্তাবিদেরা ধারণা করেন বর্তমানে পৃথিবীর সংখ্যা গরিষ্ঠ হলো ধর্মহীন। এই বইটি ধার্মিক ও ধর্মহীন—চিন্তাশীল মানুষদের জন্য। বস্তুবাদের চশমা আঁটা চোখের সামনে বইটি উন্মুক্ত করবে এমন একটি পরিষ্কার ছবি যা মূলোৎপাটন করবে বস্তুবাদর অসাড়তা।
    .
    [পাঠানুভূতি]
    লেখকের নিপুণ হাতের গাঁথুনি যেকোন বয়সের পাঠককে বইটির দিকে আকৃষ্ট করবে। তার প্রাঞ্জল বর্ণনা, টপিকের সাথে প্রাসঙ্গিক আলোচনা ও গঠনমূলক লিখনি পাঠককে অভিভূত করবে, পরিষ্কার করবে ধারণা আর দূর করবে মনের কোনায় উঁকি দেয়া প্রশ্নগুলি।
    পড়তে অসাধারণ লেগেছে আমার।পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে লেখক বুঝি সামনে বসে লেকচার দিচ্ছেন আর বুঝিয়ে দিচ্ছেন স্রষ্টাতত্ত্ব! নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার ও স্রষ্টা ধর্ম ও জীবন সম্পর্কে নিজের ধারণাকে আরো পরিস্কার করার,নিজের বিশ্বাসকে আরো পাকাপোক্ত করার সুযোগকে আশা করি কেউ হাতছাড়া করবে না।
    3 out of 3 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  2. 5 out of 5

    মো.আবু তাহের:

    বইটি মূলত বিলাল ফিলিপ্স রচিত ‘True Religion of God’, ‘Purpose of Creation’, ‘Is there any True Religion?’ এবং ‘Did God Become Man?’ – এই চারটি প্রামাণ্যিক প্রবন্ধের সুবিন্যাস্ত অনুবাদ।
    বইটিকে তিনটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ের নাম জীবন। বই শুরু হয়েছে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে সুন্দর একট

    ি আলোচনার মাধ্যমে। লেখক এ অংশে নাস্তিক্যবাদী নানা মতবাদের ব্যাবচ্ছেদ করেছেন। পরিসংখ্যানের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে যে, এ দুনিয়ার একজন স্রস্টা আছেন, এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। সমস্যা শুরু হয় স্রস্টা কি আসলেই জীবনযাপনের কোন নিয়মনীতি দিয়েছেন কিনা এবং তা মানা নিয়ে। অধিকাংশ মানুষ এ ব্যাপারে উদাসীন, অথচ এ ব্যাপারটি কতই না গুরুত্বপূর্ণ তা লেখক তুলে ধরেছেন বিশ্লেষনের মাধ্যমে। লেখক সহজ যুক্তিপ্রমাণের সাহায্যে দেখিয়েছেন যে, স্রস্টা আমাদের জন্য সুনির্দিষ্ট জীবনবিধানও দিয়েছেন এবং স্রস্টার শুধু অস্তিত্বে বিশ্বাস করলেই হবেনা, তার দেওয়া জীবনবিধানও মেনে চলতে হবে। এ অংশে লেখক কিছু বহুল প্রচলিত স্রস্টা বিষয়ক প্রশ্নের সহজ ও অনবদ্য জবাব দিয়েছেন।
    শয়তান মানুষের মনে নানা প্রশ্ন জাগিয়ে মানুষকে সত্য ধর্ম তালাশ করতে বাঁধা দেয়, নিরুৎসাহিত করে।’বিশ্বে এত এত ধর্ম কেন?’, ‘কোন ধর্ম সঠিক?’ ‘ধর্মই কী অধর্মের মূল নয়?’ ‘কেন পৃথিবীতে এসেছি?’ – এধরনের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন লেখক এ অধ্যায়ে। স্রস্টার দেওয়া স্বাধীনতা আর নির্দেশ যে এক কথা নয় এবং ইবাদাতের মর্ম ও উদ্দেশ্য কী তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। অপনোদন করেছেন বিবর্তনবাদের। লেখক শুধু ফিলোসফি কপচান নি। কুরআন হাদীস থেকে জবাব দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন সকল অত্যাচারিত যে ন্যায়বিচার পাবে তা তুলে ধরা হয়েছে এ অংশে। বর্ণনা করা হয়েছে স্রস্টার অনুগ্রহ ও করুণার স্বরূপ।জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা ধর্মের মত রেফারেন্সসহ তুলে ধরে সবশেষে কুরানের মত তুলে ধরে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের অসাড় বাণী আর কুরআনের অখন্ডনীয় যুক্তি ও তার সার্থকতা তুলে ধরেছেন সফলতার সাথে।
    দ্বিতীয় অধ্যায়ের নাম স্রস্টা। এখানে লেখক স্রস্টার পরিচয় বর্ণনা করে তুলে ধরেছেন স্রস্টাকে কীভাবে চেনা যায়। শুরুতেই ফিতরাতের আলোচনা করেছেন। এর সাথে হালের বিজ্ঞানের সদ্য আবিষ্কৃত মস্তিষ্কে ‘গড স্পটের’ অবস্থান তুলে ধরেছেন। বোনাস হিসেবে যুক্ত করেছেন ‘গড স্পট’ নিয়ে স্টিভ কনরের করা সানডে টাইমস এর প্রতিবেদন। প্রশ্ন জাগে, ফিতরাত থাকলে মানুষ কেন স্রস্টাকে ভুলে যায়? লেখক এ প্রশ্নেরও যথাযথ উত্তর দিয়েছেন।
    স্রস্টা নিয়ে মানবসমাজে নানা বিভ্রান্তি প্রচলিত আছে। কেউ সৃষ্টিকে স্রস্টা বানায়, কেউ মানুষকেই বসিয়ে দেয় স্রস্টার আসনে আবার কেউ স্রস্টাকে নামিয়ে দেয় মানুষের রূপে। কেউ বলে সৃষ্টির মাঝে স্রস্টা একাকার হয়ে আছেন আর কেউ বলেন স্রস্টা সন্তান গ্রহণ করেছেন।লেখক প্রত্যেকটি ভ্রান্ত বিশ্বাসের অপনোদন করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সহজবোধ্য যুক্তি প্রমাণ দিয়ে। কিছু উদাহারণ দেই।
    স্রস্টা সবকিছু করতে সক্ষম হলে মানুষ হতে পারেন না কেন? অথবা স্রস্টা জন্মগ্রহণ বা মৃত্যুবরণ করতে পারেন না কেন? – এর উত্তরে বলেন, স্রস্টার সংজ্ঞাতেই বলা আছে যে তিনি একজন চিরন্তন সত্তা। শাশ্বত এ সত্তার কোন শুরু বা শেষ নেই। তাই এ ধরনের প্রশ্ন অবান্তর। ‘স্রস্টা সবকিছু করতে সক্ষম’ – বাক্যের ‘সবকিছু; থেকে সেগুলো বাদ যাবে যেগুলো তার সিফাতের সাথে সাংঘর্ষিক; যেগুলো তার শ্বাশ্বত গুণাবলীর বাইরে যায় বা স্রস্টাকে নিম্নতর আসনে নামিয়ে দেয়। যেমন ভুলে যাওয়া, ঘুমানো ইত্যাদি। ‘সবকিছু’ শব্দের ভেতর কেবল সেসব বিষয়ই থাকবে যেগুলো তা্র স্রস্টা হওয়ার সাথে সংগতিপূর্ণ। তেমনিভাবে স্রস্টা নিজে সৃষ্টিতে পরিণত হওয়ার মানে হল স্রস্টাই নিজে নিজেকে সৃষ্টি করেছেন – যা অযৌক্তিক। স্রস্টার চিরন্তন হওয়ার সাথে সাংঘর্ষিক।
    লেখক এ অংশে এসব ভ্রান্ত মতবাদের কারণ হিসেবে মানুষের সীমিত বোধশক্তিকে তুলে ধরেছেন।
    রচনার শেষ অংশে স্রস্টাকে কীভাবে পাওয়া যায় সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। ইসলামের মূল বার্তাই হচ্ছে এক ও একক স্রস্টার ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পণ করা। ইবাদাতের অধিকার ও ইবাদাহ করার যোগ্য সত্ত্বা একমাত্র আল্লাহই।

    শেষ অধ্যায়ের নাম ধর্ম। শুরুতেই সত্য ধর্ম নিরুপণে লেখক ৯ টি ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করেছেন যা বোধসম্পন্ন প্রত্যেক সত্যাশ্রয়ীই মেনে নিবেন। লেখক নিজে একজন সত্যাশ্রয়ী ও সত্য ধর্মের অনুসন্ধানে সমগ্র জীবন ব্যয় করায় এব্যাপারে লেখকের মুন্সিয়ানা ফুটে ঊঠেছে।
    প্রত্যেকটি ক্রাইটেরিয়ার সুবিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের আলোকে। সেগুলো হলঃ ১/ স্রস্টা যে ধর্ম মনোনীত করেছেন তা হবে সার্বজনীন ২/ ধর্মের সব বিধান একই মূলসূত্রে গাঁথা থাকবে ৩/ উপাসনায় ব্যাপকতা থাকবে, সীমাবদ্ধতা, কতিপয় রসম রেওয়াজ বা মাত্রাতিরিক্ত সীমাহীনতা থাকবেনা। ৪/ ধর্মীয় মূলনীতি অবিকৃত ও অক্ষত থাকবে, যুগে যুগে বদলাবেনা ৫/ বিধিনিষেধের মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকতে হবে ৬/ জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকতে হবে ৭/ সমগ্র মানবতার জন্যে পাপ থেকে মুক্তিলাভের উপায় থাকতে হবে ৮/ ধর্ম গ্রন্থের সংরক্ষণ ৯/ যে নবী সত্য ধর্ম প্রচার করেছেন তিনি এমন কোন মুজিযা রেখে যাবেন যা কিয়ামাত পর্যন্ত থাকবে। এখানে লেখক অলৌকিক সেই মুজিযা হিসেবে কুরআন কে তুলে ধরেছেন।
    লেখক এ অংশে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের বিশুদ্ধতার দাবীর বাস্তবতা নিরূপণ করেছেন যুক্তির কষ্টিপাথরে, বুদ্ধি, বিবেক ও জ্ঞান দ্বারা ও কুরআনে বর্ণিত পূর্ববর্তী জাতিদের ব্যাপারে বর্ণিত আয়াতের নিরিখে।

    ★পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ জীবনের উদ্দেশ্য না জানলে মানুষের অস্তিত্ব অর্থহীন হয়ে পড়ে। জীবনটি শুধু শুধু অপচয় হয়। পরকালের অনন্ত পুরস্কারের সুযোগ হাতছাড়া হয়। তাই স্বভাবতই মানুষ এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে ফিরে। এই প্রশ্নের স্পষ্ট , নির্ভুল উপায় পাওয়ার একমাত্র উৎস ঐশী গ্রন্থ। কিন্তু অধুনা মানুষ নানা যুক্তির ছলনায় সংশয়ে আবদ্ধ হয়। শায়খ বিলাল ফিলিপস সত্যাগ্রহী। তার সত্য ধর্মের সন্ধানে আধ্যাত্মিক ভ্রমণকেই তুলে ধরেছেন এ বইয়ে। জীবনের উদ্দেশ্য, স্রস্টার স্বরূপ ও সত্য ধর্মের বাস্তবতা এ বইয়ের প্রাণ। স্রস্টা সম্পদের অসম বন্টন কেন করলেন বা বিপদ আপদই বা আসে কেন এধরনের একগাদা প্রশ্নের সহজবোধ্য উত্তর দিয়েছেন বৈঠকি ঢং এ, তথ্য উপাত্ত সহকারে।

    বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। সেসময় নাস্তিকতার জবাব সম্বলিত খুব বেশী বই বাজারে পাওয়া যেতনা। আমি যদিও ততদিনে প্র্যাক্টিসিং হতে শুরু করেছি, তবুও মনের কোন এক অন্ধকার কুঠুরিতে কিছু প্রশ্ন থেকেই যেত যা শয়তান উদ্রেক করত। আসলে আগে সেকুলার বইপত্র বেশী পড়াতেই হয়ত। এ বইটি পাঠে আমার সেইসব কনফিউশন এত ভালভাবে দূর হয়ে যায় যে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই। বইটির বর্ণনাশৈলী মনোমুগ্ধকর। মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খেত যে, আমাজনের জংগলের কোন মানুষ যে ইসলাম নিয়ে জীবনে জানবেই না, সে কী জাহান্নামে যাবে? তার কী দোষ?

    লেখক এ বিষয়ে খুব মজার এক গল্প অবতারণা করেন। আমাজনের এক উপজাতি স্কোয়াচ নামক মূর্তির পূজা করে। একটি কুড়েঘরে মানুষরুপী মূর্তিটি বসানো ছিল। এক যুবক যখন পরম শ্রদ্ধায় মূর্তিকে সিজদাহ করছিল, তখন এক নেড়ি কুকুর মূর্তির উপর মূত্রত্যাগ করে। রাগত যুবক বহুদূর কুকুরকে তাড়া করে। ফিরে এসে ঠান্ডা মাথায় ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়, এই মূর্তি তার রব নয়। যে নিজের এমন অপমানের শোধ নেয়ারই ক্ষমতা নেই সে আবার কিসের রব। এটিই ছিল, এই যুবকের জন্য স্রস্টার নিদর্শন। এভাবে জন্মের পর থেকে আমৃত্যু স্রস্টা মানুষকে তার নিদর্শন দেখিয়ে যান। যা দেখে নাড়া খায় তার ফিতরাত। সে বুঝতে পারে স্রস্টার অস্তিত্ব। আর শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ কারো উপর অবিচার করবেন না।

    ★উপসংহারঃ সিয়ান প্রকাশনী বাংলাদেশে ইসলামী বই পাবলিকেশন্সের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড স্থাপনের প্রত্যয় নিয়ে এসেছে। এ বইও তার ব্যাতিক্রম নয়। বই এর নামকরণ যথার্থ। মলাট ও প্রচ্ছদ মনমাতানো। লেখকের লেখনী অনবদ্য। অনুবাদকের অনুবাদ প্রাঞ্জল। সম্পাদনা হয়েছে যত্নের সাথে। নতুন ধরনের সুন্দর বাংলা ফন্ট ব্যাবহার করা হয়েছে। বই ছাপা হয়েছে মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে। এক কথায় বই এর কোন ক্রুটি খুঁজে পাবেন না। তাই এই বইয়ের রেটিং এ কোন পয়েন্ট কাটতে পারিনি।

    3 out of 3 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  3. 5 out of 5

    mr.tahmid:

    বইটি মূলত বিলাল ফিলিপ্স রচিত ‘True Religion of God’, ‘Purpose of Creation’, ‘Is there any True Religion?’ এবং ‘Did God Become Man?’ – এই চারটি প্রামাণ্যিক প্রবন্ধের সুবিন্যাস্ত অনুবাদ।

    বইটিকে তিনটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ের নাম জীবন। বই শুরু হয়েছে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে সুন্দর একটি আলোচনার মাধ্যমে। লেখক এ অংশে নাস্তিক্যবাদী নানা মতবাদের ব্যাবচ্ছেদ করেছেন। পরিসংখ্যানের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে যে, এ দুনিয়ার একজন স্রস্টা আছেন, এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। সমস্যা শুরু হয় স্রস্টা কি আসলেই জীবনযাপনের কোন নিয়মনীতি দিয়েছেন কিনা এবং তা মানা নিয়ে। অধিকাংশ মানুষ এ ব্যাপারে উদাসীন, অথচ এ ব্যাপারটি কতই না গুরুত্বপূর্ণ তা লেখক তুলে ধরেছেন বিশ্লেষনের মাধ্যমে। লেখক সহজ যুক্তিপ্রমাণের সাহায্যে দেখিয়েছেন যে, স্রস্টা আমাদের জন্য সুনির্দিষ্ট জীবনবিধানও দিয়েছেন এবং স্রস্টার শুধু অস্তিত্বে বিশ্বাস করলেই হবেনা, তার দেওয়া জীবনবিধানও মেনে চলতে হবে। এ অংশে লেখক কিছু বহুল প্রচলিত স্রস্টা বিষয়ক প্রশ্নের সহজ ও অনবদ্য জবাব দিয়েছেন।
    শয়তান মানুষের মনে নানা প্রশ্ন জাগিয়ে মানুষকে সত্য ধর্ম তালাশ করতে বাঁধা দেয়, নিরুৎসাহিত করে।’বিশ্বে এত এত ধর্ম কেন?’, ‘কোন ধর্ম সঠিক?’ ‘ধর্মই কী অধর্মের মূল নয়?’ ‘কেন পৃথিবীতে এসেছি?’ – এধরনের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন লেখক এ অধ্যায়ে। স্রস্টার দেওয়া স্বাধীনতা আর নির্দেশ যে এক কথা নয় এবং ইবাদাতের মর্ম ও উদ্দেশ্য কী তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। অপনোদন করেছেন বিবর্তনবাদের। লেখক শুধু ফিলোসফি কপচান নি। কুরআন হাদীস থেকে জবাব দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন সকল অত্যাচারিত যে ন্যায়বিচার পাবে তা তুলে ধরা হয়েছে এ অংশে। বর্ণনা করা হয়েছে স্রস্টার অনুগ্রহ ও করুণার স্বরূপ।জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা ধর্মের মত রেফারেন্সসহ তুলে ধরে সবশেষে কুরানের মত তুলে ধরে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের অসাড় বাণী আর কুরআনের অখন্ডনীয় যুক্তি ও তার সার্থকতা তুলে ধরেছেন সফলতার সাথে।

    দ্বিতীয় অধ্যায়ের নাম স্রস্টা। এখানে লেখক স্রস্টার পরিচয় বর্ণনা করে তুলে ধরেছেন স্রস্টাকে কীভাবে চেনা যায়। শুরুতেই ফিতরাতের আলোচনা করেছেন। এর সাথে হালের বিজ্ঞানের সদ্য আবিষ্কৃত মস্তিষ্কে ‘গড স্পটের’ অবস্থান তুলে ধরেছেন। বোনাস হিসেবে যুক্ত করেছেন ‘গড স্পট’ নিয়ে স্টিভ কনরের করা সানডে টাইমস এর প্রতিবেদন। প্রশ্ন জাগে, ফিতরাত থাকলে মানুষ কেন স্রস্টাকে ভুলে যায়? লেখক এ প্রশ্নেরও যথাযথ উত্তর দিয়েছেন।
    স্রস্টা নিয়ে মানবসমাজে নানা বিভ্রান্তি প্রচলিত আছে। কেউ সৃষ্টিকে স্রস্টা বানায়, কেউ মানুষকেই বসিয়ে দেয় স্রস্টার আসনে আবার কেউ স্রস্টাকে নামিয়ে দেয় মানুষের রূপে। কেউ বলে সৃষ্টির মাঝে স্রস্টা একাকার হয়ে আছেন আর কেউ বলেন স্রস্টা সন্তান গ্রহণ করেছেন।লেখক প্রত্যেকটি ভ্রান্ত বিশ্বাসের অপনোদন করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সহজবোধ্য যুক্তি প্রমাণ দিয়ে। কিছু উদাহারণ দেই।
    স্রস্টা সবকিছু করতে সক্ষম হলে মানুষ হতে পারেন না কেন? অথবা স্রস্টা জন্মগ্রহণ বা মৃত্যুবরণ করতে পারেন না কেন? – এর উত্তরে বলেন, স্রস্টার সংজ্ঞাতেই বলা আছে যে তিনি একজন চিরন্তন সত্তা। শাশ্বত এ সত্তার কোন শুরু বা শেষ নেই। তাই এ ধরনের প্রশ্ন অবান্তর। ‘স্রস্টা সবকিছু করতে সক্ষম’ – বাক্যের ‘সবকিছু; থেকে সেগুলো বাদ যাবে যেগুলো তার সিফাতের সাথে সাংঘর্ষিক; যেগুলো তার শ্বাশ্বত গুণাবলীর বাইরে যায় বা স্রস্টাকে নিম্নতর আসনে নামিয়ে দেয়। যেমন ভুলে যাওয়া, ঘুমানো ইত্যাদি। ‘সবকিছু’ শব্দের ভেতর কেবল সেসব বিষয়ই থাকবে যেগুলো তা্র স্রস্টা হওয়ার সাথে সংগতিপূর্ণ। তেমনিভাবে স্রস্টা নিজে সৃষ্টিতে পরিণত হওয়ার মানে হল স্রস্টাই নিজে নিজেকে সৃষ্টি করেছেন – যা অযৌক্তিক। স্রস্টার চিরন্তন হওয়ার সাথে সাংঘর্ষিক।
    লেখক এ অংশে এসব ভ্রান্ত মতবাদের কারণ হিসেবে মানুষের সীমিত বোধশক্তিকে তুলে ধরেছেন।
    রচনার শেষ অংশে স্রস্টাকে কীভাবে পাওয়া যায় সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। ইসলামের মূল বার্তাই হচ্ছে এক ও একক স্রস্টার ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পণ করা। ইবাদাতের অধিকার ও ইবাদাহ করার যোগ্য সত্ত্বা একমাত্র আল্লাহই।

    শেষ অধ্যায়ের নাম ধর্ম। শুরুতেই সত্য ধর্ম নিরুপণে লেখক ৯ টি ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করেছেন যা বোধসম্পন্ন প্রত্যেক সত্যাশ্রয়ীই মেনে নিবেন। লেখক নিজে একজন সত্যাশ্রয়ী ও সত্য ধর্মের অনুসন্ধানে সমগ্র জীবন ব্যয় করায় এব্যাপারে লেখকের মুন্সিয়ানা ফুটে ঊঠেছে।
    প্রত্যেকটি ক্রাইটেরিয়ার সুবিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের আলোকে। সেগুলো হলঃ ১/ স্রস্টা যে ধর্ম মনোনীত করেছেন তা হবে সার্বজনীন ২/ ধর্মের সব বিধান একই মূলসূত্রে গাঁথা থাকবে ৩/ উপাসনায় ব্যাপকতা থাকবে, সীমাবদ্ধতা, কতিপয় রসম রেওয়াজ বা মাত্রাতিরিক্ত সীমাহীনতা থাকবেনা। ৪/ ধর্মীয় মূলনীতি অবিকৃত ও অক্ষত থাকবে, যুগে যুগে বদলাবেনা ৫/ বিধিনিষেধের মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকতে হবে ৬/ জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকতে হবে ৭/ সমগ্র মানবতার জন্যে পাপ থেকে মুক্তিলাভের উপায় থাকতে হবে ৮/ ধর্ম গ্রন্থের সংরক্ষণ ৯/ যে নবী সত্য ধর্ম প্রচার করেছেন তিনি এমন কোন মুজিযা রেখে যাবেন যা কিয়ামাত পর্যন্ত থাকবে। এখানে লেখক অলৌকিক সেই মুজিযা হিসেবে কুরআন কে তুলে ধরেছেন।
    লেখক এ অংশে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের বিশুদ্ধতার দাবীর বাস্তবতা নিরূপণ করেছেন যুক্তির কষ্টিপাথরে, বুদ্ধি, বিবেক ও জ্ঞান দ্বারা ও কুরআনে বর্ণিত পূর্ববর্তী জাতিদের ব্যাপারে বর্ণিত আয়াতের নিরিখে।

    ★পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ জীবনের উদ্দেশ্য না জানলে মানুষের অস্তিত্ব অর্থহীন হয়ে পড়ে। জীবনটি শুধু শুধু অপচয় হয়। পরকালের অনন্ত পুরস্কারের সুযোগ হাতছাড়া হয়। তাই স্বভাবতই মানুষ এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে ফিরে। এই প্রশ্নের স্পষ্ট , নির্ভুল উপায় পাওয়ার একমাত্র উৎস ঐশী গ্রন্থ। কিন্তু অধুনা মানুষ নানা যুক্তির ছলনায় সংশয়ে আবদ্ধ হয়। শায়খ বিলাল ফিলিপস সত্যাগ্রহী। তার সত্য ধর্মের সন্ধানে আধ্যাত্মিক ভ্রমণকেই তুলে ধরেছেন এ বইয়ে। জীবনের উদ্দেশ্য, স্রস্টার স্বরূপ ও সত্য ধর্মের বাস্তবতা এ বইয়ের প্রাণ। স্রস্টা সম্পদের অসম বন্টন কেন করলেন বা বিপদ আপদই বা আসে কেন এধরনের একগাদা প্রশ্নের সহজবোধ্য উত্তর দিয়েছেন বৈঠকি ঢং এ, তথ্য উপাত্ত সহকারে।

    বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। সেসময় নাস্তিকতার জবাব সম্বলিত খুব বেশী বই বাজারে পাওয়া যেতনা। আমি যদিও ততদিনে প্র্যাক্টিসিং হতে শুরু করেছি, তবুও মনের কোন এক অন্ধকার কুঠুরিতে কিছু প্রশ্ন থেকেই যেত যা শয়তান উদ্রেক করত। আসলে আগে সেকুলার বইপত্র বেশী পড়াতেই হয়ত। এ বইটি পাঠে আমার সেইসব কনফিউশন এত ভালভাবে দূর হয়ে যায় যে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই। বইটির বর্ণনাশৈলী মনোমুগ্ধকর। মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খেত যে, আমাজনের জংগলের কোন মানুষ যে ইসলাম নিয়ে জীবনে জানবেই না, সে কী জাহান্নামে যাবে? তার কী দোষ?

    লেখক এ বিষয়ে খুব মজার এক গল্প অবতারণা করেন। আমাজনের এক উপজাতি স্কোয়াচ নামক মূর্তির পূজা করে। একটি কুড়েঘরে মানুষরুপী মূর্তিটি বসানো ছিল। এক যুবক যখন পরম শ্রদ্ধায় মূর্তিকে সিজদাহ করছিল, তখন এক নেড়ি কুকুর মূর্তির উপর মূত্রত্যাগ করে। রাগত যুবক বহুদূর কুকুরকে তাড়া করে। ফিরে এসে ঠান্ডা মাথায় ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়, এই মূর্তি তার রব নয়। যে নিজের এমন অপমানের শোধ নেয়ারই ক্ষমতা নেই সে আবার কিসের রব। এটিই ছিল, এই যুবকের জন্য স্রস্টার নিদর্শন। এভাবে জন্মের পর থেকে আমৃত্যু স্রস্টা মানুষকে তার নিদর্শন দেখিয়ে যান। যা দেখে নাড়া খায় তার ফিতরাত। সে বুঝতে পারে স্রস্টার অস্তিত্ব। আর শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ কারো উপর অবিচার করবেন না।

    ★উপসংহারঃ সিয়ান প্রকাশনী বাংলাদেশে ইসলামী বই পাবলিকেশন্সের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড স্থাপনের প্রত্যয় নিয়ে এসেছে। এ বইও তার ব্যাতিক্রম নয়। বই এর নামকরণ যথার্থ। মলাট ও প্রচ্ছদ মনমাতানো। লেখকের লেখনী অনবদ্য। অনুবাদকের অনুবাদ প্রাঞ্জল। সম্পাদনা হয়েছে যত্নের সাথে। নতুন ধরনের সুন্দর বাংলা ফন্ট ব্যাবহার করা হয়েছে। বই ছাপা হয়েছে মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে। এক কথায় বই এর কোন ক্রুটি খুঁজে পাবেন না। তাই এই বইয়ের রেটিং এ কোন পয়েন্ট কাটতে পারিনি।

    4 out of 5 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
Top