মেন্যু
siratun nobi sw 1-3

সিরাতুন নবি সা. (১-৩ খণ্ড পূর্ণ)

কভার : হার্ড কভার, সংস্করণ : New Edition, 2022
অনুবাদক টিম : নুরুযযামান নাহিদ, আবদুর রশীদ তারাপাশী, মহিউদ্দিন কাসেমী সম্পাদনা টিম : আবদুর রশীদ তারাপাশী, আহসান ইলিয়াস, সালমান মোহাম্মদ ,আবুল কালাম আজাদ পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১৬০০ (ফাইনাল সেটিংয়ে অল্প বেশকম হতে পারে) কাগজ: ৮০... আরো পড়ুন
পরিমাণ

1,380  2,300 (40% ছাড়ে)

পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন

14 রিভিউ এবং রেটিং - সিরাতুন নবি সা. (১-৩ খণ্ড পূর্ণ)

4.9
Based on 14 reviews
5 star
92%
4 star
7%
3 star
0%
2 star
0%
1 star
0%
 আপনার রিভিউটি লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  1. 5 out of 5

    Ahmed Nadif:

    #কালান্তর_ওয়াফিলাইফ_রিভিউ_প্রতিযোগিতা
    ভূমিকা :
    আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ৩৮ নং আয়াতে বলেন,”দুনিয়াতে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট হেদায়েত (পথ নির্দেশিকা) যাবে।”বিভিন্ন সময়ে নবি রাসুলগনের আগমন মূলত উক্ত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।সেই ধারাবাহিকতায় সমগ্র বিশ্বের জন্য আগমন করেন আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মাদ (ﷺ)। সিরাত একটি আরবি শব্দ।বাংলায় যার পারিভাষিক অর্থ পথ বা রাস্তা । সিরাতুন নবি (ﷺ) দ্বারা শেষ নবি এবং রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) এর দেখানো পথ বা রাস্তাকে বোঝানো হয়।বস্তুত রাসুল (ﷺ) এর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই সিরাত।ইসলামি সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত বহু ইমাম,উলামায়ে কেরামের হাতে রাসুল (ﷺ) এর জীবনীগ্রন্থ তথা সিরাত রচিত হয়েছে।তেমনিভাবে বর্তমান বিশের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ড.আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবিও একখানা সিরাত রচনা করেছেন যা কালান্তর প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে।
    গ্রন্থটির বিশেষত্ব :
    সিরাতটির বিশেষত্ব হলো এটি গতানুগতিক ধারার সিরাতসমূহের মত নয় যা শুধুমাত্র রাসুল (ﷺ) এর জীবনী আলোচনা করেই ক্ষান্ত হবে বরং শাইখ সাল্লাবির এই সিরাতে রাসুল (ﷺ) এর জীবনের প্রতিটি ঘটনার কারণ,উদ্দেশ্য ও আমাদের জন্য শিক্ষার আলোচনা করা হয়েছে।পাশাপাশি অন্য সকল সিরাত হতে এই সিরাতের অনন্য হবার কারণ হল ড. সাল্লাবি ইসলামি ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সিরাতসমূহকে সমন্বয় করে বিশুদ্ধ তথ্যসমূহ তাঁর সিরাতে সংযোজন করেছেন যা বইটিকে অনন্য করে তুলেছে।রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবনচরিত বিবৃত হয়ে আছে দুনিয়ার মহাবিপ্লবের চিরন্তন চাবিকাঠি আল কুরআনে,সহস্র সহস্র হাদিস এর আলোচনায়,ইমাম-উলামায়ে কেরামদের লেখনিতে,বস্তুত সেটি এক মহাসমুদ্র।শায়খ সাল্লাবি সেই মহাসমুদ্র হতে শ্রেষ্ঠ ঘটনাসমুহ অত্যন্ত চমৎকারভাবে তাঁর বইয়ে বিবৃত করেছেন।
    বইটিতে আলোচ্য বিষয়সমূহ :
    ১.কেন রাসুল (ﷺ) কে বিশ্বের অন্য কোন প্রান্তে না পাঠিয়ে আরবে পাঠানো হয়েছিল।
    ২.মাক্কি জীবনে রাসুল (ﷺ) এর দাওয়াতের পদ্ধতি,সাহাবিদের আত্নশুদ্ধি ও চরিত্র গঠনে কি কৌশল গ্রহন করেছিলেন তা আলোচনার পর লেখক সেখান থেকে অত্যন্ত মূল্যবান শিক্ষা বের করেছেন।
    ৩.লেখক সাহাবিদের উপর কাফিরদের নির্যাতন আলোচনা এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যে কেউ পড়লে চোখের পানি ধরে রাখা কষ্টকর হবে।
    ৪.সাহাবিদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতিও অত্যন্ত বিশদভাবে আলচিত হয়েছে।
    ৫.প্রিয়নবি (ﷺ) এর মিরাজের আলোচনায় শায়খ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা বের করেন যা লেখকের বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করে।সেটি হলো”এই সম্পর্ক স্মরণ করিয়ে দেয় মসজিদে আকসার বিরুদ্ধে হুমকি মসজিদে হারামের বিরুদ্ধে হুমকি।”নিঃসন্দেহে মিরাজের ঘটনা থেকে উম্মাহর জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ শিক্ষা।
    ৬.মাদানি জীবনের শুরুতেই মদিনায় রাসুল (ﷺ) এর গৃহীত পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে যা প্রত্যেক মুসলিমের জানা অত্যন্ত জরুরি।
    ৭. আনসার ও মুহাজিরদের ভ্রাতৃত্বের বর্ণনায় লেখক অত্যন্ত মূল্যবান শিক্ষা বর্ণনা করেন যা এই মুহূর্তে মুসলিম জাতির জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি।
    ৮.ড.সাল্লাবির যে পুরো সিরাতগ্রন্থের যে অংশটুকু বইটিকে অনন্য করে তুলেছে তা হলো রাসুল (ﷺ) এর জিহাদসমূহের বিস্তারিত আলোচনা।শুরুতেই শায়খ ইসলামে জিহাদ এর মূলনীতিসমূহ সুবিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন।
    ৯.বদরের আলোচনার পর শায়খ আল্লাহর উপর ভরসার অত্যন্ত সুন্দর আলোচনা করেছেন ।
    ১০.উহুদের শহিদদের হৃদয়স্পর্শী আলোচনা কঠিন হৃদয়ের মানুষকেও কাঁদাবে।লেখকের উহুদ যুদ্ধের শিক্ষাগুলো মুসলিমদের ধৈর্যধারণে উৎসাহিত করবে।
    ১১.আহযাব যুদ্ধে রাসুল (ﷺ) এর বনু গাতফান গোত্রকে মিত্র হিসেবে গ্রহন না করা ও সাদ বিন মুয়াজ (রা) এর বুদ্ধিমত্তা এবং শাহাদাতের ঘটনা থেকে শায়খ উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উপস্থাপন করেছেন।
    ১২.অন্য জিহাদেও যেমন খায়বার,বনি মুস্তালিক,মক্কা বিজয়েও লেখকের একই ধারা লক্ষ করা যায়। বিশেষত তাবুকের আলোচনায় শায়খ সাল্লাবি অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন।
    ১৩.তাবুকে সাহাবিদের সর্বস্ব দান করেছিলেন এমনকি নারী সাহাবিয়া (রা) গণও তাদের গয়না খুলে দিতেন ।এই ঘটনা থেকে শায়খ বর্তমান দান-সদকাবিমুখ উম্মাহকে বেশ কিছু অপরিহার্য শিক্ষা উপহার দিয়েছেন যা প্রত্যেক মুসলিমের যা জানা অত্যন্ত জরুরি।
    ১৪.মক্কা বিজয়ের পর রাসুল (ﷺ) এর বিরল ক্ষমার সুবিস্তারিত আলোচনার পর শায়খ আমাদের জন্য ক্ষমা নিয়ে খুব সুন্দর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
    ১৫.রাসুল (ﷺ) এর বৈবাহিক বিষয়গুলোও খুব চমৎকারভাবে আলোচনা করা হয়েছে।প্রত্যক উম্মুল মুমিনিন(রা)এর সাথে রাসুল (ﷺ) এর বিয়ের কারণ ও বিবরণী উঠে এসেছে।রাসুল (ﷺ) এর বিবাহসমুহ যে নিজের ইচ্ছায় নয় বরং আল্লাহর আদেশে হয়েছে তা আলোচনার পর লেখক সমালোচকদের দাতঁভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন।
    ১৬. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি সাহাবায়ে কেরামের অপরিসীম ভালোবাসার বিষয়টি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে।
    ১৭.পরিশেষে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ওফাতের ঘটনা সুবিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
    বইটি যে কারনে পড়বেন :
    এই গ্রন্থটিতে রাসুল (ﷺ) এর একজন রাসুল হিসেবে,একজন নেতা হিসেবে,একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে, একজন বিচারক হিসেবে,একজন সেনাপতি হিসেবে, একজন স্বামী হিসেবে,একজন বন্ধু হিসেবে,একজন প্রচারক হিসেবে,একজন মহৎ মানুষ হিসেবে যেসকল আদর্শ রয়েছে তার সবকটি চমৎকারভাবে আলোচিত হয়েছে।বাস্তবিক অর্থেই এটি বর্তমান সময়ের আদর্শ সিরাতগুলোর মধ্যে অন্যতম।বাংলায় এমন একটি সিরাতের অনেক দরকার ছিল । আল্লাহর রহমতে কালান্তর প্রকাশনী অত্যন্ত সুন্দরভাবে বইটিকে অনুবাদ করার পর প্রকাশ করে সেই অভাব পূরণ করেছে।পাশাপাশি পৃষ্ঠার মান ও বাইন্ডিং অসাধারণ ছিল।আমি আশা করছি উম্মাহর প্রতিটি সদস্য সিরাতটি অধ্যয়ন করবেন।
    আল্লাহ তায়ালা লেখক ও কালান্তর প্রকাশনী এবং প্রতিযোগিতার সাথে সংশ্লিষ্ট ওয়াফি লাইফকে উত্তম প্রতিদান দান করুন ।আমিন।
    বই পরিচিতি :
    নাম : সিরাতুন নবি (ﷺ)।
    লেখক : ড.আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি।
    মূল্য : ১৩৫০ ।
    পৃষ্ঠা : ১৬০০।
    0 out of 1 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  2. 5 out of 5

    Mahira:

    #কালান্তর_ওয়াফিলাইফ_রিভিউ_প্রতিযোগিতা

    সীরাতে নববী হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার হিকমাহ্’র নিদর্শন এবং কুরআনে কারীমের জীবন্ত ব্যাখ্যা। রুগ্ন বিশ্বমানবতার তরে সীরাহ্ হচ্ছে এক মহা পথ্য।

    সমস্যাসঙ্কুল অশান্ত পৃথিবীতে যিনি নিয়ে এসেছিলেন শান্তির বার্তা, বাতলে দিয়েছিলেন ব্যক্তি পর্যায় থেকে রাষ্ট্রপর্যায়ের সার্বিক মুক্তির পথ, যার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ আমাদের দ্বীনকে করেছেন পরিপূর্ণ, যাঁকে ভালো না বাসলে পরিপূর্ণ হয়না ইমানের দাবী,সেই আল্লাহ্‌র রাসুলﷺ এর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়’ই লিপিবদ্ধ হয় সীরাতে।

    সীরাত অধ্যয়নের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তর ভিন্নতা রয়েছে। কারণ একজন মুসলমানের জন্য নবীজিরﷺ মুবারক সীরাত অধ্যয়ন শুধু জ্ঞানলাভের বিষয়ই নয়, বরং এটা আমাদের দ্বীনী প্রয়োজন। এই প্রয়োজন মিটানোর ধারাবাহিকতায়ই প্রকাশিত হয়েছে প্রশংসনীয় একটি প্রয়াস ‘সিরাতুন নবি’, যেটি প্রকাশের পর থেকেই লাভ করেছে উত্তরোত্তর পাঠকপ্রিয়তা।

    ▪️প্রেক্ষাপটঃ

    উম্মাহর প্রাথমিক যুগ থেকেই প্রজ্ঞাবান মুসলিমরা একেকজন একেক দৃষ্টিভঙ্গিতে রচনা করে আসছেন নবীজিরﷺ জীবনালেখ্য। যার ধারা আজও বহমান। সীরাহ্ রচনার এই নিনির্মিখ সাধনায় বিমুগ্ধ হয়েছেন অনেক অমুসলিমরাও। মারগোলিয়াথ-এর মত ইসলাম বিদ্বেষী প্রাচ্যবিদও বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘মুহাম্মদের জীবনীকারদের দীর্ঘ ফিরিস্তি রয়েছে। এটা গুণে শেষ করা অসম্ভব। তবে ফিরিস্তিতে নিজের স্থান করে নেয়া গৌরবের ব্যাপার’

    এই গৌরবের ধারায় ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবী নিঃসন্দেহে সমকালীন যুগের এক বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্ব। তাকে পাঠকমহলে হাত ধরে পরিচয় করিয়ে দেওয়াটা নিতান্তই নিষ্প্রয়োজন। জগদ্বিখ্যাত ইতিহাসবিদ। কলম আর ইলমের জোরে তার খ্যাতি আজ বিশ্বজুড়ে।

    তিনিই বিশুদ্ধ বর্ণনার আলোকে প্রাচীন সিরাতগ্রন্থের আলোচনা-পর্যালোচনা করে অবতারণা করেছেন অনবদ্য গবেষণাধর্মী সীরাহ্। অনন্য সেই সৃষ্টিকে ৩টি খন্ডে বাংলাভাষী পাঠকদের টেবিলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে বহুল জনপ্রিয় মাকতাবা ‘কালান্তর প্রকাশনী ‘।

    .
    ▪️যাঁর জীবনগাঁথা
    একটিমাত্র মানুষ। যার হাত ধরে পাল্টে গেলো পৃথিবীর ইতিহাসের আদ্যোপান্ত। মোড় নিলো বিশ্বের সমাজব্যবস্থা। সভ্যতা বিনির্মানের তরীতে লাগলো নতুন এক হাওয়া। যাঁর প্রবর্তিত অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরণে আজও মানবজাতিকে রাষ্ট্রের দাসত্ব ও পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার অভিশাপ থেকে দিতে পারে অবমুক্তি। সেই মানুষটাই আমাদের নবীজিﷺ। মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ। রাব্বের পরিকল্পনায় যিনি এসে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন গোটা পৃথিবী।

    ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন বাকি পাঁচটে মানুষের মতো নিতান্তই সাধারণ। জন্ম,কর্ম,সংসার সর্বত্রই দায়িত্বপূর্ণ বিচরণে আসমানী-ধর্ম আর সংসার-ধর্মের সমন্বয়ে তিনি জগদ্বাসীর কাছে জীবন্ত উদাহারণ। কখনো খেঁটে খাওয়া মজুর, কখনো মেষপালক, কখনো ন্যায়বিচারক, কখনোবা রাষ্ট্রনায়ক হয়ে সমাজব্যবস্থার প্রতিটি অধ্যায়ে তিনি রেখে গেছেন অনুপ্রেরণার মরিচবাতি। জীবনের সমষ্টিস্বরূপ ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’ হয়ে আছেন উম্মাহর মাঝে।

    তাঁরই জীবনের প্রতিটা অধ্যায়, কর্ম ও শ্রম, দাওয়াহ ও ইবাদাহ, জিহাদ ও যুহদ, সংগ্রাম-সাধনা সবকিছুর বিস্তারিত জানার জন্য আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ড. সাল্লাবীর সাথে; প্রায় ১৬০০ পেইজের সুদীর্ঘ যাত্রায়।

    ▪️বইকথনঃ
    বইটির মোট তিনটি খন্ড। গতানুগতিক ফরম্যাটের হলেও এই বইটি হচ্ছে তুলনামূলক তথ্যবহুল। নিঃসন্দেহে বইটি নবীপ্রেমিকদের তৃষ্ণা নিবারণ ও গবেষণাকর্মের জন্য যুগপৎভাবে সহায়ক। জন্মপূর্বকাল থেকে শুরু করে নবীজীবনের প্রতিটি অলিগলি ঘুরিয়ে নবীজির বেদনাবিধুর ইন্তেকাল পর্যন্ত সিকুয়েন্স আর রেফান্সের ভিত্তিতে সাজানো তিন খন্ডের এই সীরাতগ্রন্থটি।

    -১ম খন্ড:
    ১ম খন্ডে আলোচিত হয়েছে নবীজির জন্মপূর্ব তৎকালীন আরবের অবস্থান ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলী, নবীজির জন্ম, বংশ, শৈশব, বেড়ে উঠা, ফিজার যুদ্ধ, হিলফুল ফুযূল, গোপনে ও প্রকাশ্যে দাওয়াত, প্রথম বিবাহ, প্রথম হিজরত, মিরাজ, আকাবার বাইয়াতসহ নববীজীবনের প্রাথমিক পর্যায়গুলো।

    -২য় খন্ড:
    ২য় খন্ডের সূচনা হয় হিজরত দিয়ে। বিভিন্ন গোত্রের নিকট নুসরা ও হিজরত, আনসার ও মুহাজিরদের ভাতৃত্ব স্থাপন, মদিনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপসমূহ, মদিনা সনদ প্রণয়ন, মসজিদে নববী নির্মান সহ যুদ্ধপূর্বের সব আলোচনা হয়েছে এই খন্ডে। তবে যুদ্ধের বর্ণনাও রয়েছে। নবীজির জীবদ্দশার বৃহৎ যুদ্ধগুলো বদর, উহুদ, খন্দক সহ ছোটবড় আরো অনেক অভিযানের কথা উল্লেখ আছে এই খন্ডে।

    -৩য় খন্ড:
    সর্বশেষ খন্ডটিতে আলোচিত হয়েছে আহযাব যুদ্ধ, হুদায়বিয়ার সন্ধির রূপরেখা, দুটোর মধ্যবর্তী ঘটনাগুলোর সবিস্তর আলোচনা হয়েছে। এরপর আসে চূড়ান্ত বিজয় অর্থাৎ হুদায়বিয়ার সন্ধি, মক্কা বিজয়ের পটভূমি, মক্কাবিজয়ে নবীজির দূরদর্শী পরিকল্পনা ও শেষটায় ঝুলিতে ‘জয়’ নিয়ে ফেরা। বিজয়ের পর হুনাইন,তায়েফ,তাবুকযুদ্ধের বর্ণনাএ শিক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং যবণিকায় পৌঁছেছে বিদায় হজ্জ ও নবীজির দুনিয়াত্যাগের মধ্য দিয়ে।

    .

    ▪️বইটির বিশেষত্বঃ
    গতানুগতিক বায়োগ্রাফির মতোই এই বইটিতে সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে নববীজীবন। তবে এর মূল আকর্ষণ হচ্ছে তথ্য ও তত্ত্বের সমন্বয়। বিভিন্ন সীরাহগ্রন্থের গবেষণার ফসল। ভিন্ন ভিন্ন সীরাতের ফ্লেভার নেওয়া যায়।

    বিভিন্ন ঘটনাবলী বর্ণনার সিকুয়েন্স ও রেফারেন্স দুটোই মেইনটেইন করা হয়েছে। এতে পড়ার মধ্যে অবিন্যস্ততা আসার যেমন চান্স নাই, তেমন অথেনসিটি নিয়েও আলাদা মাথাব্যথা নাই।

    সীরাহর জন্য ব্যাপকভাবে গবেষণাধর্মী কাজ ও ঘাটাঘাটির জন্য অত্যন্ত সহায়ক এই বই। বিন্যাস কিংবা উপস্থাপন সবদিক দিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী। বাংলাভাষী গবেষকদের জন্য সম্ভবত বেস্ট অপশন।

    তাছাড়া শুধুমাত্র কাঠখোট্টা আলোচনায় একঘেয়ে বর্ণনাতেই লেখক সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং তুলে ধরেছেন ঘটনা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে; পাঠককে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন উপলব্ধির কাঠগড়ায়।

    এ’তো গেলো অভ্যন্তরীণ বিশেষত্ব! বাহ্যিকভাবে বইয়ের বাইন্ডিং কিংবা পেইজ কোয়ালিটি সবদিক দিয়েই উন্নতমানের। অনুবাদকদের পোক্তহাত তাতে বাড়িয়ে দিয়েছে আরো দু’চামচ বিশেষণের যোগমাত্রা। ঝরঝরে এবং সুখপাঠ্য। সবমিলিয়ে, বইটি পাঠকদের জন্য একটা চমৎকার সীরাহগ্রন্থ।

    ▪️নিজস্ব অভিমতঃ

    মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে গৌরবময় উত্তরণের জন্য একটা আইডল থাকে; থাকে অনুসরণীয় আদর্শ। আদর্শহীন কোনো জনগোষ্ঠী সুবিন্যস্তভাবে সফলতা লাভ করতে পারেনা। তাই, আজকের এই নব্য জাহিলিয়াতের যুগেও যদি মুসলিম উম্মাহ ফিরে পেতে চায় তাদের সোনালী অতীত, বর্ণালী ইতিহাস। তাহলে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে প্রিয়নবী (সা.)-এর সীরাত। সুতরাং সেই পথেই হোক আমাদের নব যাত্রা। আদর্শিক প্রত্যয়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক গোটা মানবজীবন।

    আর এর জন্য আলোচ্য বইটি হচ্ছে একটা কম্বো। গবেষণাধর্মী ও তথ্যবহুল আলোচনায় মূল শিক্ষাটা প্রদান করা চাট্টিখানি কথা নয় কিন্তু! কলেবরের কিংবা খন্ডে বড় হোক, পড়তে পড়তে হারিয়ে যাওয়া যাবে নববীজীবনের প্রত্যেকটা স্তরে। ইনশাআল্লাহ্।

    ▪️বই বৃত্তান্তঃ-

    বই : সিরাতুন নবিﷺ
    লেখক : ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি
    অনুবাদক : আব্দুর রশীদ তারাপাশী, মহিউদ্দিন কাসেমী, নুরুযযামান নাহিদ
    প্রকাশনী : কালান্তর প্রকাশনী
    প্রচ্ছদমূল্য : প্রতি খণ্ড ৳৬০০

    Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  3. 5 out of 5

    MD Rakib:

    বই রিভিউঃ ‘সিরাতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’

    আইয়ামে জাহেলি বা অন্ধ কার যুগ এই নাম দেখার পর ব্যাখ্যার প্রয়োজন রাখে না। কারণ এই যুগে এমন কোন খারাপ কাজ ছিলনা যা করা হয়নি । ঠিক সেই সময় এমন একজন মানুষ কে মহান আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন যিনি বিশ্ববাসি কে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসেন । তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি কেয়ামতের মাঠে সবাই যখন নিজেকে নিয়ে চিন্তিত থাকবে এবং নবী রসুল সবাই বলবে ইয়া নাফসী , ইয়া নাফসী ঠিক ঐ মুহুর্তে উম্মাত দরদী বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন ইয়া উম্মাতি ইয়া উম্মাতি । বর্তমান বিশ্বে যাকে নিয়ে সবচাইতে বেশি বই লেখা হয়েছে তিনি হলেন মাহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ।
    কেনই বা লেখা হবে না , মহান আল্লাহ তাআলা যে বলেছেন , ( وَرَفَعۡنَا لَكَ ذِكۡرَكَ )
    “এবং আমি আপনার মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি”। (আল ইন’শিরাহ ৯৪:৪)
    তিনি হলেন পৃথিবীর সবচাইতে সফল মহা নায়ক যিনি মানব জাতি কে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য একাই দায়িত্ব গ্রহন করেন , এবং পৃথিবীর নিকৃষ্ট মানুষদের কে স্বর্ণের মানুষে পরিণত করেন , এবং অসভ্য সমাজ কে পরিণত করেন সভ্য সমাজে ।

    অনেক ঐতিহাসিক যাদের সংখ্যা এক বা দুইজন নয় ,অসংখ্য, যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেননি তারাও এই কথা বলতে বাধ্য হয় মহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর শ্রেষ্ট মানুষ । তাদের মধ্যে অন্যতম আলফোনস ডি ল্যামারটিন তিনি বলেন , “মেধা ও বুদ্ধিমত্তায় বর্তমান ইতিহাসের কোনো মহান ব্যক্তিকে কেউ কি নবী মুহাম্মাদ সাল্লালহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তুলনা করতে দুঃসাহস দেখাবে ? বিশ্ব ইতিহাসের এসব বিখ্যাত ব্যক্তিদের হয়তো কেউ অস্র তৈরি করেছে , কেউ সংবিধান প্রণয়ন করেছে কিংবা কেউ প্রতিষ্ঠা করেছে সাম্রাজ্য । তারা তো অস্থায়ী জীর্ণ কিছু গৌরব অর্জন করেছে , যা তদের সামনে ধ্বংস হয়ে গেছে । কিন্তু এই মহান পুরুষ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে সৈন্যবাহিনী পরিচালনা করেছেন , শরিয়ত প্রবর্তন করেছেন , সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন , বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীকে শাসন করেছেন , শাসকদের অনুগত করেছেন । শুধু এগুলোই নয় , বরং সেই সাথে ততকালীন মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে পরিচালিত করেছেন । যা ছিল বিশ্বের এক তৃ্তীয়াংশ । আর শুধু এটাই নয় , তিনি সকল মূর্তি লটারির তির এবং ভ্রান্তধর্ম , ভ্রান্তচিন্তা ও বিশ্বাসকে অপসারিত করেছেন । …এখন সর্বপ্রকার মহৎ মানবীয় মাপকাঠির আলোকে আমাকে বলুন , বিশ্বের আর কেউ কি নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারে” ? (উসয়াতুল লিল আলামিন )

    আর বর্তমানে এমন কিছু নাস্তিক আছে যারা তাদের পিতৃপরিচয় যানেনা তারা কিনা বিশ্ব নবীকে নিয়ে কুরুচিপূ্র্ণ মন্তব্য করে ।

    পৃথিবীর এমন কোন ভাষা খুজে পাওয়া যাবে কি যে ভাষায় বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী গ্রন্থ লিখা হয়নি অথবা অনুবাদ করা হয়নি ? বাংলা ভাষাও তার ব্যতিক্রম নয় । বাংলা ভাষায় মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য সিরাত গ্রন্থ পাওয়া যায় তার মধ্যে কিছু আছে লেখা হয়েছে আর কিছু আছে অনুবাদ করা হয়েছে । অনুবাদকৃত সিরাত গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম ‘সিরাতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এই সিরাত গ্রন্থটি রচনা করেছেন বর্তমানে সবচাইতে আলোচিত ইতিহাসবিদ
    ডা. আলী মুহাম্মাদ সাল্লাবী । লেখকের বর্ণনা ভঙ্গি এতই মন মুগ্ধকর যে কোনো পাঠক কে আকৃষ্ট করবেই । তার লিখিত সিরাতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম বৈশিষ্ট হল,

    এই গ্রন্থটি ৩ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে ১৭ টি অধ্যায় রয়েছে , পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৬০০ ,
    এই সিরাত গ্রন্থটি বিস্তারিত ভাবে লেখা হয়েছে যা খুব সহজে পাঠক হৃদয়ঙ্গম করতে পারে ।
    উক্ত সিরাত গ্রন্থে কুরআন , হাদিস ও বিখ্যাত ইসলমী স্কলারদের দলিল পেশ করা হয়েছে যা দ্বারা পাঠক খুব সহজে জটিল ও মতানৈক্য বিষয় গুলো স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারে । এবং যুক্তির মাধ্যমে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে যা এক কথায় অসাধারণ ।
    এই সিরাত গ্রন্থের সবচাইতে চমৎকার ও দৃষ্টিনন্দিত বৈশিষ্ট হল , প্রত্যেকটি অধ্যায়ের শেষে উক্ত অধ্যায়ের বিশ্লেষণ ও শিক্ষনীয় বিষয়গুলো খুবই চমৎকার ভাবে তুলে ধরা হয়েছে যা পাঠক কে দারুন প্রভাবিত করে ।

    সিরাত গ্রন্থটি কালান্তর থেকে প্রকাশিত হয়েছে , যার প্রথম খণ্ড অনুবাদ করেছেন আব্দুর রশীদ তারাপাশী এবং মহিউদ্দিন কাসেমী , দ্বিতীয় খণ্ড অনুবাদ করেন নুরুযযামান নাহিদ ও আব্দুর রশীদ তারাপাশী , এবং তৃ্তীয় খণ্ড অনুবাদ করেন মহিউদ্দিন কাসেমী ।

    ডা . আলী মুহাম্মাদ সাল্লাবী ১৯৬৩ সালে লিবিয়ায় জন্ম গ্রহন করেন । তিনি একাধারে ফকিহ , রাজনীতিবিদ , বিপ্লবি ইতিহাসবিদ । তিনি প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা লিবিয়াতে করেছেন । মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন । তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম নিয়ে ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

    তিনি বর্তমান বিশ্বে সবচাইতে আলোড়ন সৃষ্টি কারী একজন ইতিহাসবিদ তিনি একাধারে লিখেছেন নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামী ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস , এছাড়াও তিনি ইসলামী ইতিহাসের বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে লিখেছেন ।

    মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্ম গ্রহন করেন । তার এই আগমন যেন পুরো পৃথিবী আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছে , আর জালেমরা হয়েছে ভীতসন্ত্রস্ত । কারণ পৃথিবী বুঝতে পেরেছে মহা মানবের আগমন ঘটেছে তাই আজ থেকে পৃথিবী ভার মুক্ত হবে , আর অত্যাচারীরাও ভালো করে অনুধাবন করেছে যে তাদের অশুভ শক্তির শিকড় উপড়ে ফেলা হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশু কাল থেকেই দেখিয়েছেন কিভাবে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হয় , তাইতো তিনি তার দুধমাতা হালিমার এক স্তন থেকে দুধ পান করতেন অন্য স্তন থেকে দুধ পান করতেননা , কারন সেটি তার দুধ ভাইয়ের জন্য ।

    মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজীবন মানুষের জন্য এবং মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন , তিনি চেয়েছেন প্রত্যেকটি মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাক ।

    আজ সবচাইতে অবাক লাগে যখন আমরা মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিরাত গ্রন্থ পড়ি তাতে দেখতে পাই মহান আল্লাহ তকে যে মহান রিসালাতের মিশন দিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে আমাদের প্রাণ প্রিয় নাবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাফের ময়দানে রক্ত ঝরিয়েছেন , তিন বছর বন্ধি অবস্থায় কাটিয়েছেন , এবং দেশান্তরিত হয়েছেন ।

    এরপর ইসলাম ও মুসলমানদেরর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মহান আল্লাহ তা’আলা কাফের দের বিষদাঁত ভেঙ্গে ফেলার জন্য জিহাদের আদেশ দেন । অথঃপর মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের থেকে পরামর্শ নিলেন , মিক্বদাদ রা আরয করলেন , “হে আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে পথ প্রদর্শন করেছেন সে পথে আপনি চলতে থাকুন । আমরা সর্বাবস্থায় আপনার সঙ্গে রয়েছি । আল্লাহর কসম ! আমরা আপনাকে ঐ কথা বলবনা , যে কথা ইসরাঈল মূসা আ কে বলেছিল তা হল : (اذْهَبْ أَنتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلَا إِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُونَ)কাজেই তুমি আর তোমার প্রতিপালক যাও আর যুদ্ধ কর আমরা এখানে বসে রইলাম (আল মায়িদা ৫ :২৪ )
    কিন্তু আমাদের ব্যাপার ভিন্ন । আমরা বরং বলব , আপনি ও আপনার প্রভু যুদ্ধ করুণ , আমরা সর্বাবস্থায় আপনাদের সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করব” ।

    এবং সা’দ ইবনু মুয়ায রা বলেন , “হে আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )আর আপনি যদি আমাদের নিয়ে ঐ সমূদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে চান তবে আমরা এতে ঝাঁপিয়ে পড়ব” । (সিরাতে ইবনে হিসাম)

    সাহাবীদের এই পরামর্শগুলো কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে , তারা দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালবাসতে হয় এবং অনুসরণ করতে হয় ।

    মহান আল্লাহ তাআলা বলেন (قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي (يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
    আপনি বলুন তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর , তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল , পরম দয়ালু । (আল ইমরান ৩ :৩১)

    আজ আমরা মুসলমানরা যদি সাহাবীদের মত করে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালবাসতে ও অনুসরণ করতে পারি তাহলে আমরাও সাহাবীদের মত বিশ্বের পরা শক্তিকে পদানত করতে পরবো । যেই ভাবে সাহাবীরা পারস্য ও রোমকে পদানত করেছে ।

    উল্লেখ্য, সিরাতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বইটি লেখেছেন,
    ডা . আলী মুহাম্মাদ সাল্লাবী
    অনুবাদক: যার প্রথম খণ্ড অনুবাদ করেছেন আব্দুর রশীদ তারাপাশী এবং মহিউদ্দিন কাসেমী ।
    দ্বিতীয় খণ্ড অনুবাদ করেন নুরুযযামান নাহিদ ও আব্দুর রশীদ তারাপাশী ।
    এবং তৃ্তীয় খণ্ড অনুবাদ করেন মহিউদ্দিন কাসেমী ।
    বইটি প্রকাশিত হয়েছে কালান্তর থেকে ।
    প্রচ্ছদ মূল্য : ৳ 1,350
    এবং ওয়াফিলাইফ অনলাইন বইমেলা উপলক্ষে : 1,170 ৳

    Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  4. 5 out of 5

    Din Muhammad Sheikh:

    #কালান্তর_ওয়াফিলাইফ_রিভিউ_প্রতিযোগিতা

    মূলত মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীর ওপর রচিত গ্রন্থকেই পারিভাষিক অর্থে সীরাহ বলা হয়। আমাদের জীবনে রাসূলুল্লাহর সীরাহ পাঠের গুরুত্ব, বেঁচে থাকতে অক্সিজেনের গুরুত্বের সমতূল্য বলা যেতেই পারে। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে গেলে অবশ্যই তাঁর জীবনাচার আমাদের জানতে হবে। আর তাই পড়তে হবে সীরাহ।

    চলুন, আজ আমরা অন্যতম জনপ্রিয় একটি সীরাহ গ্রন্থের সাথে পরিচিত হই : কালান্তর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ড. আলি সাল্লাবির ‘সিরাতুন নবি’। গ্রন্থটি ৩টি খণ্ডে ভাগ করে প্রকাশ করেছে কালান্তর। প্রতিটি খণ্ডের আদ্যোপান্ত নেড়েচেড়ে দেখি, চলুন।
    .

    ✿ একনজরে বইপরিচিতি✿

    ◉ বই : সিরাতুন নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
    ◉ লেখক : ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি
    ◉ অনুবাদক : আব্দুর রশীদ তারাপাশী, মহিউদ্দিন কাসেমী, নুরুযযামান নাহিদ
    ◉ প্রকাশনী : কালান্তর প্রকাশনী
    ◉ পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৫৪৪+৫২০+৫৩৩= ১৫৯৩
    ◉ প্রচ্ছদমূল্য : প্রতি খণ্ড ৬০০/- করে ৩ খণ্ড ১৮০০/-
    ◉ প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২০
    ◉ কাভার : হার্ডকাভার
    .

    ▪️ যেভাবে সাজানো হয়েছে প্রতিটি খণ্ড :

    বইটি ৩ খণ্ডে বিভক্ত। ৩ খণ্ড মিলে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।

    • ১ম খণ্ড :

    এ খণ্ডটি অনুবাদ করেছেন আব্দুর রশীদ তারাপাশী, মহিউদ্দিন কাসেমী এবং নুরুযযামান নাহিদ।

    প্রকাশকের কথা, সম্পাদকীয় বাণী, অনুবাদকত্রয়ের ভাষ্য উল্লেখের পর ৩ খণ্ডের সংক্ষিপ্ত সূচি যুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারটা বেশ চমকপ্রদ ও পাঠকসহায়ক। পাঠক কেবল এটুকুতে চোখ বুলিয়েই বুঝে নিতে পারবে যে, কোন খণ্ডে কী আছে। এরপর যুক্ত হয়েছে ১ম খণ্ডের বিস্তারিত সূচিপত্র। তারপর যুক্ত হয়েছে ‘লেখকের কথা’, যেখানে লেখক রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণের গুরুত্ব এবং সে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সীরাহ পাঠের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন। তিনি কীভাবে নিজ গ্রন্থকে সাজিয়েছেন, তাও উল্লেখ করেছেন এখানে।

    ১ম খণ্ড শুরু হয়েছে নবুওয়াতপূর্ব পৃথিবীর শীর্ষ সভ্যতা ও ধর্ম নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে। এরপর আছে আরব জাতিসত্তার পরিচিতি, তাদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও চারিত্রিক অবস্থার বর্ণনা, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মপূর্ব বিশেষ ঘটনাবলির বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম, বংশপরিচয়, শৈশবকাল, হারবুল ফুজ্জারে তাঁর অংশগ্রহণ এবং হিলফুল ফুজুলে যুক্ত হওয়া নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা, খাদিজা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহার সাথে তাঁর বিবাহ, ওহীর অবতরণ, গোপনে দাওয়াতি কাজে গৃহীত পন্থা, মাক্কীজীবনে ইসলাম, প্রকাশ্যে দাওয়াত এবং সেই দাওয়াতের প্রেক্ষিতে মুশরিকদের আচরণ সংক্রান্ত আলোচনা। হাবশায় হিজরত, তায়েফে গমন, মিরাজের ঘটনা, আকাবার শপথ নিয়ে আলোচনা করার পর লেখক ১ম খণ্ডটি শেষ করেছেন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের বর্ণনা দিয়ে।

    • ২য় খণ্ড :

    ২য় খণ্ডের অনুবাদ করেছেন আব্দুর রশীদ তারাপাশী এবং মহিউদ্দিন কাসেমী।

    মুহাজিরদের পুরস্কার এবং হিজরত থেকে পেছনে অবস্থানকারীদের পরিণতি বর্ণনার মধ্য দিয়ে এ খণ্ডটি শুরু হয়েছে। এরপর আলোচনায় এসেছে মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পদক্ষেপ, যেখানে আমরা পাবো মসজিদে নববি নির্মাণ, আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন, মদিনা সনদ প্রণয়ন ও তৎসংশ্লিষ্ট আলোচনা। তারপরই চিত্রিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুদ্ধজীবন। বদর, উহুদের মতো বড় দু’টি যুদ্ধের বর্ণনার পাশাপাশি খন্দকের যুদ্ধের আগ পর্যন্ত ছোটছোট আরও বেশকিছু অভিযান নিয়েও আলোচনা আছে এ খণ্ডে। অতঃপর এ খণ্ডটি শেষ হয়েছে  বনু মুসতালিকের যুদ্ধের বর্ণনার মাধ্যমে।

    • শেষ খণ্ড :

    এ খণ্ডটি এককভাবে অনুবাদ করেছেন মহিউদ্দিন কাসেমী।

    আহযাব বা খন্দকের যুদ্ধের বর্ণনার মধ্য দিয়ে এ খণ্ড শুরু হয়েছে। এরপর আছে হুদায়বিয়ার সন্ধির বিস্তারিত বর্ণনা। হুদায়বিয়া ও মক্কাবিজয়ের মধ্যবর্তী ঘটনাবলি বর্ণনার পর এসেছে মক্কাবিজয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। হুনাইন, তাবুক যুদ্ধ সম্পর্কিত আলোচনার পাশাপাশি এতদুভয়ের মধ্যবর্তী ঘটনাবলিও বর্ণিত হয়েছে। তাবুক যুদ্ধে অংশ নিতে না-পারা ৩ সাহাবির ঘটনা ও তা থেকে উপদেশ-শিক্ষা খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এরপর এসেছে বিদায় হজের আলোচনা। অতঃপর অত্র খণ্ডটি শেষ হয়েছে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসুস্থতা এবং তাঁর ইন্তেকালের বর্ণনা দেওয়ার মধ্য দিয়ে।
    .

    ▪️ গ্রন্থটির বৈশিষ্ট্য :

    সীরাহ হিসেবে ‘সিরাতুন নবি’ বইটির বেশ কিছু অসাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন :

    • লেখক মাত্র ৩ খণ্ডেই (মোট পৃ: ১৫৯৩) বিশ্বনবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিস্তারিত জীবনী তুলে এনেছেন।

    • বিভিন্ন সীরাহ থেকে লেখক নিজের বর্ণনার রেফারেন্স দিয়েছেন। সে হিসেবে বহু প্রসিদ্ধ-অপ্রসিদ্ধ সীরাহর সংকলন বলা চলে বইটিকে। বইটি পড়ে অনেক সীরাহর সাথেই পরিচিত হওয়া সম্ভব।

    • বইটি মূলত বিভিন্ন সীরাহ পাঠান্তে লেখকের গবেষণাধর্মী একটি সৃষ্টি।

    • বর্ণনার সঠিকতা এবং ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে বেশ দারুণভাবে।

    • ১ম খণ্ডের শুরুতেই প্রতি খণ্ডের সংক্ষিপ্ত সূচিপত্র যুক্ত করা হয়েছে। এটি বেশ উপকারী। সহজেই প্রতিটি খণ্ড নিয়ে ধারণা পাওয়া যায়।

    • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, প্রায় প্রতিটি ঘটনা শেষে লেখক আমাদের জন্য ‘শিক্ষা’ তুলে এনেছেন। এতে পাঠক নিজের জীবনের সাথে সীরাহর শিক্ষা মিলিয়ে নিতে পারবে খুব সহজেই।

    • বইটিতে বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে নবিজীবনকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে খুব প্রাসঙ্গিকভাবে।
    .

    ▪️ ভালোলাগা-মন্দলাগা

    মন্দলাগার মতো তেমন কিছু না পেলেও, ভালোলাগার মতো আছে অনেক কিছুই। সর্বাগ্রে বলতে পারি, ‘সিরাতুন নবি’ এর প্রতিটি খণ্ডের বাইন্ডিং আমাকে বেশ অবাক করেছে। অত্যন্ত পোক্ত বাইন্ডিং। কালান্তর এ জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ পেতেই পারে। পৃষ্ঠামানও বেশ ভালো। অনুবাদের সাবলীলতা আপনাকে বুঝতেই দেবে না যে, এটি অনুবাদগ্রন্থ। ব্যক্তিগতভাবে প্রচ্ছদও আমার কাছে ভালো লেগেছে। এক প্রকার আভিজাত্যের ছাপ বিদ্যমান প্রচ্ছদে।

    .

    ▪️ লেখকপরিচিতি :

    ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি। বিশ্ব নন্দিত ইতিহাসবিদ। ইসলামি ইতিহাসের ওপর রচনা করেন তাত্ত্বিক ও তথ্যভিত্তিক গ্রন্থ। মুসলিম মনীষীদের জীবনী তুলে আনেন নিজ শক্তিশালী কলমের আঁচড়ে। এতে বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন বিশ্বজুড়ে।

    এ প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ জন্মেছেন লিবিয়ায় ১৯৬৩ সালে। যৌবনে প্রায় ৮ বছর কাটিয়েছেন জেলে। প্রাথমিক পড়াশোনা লিবিয়ায়ই। পরবর্তীতে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সও করেছেন। দীক্ষা নিয়েছেন ইউসুফ আল কারযাবির কাছ থেকেও। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০টিরও ওপরে গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের অধিকাংশই ইতিহাসনির্ভর।

    Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  5. 5 out of 5

    Afi Emon:

    #কালান্তর_ওয়াফিলাইফ_রিভিউ_প্রতিযোগিতা

    নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), যেই নাম প্রত্যেক মুসলিম-মুসলিমার অন্তরের প্রশান্তি, ইতিহাসের পাতায় যেই নাম সমান ভাবে বিচরন করছে ১৪০০ বছর ধরে, শত সহস্র প্রচেষ্টার পরও যেই নামের সাথে লাগানো যায় নি একটু কালো দাগ, হয়নি মলিন ঘোলাটে.. কি আছে এই নামে?

    আসলে নামটা যে মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ মানব, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার প্রেরিত সর্বশেষ রাসূল, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষের সর্বোত্তম জীবনাদর্শ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর। তার সম্পর্কে আমরা মুসলিম কতটুকুই বা জানি?

    বাংলাদেশি মুসলিমদের জন্য বাংলা ভাষায় অসংখ্য সিরাত গ্রন্থ রচিত হয়েছে। আমাদের প্রানের চেয়ে প্রিয় রাসূল (সাঃ) কে জানার জন্য কালজয়ী সব সিরাত গ্রন্থ যেমন- আর রাহিকুল মাখতুম, সিরাত ইবনে হিসাম ইত্যাদি বাংলা ভাষায় বহু বার অনুবাদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই গ্রন্থগুলোর কলেবর একটু ছোট হবার কারনে আমাদের কাছে অজানা রয়ে গেছে নবীজি (সাঃ) এর জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার বড় কলেবরের গ্রন্থ পড়তে গিয়ে অনেকেই ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে। ফলাফল হল সিরাত ইতিহাস পাঠের যে মূল উদ্দেশ্য, নবীজি (সাঃ) এর জীবনি থেকে শিক্ষা গ্রহন করে নিজেকে সাজানো, তাতে আমরা সফলতা পাইনি।

    এই সমস্যার সমাধান যে এভাবে হয়ে যাবে ভাবি নি। বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক, ফকিহ, রাজনীতিবিদ ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি স্যার এর গ্রন্থ আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যাহ আরজু ওয়াকায়ি ওয়া তাহলিলু আহদাস এর অনুবাদ গ্রন্থ সিরাতুন নবি (সাঃ) যা কালান্তর প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ৩ খন্ডের কলেবরে বইটি করেছে বাংলা ভাষাভাষী দের জন্য সিরাত সংক্রান্ত সকল সমস্যার সমাধান।

    বইটির বৈশিষ্ট্যসমূহ-

    ১. নবীজি (সাঃ) এর জন্মপূর্ব বিশ্বের দূর্বিষহ অবস্থা থেকে শুরু করে নবীজি (সাঃ) এর মৃত্যু পর্যন্ত বিস্তারিত সকল বর্ননা উঠে এসেছে এই বইটিতে।

    ২. বইটি ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি স্যার এর শত সহস্র সিরাত গবেষনার ফল। সুদূর অতিত থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত যত ধরনের সিরাত গ্রন্থ রচিত হয়েছে বলা যায় এই বইটি ওই সমস্ত গ্রন্থের মূল নির্যাস, যা বইটির রেফারেন্স দেখলে ধারনা করা যায়।

    ৩. সিরাত পাঠের মূল বিষয় হল শিক্ষা, যা এই বইটিতে লেখক খুবই সুন্দর করে বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য করে ব্যাখ্যা করেছেন। মুসলিম উম্মাহর জন্য এই শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে এর গুরুত্বের কথা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই।

    ৪. যারা ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি স্যার এর লেখা আগে পড়েছেন তারা খুব ভালো করেই তার লেখনি সম্পর্কে জানেন। উনি পাঠককে একদম টাইম মেশিনের মত অতিতে নিয়ে যায়। অনুবাদক বৃন্দ তার লেখার ভাব ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, যা আপনি বইটি পড়লেই বুঝতে পারবেন। হারিয়ে যাবেন অতিতে।

    আল্লাহ তাআলা বলেন-‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের (চরিত্রের) মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ২১)

    তাই নিজের জীবনকে রাসূল (সাঃ) এর প্রদত্ত শিক্ষার আলোকে সাজানোর কোনো জুরি নেই। আর আমাদের রাসূল (সাঃ) এর জীবনি থেকে পরিপূর্ন শিক্ষা অর্জনের জন্য এই বইটি অনবদ্য হয়ে থাকবে।

    2 out of 2 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No