মেন্যু
seerate mustafa sallallahu alaihi wa sallam

সীরাতে মুস্তফা (সা.) – (১-৩ খন্ড)

বইটির বিশেষ দিক হল এই সীরাতটি আধুনিক যুগের কিছু সীরাতের মত পশ্চিমা আদর্শ ঘেঁষা ও সংক্ষিপ্ত নয়। এখানে লেখক অকপটে আল্লাহর রাসূলের জিহাদি জীবন, দাওয়াহর ক্ষেত্রে আপোষহীনতা, মুজিযা ইত্যাদির আলোচনা... আরো পড়ুন
খন্ড নং Clear
পরিমাণ
পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন

1 রিভিউ এবং রেটিং - সীরাতে মুস্তফা (সা.) – (১-৩ খন্ড)

5.0
Based on 1 review
5 star
100%
4 star
0%
3 star
0%
2 star
0%
1 star
0%
 আপনার রিভিউটি লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  1. 5 out of 5

    nishumoshiur:

    গ্রন্থাকার আল্লামা ইদরীস কান্দলবী(র) বিশ্ব বিখ্যাত জ্ঞানপীঠ দারুল উলূম দেওবন্দে এ তাফসীর, হাদীস এবং ফিকহ বিষয় অধ্যাপনার গুরু দায়িত্ব পালন করেন। পরে লাহোরের জামেয়া আশরাফিয়ায় শায়খুল হাদীসের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তারঁ আরেক পরিচয় তিনি ভারতের সুবিখ্যাত আলিমে দ্বীন ও মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (র) এর ছাত্র ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে তাঁর উত্তরাধিকারী ছিলেন। সীরাতে মুস্তফা (সা) তাঁর গ্রন্থ সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
    গ্রন্থটি তিন খন্ডের সমষ্টি। যথা-
    প্রথম খন্ড:
    *এই খন্ডে নবী(সা) এর পবিত্র বংশের পরিচয় বর্ণনা করা হয়েছে যা শুরু ইব্রাহীম (আ) এর বংশ থেকে। পুরো বংশধারা রেওয়াতকারীর নামসহ বর্ণিত হয়েছে। এরপর বংশের প্রত্যেক পুরুষের মর্যাদা এবং তৎকালীন কুরাইশদের শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য বংশের উপর কেন বলা হয় তার বর্ণনা হয়েছে। নবী (সা) এর জন্মের পূর্বের কিছু ঘটনা যেমন – আব্দুল মুত্তালিবের যমযম কূপ খনন, নবী (সা) এর পিতার জন্ম সংক্রান্ত আলৌকিক নির্দেশ, হস্তী বাহিনীর প্রসিদ্ধ ঘটনা এবং এর পিছনের হাকিকত কিছু বর্ণনা এসেছে। নবী (সা) এর শুভ জন্মের সময় দুনিয়া কাঁপানো ঘটনা যেমন – রোম সম্রাটের প্রাসাদের স্তম্ভ ধ্বসে যাওয়া, পারস্যের হাজার বছরের আগুণ নিভে যাওয়ার ঘটনাও এসেছে।
    *নবী (সা) এর শৈশবের কিছু ঘটনা যেমন- তার বরকতে বিবি হালিমার জীবনে প্রভাব, নবী(সা) বক্ষ বিদারণের ঘটনা ও এর ভিতর নিগূঢ় রহস্য আলোকপাত হয়েছে। নবুয়তের পূর্বে নবী (সা) এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রকাশ যা তাকে তখনকার মানুষদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা ও কা’বা ঘর নির্মাণের ঘটনা এসেছে এখন্ডে। মাঝখানে রিওয়াতকারী ওয়াকেদী প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা এসেছে যে তার রিওয়াত গ্রহণযোগ্যতা ও অন্যান্য ইমামদের মতামত যা ইলম হাসিল ও সংরক্ষণে আলেমদের ভূমিকা উঠে এসেছে।
    *এখানে নবী (সা) এর আগমনের পূর্ববার্তা যে আগেই পূর্ববর্তী নবী (আ) দের দেয়া হয়েছে তার প্রমাণ বিভিন্ন ঘটনায় এসেছে এবং এর জন্য খাদীজা (রা) এর নবী (সা) এর আকর্ষণ যা শেষ পর্যন্ত বিবাহের বন্ধনে রুপ নেয় এর বর্ণনাও এসেছে। এরপর ওহী নাযিলের ঘটনা এবং সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী সাহাবীদের নাম ও তাদের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
    *এরপর হিজরতের পূর্বে সুদীর্ঘ তের বছরের দাওয়াত ও মক্কার কুরাইশদের অসহনীয় নির্যাতন ও অর্থ-সম্পদের প্রলোভন দেখিয়ে নবী (সা) কে বিরত রাখার হৃদয়বিদারক ও অমানবিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। প্রথম হিজরত ইথিওপিয়ায় সাহাবীদের ত্যাগ সম্রাট নাজাশীর বদান্যতা সত্যই আশ্চর্যজনক। নবী (সা) প্রিয় স্ত্রীর ও চাচার মৃত্যু এবং তায়েফের রক্তক্ষরণের ঘটনার পর আল্লাহ্ পাকের পক্ষ থেকে মিরাজের ঘটনার মাধ্যমে।নবী (সা) কে সম্মানিত করার বর্ণনা এসেছে। এখন্ডের শেষে হিজরতের লোমহর্ষক ঘটনায় নবী (সা) ও আবু বকর (রা) এর দৃঢ়তারর ঘটনা এবং মদীনায় দ্বিতীয় হিজরী পর্যন্ত বর্ণনা এসেছে।
    দ্বিতীয় খন্ড:
    *এই খন্ডে হিজরতের পর মুহাম্মদ (সা) এর জিহাদি জীবনের বর্ণনা উঠে এসেছে। প্রথমেই লেখক সুন্দরভাবে জিহাদ কি ও কেন বিষয় নিয়ে খুব জ্ঞানগর্ভ আলোচনা কুরআন-হাদীসের মাধ্যমে সম্পাদন করেছেন। জিহাদ কাদের বিরুদ্ধে করতে হবে এবং কিভাবে, তার আগে কিভাবে দাওয়াত দিতে হবে এবং কবুল করলে কি হবে বা না করলেই কি আচরণ করা হবে ওর বর্ণনা এসেছে। জিহাদের আসল উদ্দেশ্য ও দুনিয়া জীবনের তথা দেশের জন্য যুদ্ধ এবং ইসলামের জন্য যুদ্ধের পার্থক্য এবং আল্লাহ্ পাকের পক্ষ থেকে জিহাদে শহীদদের জন্য সুসংবাদ সমূহ এতো ভালভাবে তুলে ধরেছেন যে, এরপর আর ভুল হওয়ার প্রশ্ন জাগে না।
    *প্রথম সারিয়্যা অর্থাৎ নবী(সা) এর নির্দেশে কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতিতে যেসব অভিযান ও যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে সবগুলোর বর্ণনায় এসেছে এবং যেসব গাযওয়া অর্থাৎ নবী(সা) এর সশরীরে সেনাপতির পদে থেকে যুদ্ধ পরিচালিত করেছেন সেসবের বর্ণনা এসেছে।
    *ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ যার দ্বারা কত শত হুকুম-আহকাম নাযিল হয়েছে, সেই বদর যুদ্ধের সূচনা, প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত বর্ণনা উৎকৃষ্ট দলিলসহ পেশ করা হয়েছে। কিভাবে ছোট অভিযানে বের হয়ে সাহাবীরা যুদ্ধের মতো বড় কাজে বিনা প্রস্তুতিতে শুধুমাত্র আল্লাহ্ পাকের নির্দেশে নবী (সা) নেতৃত্বে সব কিছুর মায়াকে পেছনে ফেলে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছেন। জ্ঞানের আধার নবী (সা) এর বুদ্ধিদিপ্ত যুদ্ধ কৌশলে কিভাবে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। সাহবী (রা) দের নবী(সা) এর উপর যে অগাধ বিশ্বাস ও ভালবাসা ছিল তা এ যুদ্ধের মাধ্যমে পরিপূর্ণরুপে ফুটে উঠেছে। কিভাবে একজন মানুষকে ভালবেসে বিশ্বাস করে নিজের জান কুরবান করা যায় তা এ যুদ্ধের ইতিহাস না জানলে বোঝা মুশকিল। পরিপূর্ণ ঈমান ও অসীম বীরত্ব নিয়ে মাত্র ৩১৩ জনের পদাতিক দল কিভাবে ১০০০ জনের বিশাল বাহিনীকে সামান্য কিছু অস্ত্র নিয়ে যু্দ্ধ জয় করার ইতিহাস আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আল্লাহ্ পাকের সাহায্য কিভাবে এসেছিল তা সাহাবী (রা) রা স্বচক্ষে দেখেছেন। শুধু নবী (সা) কে বিশ্বাস করে যুদ্ধে শহীদ হওয়া সাহাবী (রা) ‘রা যে যুদ্ধের ময়দানে জান্নাতের সুঘ্রাণ পেয়েছেন। এই ঈমানে দাবিদার সাহাবী (রা) ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আল্লাহ্ পাক দুনিয়াতেই তাদের জান্নাতের সুসংবাদ দেন। এ যুদ্ধে নবী (সা) এর সবচেয়ে বড় শত্রু আবু জেহেলের সামন্য কিশোর বয়সের সাহাবীর হাতে পরাস্ত হয়। আশ্চর্যের বিষয় যে, এখানে ৩১৩ জন সাহাবীদের নামই বর্ণনা করা হয়েছে।
    *উহুদের যুদ্ধে নবী (সা) এর নির্দেশ ঠিকভাবে পালন না করার কারণে মুসলমানরা হেরে গেল। এ যুদ্ধেই নবী(সা) মারাত্মক ভাবে আহত হন এবং তাঁর দাঁত মোবারক শহীদ হয়। এ যুদ্ধে মুসলিমদের ধৈর্যের পরীক্ষাও দিতে হয়। পরাজয়ে আল্লাহ্ পাকের হিকমত নিয়ে আলোচনাও আছে।
    *গাযওয়ায়ে বনী মুসতালিক থেকে প্রত্যাবর্তনেরর সময় হযরত আয়েশা (রা) এর সাথে ঘটে যাওয়া ইফকের বহুল আলোচিত ঘটনা।
    *খয়বরের যুদ্ধে বিশাল এলাকা জয় করে অনেক গনিমতের হাসিল হয়।
    *এ খন্ডে হুদাইবিয়ার সন্ধির দ্বারা ব্যহ্যিক ভাবে মুসলিমদের অপমান করা বোঝা গেলেও প্রকৃত পক্ষে মুসলিমদেরই জয় হয়েছে যা আল্লাহ্ ঘোষণা দিয়েছেন। এসময়ই নবী(সা) তৎকালীন দুনিয়া শক্তিধর রাজা-বাদশা তথা রোম,পারস্য, ইথিওপিয়ার সম্রাটের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছান।
    সবশেষে সুলতান মাহমুদ গজনভীর সোমনাথ মন্দিরের মূর্তি ভাঙ্গার রহস্য তুলে ধরা হয়েছে।
    তৃতীয় খন্ড
    *এই খন্ডে সেই কাঙ্খিত বিজয়ের বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে যা আল্লাহ্ পাক নবী (সা) এর কাছে ওয়াদা করেছিলেন। মক্কা বিজয়ের ঘটনা সুন্দরভাবে উপস্থাপন হয়েছে। নবী(সা) রহমতের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় যখন তিনি মক্কা বিজয়ের পর তাঁর সবচেয়ে ঘোরতর শত্রুগুলোকে শুধু এজন্য ক্ষমা করে দেন যে, তারা ইসলাম কবুল করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম ক্ষমার দৃষ্টান্ত একটিও নেই। একে একে প্রায় বেশির ভাগ কুরাইশ নেতা ইসলামের ছায়াতলে আসে।
    *মক্কা বিজয়ের পরপরই নবী(সা) প্রথম তিনি কা’বা শরীফের সব মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেন এবং আশে পাশের সব এলাকাতে অভিযান প্রেরণ করেন সব মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার জন্য। গাযওয়ায়ে হুনাইনের বর্ণনা এসেছে। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও তার ব্যাখ্যা এসেছে যেমন – মূত’আ বিয়ের নিষিদ্ধ হওয়া ও মক্কায় প্রশাসক নিয়োগ।
    *মক্কা বিজয়ের পর দ্বীন ইসলামের সত্যতা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো এবং গোত্রের প্রতিনিধিগণ দলে দলে নবী(সা) এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণের বর্ণনা এসেছে। নবী(সা) এর শেষ গাযওয়ায়ে তাবূকের বর্ণনা এসেছে এবং মুনাফিকদের অংশগ্রহণের কথা যেমন এসেছে তেমনি কিছু ঈমানদার সাহাবীদের ভুলবশত না যাওয়ার ফলে অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহ্ পাকের তাদের সম্মানে আয়াত নাযিল হওয়ার কথা এসেছে।
    এরপর বিদায় হজ্বের ঘটনা ও মদীনায় প্রত্যাবর্তন হয়ে অসু্স্থ হওয়ার বর্ণনা এসেছে। এরপর নবী(সা) এর ওফাত ও ওফাতকালীন সাহবীদের হৃদয়বিদারক অবস্থার বর্ণনা এসেছে।
    *এরপর সাহাবীদের খলিফা নির্বাচন ও এ প্রসঙ্গে উত্থাপিত শীয়াদের আপত্তিকে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দলিল ও যুক্তির সাহায্যে লেখক উল্লেখ করেছেন। হায়াতুন্নবী প্রসঙ্গে কাসেম নানুতবী (র) এর উপযুক্ত ব্যাখ্যা এসেছে। এরপর নবী(সা) এর একাধিক বিবাহের নিগূঢ় রহস্য, নবী(সা) এর মুজিজা সমূহের বর্ণনা, কুরআনের অলৌকিকত্বের কারণ ও নবী(সা) এর ব্যাপারে পূর্ববর্তী নবী(আ) দের ভবিষ্যত বাণীর ২৫টি দলিল উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বশেষে নবী(সা) এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ ও গ্রন্থাকারের বিশেষ দুআ উল্লেখ করেছেন।
    **একান্ত মন্তব্য :
    খুব সামান্যই বানান ভুল এসেছে গ্রন্থে। সামান্য কিছু জায়গায় (রা) এর স্থলে ভুলে (র) এসেছে। সাধারণ শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গ্রন্থ পড়ে অনেক ভাল লেগেছে, অনেক বেশি জানা হয়েছে। বেশির ভাগ সহীহ হাদীস বর্ণনা হয়েছে, হাসান হাদীসও এসেছে ও সামান্য দূর্বল হাদীস বর্ণনা করে দলিল দেয়াতে বোঝা যায় লেখক অনেক যত্নের সাথে এটি রচনা করেছন। পড়তে গিয়ে অনেক বড় বড় আলেমের নাম জানা যায় যাদের আপ্রাণ চেষ্টা ও আল্লাহ্ প্রদত্ত বিশেষ মেধা দ্বারা সহীহ দ্বীন আমাদের সামনে আজ উপস্থিত। যেমন- ওয়াকেদী, মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক, ইবনে হাজার আসকালানী, আল্লামা রুমী(র) সহ অনেক নাম। তিন খন্ডের গ্রন্থ অবশ্য একত্রেও পাওয়া যায়। কওমী প্রাঙ্গনে এর বিশেষ কদর আছে বলে জেনেছি এবং আমার
    পরামর্শ দাতা বিশিষ্ট মুহাদ্দিস সাহেবের উল্লেখ করার ফলে এটি পড়েছি। আপনারা পড়লে ফিকহের সমুদ্রের অল্প হলেও দৃশ্য উপভোগ করবেন বলে আশা রাখি।
    12 out of 13 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
Top