ইশকুল অব লাভ
কিছু মানুষের জীবনগল্প আমাদের মতো আটপৌড়ে হয় না।
প্রমত্তা নদীর মতো তাদের জীবন সবসময় বয়ে চলে ভাঙা-গড়ার তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে।
এমনকি তাদের ভালোবাসার গল্পগুলোও হয় ঘাত-অভিঘাতের প্রচণ্ড সংগ্রামমুখর।
ইশকুল অব লাভের ‘হাজি সাহেব’ ও ‘দিদিমা’এর জীবনগল্পও অনেকটা সে ধরনের।
তখন ইংরেজ সরকারের ক্রান্তিকাল চলছে। হিন্দু-মুসলিম দাঙার অণলে পুড়ে যাচ্ছে দেশ। বিশ্বাসের দালানগুলোও তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে।
ইতিহাসের এমন এক ক্লান্তিকর সময়েই মিলিত হয় দু’জন মানুষ। সময়ের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে দুটি বিপরীত মেরুর মানুষ মুখোমুখি হয় ভালোবাসার চৌরাস্তায়।
একদিকে হুড়মুড় করে রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে পড়ছে।
অন্যদিকে দু’টি মানুষের জীবনের বিনিসূতো যুক্ত হচ্ছে ভালোবাসার রেশমি বুননে।
দাঙা, অবিশ্বাস, আগুন, সংঘাত আর আবেগের সাংঘর্ষিক আবহের ভেতর দিয়ে হাজি সাহেব এগিয়ে যান, ভালোবাসার জান্নাতে।
দিদিমার সঙ্গে তার সংগ্রামমুখর ভালোবাসার এ উপাখ্যানেই থেমে যায়নি ‘ইশকুল অব লাভ’ এর প্লট। গল্পের ছুঁতোয় উঠে এসেছে বৃটিশশাসিত কলকতার বাম রাজনীতি, কোনঠাসা ইসলামি ঐতিহ্য, খ্রিস্টান মিশনারির প্রকোপ আর লেন্দুপ দর্জির অভাগা সিকিমের ভাগ্যহত হওয়ার বেদনানীল গল্প। ইতিহাসের এই শিক্ষাগুলো আমাদের বাংলাদেশি মুসলমানদের জন্যে খুব বেশি প্রাসঙ্গিক। হয়তো আমাদের সচেতনতা থামিয়ে দেবে নতুন আরেকটি সিকিম তৈরির কালো তোড়জোড়।
গল্পের শেষ দৃশ্যে এসে আপনিও অনুভব করবেন, দিদিমার মতো আমরা প্রত্যেকেই বুঝি আমাদের ভুবনে একা। ভীষণ একা।
হায়! চোখের কোণে দু’ ফোঁটা অশ্রুই বুঝি আমাদের সবার জীবনের অন্তিম দৃশ্য।
.
গল্পকার আতীক উল্লাহ ভাইয়ের সার্থকতা এখানেই। দুটি প্রেমিক অন্তরের জীবনগল্পের ভেতর দিয়ে তিনি ফুটিয়ে তোলেন ইতিহাসের কিছু নাবলা কষ্টের কথা। কখনো ইতিহাসের পেছনে হারিয়ে যায় জীবনগল্প। একটু বাদেই ইতিহাসের সেই অমসৃণ মেঠো পথ ধরেই আবার উঠে আসে দু’টি প্রেমিক হৃদয়ের ঢেকিছাটা আবেগের প্রমত্তা ঢেউ।
-
-
save offসুবোধ
লেখক : আলী আবদুল্লাহপ্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন220 ৳163 ৳এটি একটি উপন্যাস বলা যায়। এই ...
-
hotমেঘলা মেয়ে
লেখক : মোরশেদা কাইয়ুমীপ্রকাশনী : ওয়াফি পাবলিকেশন212 ৳148 ৳ছোটবেলা থেকেই দাদা-দাদুর আদর পায়নি আদ্রি—সে ...
-
hotসুবোধ এবং এই নগরী
লেখক : আলী আবদুল্লাহপ্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন210 ৳155 ৳সুবোধ মানে উত্তম বুদ্ধি বা জ্ঞান। ...
-
save offকারাগারে সুবোধ
লেখক : আলী আবদুল্লাহপ্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন200 ৳148 ৳সম্পাদন: শিহাব আহমেদ তুহিন এটি একটি উপন্যাস ...
-
hotসেদিনও বৃষ্টি ছিল
লেখক : হুযাইফা শামীম ত্বহাপ্রকাশনী : আয়ান প্রকাশন200 ৳115 ৳ধরণীর বুকে কিছু আলোকিত মানুষ থাকে, ...
-
hotউত্তরসূরি
লেখক : আরিফুল ইসলামপ্রকাশনী : ওয়াফি পাবলিকেশন408 ৳286 ৳উত্তরসূরি। আধুনিক শিক্ষিত যুবক আনাস উপন্যাসের ...
-
hotশেষ পর্যন্তও
লেখক : সানজিদা সিদ্দিকী কথাপ্রকাশনী : সিয়ান পাবলিকেশন170 ৳124 ৳মিতুর বেশ ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু ঘুমানো ...
-
hotখেয়াঘাট
লেখক : এনামুল হক ইবনে ইউসুফপ্রকাশনী : সঞ্চালন প্রকাশনী300 ৳165 ৳ঝোড়ো হাওয়া আর উদ্দেশ্যহীন দোদুল্যমানতায় ডুবে ...
-
featureউমর (রা.)-এর ঢাকা সফর
লেখক : মুহাম্মদ নূরুযযামানপ্রকাশনী : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স140 ৳চারদিকে অন্ধকার অমানিশা। বিপন্ন মানবতার অন্তিম ...
-
hotনুসাইবা
লেখক : আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদপ্রকাশনী : নিয়ন পাবলিকেশন240 ৳178 ৳পশ্চিমা বিশ্বের দুর্গন্ধ মিশ্রিত নারীনীতির নাম নারীবাদ। যার কবলে পরে ঈমান হারা হচ্ছে শত-শত নারী ও পুরুষ। আল্লাহর দেওয়া বিধানের বাহিরে তাদের চাওয়া দুনিয়ার খাহেশাত পূরণে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। অথচ আল্লাহর বিধানের বাহিরে আদৌ কোনো স্বাধীনতা নেই। যা আছে কেবলই তা ক্ষতিকর—মনুষ্য সভ্যতার জন্য। আর সে ক্ষতিকর বস্তু থেকে মানুষকে এক আল্লাহর পথের আহ্বানই নুসাইবাদের কাজ। সে নুসাইবারা—যারা নুসাইবা বিনতে কাব রাদিআল্লাহু আনহার উত্তরসূরি। ...
-
জান্নাতুল ফাতেমা – :
zannatulfatema7878 – :
জাযাকাল্লাহু খাইর
সাখাওয়াত রাহাত – :
★প্রাককথন:
‘ইশকুল অব লাভ’ মানে ‘ভালোবাসার পাঠশালা’। এখানকার মূল সিলেবাস বা পাঠ্যসূচি হলো ‘প্রকৃত ভালোবাসা’। কোনো কথা না বলে, কারো দিকে না তাকিয়েও কীভাবে অনেক কথা বলা যায়, অনেক বার্তা দেওয়া যায়—এখানে তা পরম যত্নে শেখানো হয়। নারীর প্রকৃত ও শরীয়াহ অনুমোদিত ভালোবাসার পাঠশালা কোনটি—তা হৃদয়ঙ্গম করানো হয়। গল্পচ্ছলে ইতিহাসের বিভিন্ন পাঠ পর্যালোচনা ও শিক্ষনীয় বিষয়গুলো ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ পাঠশালার প্রধান শিক্ষাগুরু দু’জন; হাজী সাহেব এবং দিদিমা।
★প্রধান চরিত্র: ০১
হাজী সাহেব একজন স্বপ্নচারী ও স্পষ্টবাদী মানুষ, যিনি ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলতে অপছন্দ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও পারিবারিক শিক্ষার গুণে সুশিক্ষিত। আপাদমস্তক ধর্মভীরু; যিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ে মুনাজাতে শিশুর মত হাউমাউ করে কাঁদেন। পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রমী, প্রচণ্ড আত্মপ্রত্যয়ী। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে পরম আত্মবিশ্বাসী। সম্মোহনী শক্তির অধিকারী এ চরিত্রটি একজন জাত শিক্ষকের মতোই পাঠককে শেখাবে সত্যিকারের ভালোবাসা। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কর্তব্যনিষ্ঠা ও স্বকীয়তা বজায় রাখার প্রতি প্রণোদিত করবে।
★প্রধান চরিত্র: ০২
দিদিমা যেন হাজী সাহেবের ঠিক বিপরীত মেরুর বাসিন্দা। চৌদ্দপুরুষের ধারাবাহিকতায় দিদিমারূপি ‘নীলিমা’ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ঋদ্ধ। শিক্ষাসূত্রেই পেয়েছেন নানা ধর্মের, নানা বর্ণের মানুষের সাহচর্য। তাই হয়তো তিনি ভীষণ আড্ডাবাজ আবার নিভৃতচারী। আবেগি কিন্তু নিয়মনিষ্ঠ। বিনয়ী কিন্তু অভিমানী। বিরহী, কিন্তু আত্মমগ্ন। কিছুটা দুঃখী, কিন্তু প্রাণচঞ্চল। সামান্য বিষণ্ণ, কিন্তু সেই সাথে সচেতন। সদা-হাস্য, তবে চিন্তক।
হাজী সাহেব নামক পরশপাথরের ছোঁয়ায় দিদিমা লাভ করেন জীবনের সবচেয়ে বড় দৌলত ‘ঈমান’। কৈশোরে কনভেন্ট স্কুলে পড়ার সময় নবাবজাদি ‘রাওফা’র সুললিত কণ্ঠে শোনা গজলের মায়াবী সুর তার হৃদয়ে অনুরণিত হয়েছিল। সেই গজলে মা খাদিজার মৃত্যুতে নবীজি ﷺ ও সন্তানদের কষ্ট হওয়ার যে করুণচিত্র ফুটে ওঠেছিল, তা হৃদয়ে তৈরি করেছিল হাহাকার। চোখ থেকে অঝোরে ঝরিয়েছিল অশ্রু। নীলিমা থেকে ‘নি’মাহ’ হওয়ার অপরিস্ফুট সূচনা হয়তো এটাই ছিল।
★পাঠ অনুভূতি:
‘আমারে দেব না ভুলিতে’—জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ঠিক এ বাক্যটিই মাথায় ঘুরছে ‘ইশকুল অব লাভ’ বইয়ে হাজী সাহেবকে আদ্যোপান্ত জেনে। আসলে গোটা বইয়ে তাঁর পৌরুষদীপ্ত কর্মকাণ্ডই তাঁকে মনে রাখতে বাধ্য করেছে। তাঁর সততা, সরলতা, দায়িত্বশীলতা, বিশ্বস্ততা, বীরত্ব ও ধার্মিকতায় যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছি। কারো সাথে কথা কাটাকাটি বা ঝগড়া না করেও যে জেতা যায়— হাজী সাহেবকে না পড়লে হয়তো বিশ্বাস করতে পারতাম না। আমার কাছে এ বইয়ের প্রিয় চরিত্র ‘হাজী সাহেব’। বাসর রাতে নতুন স্ত্রীর জন্য মচমচে মাছ ভাজার সঙ্গে তাঁর ঝোলা থেকে বের হওয়া জমজমের পানি, প্রায় ১০ পদের খেজুর, বোরকা, ওড়না, সুরমা, সুগন্ধি, চুড়ি, হার ইত্যাদির ফিরিস্তি দেখে প্রথমে অবাক এবং পরে হতবাক হয়েছি! বিস্ময়াভিভূত হয়ে ভেবেছি—এমন মানুষও এ পৃথিবীতে আছে! সেইসাথে রোমাঞ্চে ভরপুর ও জ্ঞানের মূর্তপ্রতীক ‘দিদিমা’র চরিত্রটিও অসাধারণ লেগেছে। তাঁকে পড়ার সময় নজরুলের আরেকটি পঙক্তি বারবার মনে পড়ছিল—
‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ বইয়ের একেবারে শেষে এসে অবশ্য দিদিমা’র জন্য বেশ খারাপ লেগেছে। বারবার মনে প্রশ্ন জেগেছে—এমনটা না হলেই কী হতো না? এধরনের বই একবার পাঠে তৃপ্ত হওয়া যায় না। বারবার পড়তে ইচ্ছে করে।
★বইটির একান্ত পাঠে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা যাবে:
• ‘জাত শিক্ষক’-এর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য কী?
• আগেকার দিনে গ্ৰামীণ জনজীবন কেমন ছিল?
• ভারতে ইহুদিদের আনাগোনা কবে থেকে?
• ভারতে কয় জাতের ইহুদি বাস করত?
• ভারতের প্রথম দুই মহিলা স্নাতক কারা?
• দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা ডাক্তার কে ছিলেন?
• ব্রাহ্মধর্মের প্রবর্তন কোন ধারায় হয়েছিল?
• বর্তমানে নিষিদ্ধ ‘দেবদাসী’রা কতটা মানবেতর জীবনযাপন করত।
• খ্রিস্টান নানদের সাথে হিন্দু দেবদাসীদের সাযুস্য।
• বই না পড়েও কীভাবে জ্ঞান অর্জিত হয়?
• চোখ সুন্দর ও ভাষাময় হয় কীভাবে?
• নারীদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও সুশিক্ষার সুফল এবং কুশিক্ষার ভয়াবহতা।
• তুরস্কের খিলাফাহ বিলুপ্তির পর সর্বপ্রথম কোন প্রেসিডেন্ট আযান ও আরবি শিক্ষা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন? এজন্য তাকে কী মূল্য চুকাতে হয়েছিল?
• কোন অটোমান সুলতান ইহুদিদের গোপন সংগঠন তুর্কি ফ্রি-ম্যাসন সোসাইটির সদস্য ছিলেন?
• কাকে ‘কোহিনুর অব হায়দারাবাদ’ বলা হতো?
• ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের ভিত মূলত কার হাতে পোক্ত হয়?
• কার হাতে টিপু সুলতান শহীদ হয়েছিলেন এবং মহীশূর রাজ্যের পতন ঘটেছিল?
• ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাণিজ্যিক কোম্পানি থেকে শাসকে পরিণত করেছিল কে?
• ভারতে আগত ব্রিটিশ প্রশাসকদের মধ্যে কে ছিলেন একাধারে একজন বিজয়ী, নির্মাতা ও সংস্কারক?
• ‘ছেলেটাকে আমার হাতে দাও বাবাটা কার হাতে পড়লো তা নিয়ে আমি চিন্তা করি না’—এই বিখ্যাত উক্তিটি কাদের?
• কনভেন্ট ও চার্চের তত্ত্বাবধানে বিশ্বব্যাপী পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আদি উৎস কী?
• জগদ্বিখ্যাত কোহিনুর হীরাটি কোন হীরকখনিতে পাওয়া গিয়েছে?
• পলাশীতে সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়, মহীশূরে টিপু সুলতানের শহীদ হওয়া ও হায়দরাবাদের নিজামশাহীর পতন এক সূত্রে গাথা কীভাবে?
• প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি ভারতের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?
• ‘সত্যাগ্ৰহ’ আন্দোলনের ধুয়া তুলে ভারত কীভাবে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের সম্মিলিত আয়তনের চেয়ে বৃহত্তর স্বাধীন ‘হায়দারাবাদ’কে গিলে ফেলেছিল?
• ছলে বলে কৌশলে ভারত কীভাবে স্বাধীন জুনাগড় (গুজরাট), সিকিম ও কাশ্মীর (একাংশ) কে নিজের সাথে একীভূত করে নিয়েছিল?
★বইটি কাদের জন্য?
যারা গল্প পড়তে পছন্দ করেন, বইটি তাদের খুব ভালো লাগবে। উপন্যাসপ্রেমীরা তো এটিকে প্রিয় উপন্যাসগুলোর একটি মনে করতে বাধ্য হবে। ইতিহাসের গলি ঘুপচিতে ঢু মারতে যাদের ভালো লাগে, এ বইটি তাদের অবশ্যপাঠ্য। বইটিতে এমন কী আছে, যার কারণে এটি পড়তেই হবে— না বলে, বরং বলা ভালো—কী নেই বইটিতে? ভারতে মোঘল, সুলতানী শাসনামলের খণ্ডচিত্র, তুরস্কের উসমানীয় সাম্রাজ্যের চুম্বকাংশ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকাল, ৪৭ এর দেশভাগ, হিন্দু নেতৃবৃন্দের হঠকারিতা, কোনঠাসা ইসলামি ঐতিহ্য ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বইটিতে সুনিপুণভাবে বিবৃত হয়েছে। মোটকথা, গল্প, উপন্যাস ও ইতিহাস—এ তিনটিই বইটির মূল উপজীব্য।
★বই সম্পর্কে:
বইটির মূল প্লট ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজন বা দেশভাগ। এ সম্পর্কে জানাশোনা থাকলেও লেখকের বর্ণনায় সেসব বিবরণ আরও জীবন্ত ও নির্মোহ লাগবে। বইটিতে কোনো সূচিপত্র নেই। তবে বেশকিছু পরিচ্ছেদ আছে। শুরুতেই চারপৃষ্ঠাব্যাপী ‘মুকাদ্দিমা’ পড়লে পাঠ সম্পর্কে সামান্য ধারণা পাওয়ার পাশাপাশি পুরো বইটি পড়ার প্রবল আগ্ৰহ তৈরি হবে। লেখক এখানে ভাষাসাহিত্য ও অলংকারের যে ঢেউ তুলেছেন, তাতে পাঠকমনে নাচন সৃষ্টি হবে সন্দেহ নেই। বইটিকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে হাজী সাহেব ও দাদিমার উপাখ্যান এবং দ্বিতীয় ভাগে বান্ধবীদের সাথে দাদিমার চিঠিপত্রের আদান-প্রদান। চিঠিগুলোতে ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আখ্যান চর্চিত হয়েছে। চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো বেশকিছু রোমহর্ষক বর্ণনা ও অজানা তথ্যও পরিবেশিত হয়েছে। একেবারে শেষদিকে প্রায় আড়াই পৃষ্ঠাব্যাপী একটি সংক্ষিপ্ত অথচ সমৃদ্ধ ‘পরিশিষ্ট’ আছে। এটি পুরো কাহিনীর মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে।
★লেখক সম্পর্কে:
বইটি লিখেছেন সময়ের অন্যতম পাঠকপ্রিয় লেখক মুহতারাম ‘মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ’ হাফি.। কুরআনের একজন সফল শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি যিনি বইয়ের পাতায় যাপিত জীবনের গল্প বুনেন। মনের মাধুরী মিশিয়ে কুরআন-হাদিসের আলো বিলি করেন। কুসুমিত গদ্যের কিমিয়াগির হিশেবে ইতিমধ্যেই যিনি সর্বশ্রেণীর পাঠকের হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন। যার নতুন বইয়ের খবর জানার জন্য পাঠকেরা হন্যে হয়ে প্রকাশককে ফোনে, মেসেজে, ইনবক্সে বারবার মধুর যন্ত্রণায় বিদ্ধ করেন। যিনি ফেইসবুকে নতুন কোনো লেখা পোস্ট করার সাথে সাথে ফ্যান-ফলোয়াররা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় পঁচিশ। ‘জীবন জাগার গল্প’, ‘কুরআনিয়্যাত’ ‘সুনানিয়্যাত’ ও ‘ইতিহাসের শিক্ষা’ নামক সিরিজের অধীনে তিনি এসব বই লিখেছেন। প্রকাশিতব্য বইয়ের তালিকায় আছে আন্দালুসিয়ান বারবারা, কান্নাসু বাগদাদ : দ্য জুবা স্নাইপার ইত্যাদি।
★প্রচ্ছদকথন:
বইটির প্রচ্ছদ করেছেন প্রচ্ছদজগতের মুকুটহীন সম্রাট ‘কাজী যুবাইর মাহমুদ’। সন্দেহ নেই, এটি তার করা সেরা প্রচ্ছদগুলোর একটি। প্রচ্ছদের মাধ্যমেই যেন বইয়ের বিষয়বস্তুর একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। শূন্য থেকে আসা ধবধবে সাদা একটি কিরণ বইয়ের এবং লেখকের নাম ভেদ করে বা উভয়কে আলোকিত করে সাদামাটা একটা ঘরের ওপর আছড়ে পড়ছে। এটা কীসের আলো? ভালোবাসার? সফলতার? না কি হিদায়েতের? আর অনাড়ম্বর ঘরটিই বা কার, যার ওপর উদ্ভাসিত এ আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে? এ নিশ্চয়ই হাজী সাহেব-দিদিমা দম্পতির ঘর!
★ব্যাক্তিগত রেটিং ৯/১০
চমৎকার ভাষাশৈলী, সাহিত্য ও অলংকারের ব্যাপক উপস্থিতি, বিষয়বস্তু অনুযায়ী চরিত্রগুলোর যথার্থ প্রয়োগ, ইতিহাসের অজানা অধ্যায়ের মঞ্চায়ন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্তেজনা টানটান রাখা এবং প্রয়োজনবোধ ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করে বইটিকে ১০ এর মধ্যে ৯ দেওয়াই যায়। আর বাইন্ডিং, কাগজের মান ও পৃষ্ঠাসংখ্যার ভিত্তিতে বইটির দামও ঠিকঠাকই মনে হয়েছে।
redikod – :
বরাবরই মোহাম্মদ আতিক উল্লার লেখা পড়তে ভালো লাগে, গল্পের ছলে অনেক কিছুই শেখা ও বুঝা হয়ে যায়।
অনেক ক্ষেত্রে বুঝে ওঠার আগেই অনেক কিছুই শিখে ফেলতে পারে।
ইসলামের সোন্দর্জ, কর্মপদ্দতি, উপকারিতা, প্রয়োজনীয়তা গুলা কখন যে কিভাবে নীরবে পাঠকের মনের মধ্যে ঢুকে নতুন ভাবে চিন্তার প্রয়াস তৈরী করে সেটা ঠিক বুঝে ওঠা যায় না।
আলহামদুলিল্লাহ।
‘ইশকুল অব লাভ’, ভালবাসার বিদ্যালয়।
এই বইটা যদিও বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া-পাকিস্তান জন্মকালীন সময়ের কিছু মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া অসাধারণ কিছু ঘটনার বর্ণনা।
কিন্তু গদবাধা, চিরাচরিত গল্প, বা উপন্নাস এর মতো না হলেও, প্রতিটা জায়গায় নতুন কিছু দেখার জন্যে অপেক্ষমান একটা মন কাজ করে।
এক এক পর্বে/অংশে এক এক জনের নিজস্ব ভাষায় ঘটনাকে বর্ণনা করার কারণে গল্পের পরিস্থিতি গুলো সহজে বোধগম্য হয়ে যায়।
একজনের মুসলমান এর জীবনাচরণ কত সুন্দর হতে পারে, সেটা গল্পের মধ্যেও যে এতো সুন্দর করে বলা যায়, সেটা শায়েখ আতিক উল্লার এর বই না পড়লে বুঝা যায় না।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ফাহিম আল হাসান – :
নামটা যেমন চিত্তাকর্ষক তেমনি মনোহারি, মুহাব্বাতের ফোঁটা ফোঁটা মায়া দিয়ে নির্মাণ করা যেন দাম্পত্যের স্মৃতিসৌধ। নামকরণে একশোতে একশো দেয়া যায়।
বইয়ের নামকরণ দিয়েই তাহলে শর্ট রিভিউ শুরু করা যাক।
খৃষ্টানদের দাওয়াতি মিশন ছড়িয়ে দিতে শুরু হয়েছিল মাদার তেরেসার জীবনোৎস্বর্গ করা একটি ‘লরেটো’ কাফেলার পদযাত্রা, সে কাফেলার শুরু নিয়েও আরেকটি ইতিহাস অংকন করেছেন লেখক। সেসব প্রতিষ্ঠান গুলো আদতে মিশনারি হলেও তারা নাম দিয়েছিল ইশকুল অব লাভ। তাদের সে পদযাত্রায় সঙ্গি হয়েছিল অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, বক্ষমাণ বইটির আলোচ্য ইতিহাস, ব্যক্তি ও প্রেক্ষাপট সে প্রতিষ্ঠানে কাটানো একটা দীর্ঘ সময় জুড়ে বিধায় মুহতারাম লেখক মহোদয় বইটির নামকরণ করেছেন ইশকুল অব লাভ নামেই।
কিন্তু এসব চাপার জোর আর মেকি শ্লোগানের সব আটঘাট পেরিয়ে গল্পের নায়িকা দিদিমা যখন হাজিসাহেবের কোলে ঢেরা বাঁধলেন তখন টের পেয়ে গেলেন আসলে তার সত্যিকার ইশকুল অব লাভ হাজি সাহেবের সংসার জীবনই। কুমারিত্ব উৎসর্গের নামে ইশকুল অব লাভ এ বেহুদা যিন্দেগী কাটিয়ে দেয়ার চাইতে একজন হাজি সাহেবের গৃহকর্ত্রী হয়ে অগনিত তালিবে ইলমের মা’ হওয়া কম সূখকর নয়।
এই দিদিমাকে ঘিরেই পুরো বইয়ের গল্প।
দিদিমা প্রথম জীবনে একজন হিন্দু মহাজনের কন্যা নিলীমা, কিছুদিন পর অখন্ড ভারতের প্রথম দিককার রেল কর্মকর্তার পালিতা কন্যা, তারপর বৃটিশদের তৈরী বিখ্যাত লরেটো স্কুলের ছাত্রী, হায়দ্রাবাদের নিজামের কন্যার বান্ধবী, ইহুদি কন্যার প্রতিবেশী, কলকাতার চার্চে উৎসর্গ করা সিস্টার অতঃপর একজন হাজি সাহেবের বাগদত্তা..
ভারতভাগের অজানা ইতিহাস। কিছু কথা, কিছু গল্প, কিছু ইতিহাস, কিছু হাসি, কিছু কান্না, কিছু শৈশব, কিছু ঈমানদীপ্ত আখ্যান। এসব উপখ্যান জানা থাকাও অস্বাভাবিক কিছুনা, কিন্তু কিছু জায়গায় ইতিহাসের গল্পকথায় মনে হয়েছে আমি নিজেও সে ইতিহাসের সাক্ষী একজন বাস্তব নিরীক্ষক।
গল্পের টুইস্ট এটাই, গতানুগতিক উপন্যাস বলা যায়না আবার কথার ফুলঝুরি ছিটিয়ে দেয়া কোন কাব্যের স্তুতিও নয় যেন। তাহলে এটা কি?
ইতিহাস গেলানোর নতুন মাত্রার নতুন আবিস্কার বলা যায়। বলতে পারি ইতিহাসের কাব্য গ্রন্থ। আমার বিশ্লেষণ হয়তো ঠিক নয়। তবে গ্রন্থটি অধ্যয়ন করলে আপনি এর মান নির্ণয়ে গোলক ধাঁধাঁয় পরে যাবেন।
ইশকুল অভ লাভ
রচনায়ঃ মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ
প্রকাশনায়ঃ মাকতাবাতুল আযহার
মুদ্রিত মূল্যঃ ৪২০৳
পৃষ্টা সংখ্যাঃ ২৫৬
ধরণঃ ঐতিহাসিক উপন্যাস।