মেন্যু
sultan saifuddin kutuz the battalion

সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ দ্য ব্যাটালিয়ন

পৃষ্ঠা : 288, কভার : হার্ড কভার
তাতার ও মঙ্গোল, মামলুক, আইন জালুত, শাজারাতুদ-দুর, সাইফুদ্দিন কুতুজ, রুকনুদ্দিন বাইবার্স এগুলো এখন বাংলাভাষাভাষী মানুষের কাছে পরিচিত নাম। এসব নিয়েই রচিত গবেষণাধর্মী এ ইতিহাসগ্রন্থটি। এ গ্রন্থটিতে মঙ্গোলদের মোকাবিলায় মামলুকদের সার্বিক তৎপরতা... আরো পড়ুন
পরিমাণ

245  350 (30% ছাড়ে)

পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন

2 রিভিউ এবং রেটিং - সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ দ্য ব্যাটালিয়ন

3.5
Based on 2 reviews
5 star
0%
4 star
50%
3 star
50%
2 star
0%
1 star
0%
 আপনার রিভিউটি লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  1. 3 out of 5

    উসামা আযফার:

    আমরা হালাকু খানের হাতে বাগদাদ ধ্বংসের কথা খুব ইনিয়ে-বিনিয়ে বর্ণনা করতে পারলেও খোদ হালাকু খানের সেই বাহিনী যার হাতে চরমভাবে পর্যুদস্ত হয় এবং অত্যান্ত লজ্জাজনকভাবে পরাজয় বরণ করে—মুসলিম উম্মাহর সেই বীর পুরুষ মর্দে মুমিন সাইফুদ্দিন কুতুজের কথা আমরা ক’জন জানি। সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ূবির হাতে ক্রুসেডারদের পরাজয় কাহিনী সম্পর্কে সম্যক অবগত থাকলেও অসংখ্য যুদ্ধে যিনি ক্রুসেডারদের বারংবার পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন মামলুক সুলতান রুকনুদ্দিন বাইবার্সের নাম ক’জন শুনেছি। অথচ বাইবার্স কোনভাবেই আইয়ূবি থেকে কোন অংশে কম ছিলেন না।
    .
    সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ। যিনি ছিলেন তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইসলামি সাম্রাজ্য খাওয়ারিজমের মহান সুলতান জালালুদ্দিনের ভাগ্নে। ভাগ্যের পালাবদলে যখন খাওয়ারিজম সাম্রাজ্য তাতারদের হাতে তছনছ হয়ে যায়। তখন কেউ দিগ্বিদিক পালাতে থাকে, কেউ তাতারদের হাতে নিহত অথবা বন্দি হয়। বন্দিদেরকে দাসবাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত বন্দিদের মধ্যে কুতুজও ছিলেন একজন। কালের বিবর্তনে মুনিবের হাত বদল হতে হতে তিনি মিশরে এসে পৌঁছেন এবং আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী একসময় মিশরের সিংহাসনে আদিষ্ট হন।
    .
    কুতুজ যেহেতু ছোটকাল থেকেই বর্বর তাতারদের হিংস্রতার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তাই সবসময় তাতারদের বিরুদ্ধে জিহাদের বুকভরা স্বপ্ন তার মাঝে বিদ্যমান ছিল। অতঃপর যখন তিনি সিংহাসনে আরোহন করেন তখন সেই মোক্ষম সুযোগটি আসল। আল্লাহর অনুগ্রহে তিনি ঈমান ও জিহাদের ময়দানে আবির্ভূত হন ধুমকেতুর গতি নিয়ে। আইনে জালুতের যুদ্ধে চির অজেয়খ্যাত তাতারদের মেরুদণ্ড গুড়িয়ে দেন। সেদিন আইনে জালুতে কোন তাতার সৈন্য বেঁচে ফিরতে পারেনি। স্বয়ং তাতারদের সেনাপতি কিতবুগা নয়ান সেই যুদ্ধে নিহত হয়। তখনকার মানুষরা তাতারদের ইয়াজুজ-মাজুজ মনে করত। তারা মনে করত তাতারদের পরাজিত করা অসম্ভব। আইনে জালুতে তাতারদের পরাজয়ে মুসলমানদের সেই ধারণা বিলুপ্ত হয়।
    .
    সেই মহান সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজের জীবনেতিহাস সম্পর্কে ড. সাল্লাবির আরবি বইয়ের বঙ্গানুবাদ করেছে কালান্তর প্রকাশনী দ্য ব্যাটালিয়ান নামে। অনুবাদ করেছেন আমাদেরই এলাকার মানসূর আহমাদ ভাই। সম্পাদনা করেছেন আবদুর রশীদ তারাপাশী। বইয়ে পাঠক হয়ত বানান বিভ্রমে পরবেন। বইয়ে কালান্তরের নিজস্ব ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এতে প্রতিটি যুক্তাক্ষরকে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে—কোন অক্ষর মিলে কোন শব্দ হয়েছে। শুদ্ধ বানান ও উচ্ছারণ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্যই এ প্রয়াস।
    3 out of 3 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  2. 4 out of 5

    আহমাদ মূসা মেহেন্না:

    #কালান্তর_ওয়াফিলাইফ_রিভিউ_প্রতিযোগীতা

    বই: দ্য ব্যাটালিয়ন (ঐতিহাসিক আইন জালুত যুদ্ধের মহানায়ক সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ)
    লেখক: ড. আলি মুহাম্মদ আস-সাল্লাবি
    অনুবাদক: মানসূর আহমাদ
    সম্পাদক: আবদুর রশীদ তারাপাশি
    প্রকাশক: কালান্তর প্রকাশনী (বশির কমপ্লেক্স, ২য় তলা, বন্দরবাজার, সিলেট)
    অনলাইন পরিবেশক: রকমারি, বইবাজার, ইফোর্ট বিডি
    মূল্য: ৩৮০/-
    পৃষ্ঠা: ২৮৮
    প্রচ্ছদ: নাঈমা তামান্না
    প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০১৯ইং

    আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবীব সা.-কে বলেন-
    ‘‘দেশে দেশে কাফিরদের অবাধ বিচরণ আপনাকে যেন বিভ্রান্ত না করে। এ তো সামান্য ভোগমাত্র। তারপর জাহান্নাম তাদের আবাস; আর ওটা কত নিকৃষ্ট বিশ্রামাস্থল।’’ [সুরা: আলে ইমরান: ১৯৬-১৯৭]

    লেখক পরিচিতি:
    দ্য ব্যাটালিয়ন বইটির মূল লেখক ড. শাইখ আলি মুহাম্মদ আস-সাল্লাবি একজন বিশ্ববিখ্যাত ইতিহাসবিদ, গবেষক, সংগঠক ও ধর্মীয় পণ্ডিত। তাঁর জন্ম লিবিয়ার বেনগাজি শহরে। সিরাত, ইতিহাস ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে তাঁর রচনাবলি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত ও ব্যাপক পঠিত। শিক্ষাজীবনে ড. সাল্লাবি মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘উসুলে দ্বীন ও দাওয়া বিভাগ’ থেকে ‘ব্যাচেলরস অব আর্টস’ ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯৩ সালে। এর তিন বছর পর লাভ করেন ‘মাস্টার্স’ ডিগ্রি। এছাড়া ১৯৯৯ সালে সুদানস্থ ‘উম্মে দারমান ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে ‘পিএইচডি’ ডিগ্রি লাভ করেন। রাসুলুল্লাহ সা.-এর সমকালীন ইতিহাস থেকে নিয়ে বর্তমান বিষয়াবলিকে পাঠকের সামনে তুলে আনতে তিনি বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। ধারাবাহিকভাবে লেখক লিখে যাচ্ছেন উম্মাহর বীরসেনানীদের জীবনীতিহাস। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি তাঁর ‘আস-সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ ওয়া মারিকাতু আইনি জালুত’ এর অনূদিত রূপ।

    ১) বই পরিচিতি:
    গ্রন্থের একেবারে শুরুতেই ‘প্রকাশকের কথা’ শিরোনামে প্রকাশক অতি সংক্ষেপে গ্রন্থটির সার-নির্যাস তুলে ধরেছেন। খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে বর্বর তাতার/মঙ্গোল ঝড়ে একের পর এক মুসলিম ভূখন্ড বিধ্বস্ত হতে থাকে। তৎকালীন ক্রুসেডার ইউরোপও তাতার ভয়ে ছিল ভীত-সন্ত্রস্ত। হ্যারল্ড ল্যাম্বের ভাষায়, ‘সুইডেন ও ভেনিসের জেলেরা তাতারদের ভয়ে সাগরে মাছ ধরার নৌকা ভাসাতে ভয় পেত।’ এ থেকেই প্রতীয়মান হয় তারা কতোটা সন্ত্রস্ত ছিল!

    গ্রন্থটির অনুবাদক ‘অনুবাদকের কথা’ শিরোনামে বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটির অনুবাদে অনুসৃত কিছু নীতির কথা উল্লেখ করেছেন। যেমনঃ ‘কুতয’, ‘কুতুয’, ‘কুতুজ’ কোনটা শুদ্ধ? কুতুজ বানান কেন শুদ্ধ! তাতারী না লিখে তাতার লিখার কারণ! কুরআনের আয়াতের ক্ষেত্রে শুধু অনুবাদ উল্লেখ করা। হাদিসের সূত্রের ক্ষেত্রে শুধু কিতাবের নাম ও হাদিস নম্বর উল্লেখ করা। টীকায় শুধুমাত্র বইয়ের নাম ও পৃষ্ঠা উল্লেখ করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

    ২) বইটির পর্যালোচনা:
    দ্য ব্যাটালিয়ন গ্রন্থটি মূলত দুটি অধ্যায়ে অনেকগুলো পরিচ্ছেদে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে বিন্যস্ত করে লেখা হয়েছে। প্রথম অধ্যায় শুরু করার প্রারম্ভে লেখক ড. সাল্লাবি ‘লেখকের কথা’ শিরোনামে প্রায় ২২ পৃষ্ঠাতে অতি সংক্ষেপে গ্রন্থটির মূল পর্যালোচনা তুলে ধরেছেন। লেখক তুলে ধরেছেন কিভাবে মঙ্গোলরা শক্তিশালী খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যকে গ্রাস করে ফেলেছিল, খেলাফতে বনু-আব্বাসিয়াকে ধ্বংস করে রূপকথার বাগদাদকে মৃত্যুপরীতে রূপান্তরিত করেছিল, একে একে বুখারা, তাসখন্দ, আফগানিস্তান, আলেপ্পো, দামেশ্ক দখল করে মিসরের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। তারপর কি করে ফিলিস্তিনের ‘আইনে জালুত’ প্রান্তরে সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজের নেতৃত্বে অপরাজেয় মঙ্গোলদের বিজয় রথকে মামলুকরা থামিয়ে দিয়েছিল। লেখক গ্রন্থটি শেষ করেছেন সুরা হাশরের ১০ নং আয়াত উল্লেখ করে-
    ‘‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ইমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষমা করুন এবং যারা ইমান এনেছিলেন, তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের রব, নিশ্চয়ই আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু।
    [১৭ সফর ১৪৩০; ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, বৃহস্পতিবার]
    প্রভুর ক্ষমা, অনুগ্রহ, রহমত ও সন্তুষ্টির কাঙাল
    – আলি মুহাম্মদ আস-সাল্লাবি

    ♣প্রথম অধ্যায়: মামলুক সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন-

    ড. সাল্লাবি দ্য ব্যাটালিয়ন গ্রন্থটির প্রথম অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদ ‘মামলুকদের উৎস ও উত্থান’ শিরোনামে সবিস্তারে আলোকপাত করেছেন মামলুক সম্পর্কে, মামলুকরা কারা, কোথা হতে তাঁদের উৎপত্তি, কি করে তাঁরা আইয়ুবি সাম্রাজ্যে এসেছিল, নাজমুদ্দিন আইয়ুবের শাসনকালে তাঁদের বীরত্ব, সপ্তম ক্রুসেডে এবং মানসুরার যুদ্ধে তাঁদের বিস্ময়কর অবদান ইত্যাদি। এছাড়া তুলে ধরেছেন মামলুকদের প্রকারভেদ, বিশেষ করে সালিহিয়া মামলুক এবং বাহরিয়া মামলুকদের ইতিহাস। উক্ত পরিচ্ছেদে বিশেষ করে আলোচিত হয়েছে মামলুকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাদীক্ষার পদ্ধতি, আকিদার ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সঠিক মতাদর্শ গ্রহণ, খানাপিনা ও বিশ্রামের নিয়মাবলী, ডিগ্রি ও শিক্ষাসমাপ্তির নিয়মকানুন, তাঁদের ভাষা, তাঁদের বীরত্ব, যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার পাহাড়সম দীক্ষা।

    তাছাড়া তুলে ধরেছেন সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবির পর যোগ্য শাসকদের অভাবে আইয়ুবি সাম্রাজ্যের পতনের কারণ, তুরান শাহকে হত্যা, আইয়ুবি পরিবারে গৃহবিবাদ, খ্রিষ্টান ক্রুসেডারদের সাথে কতিপয় আইয়ুবি সুলতানদের বন্ধুত্ব, কেন্দ্রীয় প্রশাসনে দুর্বলতা, গোয়েন্দাবিভাগের দুর্বলতা, রাজনৈতিক অঙ্গনে আল্লাহভীরু আলেমদের অনুপস্থিতি, সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক প্রবাহ তৈরিতে আইয়ুবিদের ব্যর্থতা, নাজমুদ্দিন আইয়ুবের মৃত্যু এবং কোনো যোগ্য উত্তরসূরি না থাকার ফলে যথাশীঘ্র আইয়ুবি সাম্রাজ্যের ইতি ঘটে মামলুক সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটার বিস্তারিত উপাখ্যান।

    প্রথম অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ‘মামলুকদের রাজত্বে শাজারাতুদ-দুর ও ইজ্জুদ্দিন আইবেক’ নামের শিরোনামে লেখক আলোচনা করেছেন শাজারাতুদ-দুর কে ছিলেন, তিনি কি মামলুক ছিলেন নাকি আইয়ুবি ছিলেন তা গ্রন্থটি পাঠ না করে জানা সম্ভব নয়। মিসরের সম্রাজ্ঞী হিসেবে শাজারাতুদ-দুরের অবদান, বিচক্ষণ পররাষ্ট্রনীতি, একজন নারী হিসেবে সেই সময়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সত্যিই তাঁর বিরল প্রতিভার দাবি রাখে। শুধু তার এসব দিকই নয় গ্রন্থটিতে উঠে এসেছে তাঁর ক্ষমতারোহনকে সকলের প্রত্যাখান করার কারণ। এর মূল কারণ হচ্ছে ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম বলে তৎকালীন ওলামাদের ফতোয়াসহ হাদীসের রেফারেন্স প্রদান। পরবর্তিতে শাজারাতুদ-দুরের পদত্যাগ, ইসলামে নারী নেতৃত্বের হুকুম, এবং ইজ্জুদ্দিন আইবেকের রাজত্ব শুরু করার বিস্তারিত আলোচনা। তৎকালিন মিসরে মুসলমানদের এরকম গোলযোগ পরিবেশের সুযোগে ক্রুসেডারদের অপতৎপরতা, মিসরের মামলুক এবং শামের আইয়ুবিদের মধ্যে দ্বন্দ যখন প্রকান্ড আকারে ধারণ করছিল তখনই গোবির বুক চিড়ে ধেয়ে আসছিল এক প্রলয়ংকারি ঝড়, যেই ঝড় ইতোপূর্বে বাগদাদের খিলাফতকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। গোঁটা মুসলিম বিশ্বকে গ্রাস করে বর্বর তাতার নেতা হালাকু খান ধেয়ে আসছিল মুসলমানদের শেষ প্রাচীর খ্যাত মিসরে। তৎকালিন সময়ে সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজের আবির্ভাব যেন শুষ্ক মরুভূমিতে এক পেয়ালা পানির মতোই ছিল, যেই পানি এক সময় গোঁটা মরুভূমিকেই শীতলতা দান করেছিল। তাঁর যোগ্য নেতৃত্ব, কঠিন পদক্ষেপ, বিচক্ষণতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, আর ভ্রাতৃত্ববোধের কারণেই মামলুকদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে বর্বর মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক আইন জালুত প্রান্তরে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল। যা লেখক বিস্তারিতভাবে উক্ত গ্রন্থে আলোকপাত করেছেন।

    ♣দ্বিতীয় অধ্যায়: আইন জালুত যুদ্ধ ও তাতারদের পরাজয়-

    দ্য ব্যাটালিয়ন গ্রন্থটির নামকরণের প্রকৃত বাস্তবতা দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রতিটি শিরোনামের প্রতিটি লাইনের প্রতিটি বাক্যতে খোঁজে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদ ‘বিলাদুশ শাম ও জাজিরায় তাতারদের দখলদারিত্ব’ শিরোনামে লেখক আলোচনা করেছেন সিলভানের সুলতান কামিল আইয়ুবির তাতারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা, অন্যদিকে দামেশকের আইয়ুবি সুলতান আল-মালিকুন নাসিরের তাতারদের প্রতি সমর্থন। অন্যদিকে মিসরের মামলুক সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজের অনুরোধ সত্ত্বেও নাসির ইউসুফ তাঁর সাথে ঐক্য না গড়ে গড়িমসি করতে থাকেন, যার পরিণতি অপমাণ আর মৃত্যু দিয়েই শেষ হয়। এছাড়া উক্ত পরিচ্ছেদে লেখক তুলে ধরেছেন কীভাবে আলেপ্পোর শহরপ্রাচীর, দুর্গ ও মসজিদসমূহ বর্বর তাতাররা ধ্বংস করেছিল, পরবর্তিতে দামেশক দখল করা, হামা ও পার্শ্ববর্তী শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফিলিস্তিনের দিকে যাত্রা করে মুসলমানদের সর্বশেষ প্রাচীরখ্যাত মিসরকে লক্ষ্য বানানোর বিষয়টি।

    প্রথম অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ‘আইন জালুত যুদ্ধের পূর্বাভাস ও এর ঘটনাসমূহের অগ্রগতি’ শিরোনামে লেখক ড. সাল্লাবি গ্রন্থটির মূল বিষয় অর্থাৎ ঐতিহাসিক ‘আইন জালুত’ যুদ্ধের বর্ণনা দিয়েছেন। বর্বর তাতাররা যখন মিসর দখল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলেছিল, তখন সাথে সাথেই মিসরের সুলতান কুতুজ মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধকরণে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া উক্ত পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন কুতুজের প্রতি হালাকুর কঠিন ভাষায় প্রেরিত চিঠির আলোচনা, যুদ্ধের পরামর্শসভা, সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা, রুকনুদ্দিন বাইবার্সের নির্দেশে হালাকুর দূতদের হত্যা, মুসলিমবাহিনীর পদক্ষেপ গ্রহণ, বাইবার্সের নেতৃত্বে গাজার যুদ্ধে সর্বপ্রথম মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন, এবং চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যাবলি সংগ্রহের বিষয়গুলো। সর্বশেষে চূড়ান্ত যুদ্ধ যা সংঘটিত হয়েছিল বর্তমান ফিলিস্তিনের আইন জালুত প্রান্তরে। সেদিনটি ছিল ২৫ রমজান ৬৫৮ হিজরি মোতাবেক সেপ্টেম্বর ১২৬০ সাল। সুলতান কুতুজ আর প্রধান সেনাপতি বাইবার্সের নেতৃত্বে সেদিন বিশ্বের যুদ্ধ ইতিহাসে এক নতুন রেকর্ডের সূচনা হয়েছিল, যা ছিল অপরাজেয় মঙ্গোলদেরকে পরাজিত করে শত শত কি: মি: ধাওয়া করার বিরল রেকর্ড। এছাড়া লেখক সর্বশেষে আলোকপাত করেছেন আইন জালুতের যুদ্ধে মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে মামলুকদের বিজয়ের পর সুলতান কুতুজের দামেশক ও শাম মুক্ত করে শাসনক্ষমতা সুবিন্যস্তকরণ, কুতুজ হত্যা এবং হত্যার কারণ, বাইবার্সের সিংহাসনে আরোহন, মঙ্গোলদের পুনরাক্রমণ এবং বাইবার্সের যোগ্য নেতৃত্বে মঙ্গোলদের চিরতরে মিসর ও শাম থেকে বিতাড়নের বিস্তারিত কাহিনি।

    সর্বশেষে লেখক আইন জালুত যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের কতগুলো কারণ উল্লেখ করেছেন এবং বিজয়ী দলের কিছু গুণাবলির কথাও আলোকপাত করেছেন।
    পরিশেষে, আইন জালুত যুদ্ধে বিজয়ের অনেক ফল ও প্রভাবের কথা তুলে ধরেছেন-
    ১) মঙ্গোলদের দখলদারিত্ব থেকে বিলাদুশ শাম মুক্তকরণ
    ২) শাম ও মিসরের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা
    ৩) মামলুকদের বিরোধীশক্তি দমন
    ৪) পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে ইসলামের বিজয়
    ৫) মানবেতিহাসের চূড়ান্ত ঘটনা
    ৬) মুসলিম উম্মাহর মধ্যে নবজাগরণ
    ৭) থেমে গেল মঙ্গোলদের সাম্রাজ্য বিস্তার
    ৮) ক্রুসেডার ও তাতারদের মধ্যকার মৈত্রীচুক্তির ব্যর্থতা
    ৯) ক্রুসেডারদের দুর্বল অস্তিত্ব
    ১০) বীর মামলুকদের রাজত্বের সূচনা
    ১১) আব্বাসি খেলাফতের প্রতীকী যুগ
    ১২) মামলুক ফৌজের উন্নয়ন ও অস্ত্রশস্ত্রের আধুনিকীকরণ।

    ♥বইটিতে ভালো লাগার বিশেষ একটা লেখা:
    ‘‘যুদ্ধের একপর্যায়ে নিজেদের মধ্যে দুর্বলতা দেখা দিলে সুলতান কুতুজ মাথার শিরস্ত্রাণ খুলে মাটিতে ছুড়ে ফেলেন এবং ‘ওয়া ইসলামাহ’ (হায় ইসলাম!) বলে চিৎকার করে উঠেন। এরপর বলেছিলেন, হে আল্লাহ, তোমার বান্দা কুতুজকে তাতারদের বিরুদ্ধে সাহায্য করো।’ এরপরই সাথীদের নিয়ে চূড়ান্ত হামলা করেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় বিজয় ছিনিয়ে আনেন।’’
    সুলতান কুতুজের ‘হায় ইসলাম’ বলে চিৎকার দেওয়ার মতো কোনো মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান বর্তমান বিশ্বে নেই। তারা বরং ‘হায় ইরাক’, ‘হায় লিবিয়া’, ‘হায় সিরিয়া’, ‘হায় ফিলিস্তিন’, ‘হায় কাশ্মীর’ বলে মুখের বুলি আওড়ানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে নাহ্। দুঃখজনক!

    ♥বইটি কেন এবং কাদের পড়া উচিত?:
    যারা মনে করে বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের ঘুরে দাঁড়ানোর আর কোনো সুযোগ নেই, মুসলমানরা এখন শতধা-বিভক্ত, বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে নিজেরাই নিজেদেরকে মারা শুরু করছে। তারা কি পারবে পূর্বের ন্যায় অর্ধ পৃথিবীর শাসনক্ষমতা ফিরে পেতে? হ্যাঁ, যাদের এরকম মন মানসিকতা রয়েছে তাদের অবশ্যই উক্ত গ্রন্থটি পাঠ করা আবশ্যক। খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতক আর বর্তমান একবিংশ শতাব্দীর মুসলমানদের এরকম দূরাবস্থার মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই না। তখন শত বাধা-বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও যেভাবে সুলতান কুতুজের যোগ্য নেতৃত্ব, ঐক্যবদ্ধতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, হকপন্থি উলামাদের উপদেশ গ্রহণ আর ইসলামপ্রীতির ফলে অপরাজেয় তাতারদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল, বর্তমানেও যদি কোনো মুসলিম শাসক সুলতান কুতুজের পন্থা অবলম্বন করে তাহলে সে-ও ইহুদিদের বিরুদ্ধে, বর্তমান ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে, মুশরিক এবং নাস্তিকদের বিরুদ্ধেও বিজয় লাভ করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।

    ♥বইটির সমালোচনা:
    ঐতিহাসিক বই তা-ও আবার কোনো মুসলিম বীরের বীরত্বগাঁথা কাহিনি নিয়ে লেখা বইয়ের কোনো সমালোচনা হতে পারে না।

    ♥বইটির আলোচনা:
    এক কথায় অসাধারণ একটা গ্রন্থ। বইয়ের প্রচ্ছদ, বাঁধাই, পেইজের মান এবং অনুবাদকের মান অনেক উন্নত আর স্বচ্ছ বলে মনে হয়েছে। অনুবাদক সাহেব বইয়ের অনেক ঐতিহাসিক স্থানের নাম, ব্যক্তির নাম, কুরআন এবং হাদীসের রেফারেন্স পৃষ্ঠার নিচে “টিকা” আকারে দেয়াতে অনেক দুর্বোধ্য বিষয় বুঝতে সহজবোধ্য হয়েছে। তাছাড়া গ্রন্থের শেষে “গ্রন্থপঞ্জি” শিরোনামে মূল লেখকের লেখা বইটির অনেকগুলো রেফারেন্স উল্লেখ করা আছে যা বইটির গ্রহণযোগ্যতাকে নিঃসন্দেহে অনেক বাড়িয়ে তোলে।

    ♥রেটিং: ৮/১০

    2 out of 2 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No