খুশু-খুযু
আমাদের আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“ঐ সকল মুমিনরা সফল যারা তাদের সালাতে বিনয়াবণত”(সূরা মুমিনুন, ১-২)
.
হুযাইফা (রাদ্বী) বলেন,
“তোমরা তোমাদের দ্বীনের বিষয়সমূহ থেকে সর্বপ্রথম খুশুকে(বিনয়) হারাবে, আর সর্বশেষ হারাবে সালাত। অনেক সালাত আদায়কারী আছে, তাদের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। অচিরেই তোমরা মসজিদে প্রবেশ করবে, কিন্তু কোনো বিনয়াবণত সালাত আদায়কারী দেখতে পাবে না।”(মাদারিজুস সালাকিন, ১/৫২১)
.
খুশুই হলো, সালাতের প্রাণ এবং তার সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য। তাই খুশুহীন সালাত হলো, প্রাণহীন দেহের ন্যায়।
তাই সালাতে খুশু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা খুব দ্রুত হারিয়ে যায় এবং যার অস্তিত্ব অত্যন্ত দুর্লভ। বিশেষ করে আমাদের এ শেষ যুগে তথা আখেরি যামানায়।
সালাতে খুশু তখন হাসিল হয়, যখন অন্তর সালাতের জন্য অবসর হয়। অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল সালাত নিয়েই ব্যস্ত হয় এবং সব কিছুর পর কেবল সালাতকেই প্রাধান্য দেয়। তখন সালাত তার জন্য প্রশান্তি হয় এবং সালাত তার চোখের শীতলতা আনয়নকারী হয়। যেমন রাসূল বলেছেন, ‘আমার চোখের প্রশান্তি দেওয়া হয়েছে সালাতের মধ্যে’ ( মুসনাদ আহমাদ, ৩/১২৮)
.
তো এই খুশু কীভাবে অর্জিত হবে? জানতে পড়ুন ইবন কায়্যিম এর খুশু খুযু
-
-
সকাল-সন্ধ্যার দুআ ও যিক্র ( দুআর বই, দুআ কার্ড একত্রে)
লেখক : শায়খ আহমাদুল্লাহপ্রকাশনী : আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পাবলিকেশন্স33 ৳পকেট সাইজের এই পুস্তিকায় সকাল-সন্ধ্যার বিভিন্ন ...
-
hotরাহে বেলায়াত
প্রকাশনী : আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স550 ৳385 ৳আল্লাহ কুরআনে বলেন, "তোমরা আমার যিকির ...
-
save offকুরআন দিয়ে নিজের চিকিৎসা করুন
প্রকাশনী : সবুজপত্র পাবলিকেশন্স80 ৳58 ৳অনুবাদ: হাফেয মাহমুদুল হাসান পৃষ্ঠা ৯৭ পকেট সাইজ ...
-
featureঘর সাজান দুআ দিয়ে (দুআ স্টিকার)
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল বায়ান75 ৳সংখ্যা: ১০ টি দুআ স্টিকার (১০ ...
-
hotআস-সুন্নাহ প্যাকেজ (৩টি বই একত্রে)
প্রকাশনী : আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স1,290 ৳903 ৳উস্তাদ মুহাম্মাদ হুবলস বলেন, "আমরা রসূল ...
-
save offহিসনুল মুসলিম- যিকর, দো‘আ, চিকিৎসা
লেখক : সাঈদ ইবনে আলী আল কাহতানীপ্রকাশনী : সবুজপত্র পাবলিকেশন্স180 ৳130 ৳কুরআন-সুন্নাহ থেকে সংগৃহীত যিকর ও দো‘আ ...
-
hotশব্দার্থে হিসনুল মুসলিম (পকেট সাইজ)
লেখক : সাঈদ ইবনে আলী আল কাহতানীপ্রকাশনী : দারুস সালাম বাংলাদেশ150 ৳87 ৳আল্লাহ কুরআনে বলেন, "তোমরা আমাকে স্মরণ ...
-
hotবান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া
লেখক : সাঈদ ইবনে আলী আল কাহতানীপ্রকাশনী : মাকতাবাতুল বায়ান500 ৳365 ৳দুআ, যিকর ও রুকইয়ার উপরে বিশ্বে ...
-
save offকিয়ামুল লাইল
লেখক : শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলপ্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন47 ৳35 ৳কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ সালাতের উপর ...
-
আশরাফুল ইসলাম – :
lightspreads – :
লেখকঃ ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ)
# প্রকাশনী: সমকালীন প্রকাশন
মুদ্রিত মূল্যঃ ১২৫ টাকা
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৮৬
বইটি কেন পড়বেন?
নামাজ সম্পর্কে একটা ওভারঅল ধারনা পাওয়া যাবে বইটিতে। নামাজে কিভাবে আরো প্রশান্তি পাওয়া যায়, ধীর স্থিরভাবে পড়া যায় সেই টোটকা আছে বইতে। নামাজের মূল বিষয় ও কার্যক্রমগুলো তার হক আদায় করার মাধ্যমে এগুনোর ফলে পাঠকারীর নামাজ আরো ভাল থেকে ভাল হতে থাকবে ইনশা আল্লাহ। প্রানহীন নামাজগুলোতে প্রান ফিরে আসবে, নামাজীরা প্রশান্ত চিত্তে আল্লাহর সাথে মোলাকাত করতে পারবে ইনশা আল্লাহ।
বইটিকে মোট ৫ টি অধ্যআয়ে ভাগ করা হয়েছে।
১ম অধ্যায়ে নামাজের প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতাকে গভীরভাবে বিশ্লেষন করে তার মূলভাব, উপকারিতা বোঝানো হয়েছে যার ফলে নামাজের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে যায়। এটাই বইয়ের সবচাইতে আকর্ষনীয় ও ইফেকটিভ পার্ট বলেই মনে হয়।
২য় অধ্যায়ে নামাজে মনোযোগের উপায় বাতলে দেয়া হয়েছে। ৩ টি ধাপ অবলম্বনের কথা এখানে বর্নিত হয়েছে যা পালন করলে ইনশা আল্লাহ উপকার পাওয়া যাবে। মূলত ১ম ও ২য় অধ্যায়ই বইটির মূল অংশ।
৩য় অধ্যায়টা একটু ব্যতিক্রমী। অনেকে গান বাজনার মধ্যে আকর্ষন পায় কিন্তু নামাজের মধ্যে পায় না। এর কারন ও স্বরূপ উদঘাটনের চেষ্টা করেছেন লেখক। পরের দুই অধ্যায়ও এই বিষয়টিকে ঘিরেই লেখা।
৪র্থ অধ্যায়ে বলা হয়েছে ভাল মানুষ, সফল মানুষদের রুচিবোধের বিষয়ে। সাধারন অর্থহীন বা অসংলগ্ন অর্থের গান বাজনার চাইতে নামাজের শব্দ, কুরআন তিলাওয়াতের শব্দ তাদের কাছে গ্রহনীয় ছিল। এবং গান বাজনা পরিত্যাজ্য ছিল।
৫ম অধ্যায়ে গান বাজনার অকার্যকারিতা ও ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে হৃদয় প্রশান্তিকারক হিসাবে নামাজকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে খুব দক্ষতার সাথে।
সবচেয়ে যা ভাল লেগেছেঃ নামাজের প্রতিটি কার্যক্রমের বিস্তারিত আবেগী বিবরন নামাজকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়ক হবে। কলেবর খুব বেশি বড় না হওয়ায় সহজে বহনযোগ্য ও আকর্ষনীয় এই বইটি আপনার টেবিলে বা খাটের পাশে সবসময় রেখে মাঝে মাঝে উল্টিয়ে দেখতে পারবেন।
রেটিং ৯/১০
Afra Chowdhury – :
মন্দ লাগাঃ
আমার মত জেনারেল লাইনের পাঠকদের জন্য যের, যবর, পেশহীন আরবি এবারতগুলো বুঝা বেশ কষ্টসাধ্য যেহেতু উচ্চারণ অনুল্লিখিত। যেমন, সূরা ফাতিহা পাঠে আল্লাহ ﷻ কি জবাব দিচ্ছেন তা বাংলাটায় জানতে পারলাম আরবি কিছুই বুঝিনা। আরও কতক দুআ যেগুলো অন্য কোথাও খুঁজে নিয়ে পড়তে হয়েছে।
raihan770786 – :
রিভিউ নং – ০২
★বইয়ের নামঃ “খুশূ-খুযূ”
★লেখকঃ “ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ্”
★ অনুবাদকঃ “মাসউদুর রহমান”
★প্রকাশনীঃ “সমকালীন প্রকাশন”
★পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৮৬
★মুদ্রিত মূল্যঃ ১২৫/-
★বইটি সম্পর্কে =>
“সেসকল মু‘মিনরা সফল হয়েছে যারা নিজেদের সলাতে বিনয়ী”
[ সূরা মু‘মিনূন,আয়াত : ০১-০২]
ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হচ্ছে সালাত বা নামায। ঈমানের পর একজন মুসলিমের উপর যা ফরয হয় তা হলো সালাত। মু’মিনের জীবনে ঢাল হিসেবে কাজ করে সালাত। যাবতীয় অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা থেকে বিরত রাখতে ঢালের মত কাজ করে সালাত। যেমন আল্লাহু তায়ালা বলেন,
“নিশ্চয়ই সালাত মানুষকে মন্দ কাজ হতে দূরে রাখে”
আমরা অনেক নামাজি আছি যারা, নামাজে মনোযোগ ধরে রাখতে পারিনা। নামাজকে সেভাবে আদায় করতে পারিনা, যেভাবে আদায় করা প্রয়োজন। যেভাবে রাসূল (সাঃ ) ও সাহাবীগণ খুশূ এবং খুযূর সাথে সালাত আাদায় করতেন, তার কিছু অংশ ও আমরা করতে পরছি না। এর জন্য আমাদের অজ্ঞতা কে অনেকটা দায় করা যায়। আর এই অজ্ঞতা বা না জানা বিষয়টিকে জানার জন্য “ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ্” এর “আসরারুস সালাহ” ( যার অনুবাদ গ্রন্থ খুশূ -খুযূ) নামক ছোট্ট পরিসরের বইটি অনেকটা সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
বইটির প্রথম অংশে লেখকের জীবনি সম্পর্কে কিছুটা সংক্ষেপে আলোক পাত করা হয়েছে। এর পর বইটিকে পাঁচটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে।
★ প্রথম অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে সালাত কিভাবে মু‘মিনের শীতলতা হতে পারে। এবং কিভাবে তা ইবাদতকারীদের প্রশান্তির আবাসস্থল। যেমন:-
*ইমাম মুহাম্মদ ইবনু আবী বকর ইবনিল কাইয়্যিম আল-জাওযী ( রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন, আপনার জানা আবশ্যক যে, সালাত হচ্ছে নিঃসন্দেহে আন্তরিক ‘ইবাদাতকারীদের জন্য প্রশান্তির আবাসস্থল, একেশ্বরবাদীদের ( মুওয়াহ্যিদীনদের) জন্য আত্মার তৃপ্তি, ‘ইবাদাতকারীদের জন্য বাগান, বিনয়ীদের জন্য আনন্দের নির্যাস, খাঁটি লোকদের জন্য পরীক্ষা, এবং সঠিক পথের যাত্রীদের জন্য উপযুক্ততা যাচাইয়ের মানদন্ড।….
*এর পর সালাতের প্রত্যেকটা রুকন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।যেমন আল্লাহু আকবার বলা, সানা পড়া, রুকু, সিজদা ইত্যাদি।
★ দ্বিতীয় অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে,
১)সালাতে মনোযোগী হওয়ার তিনটি ধাপ নিয়ে।
২)সালাতের প্রতিটি কর্মে মনোযোগ বাড়ানোর উপায় নিয়ে।
৩) খুশূ-খুযূর উপকারিতা নিয়ে।
৪) সালাতের উপকারিতা ও লক্ষ্য নিয়ে।
★ তৃতীয় অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে মূলত সালাত এবং গানবাজনার মাঝে পার্থক্য নিয়ে। অর্থাৎ গান কিভাবে সালাতের মজা এবং উপকারিতার প্রতিবন্ধকের কাজ করে তা নিয়ে।
★ চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে,
১) সাহাবীগণ ও পরবর্তীদের রুচিবোধ নিয়ে।
অর্থাৎ সাহাবিরা যেভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল( সাঃ) এর দেখানো কর্ম করার মাধ্যমে তাঁদের মধ্যে যে রুচির সৃষ্টি হয়েছিল, তা কিভাবে পরবর্তীদের আল্লাহর অবাধ্যতা ও নাফসের দাসত্ব করার ফলে উভয়ের মধ্যে আকাশ – পাতাল পার্থক্য তৈরি হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
২) সাহাবীদের শ্রবণ।
*অর্থাৎ সাহাবীগণ সকলে একত্রিত হয়ে একজন কে কোরআন তিলাওয়াত করার আহ্বান করে, অন্যরা তা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করতেন এবং অশ্রুসিক্ত হতেন।
* অপর দিকে পরবর্তিতে যারা গানবাজনায় আসক্ত তারা কোরআনের মজা থেকে বঞ্চিত হতো।
★ পঞ্চম অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে,
১)গানের অনেক ক্ষতিকর দিক নিয়ে। তবে এই অধ্যায়ে গানের খুব সূক্ষ্ম ও মারাত্মক কিছু দিক নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
২) অন্তরের তিনটি অবস্থা বা প্রকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ কোন অবস্থার অন্তরের হালত কি তা নিয়ে।
★পরিশেষে:
বইটি নামাজি ও বেনামাজি উভয়ের জন্য পাঠ্য। আপনি নামাজি হলে, কিভাবে মনোযোগী এবং নামাজকে উপভোগ করে আদায় করতে হয় তা জানতে পারবেন। আর বেনামাজি হলে, নামাজের উপকারীতা এবং এর মজা ও কোন কোন প্রতিবন্ধতার কারণে আপনি নামাজ আদায় করতে বা মনোযোগী হতে পারছেননা তা জানতে পারবেন।
বৃষ্টি জলি – :
ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) ৬৯১ হিজরী সনের সফর মাসের সাত তারিখ সিরিয়ার দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম মুহাম্মাদ। তবে তিনি ‘ইবনুল কাইয়্যুম আল-জাওযিয়্যাহ নামেই অধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তিনি দামেস্কের এক মাদ্রাসাতে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি লালিত-পালিত হয়েছেন ইলম ও আমলের চর্চায় নিরত একটি পরিবারে। তাই ছোটবেলা থেকেই তাঁর মাঝে ইলমের প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক পরিলক্ষিত হয়। তিনি বিভিন্ন শাস্ত্র নিয়ে অধ্যায়ন শুরু করেন। তাঁর পিতা একজন বিজ্ঞ আলিম হাওয়ায় তাঁর উদ্দেশ্য ও বিধেয় ষোল কলায় পূর্ণ হতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। তিনি তৎকালীন বিজ্ঞ অনেক আলিম এর শরণাপন্ন হয়েছিল ইলম অজর্নের জন্য।
* তাঁর সম্পর্কে শায়খ হাফিয ইবনু কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
হাদিস, তাফসীর ও ফিকহের মূলনীতিতে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম তাঁর সমসাময়িক সকল আলিমকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন উওম চরিত্রের অধিকারী। দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ ও নিরাসক্ত একজন মানুষ।
* শায়খ ইবনু রজব রাহিমাহুল্লাহ তাঁর সম্পর্কে বলেন,
তিনি খুব ইবাদতগুযার ছিলেন। প্রভুভক্তি, সুন্নাতের অনুসরণ, বিনয় ও নম্রতা, দুনিয়ার প্রতি নির্মোহতা তার চরিত্রের অনন্য ভূষণ। তিনি নিষ্পাপ নন, কিন্তু তার মতো নিষ্পাপও আমি আর কাউকে দেখিনি।
* ইমাম সুয়ূতি রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
হাদীস, তাফসীর ও ফিকহের শাখাগত ক্ষেত্রে তাকে অনেকেই ইমামগণের সমপর্যায়ে গণ্য করে থাকেন। ইবনুল কাইয়্যুম এর জ্ঞানের পরিধি সুবিস্তৃত।জ্ঞানের এই বিশালতা তিনি অর্জন করেছেন বিভিন্ন শায়খ থেকে।
? তাঁর প্রকাশিত প্রসিদ্ধ কিছু কিতাবের নাম :
? যাদল মা’আদ (৪ খন্ড)
? আল কালিমুত তায়্যিব
? কিতাবের রূহ
? নুযহাতুল মুশতাকীন
? আহকামুল মাউলূদ
? আত তিবয়ান ফী আকসামির কুরআন
? সফরুল হিজরাতাইন
এই দীপ্তমান প্রদীপটি ৬০ বছর বয়সে ৭৫১ হিজরীর ১৩ই রজব বুধবার দিবাগত রাতে ইশার আযানের সময় চিরদিনের জন্য নিভে যায়। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের উঁচু মাকাম নসীব করুন।
? বই রিভিউ :
নামাজ ইসলামের মূল পাঁচটি রুকনের মধ্যে একটি। কালিমার পরেই নামাজের স্থান। কোনো বড় অফিসার কিম্বা উচ্চ পদস্থ কারো সাথে দেখা করতে গেলে আমাদের এপোয়েনমেন্ট লাগে, দিনের পর দিন দেখা করার জন্য অপেক্ষা করতে হয় । আর আমাদের রব আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা আনহু আমাদের জন্য কত সহজ করে দিয়েছেন তাঁর সাথে কথা বলার বিষয়টি। কোনো এপোয়েনমেন্ট ছাড়াই, বিনা বাঁধায় আমরা তাঁর কাছে যেকোন কিছু যখন প্রয়োজন তখনই চাইতে পারবো। সরাসরি আল্লাহর কাছে চাইতে পারবো সলাতের মাধ্যমে। ভাবা যায়!!!, বিশ্ব জাহানের রবের সাথে আমরা সরাসরি কথা বলতে পারবো বিনা বাঁধায় । মৃত্যুর পর কবরে ও কিন্তু আমাদের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সেই দিন আমাদের যে কি পরিণতি হবে আল্লাহ্ তা’য়ালাই কেবল জানেন।
বইটিতে সলাত সম্পর্কে মোটামুটি একটা পূর্ণাঙ্গ ধারণা এবং সলাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটি মোট পাঁচ অধ্যায় এ বিভক্ত। প্রথম অধ্যায় মোট ৩৬ টি ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত, দ্বিতীয় অধ্যায় ৬ খণ্ডে বিভক্ত, তৃতীয় অধ্যায় এ একটি (১) পার্টই আছে, চতুর্থ অধ্যায় ২ খণ্ডে বিভক্ত এবং পঞ্চম অধ্যায়ে ৩ টি খণ্ড রয়েছেন।
আমি পাঁচটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করছি – – –
? প্রথম অধ্যায় ?
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, সলাত আল্লাহর পক্ষ থেকে মু’মিনের জন্য উপহার। সলাত দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। এতে আল্লাহর কোন চাওয়া নেই, বরং এই সলাত আল্লাহর পক্ষ থেকে মু’ মিনের জন্য দয়া, সুবিশাল অনুগ্রহ। সলাতকে আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা আনহু প্রদত্ত’ দস্তরখানা’ স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে যা প্রতিদিন পাঁচ বার নিয়মিত আদায়ে আমাদের কলবকে সুস্বাদু, পরিপুষ্ট ও সতেজ রাখে। আর ইবাদতের অনীহার ফলে কলব (হৃদয়) যখন শুকিয়ে যায় তখন হৃদয় –
আল্লাহর ভালবাসা থেকে,
তাঁর পরিচয় লাভ করা থেকে,
তাঁর যিকির থেকে,
তাঁর স্মরণ থেকে,
এবং তাওহিদের বিশ্বাস থেকে দূরে সরে আসে।
আমাদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট ইবাদত, যার জন্যে অঙ্গ – প্রতঙ্গ সৃষ্টি করা হয়েছে।
অঙ্গসমূহের ব্যবহারে মানুষ প্রধানত ৩ ভাগে বিভক্ত :
১. যে ব্যক্তি তার অঙ্গ সমূহকে কেবল ঐ কল কাজের জন্য ব্যবহার করে যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
২. যে তার অঙ্গগুলোকে অবিরাম নিষিদ্ধ ও পাপ কাজে ব্যবহার করে যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়নি।
৩. অজ্ঞতা ও অলসতার দ্বারা যে তার অঙ্গগুলো অকেজো করে ফেলে। সে না দুনিয়া অর্জন করে না আখিরাত।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা সলাতকে বানিয়েছেন তাঁকে পাওয়ার মাধ্যম। একান্তে তাঁর সাথে কথা বলার উপায়। দয়া ও ঘনিষ্ঠতা লাভের উদ্দেশ্যে।
এরপর এই অধ্যায়ে অজু, আল্লাহু আকবার পড়া, সানা পড়া, আউযুবিল্লাহ পড়া, সুরা ফাতিহা পাঠ (যা আল্লাহ ও বান্দার কথোপকথন), হামিদ এর মর্ম, আর-রাহমানির রাহিম পাঠ থেকে আমীন বলা পর্যন্ত, কিয়াম, সিজদাহ, সলাতের ৫ রুকন ও এর বর্ণনা, তাশাহুদ পাঠ, আত্তাহিয়াতু পাঠ, নবীর উপর দরূদ পড়ার রহস্য, আযানের সুন্নাতসমূহ এই বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই প্রত্যেকটা বিষয় যখন আপনি পড়বেন তখন আপনার মনে হবে হৃদয়ের কোথাও কিছু একটা প্রতিবারই নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। মনে হবে এইভাবে তো কখনো ভেবে দেখি নাই, নামাযের প্রতিটা রুকনে যে এত বেশি পূণ্য বিদ্যমান রয়েছে।
?️দ্বিতীয় অধ্যায় ?️
সলাতের রহস্য ও রুহ হলো পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হওয়া। সলাতে মনোযোগের ৩টি ধাপ রয়েছে।
১। প্রবৃত্তি ও নফসের অসুস্থতা, সলাতের ক্ষতিকর ও সাওয়াব বিনষ্টকারী কাজগুলো থেকে কলবকে হিফাজত করবে।
২। ইবাদতে এমনভাবে মগ্ন হবে, যেন সে সলাতে আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছে।
৩। কালামুল্লাহর অর্থের প্রতি মনোযোগ দেবে। সলাতের মধ্যে ইবাদতের যেসব বিভিন্ন দিক রয়েছে, রহস্য রয়েছে, তা নিয়ে চিন্তা করবে যাতে সলাতে খুশূ-খুযূ ও স্থিরতা থাকে।
সলাতে প্রতিটি কর্মে মনোযোগ বাড়ানো বিভিন্ন উপায় (সালাত শুরু থেকে শেষ করা) পর্যন্ত বাতলে দেয়া হয়েছে খুব সুন্দর করে পর্যায়ক্রমে এই অধ্যায়ে।
এরপর খুশুখুজুর উপকারিতা : যদি সলাত আদায়কারীর অন্তর আল্লাহর স্মরণে, তিলাওয়াতে, যিকরে ও ভালবাসায় তৃপ্ত হয়, তখন সে তাঁর ইবাদতে স্বাদ পায়। এ ছাড়াও আরো ২টি নিয়ামত লাভ করা যায়।
? জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।
? জান্নাত পাবে।
আর মু’মিন বান্দার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তো এই দুটোই।
সলাতের উপকারিতা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন নি, রোজায় আমার চোখের শীতলতা, হজ ও ওমরায় আমার চোখের শীতলতা। বরং তিনি বলেছেন, “আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে সলাতে”।
এরপর খুশুখুজু বিহীন সলাত ও খুশুখুজু ওয়ালা সলাতের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। এবং শেষে সলাতের অন্যতম মূল্যবান পুরস্কার প্রাপ্তির ঘোষণা উল্লেখ করা আছে।
?তৃতীয় অধ্যায় ?
এই অধ্যায়ে গান – বাজনা এবং সলাতের মাঝে পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মিউজিক বা গানের প্রতি আকর্ষণ যত তীব্র হয়, সলাত (এবং কুরআনের) প্রতি ভালোবাসা ততই দুর্বল হয়ে পড়ে।
স্রষ্টার দরবারে দাঁড়ানো এবং গানের মঞ্চে দাঁড়ানো, কোরআন তিলাওয়াতের স্বাদ এবং কবিতা আবৃত্তির স্বাদ, গুণাহর কাজে উদ্ধুদ্ধকারী এবং কল্যাণের দিকে উৎসাহ দানকারীর মাঝে পার্থক্যগুলো সুস্পষ্ট।
?চতুর্থ অধ্যায় ?
এই অধ্যায়ে সাহাবিগণ ও পরবর্তীদের রুচিবোধ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমি বইটি থেকে কিছুটা উল্লেখ করার চেষ্টা করছি। সাহাবিগণ যখন একএ হতেন, দ্বীনের উপর দৃঢ়তা, ঈমানকে নবায়ন, অন্তরকে আল্লাহমুখী করে রাখতেন। তাদের মধ্যে একজন দাঁড়িয়ে যেতেন কুরআন থেকে তিলাওয়াত করা শুরু করতেন বাকীরা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। আর আজ আমাদের কি অবস্থা হায় আফসোস !!!
গানের আওয়াজ এবং সূরা মু’মিন, সূরা নূরের স্বাদ।বাঁশির সুর আর সূরা যুমারের স্বাদ। তুড়ি-করতালি এবং সূরা আম্বিয়ার স্বাদ। আবেদনময়ী রসালো কোন গল্প – উপন্যাস এবং সূরা ইউনুস ও হুদের ঘটনাবলির স্বাদ। শয়তানের আনুগত্য এবং রহমানের অনুগত্যের স্বাদ। এগুলো একটা অপরটার বিপরীত, একদম আলাদা, কখনো এক হতে পারে না।
?পঞ্চম অধ্যায় ?
এই অধ্যায়ে গান – বাজনার সূক্ষ্ম বিষয়, ফিরে আসা এবং কলবের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গানের অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে যার ফলে সলাতের স্বাদ পাওয়া যায় না। গান শোনার ফলে মনে শয়তানের খারাপ প্রভাব বিস্তার করে যার কারণে শুরু হয় অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা।
আর যে এইগুলো খারাপ দিক উপেক্ষা করে ফিরে এসে তওবা করে। ইস্তিগফার পড়ে এই রোগের চিকিৎসা চালিয়ে যায় (যদিও এটি খুব সহজ নয়) সে ই তো সফলকামী।
কলব /হৃদয় ৩ প্রকার। যথা:
❄️ সুস্থ ও পবিত্র।
❄️ রুগ্ন ও অসুস্থ।
❄️ হৃদয় পাক-নাপাক মিশ্রিত।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রত্যেকের জন্য উপযুক্ত প্রতিদান রেখেছেন।
শরিয়তের নিষিদ্ধ কাজ দু’ প্রকার।
?মূল কাজটাই হারাম
?যা কিছু হারামের দিকে টেনে নিয়ে যায়, সেটাও হারাম।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আনহু আমাদের সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকার তোওফিক দান করুন। আমিন।
⏳ পরিশেষে বলতে চাই, ৮৬ পৃষ্ঠার এই বইটি আপনাকে নামাজে কিভাবে মনোনিবেশ করবেন এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক কিছুই নতুন করে জানতে সাহায্য করবে। আপনি মনে মনে ভাববেন এবং উপলব্ধি করবেন নামাজের তাৎপর্য সম্পর্কে।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আনহু সবাইকে নামাযের তাৎপর্য বুঝে তা আমল করার তোওফিক দান করুন। আমিন।