মেন্যু
ishwarer mrittyu o ananya

ঈশ্বরের মৃত্যু ও অন্যান্য

প্রকাশনী : শোভা প্রকাশ
পৃষ্ঠা : 222, কভার : হার্ড কভার
আইএসবিএন : 9789849270553, ভাষা : বাংলা
এ গ্রন্থে অন্তভুর্ক্ত প্রবন্ধ—নিবন্ধ মূলত বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে রচিত। দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রতি মঙ্গলবারে প্রকাশিত ‘উৎসের উচ্চারণ’ শীর্ষক কলামে প্রকাশিত হয় অধিকাংশ রচনা। প্রকাশের সময়টা ২০২১ সাল। কিছু রচনা অবশ্য অপেক্ষাকৃত... আরো পড়ুন
পরিমাণ

337  450 (25% ছাড়ে)

পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন

1 রিভিউ এবং রেটিং - ঈশ্বরের মৃত্যু ও অন্যান্য

5.0
Based on 1 review
5 star
100%
4 star
0%
3 star
0%
2 star
0%
1 star
0%
 আপনার রিভিউটি লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  1. 5 out of 5

    Robiul hasan:

    “১৮৮৭ সালে, দ্যা গে সাইন্স-এর দ্বিতীয় সংস্করণের ৩৪৩ নং ধারাটিতে জার্মান দর্শনিক ফেড্রিখ নিটশের বক্তব্য শুরু হয় এভাবে “সাম্প্রতিক শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হলো, ঈশ্বর মারা গেছেন, খ্রিস্টান ঈশ্বরের বিশ্বাস হয়ে গেছে অবিশ্বাস্য। “
    ষোড়শ শতকের শুরুতে যে বৈজ্ঞানিক বিপ্লব শুরু হয়েছিল, সেটি প্রাকৃতিক ঘটনাকে বোঝার এমন উপায় প্রস্তাব করে, যাকে চার্চের প্রচলিত ধর্মীয় নীতি বা ধর্মগ্রন্থের রেফারেন্স দ্বারা প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা থেকে স্পষ্টভাবে উচ্চতর মনে করা হচ্ছিল। পরবর্তী শতকগুলোতে বিজ্ঞান, শিল্পায়ন ও বর্ধমান প্রযুক্তিগত ক্ষমতা মানুষকে প্রকৃতির ওপর অধিক নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি প্রদান করে। এ যাত্রায় চার্চ সহায়তা করতে পারেনি। চার্চের একাধিপত্যের দিন শেষ করে দেয় রেনেসাঁ। যে খোদার নাম করে জ্ঞান-বিজ্ঞান, মুক্তি-স্বাধীনতা, সাম্য মানবাধিকার ইত্যাদির পথে দেয়াল খাড়া করা হয়েছিল, নতুন ইউরোপ সেই দেয়ালকে ভাঙতে গিয়ে চার্চের ঈশ্বরকেও ভাঙল। কেউ তাকে করল গৃহবন্দি, কেউ করল প্রত্যাখ্যান; চাইল তার মরণ। নিটশের ঘোষণা অনেকটা সেই পরিস্থিতির সন্তান।
    শুধু নিটশে নয়, আমরা দেখব, উনিশ শতকের শেষ নাগাদ ইউরোপের সর্বাধিক সংখ্যক বুদ্ধিজীবী ও লেখক প্রথাগত খ্রিস্টানতাকে পরিত্যাগ করেছিলেন। এটি কেন হলো? প্রশ্নটি জটিল। এর পেছনে কি শিল্প ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রভাব ছিল? নাকি এটি চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) এবং বিবর্তনের ওপর তার রচনার ফলাফল? উইলসন তার বই লিখেছেন ঈশ্বরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পর্কে। এতে রয়েছে সন্দেহবাদিতা ও অবিশ্বাসের নানা সূত্র, যা অনেক ব্যাপক, অনেক বৈচিত্র্যময়।
    ঈশ্বরকে ছেড়ে বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ, শিল্প ও পুঁজিকে ঈশ্বর বানিয়ে আধুনিক বুদ্ধিবৃত্তির নায়করা এগিয়ে চলছিলেন। সেখানে সাধারণত খ্রিস্টবাদের ঈশ্বর হয় ছিলেন অবাঞ্ছিত, নয় মৃত। ঈশ্বরের প্রতি অনাস্থার জন্য এ অনাস্থা ছিল, তা বলা যাবে না এককথায়। এ অনাস্থার অন্যতম কারণ ছিল সেইসব শ্রেণি ও প্রতিষ্ঠান, যারা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে দাবি করত। তাদের কাছে জীবনের নানা সঙ্কটের সমাধান আছে, সেটা বিশ্বাসযোগ্যভাবে তারা পেশ করতে পারেনি। উল্টো বরং তারা হয়ে উঠেছিল মানবতার অগ্রগতির পথে নানামুখী আপদের বাহক। ঈশ্বরের নামে স্বেচ্ছাচারীদের সমাজ ও সরকার চালনা সংকট তৈরি করেছিল।
    আধুনিক ইউরোপ পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায় সিদ্ধান্ত নিল, সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে আর ঐশ্বরিক অধিকারের কোনো বৈধতা নেই, বরং শাসিতের সম্মতি ও যুক্তি দ্বারা পরিচালিত এবং ঈশ্বরের উপস্থিতি বা ঐশ্বরিক আদেশ ছাড়াই নৈতিক তত্ত্ব দ্বারা সরকারব্যবস্থা পরিচালিত হবে। নীটশে এর মধ্যে প্রতিপত্তিশালী খ্রিস্টীয় সেই ঈশ্বরের মরণ দেখতে পেলেন, যার নামে সেখানকার জীবনকে শাসন করা হতো।
    কিন্তু ঈশ্বরকে হারানোর ফলে পশ্চিমা জীবনে বিরাট শূন্যতা আসবে, বস্তুত ঈশ্বর যা পূরণ করার ক্ষমতা রাখে না। নিটশে তা লক্ষ করেছিলেন। তিনি সতর্ক করেন, এ শূন্যতা হবে অশুভ, সর্বগ্রাসী, ধ্বংসাত্মক। নানা বিশ্বাস, ধারণা ও নীতি জন্ম নেবে একে পূরণ করতে। কিন্তু এগুলোকেও গ্রাস করবে বিরাট সেই শূন্যতা। শেষ অবধি জীবন বিঘ্নিত হবে নির্মমতায়, যুদ্ধে, সন্ত্রাসে। নিটশের সেই ভবিষ্যদ্বাণীকে করতালি দিয়ে সমর্থন জানায়, পরবর্তী দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধ। পৃথিবী এখনো কাঁপছে সন্ত্রাসে, নিষ্ঠুরতায়। আধুনিক মানুষের জীবন সীমাহীন শূন্যতার তরঙ্গে ফেনার মতো ভাসমান ।
    ঈশ্বরকে হত্যা বা খোদা থেকে পলায়ন করে সর্বাত্মক এ শূন্যতা থেকে যেমন বাঁচার পথ নেই, তেমনি অসৎ, নির্জ্ঞান ও নির্বিবেক মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের হাতে ঈশ্বরের নামে স্বেচ্ছাচারের লাগামহীন চর্চা জারি রাখারও সুযোগ নেই ।“
    উল্লেখিত আলোচনাটি কবি, দার্শনিক মাওলানা মুসা আল হাফিজ এর নিটশের সমালোচনায় রচিত “ঈশ্বরের মৃত্যু ও শূন্যতার অভিশাপ” প্রবন্ধের সারাংশ। নিটশে ইউরোপের প্রধান এক দার্শনিক। ষোড়শ শতককে প্লাবিত করে আজকের দুনিয়া অবধি তার প্রভাব। সেই প্রভাবের জায়গায় ঈশ্বর প্রশ্নে যে বিভ্রান্তি, তাকে উন্মোচন করেছেন মুসা আল হাফিজ। তিনি রেনেসাঁকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইসলাম ও পশ্চিমা দুনিয়ার বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক নানা জটিল বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন। চিন্তা ও মননঋদ্ধ নানা প্রবন্ধ এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত। বর্ণনাত্মক ও বিশ্লেষণাত্মক প্রবন্ধগুলো পাঠকদের আনন্দ দেয় বটে। তবে সবচেয়ে বেশি দেয় আলো।
    লেখক পরিচিতি:
    মুসা আল হাফিজ কবি, দার্শনিক, ধর্মতত্ত্ববিদ এবং ঐতিহাসিক। ১৯৮৪-এর ৫ই অক্টোবর সিলেটের বিশ্বনাথে তাঁর জন্ম। জ্ঞানের বিচিত্র শাখায় তার বিচরণ হলেও মূলত তিনি একজন আলেম। লেখাপড়া করেন ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ধারায়। তাকমিল ফিল হাদীস সমাপন করে তাফসীরে সম্পন্ন করেন উচ্চতর কোর্স । ইতোমধ্যে লিখেছেন পঞ্চাশ-এর অধিক বই। প্রতিষ্ঠা করেছেন সেন্টার ফর ইসলামিক থট অ্যান্ড স্টাডিজ, ঢাকা। তিনি ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান এবং শিক্ষা, সেবা ও মানব উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রয়াসে সম্পৃক্ত।
    সাহিত্যে তাঁর সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্র বহুমাত্রিক । রাজনীতি, দর্শন, প্রাচ্যবাদ, সমাজতত্ত্ব, ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব, কবিতা, ছড়া, শিশুসাহিত্য, সাহিত্য সমালোচনা, অনুবাদ ইত্যাদি পথে তিনি নিজেকে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন। অতীত-বর্তমানের সেতু রচনা করে তিনি ভবিষ্যতের না-দেখা প্রচ্ছদকে উন্মোচন করে চলেন আপন রচনায় ।
    মানবিক দয়াবোধ, মানবসত্তায় সুষম বিকাশ, ঐতিহ্য ও আদর্শনিষ্ঠা সহকারে প্রগতিশীলতা তাঁর রচনার মধ্যে কথা বলে। তাঁর রচনা মানুষ ও মানুষের পৃথিবীকে অধিকতর আলোকময় করার অন্তর্দৃষ্টিময় চিন্তাভাষ্য। যা আমারা
    উপরে উল্লেখিত প্রবন্ধাংশে লক্ষ্য করলেও বুঝতে পারি। আমরা দেখি, তিনি আমাদেরকে দেখাতে চেয়েছেন কিভাবে মানুষ ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়, ধর্মের প্রতি বিদ্বেষী হয় আবার ধর্মহীন মানুষদেরও পরিণতি কি হয়। চিন্তাশীল পাঠকের জন্য এর মধ্যে রয়েছে অনেক শিক্ষানীয় বিষয়।
    বই পরিচিতি:
    বর্ণনা ও বিশ্লেষণধর্মী এ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত প্রবন্ধ-নিবন্ধ মূলত বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে রচিত।২০২১সালে দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত ‘উৎসের উচ্চারণ’ শীর্ষক কলামে প্রকাশিত হয় অধিকাংশ রচনা। অবশ্য অপ্রকাশিত কিছু রচনাও রয়েছে। ইসলাম ও পশ্চিমা দুনিয়ার বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক নানা জটিল এলাকায় আলোকপাতধর্মী প্রবন্ধ এ গ্রন্থে অধিক। বিজ্ঞান ও ধর্ম, প্রাচ্যতত্ত্ব, জায়নবাদ, পুঁজিবাদ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, আধুনিকতা-উত্তরাধুনিকতা ইত্যাদির মধ্যে নজর বুলিয়ে সিরাতের আলোকমালায় দৃষ্টিপাত করবেন পাঠক। কতিপয় মনীষার লড়াইয়ে পাঠ করে নেবেন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ‘আপন পর’ এর চরিত্র।
    ৭টি বিষয়ে মোট ৩৭টি প্রবন্ধ-নিবন্ধ রয়েছে এ গ্রন্থে। প্রতিটি বিষয়ে রয়েছে আলাদা বিষয়শিরোনাম।
    প্রথম বিষয়শিরোনাম :- ঈশ্বর: থাকা না থাকা।
    এখানে রয়েছে চারটি প্রবন্ধ,
    ১.‘ঈশ্বরের মৃত্যু’ও শূন্যতার অভিশাপ।
    এখানে লেখক দেখাতে চেয়েছেন “ঈশ্বর থেকে পলায়ন করে সর্বাত্মক শূন্যতা থেকে যেমন বাঁচার পথ নেই, তেমনি অসৎ, নির্জ্জান ও নির্বিবেক মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের হাতে ঈশ্বরের নামে স্বেচ্ছাচারের লাগামহীন চর্চা জারি রাখারও সুযোগ নেই।আর এ প্রবন্ধের নামেই গ্রন্থের নাম রাখা হয়েছে। এ প্রবন্ধ নিয়ে আমরা আলোকপাত করেছি শুরুতেই।
    ২.‘ঈশ্বরের অনুপস্থিতি’ ও যাজকদের কেলেঙ্কারি ।
    এই প্রবন্ধে লেখক চার্চের যাজকদের যৌন নির্যাতনের লোমহর্ষক তথ্যচিত্র ও এর কারণসমুহ উপস্থাপন করেছেন। দেখিয়েছেন ঈশ্বরের নামে তৈরী দেবালয়েও ঈশ্বরকে কীভাবে অনুপস্থিত ভাবা হয়। যাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের জায়গা নেই, তারা দেবালয়ে থাকলেও ঈশ্বরের বিধানকে লাঞ্চিত করতে পারে। যার নিদর্শন চার্চে ঘটছে অনবরত।
    ৩. না আধুনিকতায়, না উত্তরাধুনিকতায়।
    এই প্রবন্ধে লেখক আধুনিকতা ও উত্তরাধুনিকতার নানাবিধ অসারতা ও দুর্বলতার ক্ষয় ও পচন ফুটিয়ে তুলেছেন। ফলস্বরূপ দেখাতে চেয়েছেন পশ্চিমা একাধিকপত্য থেকে যে শাসিতরা মুক্তি চায়, তাদের হাতিয়ার হিসেবে আদর্শ নয় এমন আদর্শ, যার প্রস্তাবনা আসে স্বয়ং পশ্চিমা জীবনাদর্শ থেকে। আধুনিকতার জবাব তাই উত্তরাধুনিকতা নয়। তার মধ্যেও রয়েছে আধুনিকতার নানাবিধ পচন, আধুনিকতার নিজস্ব দুর্বলতা।
    ৪.দাসত্বের ইতর-সভ্য ও পুঁজিবাদের মুখ।
    মুসা আল হাফিজের রচনা মানেই আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা। তথ্য, তত্ত্ব, যুক্তি, দর্শন ও শৈলী দিয়ে পরাক্রমের মাধ্যমে তিনি রচনাকে সাজান। এ প্রবন্ধেও রয়েছে এর নিদর্শন। এতে রয়েছে ঢালের মত এমন সব তথ্য ও বিশ্লেষণ, যা দিয়ে ইসলামের প্রতি পাশ্চাত্যের আক্রমণকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন ঠিক তাদেরই বিরুদ্ধে।
    যখন পশ্চিমারা বলে ইসলাম মানুষকে দাস বানিয়েছে, তখন তিনি দেখান দাসত্বের আসল কারবারি কারা? তিনি তুলে ধরেন মানুষ সম্পর্কে ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গির স্বরূপ এবং পশ্চিমা দাস ব্যবসার ভয়ংকর চিত্র।
    তিনি দেখান, জবরদস্তি করে দাস বানানো মানুষের জন্য কি নির্মমতা বরাদ্দ রেখেছিল পশ্চিমা ভোগবাদ ও বর্ণবাদ। দেন “সাও জোয়াও বাতিস্তা” নামক দাস বহনকারী জাহাজের লোমহর্ষক বর্ণনা।
    দ্বিতীয় বিষয়শিরোনাম :-দৃষ্টি ও ভঙ্গি:দুই দুনিয়া।
    এখানে দুটি প্রবন্ধ রয়েছে
    ১.সভ্যতা-সংস্কৃতির বিচারদৃষ্টি : ইসলাম বনাম পাশ্চাত্য ।
    এই প্রবন্ধে লেখক সভ্যতা সংস্কৃতির পরিচিতি তুলে ধরেছেন এবং ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতা সংস্কৃতির তুলনামূলক পর্যালোচনা করেছেন।
    ২.বিজ্ঞান ও ধর্ম : দুই বিপরীত প্রতিক্রিয়া!
    এখানে তিনি বিজ্ঞানের সাথে খ্রিস্ট ধর্মের কি আচরণ এবং ইসলাম ধর্মের কি আচরণ তা সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
    তৃতীয় বিষয়শিরোনাম :-নিত্যদিনের রক্তরস।
    এখানে পেঁয়াজ প্রসঙ্গে একটি প্রবন্ধই রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে একটি সবজির চমকপ্রদ বিবরণ। এ বিবরণের উপর ভর করে অর্থনীতি ও বাজারের দূরবস্থার চিত্রও পাঠক দেখতে পান।
    এর মধ্যে পাঠক উপভোগ করবেন রসিকতাসহ পেঁয়াজের নানা পুষ্টিগণ উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা।
    এ প্রবন্ধে পেঁয়াজের ঘাটতি নিরসনে নানা দিক নিয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
    চতুর্থ বিষয়শিরোনাম :- সিরাতের পথনির্দেশ।
    একটি বৃহত প্রবন্ধ আছে এতে। যা ছোট ছোট অনেকগুলো উপশিরোনামে বিভক্ত। এতে দেখানো হয়েছে কীভাবে মদীনায় গড়ে উঠেছিলো ইসলামী সমাজ। কীভাবে পরিচালিত হয়েছিলো নববী দাওয়াতের কর্মধারা। এ প্রবন্ধে মুসা আল হাফিজীয় গদ্যশৈলীর জ্যোতিতে পাঠক অভিভুত না হয়ে পারবেন না।
    পঞ্চম বিষয়শিরোনাম :-পাশ্চাত্য: মুখ ও মুখোশ।
    এখানে পাঁচটি প্রবন্ধ রয়েছে
    ১.প্রাচ্যবাদের রাজনৈতিক অভিপ্রকাশ ॥ ২.ইউরোপের একাডেমিক ইসলাম পাঠ : শুরুর কথা
    ৩.প্রাচ্যতাত্ত্বিক দৃষ্টি ও উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতা ॥
    ৪. ইসলাম অধ্যয়ন : লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন ॥
    ৫.প্রাচ্যতত্ত্ব ও ইসলাম : মোস্তফা সিবাঈর বুঝাপড়া ॥
    এই অধ্যায়টি এতোই সমৃদ্ধ, যা স্বতন্ত্র এক বইয়ের সম্মান দাবি করে। প্রাচ্যবাদ মোকাবেলায় এদেশে মুসা আল হাফিজ নিজেই এক প্রতিষ্ঠান। প্রতীচ্যবাদের এদেশীয় চর্চায় তিনি আমাদেরকে অনবরত যুক্তি , তথ্য ও ভাষা সরবরাহ করছেন। এ অধ্যায়েও মনোযোগী পাঠক তা গভীরভাবে লক্ষ্য করবেন। প্রাচ্যতাত্ত্বিকদের রাজনীতি কীভাবে সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থের জ্বালানি সরবরাহ করে, লেখক তা বৈদগ্ধের সাথে ধরিয়ে দিয়েছেন।
    দেখিয়েছেন পশ্চিমাদের উত্থানের উৎস, ও ক্রমধারা। জ্ঞানের প্রতি তাদের পিপাসা। এ পথে ইসলামের প্রেরণা ও মুসলিম জ্ঞানসম্পদের ব্যবহারের ইতিবৃত্ত। প্রাচ্যবাদের মোকাবেলার ঐতিহ্যে মোস্তফা সিবাঈকে তিনি উপস্থাপন করেন অন্তর্দৃষ্টিসহকারে।
    ষষ্ঠ বিষয়শিরোনাম :-অক্টোপাসের বেষ্টনী।
    এখানে একটি প্রবন্ধ রয়েছে: জায়নবাদের কর্মধারায় আধুনিক পরিক্রমা ও উপমহাদেশ।
    এ প্রবন্ধ থেকে জানতে পারবেন কিভাবে ইহুদীদের উত্থান ঘটেছিল,তাদের শক্তিশালী হওয়ার মূল কাহিনী এবং কোন কোন প্রক্রিয়ায় তারা পুরো বিশ্বকে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করার প্রয়াস চালায় এবং চালিয়ে যাচ্ছে।
    সপ্তম বিষয়শিরোনাম :- দিশা ও মনীষা এখানে তিনটি প্রবন্ধ রয়েছে।
    ১.মুনশী জমিরুদ্দীন : সত্যযাত্রার পরাক্রম
    এই প্রবন্ধে মুন্সি জমির উদ্দিন এর ইসলাম থেকে খ্রিস্টবাদে দীক্ষিত হওয়া, খ্রিস্টান মিশনারির হয়ে কাজ করা এবং পরবর্তীতে পুনরায় ইসলামে ফিরে আসা এবং ইসলামের হয়ে খ্রিস্টবাদের মোকাবেলায় বৌদ্ধিক লড়াই ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
    পাশাপাশি রয়েছে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব ও সাহিত্যে পারাদর্শী বিভিন্ন মনিষী ও গুরুত্বপূর্ণ বইসমূহের উপর সংবেদী আলোচনা।
    ২.কাজী নজরুল ইসলাম : বাইরে, ভেতরে
    এ প্রবন্ধে লেখক কাজী নজরুল ইসলামের সত্যের প্রতি অবিচলতা, স্বাধীনতার জন্য জাতিকে সচকিত করা এবং কবির প্রতি বিভিন্ন অভিযোগ ও তার জবাব রয়েছে। কবির মূল্যায়নে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত তা আলোচিত হয়েছে। কবির সংগ্রামী জীবনের গতিপথের উপর গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোকপাত করেছেন।
    ৩.হাজী শরিয়তুল্লাহর লড়াই ও হান্টারের বয়ান।
    এই প্রবন্ধে লেখক বাঙালি মুসলমানদের প্রতিরোধ আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে হান্টার যে বিকৃত ও উদ্দেশ্যমূলক ভাষায় উপস্থাপন করেছেন তা তুলে ধরেছেন। হাজী শরীয়তুল্লাহর জীবন ও কর্ম, তার ছেলে দুদুমিয়ার কর্মসাধনা ও সে সময়কার বাংলার গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের আত্মায় টোকা দিয়েছেন লেখক।
    এই গ্রন্থে আলোচনাগুলো প্রগাঢ়, চিন্তায় উদ্দীপ্ত এবং গভীর তাত্ত্বিকতায় পূর্ন। যা সমাজ, ইতিহাস, রাজনীতি ও দর্শনের নানা দিগন্তে দৃষ্টি খুলতে সহায়তা করে। অনেক ক্ষেত্রে কোরআন সুন্নাহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সাহায্য করবে। ইতিহাসের অসাধারণ অনেক খন্ড চিত্র পাওয়া যাবে। অনেক দুর্লভ তথ্য জানা যাবে। পাবেন অনেক বিশেষ ব্যক্তিবর্গের চিন্তা ও কর্মপদ্ধতির উপর অন্তর্দৃষ্টিময় বিশ্লেষণ।
    সমালোচনা:
    গ্রন্থটির একটি প্রবন্ধ সংকলন। প্রতিটি প্রবন্ধই প্রকাশিত হয়েছে কোনো না কোনো দৈনিকে বা সাময়িকীতে। কোন প্রবন্ধ কোথায় প্রকাশিত হয়েছে, এর উল্লেখ ও তারিখ প্রবন্ধের নিচে থাকলে লেখকের চিন্তার সাথে তার সময়কে মেলানো সহজ হতো। এটি তাদের জন্য সহায়ক, যারা লেখকের চিন্তা নিয়ে ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান করতে চান বা করেন।
    মুসা আল হাফিজের এমন পাঠক অনেকেই, যারা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তাকে বুঝতে চান, তার প্রতিটি রচনার সময় ও মেজাজসহ। বিষয়টি লক্ষণীয়।
    বইটি কাদের জন্য:
    চিন্তার জগতে যারা বিচরণশীল,সত্যের সন্ধানে যারা ব্যাকুল,জামানাকে যারা বুঝতে ও চিনতে প্রত্যয়ী , তাদের জন্য এ বই খুবই উপাদেয়।
    সব মিলিয়ে মানসিক পরিগঠনের পথে বইটি জ্ঞানীয় ও বৌদ্ধিক আলো-বাতাস সরবরাহ করবে , এটা দৃঢ়ভাবে বলা যায়।
    1 out of 1 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
Top