ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত
অনুবাদক: মাওলানা সাদ আব্দুল্লাহ মামুন (শিক্ষক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জামিয়া ইমদাদিয়া দারুল উলুম মুসলিম বাজার, মিরপুর ১২, ঢাকা)
ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত এটি সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-এর লেখা আস-সিরাউ বাইনাল ঈমানি ওয়াল মাদ্দিয়াত-এর অনুবাদগ্রন্থ। আরবী কিতাবটির উর্দু সংস্করণের নাম মাআরেকায়ে ঈমান ও মাদ্দিয়াত।
সূরা কাহাফের আলোচিত অন্যতম ৪টি বিষয় :
-আসহাবে কাহাফ
-দুই বাগিচার মালিক
-হযরত মুসা ও খিযির আলাইহিমাস সালামের সফর এবং
-বাদশা যুলকারনাইন।
এ চারটি বিষয়কে নির্ভর করে অসাধারণ তাত্ত্বিক ও দার্শনিক আলোচনায় গ্রন্থটি রচনা করেছেন হযরত নদভী রহ.। হযরত নদভী রহ.-এর রচনামাত্রই পাঠকের ঈমানকে জাগিয়ে তোলে। চিন্তা ও চেতনাকে শানিত করে। বিবেক ও বিবেচনাকে আন্দোলিত করে। আমাদের ধারণা, এ গ্রন্থে তাঁর লেখার সেইসব প্রসাদগুণ যেন আরও মাত্রা পেয়েছে।
- ৫৯৯ টাকা অর্ডারে ১টি ফ্রি আমল চেকলিষ্ট।
- ৮৯৯ টাকা অর্ডারে ১টি ফ্রি বই।
-
-
save offবাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান
লেখক : ড. মরিস বুকাইলিপ্রকাশনী : দারুস সালাম বাংলাদেশ375 ৳217 ৳১৯৮১ সালের কথা। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্যান্সিসকো ...
-
hotহিফজ-যাত্রা (একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে ৬ মাসে হাফিজ হবেন)
লেখক : কারি মুবাশ্শির আনওয়ারপ্রকাশনী : ইলহাম ILHAM152 ৳ – 182 ৳অনুবাদ: মাসুদ শরীফ পৃষ্ঠা: ১৬০ ম্যানচেস্টারে বেড়ে ওঠা ...
-
hotকাসাসুল কুরআন – (১-১১ খন্ড)
লেখক : মাওলানা হিফজুর রহমান (রহঃ)প্রকাশনী : মাকতাবাতুল ইসলাম2,980 ৳1,728 ৳অনুবাদকবৃন্দ: মাওলানা আবদুল্লাহ আল ফারুক, মাওলানা ...
-
hotকুরআনের মানচিত্র—Atlas of the Quran
লেখক : ড: শাওকি আবু খলিলপ্রকাশনী : মুসলিম ভিলেজ580 ৳394 ৳গ্রন্থটি একটি এটলাস গ্রন্থ। গ্রন্থটি মানচিত্র, ...
-
save offআল-কুরআনের শব্দসমূহ
লেখক : ইমরান হেলালপ্রকাশনী : ওয়াফি পাবলিকেশন550 ৳440 ৳কুরআন বোঝার নিমিত্তে আমরা অনেক কোর্স ...
-
hot৩০ মজলিসে কুরআনের সারনির্যাস
লেখক : মুফতি জিয়াউর রহমানপ্রকাশনী : মাকতাবাতুল আসলাফ460 ৳322 ৳আচ্ছা কেমন হয়, মৌলিক বিষয়বস্তুর আলোকে ...
-
hotকুরআনে বর্ণিত সকল দুআ ও তার তাফসির
লেখক : মোঃ হাসিবুর রহমানপ্রকাশনী : আলোকিত প্রকাশনী365 ৳266 ৳শারঈ সম্পাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল ...
-
save offনূরুন আলা নূর
প্রকাশনী : সীরাত পাবলিকেশন127 ৳95 ৳অনুবাদ: মহিউদ্দিন রূপম পৃষ্ঠা: ৯৫ কভার: পেপার ব্যাক ড. জাকির ...
-
hotহিফয করতে হলে
প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন141 ৳96 ৳ভাষান্তর : উস্তায আব্দুল্লাহ মাহমুদ সম্পাদনা : ...
-
save offনূরানী পদ্ধতিতে ২৭ ঘন্টায় কুরআন শিক্ষা
লেখক : প্রকৌশলী মইনুল হোসেনপ্রকাশনী : মীনা বুক হাউস350 ৳210 ৳মইনুল হোসেন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বি ...
-
তামান্না জাহান – :
দুনিয়া পাগল মানুষের নিজের জ্ঞান ও মেধার ওপর থাকে বাড়াবাড়ি রকমের ভরসা-বিশ্বাস এবং তার বাইরের আর সবকিছুকে অস্বীকার করার এক ধরনের প্রবণতা। মানুষের এই অহংকার, দাম্ভিকতা, আত্মপ্রশংসা, চিন্তা-ভাবনার সংকীর্ণতা ধীরে ধীরে বস্তুবাদের গভীরে প্রথমে শেকড় গাড়ে এবং এর সকল লহ্ম্য ও উদ্দেশ্য এবং কথা ও কাজে প্রকাশ পেতে থাকে যা তাকে ভ্রষ্টতা, নাফরমানি, পাপাচার এমনকি শিরকের দিকে ঠেলে দেয়। আদিকাল থেকেই চলছে ঈমান আর বস্তুবাদের সংঘাত। কুদরতিভাবে ঈমানিশক্তি সব সময়ই বিজয়ী হয়েছে, বস্তুবাদ হেরে গেছে এবং তারই প্রেহ্মাপট তাফসীর, হাদীস, ইতিহাস এবং আধুনিক তথ্যাবলি ও বর্তমান অবস্থার আলোকে সূরা কাহাফের অধ্যয়ন ফুটে উঠেছে ‘ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত’ বইটিতে।
ভূমিকাঃ
‘ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত’ বইটি সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.- এর লেখা আস-সিরাউ বাইনাল ঈমানি ওয়াল মাদ্দিয়াত – এর অনুবাদগ্রন্থ। আরবী কিতাবটির উর্দু সংস্করণের নাম মাআরেকায়ে ঈমান ও মাদ্দিয়াত। ১৩৯০ হিজরী(১৯৭১ ঈ.) সনে কিতাবটি কুয়েতের দারুল কলম থেকে প্রকাশিত হয়। এ কিতাবে অধিকাংশ আয়াতের তরজমা নেওয়া হয়েছে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ রহ.- এর তরজমানুল কুরআন থেকে।
বই নির্যাসঃ
কুরআনের সুরা কাহফে বর্ণিত চারটি ঘটনা হলোঃ ১. আসহাবে কাহাফ ২. দুই বাগিচার মালিক ৩. হযরত মুসা ও খিযির আলাইহিমাস সালাম ৪. যুলকারনাইনের ঘটনা যেগুলো ঈমান ও বস্তুবাদের আলোকে বিশ্লেষণ, ঈমানিশক্তির বিজয়লাভ ও তার নেপথ্যকাহিনি তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘দুনিয়ার মহব্বত সকল অনিষ্টতার মূল’- সূরা কাহাফে এ বিষয়টিই বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে এবং এ সূরায় যতগুলো আশ্চর্যজনক ঘটনা ও বিস্ময়কর বিষয় ও বাস্তবতার উল্লেখ রয়েছে, তা এ বিষয়ের প্রতি লহ্ম রেখেই লেখক বইটি লিখেছেন। বলা যায় এই বইয়ে রয়েছে কুরাআনের অন্যতম মর্যাদাপ্রাপ্ত সূরা কাহাফের সকল তালীম ও শিক্ষা, উপদেশ ও নসীহত এবং বুদ্ধিমত্তা ও হেকমত।
বইটি কেন পড়বেনঃ
সূরা কাহাফে যতগুলো ইশারা ও ইঙ্গিত, উপমা ও উপাখ্যান, উপদেশ ও নসীহত, বিবরণ ও ঘটনা রয়েছে- সবগুলো এই একটি বিষয়কেই নির্ণিত ও প্রমাণিত করছে- ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত। বর্তমান দজ্জালি সভ্যতা-সংস্কৃতি, যা ১৭০০ শতাব্দীতে জন্ম নিয়ে ক্রমশ বিস্তার ঘটেছে এবং বিংশ শতাব্দীতে এসে পূর্ণতা লাভ করেছে। আধুনিক বস্তুবাদী সভ্যতা কীভাবে ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করে চলছে; দাজ্জালিপনা, কুফুরি, অবিশ্বাস, অশ্লীলতা, অপসংস্কৃতি ও নাস্তিকতা ছড়িয়ে দিচ্ছে অত্যন্ত বিচহ্মণতার সাথে তারই বিবরণ ও স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছে বইটিতে। বস্তুবাদ কতটা ভয়ংকর এবং প্রতিদিন কীভাবে আমরা একটু একটু করে বস্তুবাদের ফাঁদে পা বাড়াচ্ছি নিজের অজান্তেই তার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে বইটিতে। বস্তুবাদের এই খোলস থেকে বের হওয়ার অন্যতম পরিবেশক হিসেবে কাজ করবে চমৎকার এই বইটি।
পাঠ্যানুভূতিঃ
যখন থেকে জেনেছি প্রতি জুমায় সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা ও মুখস্ত করা কতটা ফযীলত তখন থেকেই এ সূরার প্রতি কৌতুহল সৃষ্টি- কী সেই বিশেষত্ব আছে এই সূরাতে? হাদীসে জেনেছি আখেরি যামানার দাজ্জলের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য সূরা কাহাফে হেফাজত ও নিরাপদ থাকার ফজিলত বর্ণিত আছে। কিন্তু কেন এই সূরা? কী সেই ইতিহাস ও এর শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য যা শুধু এ সূরার মধ্যেই রয়েছে? আমার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি এই বইটিতে যা আমার মনকে তৃপ্ত করেছে, অজানা অনেক রহস্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে; যা একজন মুসলিম হিসেবে বর্তমান এই বস্তুবাদী ফিতনার যুগে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
Afsana Bela – :
সুরা কাহাফে উপস্থাপন করা হয়েছে চারটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যাকে হয়তো গল্প বলতে মন চাইবে। কিন্তু কোরানের উল্লেখিত ঘটনা বা কাসাসে কোন কল্পনা নেই, আছে এমন এক বাস্তবতা যা একই সাথে শিক্ষনীয় ও নিগুঢ় সত্যের উন্মোচনকারী। সুরা কাহাফে বর্ণিত আছে গুহাবাসী যুবকের ঘটনা, দুই বাগিচার মালিকের কাহিনী , হযরত মুসা(আ:) ও খিজির (আ:) এর ঘটনা এবং বাদশা জুলকারনাইনের ঘটনা। সাথে জগতের সবচেয়ে বড় ফিতনা —ফিতনাতুল আকবর —’দাজ্জাল’-এর প্রসঙ্গ এবং দাজ্জালের মোকাবিলায় করণীয়। নদভী(র:) প্রতিটি ঘটনার গভীরতর তাৎপর্য উদঘাটন করেছেন। খিজির (আ) এর ঘটনায় আল্লাহ সুবহানা তায়ালা মুসা(আ:) এর মাধুমে জগতবাসীকে জানিয়েছেন দৃশ্যমান ঘটনার বাইরেও আছে আরো কোন সত্য যা শুধু জানে তারাই যাদেরকে খোদা জানাতে চান। গায়েবের চূড়ান্ত ইলম শুধু আল্লাহতায়ালার আছে। মুসা(আ:) এর কাছে আল্লাহ উন্মোচন করলেন তার এক বিশিষ্ট বান্দাকে যে বেঁচে আছে মানবীয় আয়ুর প্রচল সীমানা উজিয়ে। বস্তবাদে ও দৃশ্যমানতায় অভ্যস্ত মনে এক চাবুক যেন এ সুরা। সময় কীভাবে থমকে থাকে, একদার পরাজিতরা কী করে ঈমান ও তাওয়াক্কুলের দৌলতে বিজয়ী ও বীরের সম্মান লাভ করে সেই ঐতিহাসিক শিক্ষা পাওয়া যায় আসহাবে কাহাফের ঘটনায়। প্রতিটি ঘটনা জাগতিক আপাত নিয়মের বাইরের। যারা জগতের কার্যকারণকেই চূড়ান্ত মনে করে, ইহকালের সুখ, দু:খকেই পরম অবস্থা ভাবে, তাদেরকে এই সুরার ব্যাখ্যায় নদভী(র:) যেন চ্যালেঞ্জ করছেন, দেখিয়ে দিচ্ছেন তাদের ক্ষীণ দৃষ্টি। পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী সভ্যতার শেষ পরিণতি ইহকালের অশান্তি ও পরকালের শাস্তি। খোদাভীতি, খোদার প্রতি শুকর মানব জীবনকে করে তুলতে পারে বরকতে ভরা।
এ অসামান্য বইয়ে নদভী(রা:) তাকওয়াবিহীন জাগতিক চাকচিক্য ও প্রযুক্তির উত্তুংগ বিকাশ ও অগ্রগতির ভেতরে দেখছেন মানুষের বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। এ সভ্যতা ঠিক যেন দাজ্জাল। দাজ্জালের হাতের আগুন যে বেছে নিবে সে বেহেস্তি হবে আর যে বেছে নিবে তার অন্য হাতের বাগিচা ও প্রাচুর্য, সে পাবে দোজখের অনন্ত আগুনের শাস্তি। এভাবেই দৃশ্যের অন্তরালের দৃশ্যের জন্যে প্রস্তুত হতে হয় মোমিনকে। ইমান এভাবেই বস্তুনিমগ্মতা থেকে বাঁচায় মুমিনকে। ইহজগতকে গুরুত্বের ক্রমের ভেতরে যথাস্থানে রেখেই ইসলাম মানুষকে পরকালের অদৃশ্য জগতের জন্যে প্রস্তুত করে, ইহজগতেই আল্লাহ এমন কিছু ঘটনা ঘটান যা বিবেকবান মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে আসন্ন কিন্তু অনন্ত পারলৌকিক জীবনকে।যেন একটা পর্দা সরালেই দেখা যাবে সত্যের চিরন্তন-শাশ্বত রূপ।
এ গ্রন্থে সুরা কাহাফের চারটি ঘটনার মধ্য দিয়ে আল্লামা নদভী ইমানের রূপ, বস্তুজগতের অধ্যাস আর এক চিরসত্য যা প্রায়শই ‘গায়েব’ হয়ে থাকে আমাদের কাছে , তা অনবদ্য ভাষায় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। দজ্জালের আলোচনাতেও এভাবে এসেছে বস্তবাদ ও ইমানেত সংঘাতের প্রসংগ। সাইয়েদ আবুল হাসান নদভী আরো বিশ্লেষণ করেছেন, কেন এই সুরাটিকে নবিজী দাজ্জালকে প্রতিরোধের অন্যতম ঢাল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। বইটি পাঠকের অন্তর্চক্ষুর উন্মীলন ঘটাবে বলে বিশ্বাস করি।
mr.tahmid – :
লেখক পরিচিতিঃ সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদভী বিংশ শতাব্দীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ইসলামিক চিন্তাবিদ, ঐতিহাসিক, লেখক এবং পন্ডিত ব্যক্তিত্ব। তিনি বিভিন্ন ভাষায় ৫০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি “আলী মিয়াঁ” নামেও পরিচিত। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে আলী নদভী তাঁর রচিত গ্রন্থ মা যা খাসিরাল ‘আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমীন (মুসলামানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?)-এর জন্য মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। পুরস্কারের নগদ দুই লাখ রিয়ালের অর্ধেক তিনি আফগান শরণার্থীদের জন্য এবং বাকী অর্ধেক মক্কার দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে (একটি হিফজখানা এবং মাদরাসা আল-সাওলতিয়াহ)দান করে দেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সাহিত্যে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ৭ খণ্ডে রচিত উর্দু ইতিহাস গ্রন্থ তারীখে দাওয়াত ওয়া আযীমত (সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস)-এর জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। যার মূল্য ছিল বিশ লক্ষাধিক ভারতীয় রুপি। আলী নদভী পুরস্কারের সমস্ত অর্থ বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও অসহায়দের মধ্যে বিতরণ করে দেন। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে আলী নদভী দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন। দুবাইয়ের যুবরাজ এবং আরব আমিরাতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শেখ মুহাম্মাদ ইবনে রুশদের হাত থেকে গ্রহণ করা প্রায় এক কোটি পঁচিশ লক্ষ ভারতীয় রুপি সমমূল্যের এ পুরস্কারের পুরোটা তিনি বিভিন্ন দাতব্য কাজে ব্যয় করেন।
বিস্তারিত পাঠ পর্যালোচনাঃ লেখক সম্পূর্ণ সূরা কাহাফকেই চিত্রায়িত করেছেন ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাতরুপে। সমগ্র বইতে ভোগবাদী দর্শনের অসাড়তা ফুটিয়ে তুলেছেন। বর্ণনা করেছেন শিক্ষা ও উত্তরণের উপায়। সমগ্র সূরাকে মোট চারটি মূল ঘটনায় ভাগ করে তা থেকে মূল শিক্ষা যা বের করেছেন তা অতি সংক্ষেপে নিম্নরুপঃ
১. আসহাবে কাহাফের ঘটনা থেকে শিক্ষাঃ এটি এমন প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক একটি ঘটনা যা মুসলিম-অমুসলিম সকল ঐতিহাসিকগণই সোৎসাহে বর্ণনা ও লিপিবদ্ধ করেছেন। ঈসায়ী ২য় শতাব্দীতে মহাপ্রতাপশালী রোমান নগরী আফিসুসের রাজপরিবারেই বেড়ে উঠে একদল তরুণ, হয় তাওহীদের বিশ্বাসে দীক্ষিত। তখনকার বিশ্বে একত্ববাদী ধর্ম হিসেবে খ্রিস্টীয় ধর্মের অল্প কিছু লোকই টিকেছিলেন, হচ্ছিলেন অমানবিক নির্যাতনের শিকার। এমন সময় রাজপরিবারেরই একদল যুবক রাজার আদেশ অমান্য করে তাওহীদের ঘোষনা দেয়, অস্বীকৃতি জানায় মূর্তিপূজারী বস্তুবাদী সাম্রাজ্যের সকল রসম রেওয়াজকে। ইমান বাঁচাতে গা ঢাকা দেয় গুহার মধ্যে।
সূরাটি যখন নাজিল হয় তখন মক্কার মুসলিমরা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। আল্লাহ যেন আসহাবে কাহাফের ঘটনা বর্ণনা করে তাদেরকে সাহস যোগালেন, জানিয়ে দিলেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার পাথেয়। এই যুবকেরা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেছিল। অগ্রাহ্য করেছিল চাকচিক্যময় আয়েশী বস্তুবাদী জীবন। ইমানকেই শ্রেষ্ঠ সম্পদ জেনে তা বাঁচাতে গা ঢাকা দিয়েছিল। আল্লাহও তাদের সাহায্য করেন। তিনশত বছরের নিদ্রার পর জেগে তারা আবিস্কার করে, দুনইয়া বদলে গেছে। আগের যুগে যখন তারা ছিল ব্রাত্য, এখন তাদেরকেই মানুষ সসম্মানে ভক্তি করে। যুবকেরা বাহ্যিক উপায় উপকরণ নিয়ে ভাবেনি, সমাজে কিভাবে টিকবে, কয়দিন বাঁচবে, খাবার ফুরিয়ে গেলে কোথায় যাবে এসব চিন্তা তাদেরকে ইমানহারা করেনি। তারা তাওয়াক্কুল করেছিল সেই সত্ত্বার উপর যিনি এসব কিছুরই নিয়ান্তক। তাইতো আল্লাহ তাদের দান করেছেন স্বীয় রাজকীয় ভান্ডার থেকে।
আর এখানেই আছে আমাদের জন্য মূল্যবান শিক্ষা। যখন পার্থিব সব উপায় উপকরণ শেষ হয়ে যায়, তখন কিভাবে ইমান আকিদার উপর টিকে থাকা যায় তার বাস্তবিক উদাহারণ গুহাবাসী এ যুবকেরা। বর্তমান সভ্যতাকে লেখক অভিহিত করেছেন দাজ্জালী সভ্যতা হিসেবে। আমরা বাস করছি চরম বস্তুবাদী ও ভোগবাদী এক জগতে। এখানেও ইমান আকিদা নিয়ে টিকে থাকতে হলে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে আসহাবে কাহাফের যুবকদের মত। আমরা হয়ত হয়ে পড়বো সমাজে ব্রাত্য, অপরিচিত কোন গুরাবা! কিন্তু নিজেদের আকিদা বিশ্বাসে অটল থেকে মালিকের উপর তাওয়াক্কুল করতে হবে। প্রয়োজনে ইমান বাঁচাতে গা ঢাকা দিতে হবে, বেছে নিতে হবে হিজরত। আর নুসরত, মদদ ও যাবতীয় সাহায্যের মালিক তো আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতালাই।
সময় বদলে যায়, যাবেই। এককালের নির্বাসিত আসহাবে কাহাফের যুবকেরাই সময়ের ফেরে পরিণত হয়েছিলেন বীরপুরুষে। বস্তুবাদী সভ্যতার ভিত্তিমূল দুর্বল, এ দর্শনের পরাজয় আর ইমানি শক্তির বিজয় সুনিশ্চিত। প্রয়োজন দৃঢ়তার। প্রাসঙ্গিক তাফসির ছাড়াও লেখক তার আপন ঢংয়ে সূরা কাহাফ নিয়ে অন্য ধর্মের ঐতিহাসিকদের বিবরণ তুলে ধরেছেন, তুলনা করেছেন কোরআনের বর্ণনার সাথে, খুঁজে বের করেছেন শিক্ষা ও মূলনীতি এবং আমাদের জন্য দিয়েছেন দিকনির্দেশনা।
২. দুই বাগিচার মালিকের ঘটনা থেকে শিক্ষাঃ এ ধরনের ঘটনা সমাজে অহরহ ঘটে। নিয়ামতের না শোকরি করে মিথ্যা বড়াইয়ে লিপ্ত হয় কতশত মানুষ! আজকের বস্তুবাদী সমাজে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করার প্রবণতাও যেনো বেড়ে গেছে। অথচ জাগতিক সম্পদ ও ক্ষমতা নশ্বর, ক্ষণস্থায়ী। আমাদের উচিত নিয়ামতের শোকর করা, পরকালকেই প্রাধান্য দেয়া আর যাবতীয় সফলতার কৃতিত্ব জগতসমূহের অধিপতি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকেই দেয়া। নিয়ামতের শোকর করে মাশাল্লাহ বলা, কোনও কাজ করার ইচ্ছা করলে ইনশাআল্লাহ বলা উচিত। কারণ এ কথাগুলো বস্তুবাদী সভ্যতার শিকড়ে সমূলে আঘাত করে এটি জানিয়ে দেয় যে, সকল কিছু আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারেই সম্পাদিত হয়। নচেৎ অহংকারী বাগিচার মালিকের মত আল্লাহ চাইলে নিমিষেই আমাদের সকল সম্পত্তি মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন, তখন আমরা তাঁর মোকাবেলায় কোনও সাহায্যকারীও পাবো না।
৩. মুসা ও খিযির আলাইহিস সালামের ঘটনা থেকে শিক্ষাঃ মুসা ও খিযির আলাইহিমুস সালামের বিস্ময়কর মোলাকাত ও তিনটি আজব ঘটনা ও তাঁর ব্যাখ্যা লেখক নাটকীয় ও সংক্ষিপ্ত পরিসরে উপস্থাপন করে তুলে এনেছেন প্রয়োজনীয় শিক্ষা। মানুষ যতই চেস্টা করুক না কেনো, জ্ঞানবিজ্ঞানে উৎকর্ষ সাধন করুক না কেনো, সে এ বিশ্বজগতের অতি অল্প রহস্যেরই জট খুলতে পারবে। এ বিশ্বজগত সম্পর্কে পুরোপুরি অবগতি লাভ করা তো ফেরেশতা বা জিনদের পক্ষেও অসম্ভব, মানুষ তো আরও তাড়াহুড়োপ্রবণ। অনেক সময় আপাতদৃষ্টিতে কোনও জিনিসকে ভুল মনে হতে পারে, কোনও ঘটনাকে খারাপ মনে হতে পারে, কিন্তু হতে পারে তাতে আমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। সব জিনিসের হেকমত ক্ষুদ্র ইলমে জানা আমাদের জন্যে অসাধ্য। মানুষের জ্ঞান, বিবেক, দৃষ্টিসীমা সীমিত ও সংকীর্ণ। তাই আমাদের সবর করা উচিত, আর যাবতীয় কাজের সফলতার জন্যে আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া উচিত। বস্তুবাদী সভ্যতার অর্জনে আমরা যেন ধোঁকা না খাই।
৪. যুলকারনাইন বাদশার গল্প থেকে শিক্ষাঃ মুমিন বাদশাহ ক্ষমতা পেলে তা দাওয়াতি কাজে ব্যবহার করে। জুলকারনাইন প্রভূত ক্ষমতা ও সাম্রাজ্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর প্রাপ্তি ও অর্জনকে আল্লাহর দান হিসেবেই স্বীকার করেছেন। এ যেন বস্তুবাদী জীবনদর্শনের কফিনে ঠুকে দেয়া হলো শেষ পেরেক। পূর্ব-পশ্চিমের মহা প্রতাপশালী বাদশাহ ও নিজের বড়ত্ব জাহির না করে আল্লাহকেই বড় বলে স্বীকার করলেন, দাওয়াতি কাজে নিবিষ্ট হলেন, ঠিক যেমনটি করেছিলেন নবি সুলাইমান (আ) ও খোলাফায়ে রাশিদাগণ। এ থেকে বিশ্বের সকল শাসকের জন্য নিদর্শন রয়েছে। দাজ্জালকেও ক্ষমতা দেয়া হবে, কিন্তু সে তা ব্যায় করবে সমাজে কুফরি ছড়ীয়ে দিতে। তাই আমরা যেন বস্তুবাদী জীবনদর্শনের মোহে না পড়ি।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ সমগ্র বইতে সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদভীর ইলমি গভীরতা প্রস্ফুটিত হয়েছে এবং অনেক উপকারী রত্নসদৃশ শিক্ষা লিপিবদ্ধ হয়েছে। অনুবাদকের অনুবাদের ধরন খুবই সুন্দর ছিল। সাবলীল বাক্য রচনা বইর প্রতি মনোযোগ ধরে রেখেছিলো। প্রয়োজনীয় অসংখ্য ফুটনোট ও প্রাসঙ্গিক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অনুবাদক ফুটনোটে তুলে এনেছেন যা থেকে অনুবাদককে তারিফ দিতে হয়। তবে অনুবাদক প্রচুর উর্দু শব্দের বাংলায়ন না করায় অনেক সময়ই বাক্যগুলোর সৌন্দর্যমাধুরতা নষ্ট হয়েছে। সম্পাদকের অন্তত উচিত ছিল এই শব্দগুলো বাংলায়ন করে প্রকাশ করা। আশা রাখি, পুনর্মুদ্রণের সময় খেয়াল রাখা হবে।
শেষ কথাঃ এ দুনইয়ার ইতিহাসের পরতে পরতে আছে সত্য মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্দ্বের কাহিনী। ঈমান বনাম বস্তুবাদের মোড়কে এই সুপ্রাচীন দ্বৈরথেরই শেষ অধ্যায় রচিত হচ্ছে শেষ জামানায়। এই বস্তুবাদী ও ভোগবাদী জীবনদর্শনের জন্যেই মানুষ দাজ্জালের ফিতনায় পড়ে যাবে। তাইতো সূরা কাহাফ যেন ওই জীবনদর্শনকেই অপনোদন করে দেখিয়ে দিচ্ছে উত্তরণের উপায়। আমরা যেন সবসময় আখিরাতকেই প্রাধান্য দেই। প্রয়োজনে ইমান বাঁচাতে দাজ্জালের ফিতনা থেকে পালাতে আশ্রয় নেয় গুহার ভেতরে। আত্মগরিমা করে নিজেদের বিপদ না ডেকে আনি। যাবতীয় জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও হেকমত তো আল্লাহরই, তাই সকল কাজে আল্লাহকেই প্রশংসা জানাই ও তাঁর কাছেই সাহায্য চেন চাই। দুনইয়ার কোনও রহস্য বুঝে না আসলে আল্লাহর দিকেই যেন নিবিস্ট হই। কাফির তাগুতদের সাহায্য না করি। ঠিক যেমনটি সূরার একদম শেষে বলা হয়েছেঃ
‘ব্যস, যে-ই তাঁর পরওয়ারদিগারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার বাসনা রাখে, তাঁর উচিত সে যেন নেক আমল করে এবং তাঁর রবের ইবাদাতে অন্য কাউকে শরীক না করে।’ [সূরা কাহফঃ১১০]
মোহাম্মদ – :
Shamim – :