ফিরে এসো নীড়ে
লেখক : সাইয়্যেদা ফাতেমা বিনতে খলীল
প্রকাশনী : রাহনুমা প্রকাশনী
বিষয় : দাওয়াহ, দ্বীনের পথে আহ্বান
বিখ্যাত আরব লেখিকা ও দাঈয়া সাইয়্যিদ ফাতিমা বিনতে খলীল। ‘ফিরে এসো নীড়ে’ মূলত উনার বিখ্যাত বই ‘দাওরুল মারআতিল মুসলিমাহ বাইনাল আসালাহ ওয়াল মুআসারাহ’ কিতাবের বাংলা অনুবাদ।
.
বইটির অনন্য বৈশিষ্ট্য এই যে, নারীদের বিষয়ে একজন নারীরই লেখা। যেন প্রিয় বোনের প্রতি প্রিয় বোনের উপদেশ এবং প্রিয় বোনের পক্ষে প্রিয় বোনের ওকালতি— যে তাদের মন বোঝে, প্রয়োজন বোঝে। যার অকৃত্রিম আন্তরিক উপদেশে নারী পাবেন একজন আদর্শ স্ত্রী, একজন আদর্শ মা, সমাজের একটি অংশের যোগ্য প্রতিনিধি এবং অপর অংশের সফল কারিগর; সর্বোপরি দ্বীনের একজন একনিষ্ঠ দাঈয়া হিসেবে একটি নতুন জীবন শুরু করার প্রেরণা।
বিখ্যাত আরব লেখিকা ও দাঈয়া সাইয়্যিদ ফাতিমা বিনতে খলীল। 'ফিরে এসো নীড়ে' মূলত উনার বিখ্যাত বই 'দাওরুল মারআতিল মুসলিমাহ বাইনাল আসালাহ ওয়াল মুআসারাহ' কিতাবের বাংলা অনুবাদ।
.
বইটির অনন্য বৈশিষ্ট্য এই যে,... আরো পড়ুন
-
-
hotবেলা ফুরাবার আগে
লেখক : আরিফ আজাদপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন335 ৳234 ৳বেলা ফুরাবার আগে... নিজেকে আবিষ্কারের একটি আয়না। ...
-
hotএপিটাফ
লেখক : সাজিদ ইসলামপ্রকাশনী : বুকমার্ক পাবলিকেশন228 ৳171 ৳ধরণ: লেকচার সংকলণ পৃষ্ঠা: ১৪৪ কভার: পেপার ব্যাক উস্তাদ ...
-
save offফেরা ২
লেখক : বিনতু আদিলপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন190 ৳133 ৳জাগতিক নিয়মে, সব পাখি নীড়ে ফেরে। ...
-
hotতুমি ফিরবে বলে (ফিমেল ভার্সন)
লেখক : জাকারিয়া মাসুদপ্রকাশনী : সাবিল পাবলিকেশন300 ৳204 ৳শারঈ সম্পাদক: হাফিজ আল মুনাদী তারুণ্যের জোয়ার ...
-
hotকে উনি?
লেখক : মোহাম্মদ তোয়াহা আকবরপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন172 ৳120 ৳এই বইতে সুদৃঢ়, সুপ্রতিষ্ঠিত ইতিহাস থেকেই ...
-
hotতত্ত্ব ছেড়ে জীবনে
লেখক : শরীফ আবু হায়াত অপুপ্রকাশনী : সিয়ান পাবলিকেশন250 ৳187 ৳ডাক্তার হোক কিংবা ইঞ্জিনিয়ার, হিসাবরক্ষক কিংবা ...
-
hotতুমি ফিরবে বলে (মেল ভার্সন)
লেখক : জাকারিয়া মাসুদপ্রকাশনী : সাবিল পাবলিকেশন300 ৳204 ৳‘তুমি ফিরবে বলে’ বইটি রবের দিকে ...
-
halimabdullah019 – :
.
বইটিতে কী আছে?
▬▬▬▬▬▬▬
‘ফিরে এসো নীড়ে’ বইটি মুসলিম নারীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক—এককথায় সমগ্র জীবনের উপর রচিত। এতে জীবনের প্রতিটি ধাপে, প্রতিটি বাঁকে তাদের মর্যাদা, অবদান, দায়িত্ব-কর্তব্য ও অধিকার প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম তিনটি অধ্যায়ে বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতা ও ধর্মে নারীদের অবস্থান এবং ইসলামে নারীদের অনন্য মর্যাদার কথা তুলে ধরা হয়েছে। অতঃপর ইসলামের বিবাহব্যবস্থার কল্যাণ, বিবাহের বিধান ও শর্ত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দাম্পত্যজীবনে একজন নারীর কী কী দায়িত্ব ও অধিকার রয়েছে, সেগুলোও নিপুণভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কীভাবে সন্তান লালনপালন করতে হবে ও যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে পাঁচটি অধ্যায়ে সবিস্তার পয়েন্ট আকারে আলোকপাত করা হয়েছে। দাওয়াতের ময়দানে নারীর কী দায়িত্ব, সে আলোচনাও বাদ যায়নি। বইয়ের শেষাংশে বহুল ইসলামের আলোচিত ‘বিতর্কিত’ বিষয়গুলোর চমৎকার ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং এসব বিষয়ে সেকুলার ও ইসলামবিদ্বেষীদের উপযুক্ত জবাব প্রদান করা হয়েছে। যেমন: বহুবিবাহ, মুসলিম উত্তরাধিকার আইন, বাল্যবিবাহ, তালাক, জন্মনিয়ন্ত্রণ, নারীদের চাকরি ইত্যাদি।
.
পাঠ্যানুভূতি ও মূল্যায়ন:
▬▬▬▬▬▬▬▬▬
বইটিকে আমি ‘মাস্ট রিড’ ক্যাটাগরির মনে করি। একজন অভিজ্ঞতালব্ধ, যুগসচেতন ও উচ্চশিক্ষিত নারী হিসেবে লেখিকার প্রজ্ঞার স্ফূরণ ঘটেছে বইতে। অনুবাদ যথেষ্ট সাবলীল ও ঝরঝরে মনে হয়েছে। বইতে কুরআন-সুন্নাহর আরবি নস (মূল টেক্সট) উল্লেখ করা হয়েছে, ফলে অতিরিক্ত ভালো লাগা কাজ করেছে। লেখিকা সালফে সালেহিন ও বিজ্ঞজনদের বিভিন্ন উক্তি ও ঘটনা এনেছেন বইয়ের ছত্রে ছত্রে। পাণ্ডিত্যপূর্ণ যুক্তি, ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তা ও আবেগময় নসিহত বইটিকে পূর্ণতা দিয়েছে। কিছু বানানবিভ্রাট রয়েছে। তবে, উল্লেখ করার মতো বিশেষ কোনো ত্রুটি চোখে পড়েনি। পাঠক হিসেবে আমি সন্তুষ্ট।
.
বইটি কেন পড়া উচিত?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬
১) মুসলিম নারীদের মধ্যে আত্মসচেতনতা, আত্মমর্যাদাবোধ ও কর্তব্যনিষ্ঠা জাগিয়ে তুলতে বইটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
২) শুধু তত্ত্বকথা নয়, এখানে ইসলামের বিধানগুলোর বৈশিষ্ট্য, কল্যাণ ও অপরিহার্যতা তুলে ধরা হয়েছে।
৩) প্রতিটি আলোচনায় কুরআন-সুন্নাহর দলিলের পাশাপাশি মনীষী ও দাঈদের বিভিন্ন উক্তি ও মূল্যবান পরামর্শ স্থান পেয়েছে।
৪) বিশেষত সুখী দাম্পত্যজীবন ও উত্তমভাবে সন্তানের লালন-পালনের উপায়গুলো চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বইটির শ্রেষ্ঠ দিক এটিই।
৫) একজন মুসলিম নারী কীভাবে তার পারিবারিক, সামাজিক ও দাম্পত্যজীবনকে কল্যাণময় করবে এবং আখিরাতে সফল হবে, তার পূর্ণ বিবরণ রয়েছে এতে।
.
সুতরাং, বইটি সকলেরই সংগ্রহে থাকা উচিত। বিশেষত বোনদের জন্য হাইলি রিকমেন্ডেড একটি বই ‘ফিরে এসো নীড়ে’।
দ্বীন মুহাম্মাদ – :
আমাদের সমাজে নারীরা প্রকৃতই অবহেলিত। আর তাই নিজেদের অধিকার আদায়ে তারা নিজেরাই অথবা কিছু স্বার্থান্বেষী পুরুষ প্রতিষ্ঠা করছে ‘নারী অধিকার আন্দোলন’ নামে নানান সংগঠন। দিনশেষে এসব সংগঠন নারীর অধিকার তো ফিরিয়ে দিতে পারছেই না, বরঞ্চ কেড়ে নিচ্ছে তাদের সতীত্ব-সম্ভ্রম। কেন হয় এমনটা?
মূলত ইসলামকে ছেড়ে ভালো থাকা যায় না। ইসলামই সমাধান, ইসলামই শান্তি। ইসলামই বুঝিয়েছে নারীর যথাযথ গুরুত্ব, ইসলামই দিয়েছে তাকে যথার্থ মর্যাদা। এর পাশাপাশি নারীর দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়েও ইসলাম আলোচনা করেছে সবিস্তারে। নারীর দায়িত্ব ও মর্যাদার ব্যাপারে অন্য যেকোনো সভ্যতা বা যেকোনো ধর্মের সাথে ইসলাম অতুলনীয়। ইসলাম নারীকে যা দিয়েছে, তার ছিটেফোঁটাও দিতে পারেনি অন্যান্য সভ্যতা বা যেকোনো ধর্ম।
অন্যান্য ধর্মে নারীকে কতটুকু মর্যাদা দেওয়া হয়েছে? ইসলামে নারীর মর্যাদা কতটুকু? স্ত্রী হিসেবে, মা হিসেবে, সর্বোপরি একজন নারী হিসেবে নারীর দায়িত্ব কী? এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা কী? এ সবকিছু এক মলাটে পেতে চাইলে আপনাকে যে বইটি পড়তে আমি পরামর্শ দিবো, তা হচ্ছে : ফিরে এসো নীড়ে। আজ এ বইটি নিয়েই দু’চারটে কথা বলবো ইনশাআল্লাহ।
.
• আলোচ্য বিষয় :
বইটিতে বিভিন্ন সভ্যতা এবং ধর্মে নারীর মর্যাদা উঠে এসেছে, স্পষ্ট করা হয়েছে ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অবস্থানকে। ইতিহাসে মুসলিম নারীর অনন্য দৃষ্টান্তও তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও দাম্পত্যজীবনে নারীর দায়িত্ব এবং অধিকার, মা হিসেবে নারীর করণীয়, দাওয়াতের ময়দানে নারীর কর্তব্য ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সহজ ও সাবলীল ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে।
.
• যা আছে বইটিতে :
মোট ১৬টি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে বইটিকে।
প্রথম অধ্যায়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘ইতিহাসে নারী : মর্যাদা ও অবস্থান’। এতে উঠে এসেছে প্রাচীন দুই প্রতাপশালী সভ্যতা গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় নারীর অবস্থান। এছাড়াও হিন্দু, ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মে ও প্রাক-ইসলামি আরবে নারীর মর্যাদা ও অবস্থান নিয়েও সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে।
‘ইসলামে নারী : মর্যাদা ও অবস্থান’ শিরোনামে সাজানো হয়েছে দ্বিতীয় অধ্যায়টিকে। নারী অধিকারহীনা নয়। ইসলাম নারীকে দিয়েছে অধিকারে পূর্ণ আলোকোদ্ভাসিত এক জীবনবিধান। নারীর রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার, স্বত্বাধিকার, বিবাহপ্রস্তাব গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যানের অধিকার, শিক্ষার্জনের অধিকার। দালিলিকভাবে এ অধিকারগুলোর বর্ণনা এসেছে এ অধ্যায়ে।
তৃতীয় অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে ‘ইতিহাসে মুসলিম নারীর অনন্য দৃষ্টান্ত’ নিয়ে। হযরত আয়েশা (রা:), সাফিয়া বিনতে আব্দুল মুত্তালিব (রা:), রাফীদা আনসারিয়া (রা:), আসমা বিনতে আবু বকর (রা:), হযরত আতিয়া (রা:) দের অসাধারণ প্রতিভার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে এ অধ্যায়টিতে।
চতুর্থ অধ্যায়ের শিরোনাম – ‘নর ও নারী : একে অপরের পরিপূরক’
শিরোনামেই এক প্রকার রোমান্টিকতা রয়েছে। তাই না? চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে বিবাহব্যবস্থা এবং এর উদ্দেশ্য, বিবাহের হুকুম-আহকাম নিয়ে। হিজাব শরিয়াহ সম্মত হওয়ার কী কী শর্ত রয়েছে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে এ অধ্যায়ে। এছাড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এখানে – বিবাহপূর্ব প্রেম এবং তা থেকে বাঁচার উপায়।
দাম্পত্যজীবনে কলহ আজ যেনো নিত্যকার কর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবাহবন্ধনের মতো দৃঢ় বন্ধন আজ হয়ে গিয়েছে ঠুনকো। ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে পান্তাভাত। এর থেকে বাঁচার উপায় কী? উপায় একটাই – স্বামীর উচিত স্ত্রীর হক আদায় করা, স্ত্রীর উচিত নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া। পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অধ্যায়ে ঠিক এ বিষয়েই আলোকপাত করা হয়েছে। ‘দাম্পত্যজীবন : নারীর কর্তব্য’ শিরোনামে পঞ্চম অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে একজন উত্তম স্ত্রীর গুণাবলি। ‘দাম্পত্যজীবন : নারীর অধিকার’ শিরোনামে ষষ্ঠ অধ্যায়ে এসেছে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্বের বর্ণনা। এ দু’টি অধ্যায়কে আলাদা পুস্তিকা আকারেও প্রকাশ করা যেতে পারে। বেশ জরুরি এ অধ্যায় দু’টি।
সপ্তম এবং অষ্টম অধ্যায়ে লেখিকা মা হিসেবে নারীর দায়িত্বকে স্মরণ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি দিয়েছেন সন্তান লালনপালনের বেশ কিছু ফলপ্রসূ টিপস। এছাড়া নবম অধ্যায়েও সন্তান লালনপালনের কিছু সফল পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বয়ঃসন্ধিকাল ও তারুণ্যে সন্তানের কোন বিষয়গুলোতে বিশেষ নজর দিতে হবে, তা উল্লেখ করা হয়েছে বইটির পরবর্তী অধ্যায়ে। মিডিয়া কীভাবে আমাদের সন্তানদের গ্রাস করে নেয়, তা বর্ণনা করা হয়েছে বইটির একাদশ অধ্যায়ে।
সপ্তম থেকে একাদশ অধ্যায়কে আলাদা পুস্তিকায় রূপ দিলে নিঃসন্দেহে প্যারেন্টিংয়ের ওপর অসাধারণ একটি হ্যান্ডনোট হয়ে যাবে।
দ্বাদশ অধ্যায় – ‘দাওয়াতের ময়দানে নারী’। আচ্ছা, নারীরা কি কেবল ঘরই সামলাবে? তাদের কি আর কোনো দায়িত্ব নেই? নিজে ইসলাম মেনে চলার পাশাপাশি ইসলামের সুমহান বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব থেকে কি তারা মুক্ত? না, কখনো না। দাওয়াতের ময়দানেও নারীর রয়েছে এক গুরুদায়িত্ব। এ অধ্যায়টিতে খুব চমৎকারভাবে লেখিকা দাওয়াতের কলা-কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে তো দাওয়াতি সংগঠনের অভাব নেই। অগণিত ওয়াজ-মাহফিল হচ্ছে প্রতিবছর, প্রকাশিত হচ্ছে হাজার হাজার ইসলামি বই। কই, তবুও তো খুব একটা ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না! কারণ কী? ভুলটা কোথায়? এর সমাধানই বা কী? এ বিষয়গুলো জানতে আপনাকে পড়তে হবে বইয়ের ত্রয়োদশ অধ্যায়টি – নারী এবং দাওয়াহ : আধুনিক অঙ্গন।
একাধিক স্ত্রী গ্রহণ, নারীর উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি লাভ, বাল্যবিবাহ, আত্মীয় বিবাহ, তালাক, নারীর কর্ম, জন্মনিয়ন্ত্রণ – এ বিষয়গুলো সমাজে বেশ আলোচিত, একইসাথে সমালোচিত। এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? ইসলামের বিধান কী? সংক্ষেপে এবং দলিলের আলোকে খুব সুন্দরভাবে এ বিষয়গুলো উপস্থাপিত হয়েছে বইটির চতুর্দশ অধ্যায়ে।
বইটির প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছি আমরা। পঞ্চদশ অধ্যায়ের শিরোনাম – ‘ফিরে এসো নীড়ে’। আজ মুসলিম নারীর এত অধঃপতন কেনো, পশ্চিমারা কীভাবে মুসলিম নারীর গায়ে মরণকামড় বসিয়েছে, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে কীভাবে তারা আমাদের নারীদের পরাজিত করেছে, কীভাবে তারা নারীর শ্লীল সত্ত্বায় অশ্লীলতার কাদা লেপ্টে দিয়েছে – এ বিষয়গুলো চিত্রিত হয়েছে এ অধ্যায়ে। অধ্যায়ের শেষে লেখিকা নারীদেরকে আপন ঠিকানায় ফিরে আসতে আহবান জানিয়েছেন।
ষোড়শ অধ্যায় – ‘আমাদের প্রত্যাশা’। বইয়ের শেষ অধ্যায় এটি। এ দীর্ঘ আলোচনা শেষে লেখিকার প্রত্যাশা কী, তিনি কী স্বপ্ন দেখেন, এ বিষয়ে কলম ধরা হয়েছে শেষ অধ্যায়টিতে।
.
• কেন পড়বেন বইটি :
– অন্যান্য সভ্যতা এবং ধর্মকে ছাপিয়ে ইসলাম নারীকে কতটুকু মর্যাদা দিয়েছে, তা কি আপনি জানতে চান?
– বিবাহের হুকুম আহকাম জানা কি আপনার প্রয়োজন?
– হারাম রিলেশন থেকে কীভাবে হেফাজতে থাকবেন, তা কি আপনার জানা দরকার?
– দাম্পত্যজীবনে নারীর দায়িত্ব কী, তাঁর অধিকারই বা কতটুকু?
– সন্তান লালনের কলা-কৌশল জানা প্রয়োজন কি?
– সন্তান প্রতিপালনে অনেক মা-ই ব্যর্থ হন। কারণ কী এ ব্যর্থতার? জানতে চান?
– দাওয়াতি কাজের পদ্ধতি জানতে কি আপনি আগ্রহী?
– নারী কেন্দ্রিক কিছু আলোচিত বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা জানতে চান?
তাহলে বইটি আপনাকে পড়তে হবে।
.
• ভালো লাগা, মন্দ লাগা :
• যা ভালো লেগেছে :
– নজরকাড়া প্রচ্ছদ
– হার্ড কভার
– পৃষ্ঠার উন্নতমান
– দলিল-আদিল্লায় পরিপূর্ণ
– অল্প কথায় অধিক ভাব প্রকাশিত
– ফন্টের উপযুক্ত সাইজের ব্যবহার
– সাবলীল অনুবাদ
এছাড়াও মোটাদাগে যে বিষয়টি খুব ভালো লেগেছে – শিরোনাম-উপশিরোনামের মাধ্যমে আলোচ্য বিষয়কে সাবলীল ও বোধগম্য করে তোলা।
• যা মন্দ লাগার মতো :
মন্দ লাগার মতো তেমন খুঁত নেই বইটিতে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে লেখক-পরিচিতিহীন বই পড়ে কেমন যেনো অতৃপ্ত রয়ে যাই। বিশেষত আমাদের কাছে জনপ্রিয় বা পরিচিত না হলে বইয়ের শুরুতে, শেষে বা অন্তত ফ্ল্যাপে লেখক সম্পর্কে দু’চার কথা লেখা আবশ্যক মনে করি। সে দৃষ্টিকোণ থেকে লেখিকা সাইয়্যিদা ফাতিমা বিনতে খলীল সম্পর্কে পাঠকদের কিছুটা ধারণা দেওয়া উচিত ছিল রাহনুমার।
.
• শেষকথন :
পরিশেষে আপনাকে অনুরোধ করবো, বইটি আপনি নিজে পড়ুন। আপনার স্ত্রীকে উপহার দিন। বই থেকে অর্জিত শিক্ষা বাস্তবে রূপায়িত করুন। ইনশাআল্লাহ বেশ উপকৃত হবেন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
মুশতাক আহমাদ – :
“নারী হলো জগতের হৃৎপিণ্ড আর পুরুষ হলো জগতের মস্তিষ্ক। যদি এ দুটির মাঝে বিচ্ছেদ তৈরি হয় তবে হয়তো মৃত্যু কিংবা অপ্রকৃতিস্থতা যেকোনো একটি অবধারিত।”
একটি আদর্শ সমাজ গঠনে নারীই মূল ভিত্তি। সমাজের সফলতা ব্যর্থতা যেমন নারীদের ওপর নির্ভর করে তেমনি পরিবারের সফলতা ব্যর্থতাও নারীদের ওপর নির্ভর করে। এমনকি আদর্শ সন্তান গঠনে নারীর ভূমিকাই সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ। নারী চাইলে আগামী প্রজন্মকে যোগ্য করে তুলতে পারে, চাইলে অযোগ্যের কারখানা বানাতে পারে। কেননা নারী একসাথে মা, বোন, স্ত্রী, শিক্ষিকা …
নেপোলিয়ন ঠিকই বলেছেন, আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব।
–
একজন নারী আদর্শ নারী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য তার সামনেও থাকতে হবে কোনো না কোনো আদর্শ। কীভাবে সে নিজেকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে সেটা আগে জানতে হবে। তারপর নিজেকে আদর্শ নারী হিসেবে গড়তে হবে। তার সামনে যদি কোনো আদর্শ না থাকে তাহলে সে কীভাবে নিজেকে আদর্শবান করে গড়ে তুলবে। নারীদের দিকনির্দেশনামূলক খুঁটিনাটি-সহ সব বিষয় নিয়েবই লিখেছেন প্রখ্যাত আরবলেখিকা ও দাঈয়া সাইয়্যিদা ফাতিমা বিনতে খলীল মুহাম্মদ মুহসিন। আরবিতে লিখিত তার কালজ্বয়ী এই বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘ফিরে এসো নীড়ে’। একজন নারী কীভাবে নিজেকে আদর্শ নারী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, এই বইয়ে তা ফুটিয়ে তুলেছেন। অনুবাদকের ভাষায়, “বইটির অনন্য বৈশিষ্ট্য এই যে, নারীদের বিষয়ে একজন নারীর লেখা। যেন প্রিয় বোনের প্রতি প্রিয় বোনের ওকালতি– যে তাদের মন বোঝে, প্রয়োজন বোঝে। যার অকৃত্রিম আন্তরিক উপদেশে নারী পাবেন একজন আদর্শ স্ত্রী, একজন আদর্শ মা, সমাজের একটি অংশের যোগ্য প্রতিনিধি এবং অপর অংশের সফল কারিগর; সর্বোপরি দীনের একজন একনিষ্ঠ দাঈয়া হিসেবে একটি নতুন জীবন শুরু করার প্রেরণা।”
–
অনুবাদক যা লিখেছেন বইটা তাই-ই। এই বই ১২টি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথম অধ্যায়ে ‘ইতিহাসে নারী : মর্যাদা ও অবস্থান’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখানে বিভিন্ন ধর্ম ও সভ্যতায় নারীদের মর্যাদা কেমন ছিল ইতহাসের পাতা থেকে তা তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে ইসলামে নারী মর্যাদা ও অবস্থান বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। তৃতীয় অধ্যায়ে ইতিহাসে মুসলিম নারীদের অনন্য দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। চতুর্থ অধ্যায়ে ‘নর ও নারী : একে অপরের পরিপূরক’ শিরোনামে বিবাহব্যবস্থা, বিবাহের বিবাহের বিধান, বিবাহপূর্ব প্রেম-প্রীতি ও (অবৈধ) ভালবাসা ও তা থেকে বিরত থাকার পন্থা, হিজাব ও পর্দাসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। পঞ্চম অধ্যায়ে দাম্পত্যজীবনে নারীর কর্তব্য কী তা বর্ণনা করেছেন। ষষ্ঠ অধ্যায়ে দামপত্যজীবনে নারীর অধিকার কী তা তুলে ধরেছেন। সপ্তম অধ্যায়ে একজন আদর্শ মা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সপ্তম অধ্যায়ে শিশুর লালনপালন ও লালনপালনের সব দিক বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। নবম অধ্যায়ে সন্তান লালনপালনের কিছু সফল পদ্ধতি তুলে ধরেছেন। দশম অধ্যায়ে বয়ঃসন্ধি ও তারুণ্যে সন্তানের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। একাদশ অধ্যায়ে মিডিয়া ও আমাদের সন্তান আর দ্বাদশ অধ্যায়ে দাওয়াতের ময়দানের নারীদের কর্মপন্থা আলোচনা করেছেন।
–
বইটা কেমন হবে তা বিষয়বস্তু থেকেই ধারণা করতে পারছেন। আলাদাভাবে বইটা নিয়ে বলার কিছু নেই। তাছাড়া একজন নারী যখন অন্য নারীদের উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, তখন সহজেই বুঝে আসে এখানে নারীদের এমন অনেক বিষয় উঠে এসে যা পুরুষ কেউ লেখলে সেসবের কথাও চিন্তায়ও আসত না। সমাধান তো দূরের কথা। সে যাইহোক, বইটা যখন বের হয়, ২০১৭ সালেই বইটা পড়েছিলাম। অনুবাদ এতটা ভালো লেগেছিল যে, ৩৫২ পৃষ্ঠার বই কয়েক দিনে পড়ে ফেলেছিলাম। অথচ তখন একাডেমিক পড়ার প্রচুর চাপ ছিল। অনুবাদ করেছেন মাওলানা শফিকুল ইসলাম। এটা ছাড়াও তার আরও কয়েকটা বই বের হয়েছে। কিন্তু এটা আমার কাছে সবচে’ বেশি ভালো লেগেছে। প্রত্যেক মুসলমান নারীরই বইটা পড়া দরকার। ছেলেরাও পড়তে পারেন। ছেলেদের জন্যেও এই বইয়ে জানার, শেখার অনেক বিষয় আছে। বিশেষ করে আপনার স্ত্রীর মর্যাদা ইসলাম কতটুকু দিয়েছে, ইসলামে নারীদের কী কী অবদান আছে, সেইসাথে সন্তান লালনপালনে নারীর পাশাপাশি নিজেও অবদান রাখতে এই বই আপনাকে গাইডের কাজ দেবে।