মেন্যু
chintaporadh

চিন্তাপরাধ

পৃষ্ঠা - ১৯২ 'যতক্ষণ সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিচ্ছ, ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় ততক্ষণ তোমাকে সহ্য করা হবে। যা করার সিস্টেমের ভেতরে ঢুকে করো, কিন্তু কোনোভাবেই সিস্টেমের বিরোধিতা করা যাবে না। প্রশ্ন... আরো পড়ুন
পরিমাণ

190 

পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
Get it on Google Play

45 রিভিউ এবং রেটিং - চিন্তাপরাধ

4.9
Based on 44 reviews
 আপনার রিভিউটি লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  1. 5 out of 5

    mr.tahmid:

    একটি ভালো বইয়ের সংজ্ঞা একেকসময় একেক রকম হতে পারে। তবে আমার কাছে একটি ‘খুব ভালো’ বইয়ের সংজ্ঞা খুব সরল ও সাদামাটা। এধরনের বই পড়া শুরু করলে তা শেষ না করে অন্য বই পড়া যায় না। এমন বই পড়ার সময় মোহ লেগে যায়, বারবার সবাইকে জানাতে ইচ্ছা করে বইটির ব্যাপারে। সেরকম একটি বইয়ের কথাই আজ লিখছি।

    ক)বই পরিচিতিঃ
    ‘চিন্তাপরাধ’ বইটির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে বিশ্বরাজনীতি ও ইসলাম। লেখকের ভাষায় এটি কোন ইসলামি বই নয়, তবে মুসলিমদের জন্য লেখা একটি বই। সে অর্থে বিশ্বরাজনীতির বইও বলা চলে না। বরং বলা উচিত, আমাদের সময়ের দুনিয়াকে একজন মুসলমান কি ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখবে, নানা বিজাতীয় তত্ত্বকে বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতায় আক্রান্ত বর্তমান মুসলিম প্রজন্ম কীভাবে মোকাবেলা করবে- সে বিষয়েই যথাসাধ্য আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে এ বইয়ে।

    বইতে মোট ১৬টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৪টি প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে লেখক ক্রিস হেজেস, আসাদ যামান, গাই ইটন ও শাইখ জাফর ইদ্রিসের চারটি প্রবন্ধ থেকে সহায়তা নিয়েছেন। অমুসলিম ফিলোসফার বা জিও-পলিটিসিয়ানদের লেখাকে অবলম্বন হিসেবে নিলেও লেখক সেগুলো থেকে তথ্য-উপাত্ত ও ফ্যাক্টস তুলে এনে বিচার বিশ্লেষণ করেছেন একজন বিশ্বাসী মুসলিমদের ওয়ার্ল্ডভিউ বা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।

    খ) বিস্তারিত রিভিউঃ
    বইয়ে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছেঃ

    ১। #সাম্রাজ্যবাদ (imperialism)- বিশেষ করে আমাদের সময়ের বাঘা বাঘা কিছু সাম্রাজ্যের উত্থান পতন নিয়ে সুন্দর তুলনামূলক আলোচনা করে পশ্চিমাদের ঔপনিবেশিক আমল থেকে চালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের স্বরুপ উন্মোচন করে দেয়া হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা যেসব অপকর্ম ও মোক্ষম অস্ত্র ব্যবহার করার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছে সেগুলো তো তুলে ধরা হয়েছেই, উপরন্তু এখনো যে তারা নানা ধরনের ছল চাতুরি আর তত্ত্বকথার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে তাদের বিকৃত আদর্শ সমগ্র বিশ্বে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে স্থাপন করে নিয়েছে সেগুলোরও অপনোদন করা হয়েছে।

    মিডিয়া, তথ্যসন্ত্রাস কিংবা হলিউড – প্রত্যেকটি অস্ত্র ব্যাবহার করে তারা নিজেদের অপকর্ম ঢেকে রাখে আর নিজেদের স্বার্থে সমগ্র বিশ্বে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। কিন্তু এই পশ্চিমারা কিভাবে এত ক্ষমতাধর হল আর কিভাবেই বা তারা অচিরেই ভূপাতিত হতে যাচ্ছে তারও একটি প্রেডিকশান দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

    ২। #পূজিবাদ #ভোগবাদ ও #ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ সহ পশ্চিমা আধুনিক সমাজের অধিকাংশ কনসেপ্টের মূলে এই বই যেন বজ্রাঘাত হেনেছে। কখনো তাদেরই ব্যবহৃত যুক্তি দিয়ে তাদেরকে ঘায়েল করা হয়েছে আবার কখনোবা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে তাদেরই যুক্তির অসারতা।

    ৩।আমাদের সমাজে প্রসিদ্ধ ও বর্তমান পৃথিবীতে অনেক দেশেই বৈধতা পেয়ে যাওয়া যৌন-বিকৃতি গুলো নিয়েও আলোচনা এসেছে। সমকামিতা #উভকামিতা (Bisexualism) বা ট্রান্স-জেন্ডার আন্দোলনগুলো পশ্চিমে এবং ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বে বৈধতা পাচ্ছে। অথচ কত অদ্ভূত সব যুক্তি দিয়ে এগুলোকে হালাল করা হচ্ছে। যে যুক্তি দিয়ে সমকামিতার পক্ষে সাফাই গাওয়া হয় ঠিক এর বিপরীত যুক্তি দিয়ে ট্রান্সজেন্ডার আন্দোলনকে বেগবান করা হচ্ছে। কী অদ্ভূত প্রবঞ্চনা!

    ৪। ফিরিঙ্গিসেন্ট্রিক আর চিন্তার জট সহ আরো কিছু লেখায় আমাদের চিন্তার জট যেন খুলে দেয়ার চেস্টা করা হয়েছে। পশ্চিমা প্রোপাগান্ডার দ্বারা কীভাবে সত্য দ্বীন হাতের কাছে থাকার পরেও আমরা কীভাবে পশ্চিমা কুফরি মতবাদগুলো গ্রহণ করে নিচ্ছি, বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে কীভাবে আমরা সঠিক পথ খুজে নিতে পারবো তা-ই যেন দেখিয়ে দেয়া হয়েছে।

    ৫। এ বইতে এমন কিছু কাজ হয়েছে যা সচরাচর বাংলা ইসলামি বইগুলোতে তো নয়ই, কোন ধরনের বইতেই দেখা যায় না। ফেমিনিযম, সেকুলারিজম, সিলেক্টিভ হিউমেনিজম সহ অসুস্থ পশ্চিমা সংস্কৃতির বড় বড় ক্যান্সার চিনিয়ে দেয়ার চেস্টা করেছে এ বই, যাতে করে ক্যান্সার আক্রান্ত উম্মাহ ব্যাধিগ্রস্ত কোষগুলো ধ্বংস করে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পায়। সবচেয়ে বড় কথা মানসিক দাসত্ব ও চিন্তার অসারতা কাটাতে এই বই অনেক সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস।

    ৬। সেকুলারিজমকে সবচেয়ে বেশি এটাক করা হয়েছে তাদেরই ব্যবহার করা যুক্তিতে তাদের কুপোকাত করার মাধ্যমে। বিশেষ করে পূজারী ও পূজিত আর্টিকেলটি আমার কাছে পিউর গোল্ড মনে হয়েছে।

    ৭। গোঁড়ায় গলদ নামক প্রবন্ধে তো বিজ্ঞান আর সামাজিক বিজ্ঞানের পার্থক্য উল্লেখ করার মাধ্যমে আমাদের সময়ের অনেক হাইপোথেসিসের আসল সমস্যা নিরুপণ করা হয়েছে। যেসব কনসেপ্ট আজ অনেক মডারেট মুসলমান নিঃসংকোচে মেনে নেয় সেসব অনেক কনসেপ্টের সূচনাই হয়েছে কুফরি বিশ্বাসের ভিত্তিমূলের উপরে। সামাজিক বিজ্ঞানকে আমরা অমোঘ সত্য বলে ধরে নেই অথচ আদতে সেগুলো তা নয়, এমনকি বৈজ্ঞানিকভাবেও সামাজিক বিজ্ঞানের সব কনসেপ্ট যায় না। এগুলো তো সমাজবিজ্ঞানী আর পন্ডিতদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান মাত্র। আর মানুষের দৃষ্টি সংকীর্ণ। ঐশী বাণীর চেয়ে জ্ঞানমণ্ডিত বা হিতকর কোন কিছু এই ধরার মানুষ তার সংকীর্ণ ও সীমিত মেধা দিয়ে কখনোই উদ্ভাবনে সমর্থ হবে না।

    ৮। ফেমিনিযম ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে পশ্চিমা বয়ানের অপনোদন কিংবা মাদক নির্মূলে পশ্চিমা রাঘব বোয়ালদের পলিসি ফেইলিয়রের ভরাডুবি নিয়ে লেখাগুলো পড়লে অনেক তথাকথিত প্রগতিশীলেরও চোখ খুলে যাবে (যদি তারা নিজেদের সাথে সৎ থাকেন)।

    ৯। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ‘ভুল মাপকাঠি’ নামক লেখাটি। এই লেখাটি যেন সেকুলার পশ্চিমা জীবনব্যবস্থার দিকে নিক্ষিপ্ত একটি রকেট লাঞ্চার। বস্তুবাদি, ধর্ম নিরপেক্ষ আধুনিক পশ্চিমা জীবন ব্যবস্থার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ও নৈতিকতার ধারণা গড়ে উঠেছে দুইটি মূলনীতিকে কেন্দ্র করে। ১। সংখ্যাগরিষ্ঠের মত ২। ব্যক্তিস্বাধীনতা।

    এ দুই মাপকাঠির স্বাপেক্ষেই আজকের দুনিয়ার ভালোমন্দ মাপা হয়। অথচ উভয় কনসেপ্টই ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। মুসলিমরা নিজের নফসকে নিজের ইলাহ মানে না। আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে না সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের কোন দাম আছে না নিজের ব্যক্তিগত মত এর। উপরন্তু, সেকুলার সমাজের এ দুই মাপকাঠি একটি অপরটির সাথে সাংঘর্ষিক। কীভাবে? জানতে হলে বইটি পড়তে হবে।

    ১০। সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে এত সুন্দর লেখা আমি আর কোন বইয়ে ইতিপূর্বে পড়ি নি। কীভাবে স্লো পয়জনিং এর মাধ্যমে একটি কট্রর, ধর্মভীরু সমাজে ধীরে ধীরে যৌন বিকৃতি, সমকামিতা, শিশুকামিতা ইত্যাদি অবক্ষয় ঢুকানো হয় তাই দেখিয়ে দেয়া হয়েছে এখানে।

    ১১। মানসিক দাসত্ব নামক প্রবন্ধটি ছোট কিন্তু এর প্রভাব বিস্তর। ইসলামবিদ্বেষীদের ধরা বাধা ফ্রেমওয়ার্কের ভেতর থেকে আমরা যখন ইসলামকে ব্যাখ্যা করতে যাব তখন স্বভাবতই আমাদের কিছু সেক্রিফাইসের পথে যেতে হয়। অথচ আমাদের উচিত ছিল তাদের অবিসংবাদিত ফ্রেমওয়ার্কটাকেই চ্যালেঞ্জ করা। কারণ তাদেরই এসব কাঠামোর এমনকি সুস্থির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পর্যন্ত নেই।

    ১২। এই মহাশক্তিধর পশ্চিমা সাম্রাজ্যও সমাপ্তির প্রহর গুনছে। অতীতের রাজত্বগুলোর মত তারাও একগুয়েমি আর অহংকারের বশবর্তী হয়ে নিজেদের পতন ডেকে আনছে। সামরিক আর অর্থনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত আর হঠকারি ঔদ্ধতা তাদের পতনকে তরান্বিত করছে। বস্তুত, তাদের সমাজ ব্যবস্থাও চিরভংগুর। মুসলিমরা কি পারবে এই সুযোগে আগামীতে বিশ্ব নেতৃত্বের আসন দখল করতে? তা করতে হলে কী করতে হবে? কোরআন-সুন্নাহতে প্রত্যাবর্তন নাকি বিজাতীয়দের অন্ধ অনুকরণ?

    ১৩। #শ্বেত-শ্রেষ্ঠত্ববাদ (White Supremacy) নিয়ে লেখা এ বইয়ের সর্বশেষ প্রবন্ধটি বইয়ের সবচেয়ে দীর্ঘতম প্রবন্ধ। শ্বেত সন্ত্রাসের পেছনের মূল শক্তি আর বিশ্বে তার ভবিষ্যত প্রভাব সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে এখানে। যারা পশ্চিমা বিশ্বে স্থায়ী হবার স্বপ্নে বেসাতে গাড়ছেন, তারা একটিবার হলেও পড়ে দেখবেন এই প্রবন্ধটি। যে প্সহচিমকে স্থায়ী নিবাস বানাতে চাচ্ছেন সেই মেরিকান ড্রিমের ব্যাপারে কিছু বেসিক ধারণা জন্মাবে।

    গ) বইয়ের যেসব বিষয় ভাল লেগেছেঃ

    বইয়ের মূল কৃতিত্ব সম্পূর্ণভাবে লেখক আসিফ আদনান ভাইকে দেয়া যায় না। কারণ বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ লিখতে অনেক জায়গায় অন্য লেখার ছায়া অবলম্বন বা আংশিক ভাবানুবাদ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় অমুসলিমদের লেখা থেকে তথ্য সিঞ্চন করে তা একজন মুসলিমের পারস্পেক্টিভ থেকে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজনও ছিল বৈকি। তবুও এ বইয়ের মূল কৃতিত্ব আসিফ ভাইয়েরই, আলহামদুলিল্লাহ।

    এমন কঠিন সব বিষয়ে ঘাটাঘাটি করে এত সুন্দর লেখা দাঁড় করানো, প্রায় প্রত্যেকটি ক্লেইমের পেছনে অসংখ্য রেফারেন্স হাজির করা এবং সহজ সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করার এ অসাধ্য কাজ সাধন করায় আসিফ ভাইকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অভিনন্দন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- এমন একটি কাজের বড্ড প্রয়োজন ছিল।

    বইয়ের নামকরণ যথার্থ ছিল। এমন কিছু ব্যাপারে বইটি আপনার চিন্তার জগতে নাড়া দিয়ে যাবে যেসব বিষয়ে আজকের বিশ্বব্যবস্থায় চিন্তাকরাকেও অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। বইয়ের প্রচ্ছদও যথার্থ হয়েছে।

    আরেকটি ভালো লাগার বিষয়বস্তু হচ্ছে বইয়ের লেখার ধরন ও সাহিত্যগুণ। বইটি এত ডিপ বিষয়ভবস্তু নিয়ে লেখা হয়েছে যে, আশংকা ছিল সাহিত্যগুণ কতটুকু বজায় থাকবে। এমনিতেও আসিফ ভাইয়ের লেখা ফেসবুকে পড়তে মাঝে মাঝে কষ্ট হয়ে যায়, যেহেতু ভাই কঠিন সব টপিক নিয়ে লেখেন। কিন্তু বিস্ময়করভাবে এ বইয়ের লেখা পড়ে মনেই হয়নি যে বই পড়া একটি কঠিন কাজ। মাঝে মাঝে তো মনে হচ্ছে থ্রিলার কোন গল্পের বই পড়ছি। বইয়ের সাহিত্যগুণ নিঃসন্দেহে অনেক উন্নতমানের ছিল। মুদ্রণপ্রমাদ খুব সামান্য চোখে পড়েছে।

    ঘ) বইয়ের একটি খারাপ দিকঃ
    যেহেতু পেপারব্যাক বই, তাই ফ্ল্যাপ কাভার ব্যবহার করলে কাভারটি শক্ত থাকত, কিন্তু বইয়ে ফ্ল্যাপ কভার দেয়া হয় নি। বইটির বাইন্ডিং আরো ভাল হওয়া উচিত ছিল বলে মনে হয়েছে। কারণ, এ বই যেই হাতে নিবে সে তন্ময় হয়ে পড়তে থাকবে – শুয়ে পড়বে, বসে পড়বে। আমার মত পাঠক হলে এক পড়াতেই বইয়ের অর্ধেক জীবনী হ্রাস পেয়ে যেতে পারে। এটি ছাড়া এ বইয়ের সবকিছুই আমার অসম্ভব ভাল লেগেছে।

    ঙ) শেষ কথাঃ

    আমার পড়া এ বছরের সেরা দুই বইয়ের মধ্যে সম্ভবত এটি থাকবে। এধরনের বই আরো বেশি বেশি লেখা উচিত। এটি এমন এক বই যা অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করে মুসলিম দেশগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া উচিত। হয়ত কন্টেন্ট এর সংবেদনশীলতার জন্যে এ বই বেস্টসেলার বই হবেনা, হটকেকের মত সেল হবেনা; তবে অভিজ্ঞ পাঠকেরা ঠিকই বুঝে নিবে যে বছরের সেরা একটি বই এটিই ছিল।

    জয়তু চিন্তাপরাধ!

    রেটিংঃ ৫ এ ৫ দিবো।

    39 out of 40 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  2. 5 out of 5

    hasanmehedi852:

    রিভিউ লেখা হয় না, কিন্তু এক কথায় বলব অন্যরকম একটি বই।
    25 out of 26 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  3. 5 out of 5

    hasanmehedi852:

    রিভিউ লেখা হয় না, কিন্তু এক কথায় বলব অন্যরকম একটি বই। আসিফ আদনান এর প্রতি শুভ কামনা রইলো।
    20 out of 22 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  4. 5 out of 5

    thejini3:

    রিভিও লেখার অভ্যাস নাই বললেই চলে, @sami.meadad ভাইয়ের রিভিওটাই যথেষ্ট এই বই সম্পর্কে বলতে গেলে ❤️❤️
    14 out of 15 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  5. 5 out of 5

    sami.meadad:

    চিন্তাপরাধঃ Not Just an Ordinary Book. It’s an Intellectual Atom Bomb

    .
    বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম। দীর্ঘ এ পাঠ প্রতিক্রিয়া শুরু করছি ছোট্ট দুটি আলাপচারিতা দিয়ে।

    .
    আলাপচারিতা-১ঃ
    ঈদের পর সিলেটে এক প্রিয় ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা। কথায় কথায় সে জিজ্ঞাসা করলো ‘চিন্তাপরাধ’ পড়েছি কি না। আমি বললাম, “এখন পড়ছি”। সে তখন বইটির বেশ প্রশংসা করলো। বললো, “আমার পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতির উপর কিছু বই পড়ার ইচ্ছে ছিলো। নোয়াম চমস্কি, হান্টিংটন সহ অন্য কিছু লেখকের বই লিস্ট আউট করে রেখেছিলাম। কিন্তু ‘চিন্তাপরাধ’ পড়ে মনে হচ্ছে সেগুলো পড়ার আর প্রয়োজন নেই। আমার যা জানার বা বোঝার ছিলো সে প্রয়োজন মিটে গিয়েছে।” আমি মনে মনে বললাম, “সুবহান’আল্লাহ!”

    .
    আলাপচারীতা-২ঃ
    অফিসে নিজের ডেস্কে বসেছিলাম। হঠাৎ প্রিয় এক জুনিয়র কলিগ এসে হাজির। আমার ডেস্কে প্রায় সময়ই কোন না কোন বই থাকে। তখন ছিলো ‘চিন্তাপরাধ’। বইটি নাড়া চাড়া করতে করতে সে বলে উঠলো, “ভাইয়া, আমরা তো বইটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলছি। কিন্তু এর একটি পাতা লিখতে গিয়ে লেখককে কতই না স্টাডি করতে হয়েছে। একটি পৃষ্টা লিখতে গিয়ে হয়তো তাকে পুরো ২/৩-টি বইই পড়ে ফেলতে হয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা ডকুমেন্টারী দেখতে হয়েছে।” আমি এর কোন জবাব দিতে পারলাম না। শুধু বললাম, “আল্লাহ তা’আলা দুনিয়া ও আখিরাতে লেখক ভাইয়ের শ্রমের উত্তম প্রতিদান দিন।”

    .
    ‘চিন্তাপরাধ’ বইটি নিয়ে এ হলো আমার পরিচিত দুইজন পাঠকের লাইভ প্রতিক্রিয়া। তারা দু’জনেই বেশ সিরিয়াস ধারার পাঠক। আমার মতো হেজিপেজি কেউ না।

    .
    সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে যখন প্রথম জানলাম যে, প্রিয় একজন মানুষ আসিফ আদনান ভাইয়ের প্রথম বই প্রকাশ হতে যাচ্ছে, তখন আমি অত্যন্ত ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। আমার চিন্তা-চেতনার পরিবর্তনে ভাইয়ের গবেষনাধর্মী লেখার বিশাল এক ভূমিকা রয়েছে। তাই তার লেখার প্রতি আমি বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবেই এক প্রকার ঋণী। লেখকের লেখাগুলোকে এক মলাটে পাওয়া তাই আমার জন্য এক বাড়তি পাওনা।

    .
    বইয়ের কন্টেন্ট নিয়ে আলোচনার আগে এর নামকরণ নিয়ে কিছু বলা যাক। ‘চিন্তাপরাধ’ নামটি বেশ ভাবনার খোরাক জোগায়।

    .
    বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে আমাদের মুসলিমদের চিন্তা-চেতনার অবস্হান আজ কোথায়? এক সময় অর্ধ জাহান শাসন করা মুসলিমদের চিন্তা-চেতনা আজ কোন সে কারাগারে বন্দী? ব্যক্তিগত, সমাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক কিংবা রাজনৈতিক চর্চায় আমরা এখন কাদের মতবাদ বা চিন্তা-চেতনাকে অনুসরণ করছি?

    .
    ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলিমদের যেখানে রয়েছে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা, একটি সম্পূর্ণ জীবন বিধান, সেখানে আজ আমরা সেগুলোকে ভুলে অনুসরণ করছি মানুষের তৈরী কিছু ভ্রান্ত জীবন ব্যবস্হার। দীর্ঘদিন ধরে আমরা আউড়ে চলেছি অন্যের শেখানো বুলি, যেন আমরা সিনেমার কোন রোল প্লে করছি। স্ক্রিপ্টের বাইরে চিন্তা করার কোন স্বাধীনতা আমাদের নেই। আমরা মুসলিমরা যেন কোন পাপেট শো এর দড়ি বাঁধা পুতুল। পশ্চিমা মোড়লেরা আমাদের যেভাবে নিয়ন্ত্রন করবে আমরা সেভাবেই পরিচালিত হবো। আমরা যেন সেই রোবট যার রিমেট কন্ট্রোল রয়েছে অন্যের হাতে। রোবটের যেমন নিজস্ব কোন চিন্তাশক্তি নেই, আমাদের মুসলিমদেরও তেমনি নিজস্ব কোন চিন্তাধিকার নেই।

    .
    এখানে কেউ ভিন্ন চিন্তা করলেই সে অপরাধী। আমরা মুসলিমরা যেন বাস করছি জর্জ অরওয়েলের 1984 এর সেই ডিসটোপিয়ান বিশ্বে। যেখানে War is Peace, Freedom is Slavery, Ignorance is Strength। যেখানে যুদ্ধই শান্তি, মুক্তিই দাসত্ব এবং অজ্ঞতাই হচ্ছে শক্তির মূল। আমাদের মুসলিমদের আজ কোন চিন্তার স্বাধীনতা নেই। কোথাও চিন্তার স্বাধীনতা থাকলেও তা প্রকাশের অধিকার নেই। পশ্চিমা সভ্যতার আগ্রাসনে আজ আমরা নিজ মস্তিস্কের কোটরেই বন্দী জীবন যাপন করছি।

    .
    সংবিধানের একালে আজ শরিয়াহ আইনের কথা বলা দোষনীয় অপরাধ। নারী স্বাধীনতার এ সময়ে হিজাব-পর্দার থিওরী আজ হাস্যকর। বিজ্ঞানের এ যুগে কুরআন-সুন্নাহর চর্চা আজ বিলুপ্ত। ব্যাংক ও কালোটাকার এ ব্যবস্হায় ইসলামী বায়তুল মালের কথা বলা রীতিমতো আজ অপরাধ। ভ্যাট-ট্যাক্সের এ অন্ধকারে যাকাতের আলোর অন্বেষন আজ অবহেলিত। গণতন্ত্রের এ যুগে খিলাফতের তত্ত্ব আজ থার্ড ডিগ্রী মার্ডার কেইস। ধর্মীয় সম্প্রীতির এ ধূসর সময়ে জিহাদের ডাক দেয়া হচ্ছে সন্ত্রাস ও জন্গিবাদ।

    .
    কারণ, আমরা আজ আমাদের চিন্তা-চেতনাকে বন্দক দিয়ে রেখেছি আমাদের পশ্চিমা প্রভুদের কাছে। পশ্চিমা গুরুরা ইসলামের যে ভার্সন আমাদের চর্চা করতে বলে, তার বাইরে কোন কিছু চর্চা করা তাদের চোখে অপরাধ। তারা আমাদের যেভাবে চিন্তা করতে বলে, তার ব্যতিক্রম হলেই আমরা অপরাধী।

    .
    আর ‘চিন্তাপরাধ’ বইটি আমাদের সেভাবেই চিন্তা করতে শেখায়, যা পশ্চিমাদের চোখে অপরাধ। এ বই আমাদের মননে এমন চিন্তার উদ্ভব ঘটায়, যা প্রশ্ন করে বসে পশ্চিমা সকল ধ্যান-ধারণার ভিত্তিকে। সেক্যুলারিজম থেকে শুরু করে বাক-স্বাধীনতা, নারী অধিকার থেকে শুরু করে সমকামি বা ট্রান্সজেন্ডার মুভমেন্ট- বইটি সব কিছুর বুদ্ধিবৃত্তিক ডাইসেক্টিং করে দেখিয়ে দেয় পশ্চিমা সমাজের ভন্ডামী ও অসারতা। মানসিক দাসত্বের যুগে এ বই তাই ‘চিন্তাপরাধ’।

    .
    বইয়ের কাভার উল্টোলেই উৎসর্গ পত্রে গিয়ে পাঠক কিছুটা ধাক্কা খাবেন নিশ্চিত। উৎসর্গঃ ৩৩:২৩। প্রথমে ধাঁধার মতোই মনে হয়। এমন সৃজনশীল ও অভাবনীয় উৎসর্গপত্র আমি আমার পাঠক জীবনে কখনও পাইনি। লেখক আল-কুরআনের ৩৩ নাম্বার সূরা সূরাতুল আহযাবের ২৩ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা যাদের কথা বলেছেন তাঁদেরকেই তার বইটি উৎসর্গ করেছেন। একবার দেখে নিই তাঁরা কারা-
    “মু’মিনদের মধ্যে কতক লোক আল্লাহর সঙ্গে কৃত তাদের অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছে। তাদের কতক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে (শাহাদাত বরণ) করেছে আর তাদের কতক অপেক্ষায় আছে। তারা (তাদের সংকল্প) কখনো তিল পরিমাণ পরিবর্তন করেনি।”

    .
    সুবহান’আল্লাহ! আল্লাহ তা’আলা লেখকের কাজকে কবুল করুন ও তাকেও এই দলের অন্তর্ভুক্ত করুন।

    .
    বইটি সব মিলিয়ে ১৬ টি প্রবন্ধের সংকলন। প্রায় প্রতিটি প্রবন্ধেই লেখক কোন না কোন পশ্চিমা ধ্যান-ধারণার অসারতা প্রমান করতে সচেষ্ট হয়েছেন। কিংবা এটাই প্রমান করতে চেয়েছেন যে, সৃষ্টির আদিকাল থেকেই একটা গোষ্ঠী ইসলামের বিরোধীতা করে আসছে, মুসলিমদের শত্রু মনে করে আসছে, তার ধারাবাহিকতা এখনও বিদ্যমান। ইহুদী, মুশরিক সহ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মুখে যতোই সম্প্রীতির কথা বলুক না কেন, তলে তলে তারা ক্রুসেডের ধারাবাহিকতাই বহন করে চলেছে। একাদশ শতকে পোপ দ্বিতীয় আরবান ইসলামের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধের সূচনা করেছিলো, পশ্চিমারা আজও সেই লিগ্যাসি বজায় রেখেছে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যড়যন্ত্র করে চলেছে। লেখক খুব সফল ভাবে, পশ্চিমা বিভিন্ন লেখকের রেফারেন্সের মাধ্যমে তার বক্তব্যের সত্যতা প্রমান করেছেন।

    .
    যুদ্ধংদেহী অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যবাদের মুখোশ উন্মোচনকারী প্রথম প্রবন্ধ ‘সহস্র সূর্যের চেয়ে উজ্জ্বল’ থেকে কিছু অংশ পড়ে নেয়া যাক-

    “অ্যামেরিকান ঐতিহাসিক জন লুই গ্যাডিস দেখিয়েছেন ২০০২ সালের বুশ ডকট্রিনের সাথে অ্যামেরিকার ষষ্ট প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি এ্যাডামসের ১৮১৮ সালের ‘সম্প্রসারণেই নিরাপত্তা’ (expansion is the path to security) তত্ত্বের মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। দুটোর মূল বক্তব্য একই। অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যের সম্ভাব্য কোন প্রতিদ্বন্ধী উদয় হবার আগেই তাকে আক্রমন করা। আগাম যুদ্ধের এ দর্শন অনুযায়ী দুই শতাব্দীর বেশী সময় ধরে ঘরে-বাইরে কাজ করে যাচ্ছে অ্যামেরিকা। আণবিক গণহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া ট্রুম্যান থেকে শুরু করে শুধু ২০১৬-তেই মুসলিম বিশ্বের উপর ২৬০০০ এর বেশী বোমা ফেলা আর ড্রোন হামলার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রেসিডেনশিয়াল ‘ক্রসফায়ার’ চালানো শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শান্তিকামী যুদ্ধাপরাধী বারাক ওবামা পর্যন্ত, মেরিলিন মনরোর প্রেমিক ও ভিয়েতনামের কসাই নিপাট ভদ্রলোক জন এফ. কেনেডি থেকে শুরু করে পর্ন অভিনেত্রী আর পতিতাপ্রেমিক গোঁয়ারগোবিন্দ ট্রাম্প পর্যন্ত- একই সাম্রাজ্যবাদী নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে প্রত্যেক অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট। নাম বদলেছে, মুখ বদলেছে, বদলেছে শ্লোগান; কিন্তু বদলায়নি অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যবাদের ঠান্ডা মাথায় ধ্বংসযজ্ঞের পলিসি।”

    .
    পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কালে কালে তাদের সাম্রাজ্যের বিস্তারে যাকেই শত্রু গন্য করেছে তাকেই আক্রমন করে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। আর এভাবেই পশ্চিমারা সামরিক আগ্রাসনে মাধ্যমেই বিশ্ব কতৃত্ব দখল করে নিয়েছে। আর মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে দীর্ঘকালীন এক চিন্তার দাসত্ব।

    .
    তৃতীয় প্রবন্ধ ‘চিন্তার জট’-এ লেখক এদিকেই দৃষ্টিপাত করেছেন। সাধারণ দৃষ্টিতে পশ্চিমাদের দুনিয়াবী সাফল্যের পেছনে যে ফলাফল সেটাকেই আমরা দেখি কারন হিসেবে। যেমন, আমরা বলি পশ্চিমাদের উত্থানের পেছনে রয়েছে এ্যানলাইটেনমেন্ট, শিল্প বিপ্লব, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগতি, জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন এগুলো। আদতে এসব কিছুই হলো ফলাফল। পশ্চিমাদের সাফল্যের পেছনর মূল কারন হচ্ছে ঔপনিবেশিক লুটপাট, সামরিক শক্তি ও কূটনীতি। একবার ভাবুন, আর আমরা মুসলিমরা মাথা খুড়ে মরে গিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করছি, ইসলাম শান্তির ধর্ম। পশ্চিমা বাপদের খুশী করার জন্য আমরা চিৎকার করে গেয়ে চলেছি, ‘গাহি সাম্যের গান’।

    .
    এভাবে সকল প্রবন্ধেই পশ্চিমা কোন না কোন মতবাদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর দেখিয়ে দেয়া হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে সেগুলো কত নিম্নস্তরের প্রডাক্ট।

    .
    ‘পূজারি ও পূজিত’, ‘গোঁড়ায় গলদ’ ও ‘ভুল মাপকাঠি’ -তে আলোচনা করা হয়েছে সেক্যুলারিজম নিয়ে। সেক্যুলারিজমের বক্তব্য যে কতটুকু অযৌক্তিক ও পরস্পরবিরোধী এবং কিভাবে মানুষের স্বাভাবিক ফিতরাত (স্বভাব) বিরোধী এবং কিভাবে তা মানুষ ও সমাজে জন্য ক্ষতিকর তা প্রমান করে দেয়া হয়েছে সুনিপুন যুক্তিতে ও উপযুক্ত রেফারেন্সের মাধ্যমে।

    .
    ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ -তে আলোচনা করা হয়েছে নারী শ্রম নিয়ে। নারী শ্রমের Opportunity Cost নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং দেখিয়ে দেয়া হয়েছে পরিবার ও সমাজের জন্য তা কতটা ক্ষতিকর। নারী শ্রমের পক্ষে পশ্চিমাদের দেয়া যুক্তিগুলোকে খন্ডানো হয়েছে অপূর্ব দক্ষতায়।

    .
    ‘সমকামী এজেন্ডাঃ ব্লু-প্রিন্ট’ ও ‘বালির বাঁধ’ প্রবন্ধদ্বয়ে আলেচনা করা হয়েছে সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু নিয়ে। পশ্চিমারা কিভাবে কওমে লুতের ঘৃণিত সেই পাপে লিপ্ত এবং কিভাবে তারা মানুষের সহজাত ফিতরাত বিরোধী অপকর্মকে সমাজে বৈধতা দিতে চাচ্ছে এবং মানুষের ভেতর স্বাভাবিক করে তুলতে চাচ্ছে তার পেছনের পুরো।পরিকল্পনাকে খুব বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এ প্রবন্ধ দুটিতে।

    .
    ‘মানসিক দাসত্ব’ ও ‘হাউস নিগার’ প্রবন্ধদ্বয়ে আলোচনা করা হয়েছে মুসলিমদের দাসত্ব নিয়ে। কিভাবে মানসিক পঙ্গুত্ববরন করে আমরা পশ্চিমাদের দাসে পরিণত হয়েছি এবং পরিণামে আমরা কি পেয়েছি তার প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়েছে লেখকের স্বভাবজাত লেখনীতে।

    .
    সবশেষে আলোচনা করা হয়েছে পশ্চিমা সভ্যতার বিদায় ডঙ্কার উপর। প্রতিটি সভ্যতারই উত্থান ও পতনের কিছু স্বাভাবিক সিম্পটম রয়েছে। ঐতিহাসিকরা এ ব্যাপারে বিস্তর গবেষনা করেছেন। সেসব রেফারেন্সের মাধ্যমে লেখক তার ‘সাম্রাজ্যের সমাপ্তি’ ও ‘অবক্ষয়কাল’ প্রবন্ধে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী সভ্যতা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌছেছে।

    .
    আর এসব মিলিয়েই বইটি হয়ে উঠেছে ‘চিন্তাপরাধ’। হয়ে উঠেছে প্রথাবিরোধী এক আকর গ্রন্হ। পরিণত হয়েছে পশ্চিমা বিভিন্ন অসারতাকে আমূল প্রশ্নবাণে জর্জরিত করার তাত্ত্বিক রিসোর্সে।

    .
    পরিচিত অনেকের কাছে বইটির প্রচ্ছদ তেমন ভালো না লাগলেও, আমার কাছে খারাপ লাগেনি। ছবিটি যেন আমাদের মন ও মগজের বন্দীত্বের রূপক হিসেবে চিত্রিত হয়েছে। চিন্তার দাসত্বের প্রতিরূপ হিসেবে অঙ্কিত হয়েছে।

    .
    বইটিতে বেশ কিছু মূদ্রন ত্রুটি লক্ষণীয়। যা আশা করি পরবর্তী সংস্করণে উত্তম এডিটিংয়ের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা যাবে ইনশা’আল্লাহ। তবে নেগেটিভ সবকিছুই কর্পূরের মতো বিলীন হয়ে গিয়েছে লেখকের চিন্তা ও লেখনীর বরাতে। লেখকের লেখনী যে কত শক্তিশালী তা তিনি অনলাইনেই প্রমান করেছেন। বই প্রকাশের মাধ্যমে এবার তিনি তা নেট জগতের বাইরেও তা প্রমান করলেন।

    .
    আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে বোঝার তাওফিক দিন। ‘চিন্তাপরাধ’ বইটি থেকে আমাদের সকলকে উপকৃত হবার তাওফিক দান করুন। বইটির নেপথ্যের সকলকে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দিন। আমীন।

    .
    দীর্ঘ এ লেখা শেষ করছি নিজের কিছু কথা দিয়ে। পশ্চিমা চিন্তার শেকলে আবদ্ধ অবস্হায় মুক্তির স্বপ্ন দেখা বিশ্ব মুসলিমদের জন্য অনেকটা উলুবনে মুক্তো ছড়ানোর মতোই। বৃথা চেষ্টা। আপনি যার খাবেন তার বিরুদ্ধে তো নেমকহারামী করতে পারবেন না। তাই মুক্তির প্রথম পর্যায়েই আমাদের এই চিন্তার শেকলকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে হবে। পশ্চিমে চর্চিত এসব চিন্তা ও মতবাদ যে মানুষ ও সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেটা নিয়ে আমাদের গবেষনা করতে হবে। মানুষের মাঝে এ সকল মতবাদের অসারত্বকে প্রকাশ করতে হবে। ব্যক্তিগত জীবনে আমাদের পশ্চিমা ধ্যান-ধারণা ত্যাগ করে ইসলামী আইন-কানুনের চর্চা শুরু করতে হবে। চোখ থেকে পশ্চিমা চশমাটি খুলে আমাদের সমাজ ও দুনিয়াকে দেখতে হবে ইসলামী চিন্তা-চেতনার ভিত্তিতে। এছাড়া পশ্চিমা কু-আগ্রাসন থেকে বাঁচার দ্বিতীয় কোন পথ খোলা নেই।

    .
    আমাদের মুসলিমদের চিন্তাপরাধী হিসেবেই গড়ে উঠতে হবে। আমাদের শিশুদের মগজে পুঁতে দিতে হবে চিন্তাপরাধের বীজ। আমাদের মা-বোনদের অন্তরে রোপন করতে হবে চিন্তাপরাধের চারা। পশ্চিমা সমাজের ভিত্তিমূলকে কাঁপিয়ে দিতে হবে সুনিপুন যুক্তির মাধ্যমে। ফাঁটিয়ে দিতে হবে একের পর এক চিন্তাপরাধের এটম বোমা। কারণ, আদতেই ‘চিন্তাপরাধ’ সাধারণ কোন বই নয়। এটা রীতিমতো একটি বুদ্ধিবৃত্তিক এটম বোমা।

    38 out of 39 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
Top