বড় যদি হতে চাও
লেখক : মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন
প্রকাশনী : রাহনুমা প্রকাশনী
বন্ধু, তোমার জন্যে আমার নির্দ্বিধ পরামর্শ হলো—ছুটিকালীন কোনো নীরব রাতের নির্জন প্রহরে বইটি হাতে নিয়ে বসো! দেখবে—তরতর করে কেটে যাচ্ছে নির্ঘুম রাত! আরো দেখবে—স্বপ্ন দেখে-দেখে আর সংকল্প করে-করে মহান বড়দের বড় হওয়ার শ্রেষ্ঠ মধুর কাহিনীগাথা পড়তে পড়তে—তোমার অনুভব-অনুভূতি তাঁদের মতোই বড় হওয়ার ‘স্বপ্ন’ ও ‘সংকল্পে’ টইটম্বুর হয়ে গেছে! পরের দিনের নতুন সূর্যালোকের মিষ্টি রোদে দাঁড়িয়ে মনে হবে—আজকের ভোরটা অন্যরকম এক ভোর! স্বপ্নমাখা! সংকল্প-ছাওয়া!
বন্ধু, তোমার জন্যে আমার নির্দ্বিধ পরামর্শ হলো—ছুটিকালীন কোনো নীরব রাতের নির্জন প্রহরে বইটি হাতে নিয়ে বসো! দেখবে—তরতর করে কেটে যাচ্ছে নির্ঘুম রাত! আরো দেখবে—স্বপ্ন দেখে-দেখে আর সংকল্প করে-করে মহান বড়দের... আরো পড়ুন
-
-
hotবেলা ফুরাবার আগে
লেখক : আরিফ আজাদপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন335 ৳234 ৳বেলা ফুরাবার আগে... নিজেকে আবিষ্কারের একটি আয়না। ...
-
hotমনের ওপর লাগাম
লেখক : আল্লামা ইবনুল জাওযী (রহঃ)প্রকাশনী : ওয়াফি পাবলিকেশন173 ৳128 ৳বিবেক আছে বলেই মানুষ পশুপাখি থেকে ...
-
hotএবার ভিন্ন কিছু হোক
লেখক : আরিফ আজাদপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন340 ৳238 ৳প্রতিদিন একটা একঘেয়েমি চক্রে কেটে যাচ্ছে ...
-
hotটাইম ম্যানেজমেন্ট
লেখক : Ismail Kamdarপ্রকাশনী : সিয়ান পাবলিকেশন228 ৳166 ৳ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর রেশমি কাপড়ের ...
-
hotআল্লাহর প্রতি সুধারণা
লেখক : ইমাম ইবনু আবিদ দুনইয়াপ্রকাশনী : ওয়াফি পাবলিকেশন175 ৳129 ৳জাবের রদ্বি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ...
-
hotনফসের বিরুদ্ধে লড়াই
লেখক : মাহমুদ বিন নূরপ্রকাশনী : রাইয়ান প্রকাশন220 ৳161 ৳কতজন-ই তো বলে—আমি তাহাজ্জুদে উঠতে পারি ...
-
featureম্যাসেজ
লেখক : মিজানুর রহমান আজহারিপ্রকাশনী : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স300 ৳ইসলাম এক নক্ষত্র, যার সংস্পর্শে সমস্ত ...
-
hotএপিটাফ
লেখক : সাজিদ ইসলামপ্রকাশনী : বুকমার্ক পাবলিকেশন228 ৳171 ৳ধরণ: লেকচার সংকলণ পৃষ্ঠা: ১৪৪ কভার: পেপার ব্যাক উস্তাদ ...
-
hotশিকড়ের সন্ধানে
লেখক : হামিদা মুবাশ্বেরাপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন430 ৳314 ৳পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৯৬ টি কভার: পেপার ব্যাক ‘Know ...
-
হাসান জামিল(চরমোনাই মাদ্রাসা) – :
তোমার জন্যে আমার নির্দ্বিধ পরামর্শ হলো___ছুটিকালীন কোন নীরব রাতের নির্জন প্রহরে বইটি হাতে নিয়ে বসো! দেখবে___তরতর করে কেটে যাচ্ছে নির্ঘুম রাত! আরো দেখবে___স্বপ্ন দেখে-দেখে আর সংকল্প করে-করে মহান বড়দের বড় হওয়ার শ্রেষ্ঠ মধুর কাহিনীগাথা।পড়তে পড়তে ___তোমার অনুভব-অনুভূতি তাঁদের মতোই বড় হওয়ার ‘স্বপ্ন’ ও ‘সংকল্পে’ টইটম্বুর হয়ে গেছে! পরের দিনের নতুন সূর্যালোকের মিষ্টি রোদে দাঁড়িয়ে মনে হবে___আজকের ভোরটা অন্যরকম এক ভোর!, স্বপ্নমাখা! সংকল্পে ছেয়ে আছে!
কথাগুলো ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী হযরত
“বড় যদি হতে চাও”বইটি নিয়ে অভিমত দিতে গিয়ে বলেন🌹👌চমৎকার একটি বই মাশাআল্লাহ💯অনেক কিছু পেলাম বইটি থেকে।লেখক প্রকাশক সকলের জন্য রইল মোবারকবাদ ও দোয়া।❤️🤲
Md Pias – :
মুশতাক আহমাদ – :
আপনি যদি জ্ঞানরাজ্যে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাহলে এই বইটি পড়তে পারেন। হাতে নিবেন তো ছাড়তে ইচ্ছে হবে না। আরেকটা কথা, রাত দশটার পর এটা পড়তে বসবেন না। তাহলে ঘড়ির কাটা ঘুরে ঘুরে কীভাবে ‘ডে’ পালটে গেছে টেরই পাবেন না। আর যদি ৩১ ডিসেম্বরের রাতে ১০ টার পর হাতে নেন তাইলে দিবস তো পাল্টাবেই, নিজের অজান্তে বছরও পালটে যাবে।
Rifat hasan – :
এক অনুষ্ঠানে জনসম্মুখে লেখককে অনুযোগের সুরে কথাটি বলেন উবায়দুর রহমান খান নদভী দা. বা.।
‘বড় যদি হতে চাও গ্রন্থখানির পান্ডুলিপি পড়ে মনে হয়েছে,গ্রন্থকর্তা আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমাদের মনের ভেতর প্রবেশ করে আমাদের প্রাণের কথাগুলো টেনে বের করে স্বীয় সাহিত্যশিল্পে সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠকের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হয়েছেন’
——–মুফতী আবূ সাঈদ দা.বা.
‘মাসিক নেয়ামতে লেখাটি কিস্তি আকারে প্রকাশিত হলে,সবসময় পরের মাসের কিস্তি হাসিল করার জন্য অধীর আগ্রহে থাকতাম।বিভিন্ন মজলিসে ছাত্রদের পড়াতাম ও পাঠ করে শুনাতাম।কয়েকটি কিস্তি ফটোকপি করে বিলিও করেছি।অপেক্ষায় ছিলাম গ্রন্থাকারে প্রকাশের।
————-মাওলানা মুহাম্মদ সালমান
খলীফা, আবুল হাসান আলী নদভী রহ.
‘এই বই সম্পর্কে কি লিখব?প্রয়োজন তো নেই!এই বই তো আমি যা বলব তার অনেক উপরে।অমন মশহুর পণ্যের- আমার এই দূর্বল বিজ্ঞাপনী কথা দিয়ে পণ্যমূল্য কমিয়ে দেয়ার কী দরকার!….তবে সত্যি বলছি,এ বইয়ে তোমার জন্য ছড়িয়ে আছে –মণি-মুক্তা-হীরা-জহরত!জীবন গড়ার..জীবন রাঙাবার শ্রেষ্ঠ উপকরণ!’
——-ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী।
এমন সব মন্তব্য যেই বইয়ের ব্যপারে,সেই বইতে কি আছে? খুব জানতে ইচ্ছে করছে?আচ্ছা চলুন,প্রথমেই খুব সংক্ষেপে জেনে নেই স্বয়ং লেখকের ভাষ্য থেকে———–
‘পৃথিবীখ্যাত বড় মানুষদের আত্মসাধনামূলক ঘটনাবলির গল্পের ভাষায় বিবরণ।গল্পের ভাঁজে ভাঁজে বড় হওয়ার সিঁড়ির সন্ধান।অতপর কোথাও ধাক্কা,কোথাও আকর্ষণ।এবং সত্যিকারে বড় হওয়ার মর্ম সম্পর্কে সহজ সরল বয়ান।’
★গ্রন্থ পর্যালোচনা★
★পুরো বইয়ের খন্ড খন্ড নির্বাচিত কিছু বাক্যের সমন্বয়ে তৈরী ছোট্ট এক রচনাঃ
বড় হবার প্রেরণা জীবন্ত সব অন্তরেই প্রোথিত।বড় হতে হলে স্বপ্ন দেখতেই হয়।প্রতিজ্ঞা করতে হয় স্বপ্নটা হাতের মুঠোয় করে দেখবার।বড় এবং প্রতিষ্ঠিত হতে হলে যেমন স্বপ্ন দেখতে হয় তেমনি স্বপ্নের একটা সুনির্দিষ্ট বিন্দু থাকতে হয়।তারপর সবটুকু শক্তি ও সাধনা দিয়ে স্পর্ষ করতে হয় স্বপ্নের ওই বিন্দুটা।কথাটা আরেকটু সহজ করে বললে–সাধনার শুরুতেই স্পষ্ট করে নিতে হবে—আমি কি হতে চাই।কি আমার জীবনের লক্ষ্য!কারণ টার্গেট এক যাদুময় মন্ত্র।প্রতিটি মুমিনের টার্গেট–পরকালীন সাফল্য।আর তা আসবে ইহকালীন কৃতকার্যতায়।এর জন্য বিকল্প নেই ‘ইলম’ অর্জনের।
ইলমের অন্বেষা ডুবুরির মুক্তা খোঁজার চাইতে কম নয়–বরং বেশি!ডুবুরিও মুক্তা খোঁজে মৌসুমে এবং আঁজলা ভরে গেলে আর পড়ে থাকে না জলের অতলে।জ্ঞানের ডুবুরি–তার কোনো মৌসুম নেই,নেই আঁজলা কিংবা আঁচলের সীমা।নেই তার মুগ্ধতার প্রান্ত।
আমাদের এই উপমহাদেশের আকাশ আলো করা তারকা মাওলানা আব্দুল হাই ফিরিঙ্গিমহল্লী রহ.। তখনো তিনি ছাত্র।সামনে কিতাব।পাঠে নিশ্ছিদ্র নিমগ্ন।এরই মধ্যে পানি চাইলেন—-প্রবল তৃষ্ণায়।কাছেই মাওলানা আব্দুল হালীম রহ. উপবিষ্ট।ভাবনায় ধাক্কা খেলেন।পড়ার সময় তৃষ্ণার কথা মনে পড়ল!এটা কেমন পড়া!এ কি পড়াশুনা করবে,না…!পরীক্ষা করা দরকার।কাছেই কেরোসিন তেল রাখা ছিল।দেয়া হলো গ্লাসভর্তি কেরোসিন।গ্লাস হাতের কাছে পেয়েই একটানে সাবাড়!বাবা শ্বাস ফেললেন—ইনশাআল্লাহ! আশা করি পড়তে পারবে।
কীভাবে হারিয়ে যেতেন ইলমের ভেতর,ভাবতে পারি!
পৃথিবীতে যেখানেই যারা আলো ছড়িয়েছেন;প্রতিষ্ঠার আকাশে নক্ষত্র হয়ে পথ দেখিয়েছেন;প্রসারিত ছায়া দিয়ে ধনী করেছেন সময় ও সমকালীনদের—তাদের বেড়ে উঠার ইতিহাসটা এমনই হয়।এই যে একটা ফুল তার রুপ ও গন্ধে আমাদের মুগ্ধ করে—তাকেও জীবনের একটি বড় অধ্যায় মাটির গভীরে নিশ্ছিদ্র মগ্নতায় কাটাতে হয়।কী আশ্চর্য!একটি মুরগির বাচ্চা পেতে হলেও জননী মুরগিটিকে দীর্ঘদিন ধ্যানমগ্নতায় কাটাতে হয় দুনিয়ার সবকিছু ছেড়েছুড়ে!সেখানে নিজেকে সামান্য একজন থেকে অসামান্যতায় প্রতিষ্ঠিত করতে হলে শখ আহ্লাদ ও কিছু আবেদন তো বিসর্জন দিতেই হবে।কে যেন বলেছেন—–
বড় যদি হতে চাও বিলিয়ে আপনারে
বীজ দেখো ওই হারিয়ে গিয়ে কুসুম ছড়ায় গুলিস্তানে
তাই স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার এক অব্যর্থ মন্ত্র মনে গেথে নিতে হবে—-হয় মন্ত্রসাধন, না হয় জীবন পতন।
★বইটি কেন পড়বেন? পড়ে কি পাবেন?
এই বই থেকে জানা যাবে শত শত মনিষীর নাম, যেই নামগুলো পূর্ণিমার চেয়েও উজ্জল হয়ে জলছে ইতিহাসের পাতায়।
জানা যাবে তাঁদের জীবনের টুকরো টুকরো গল্প,যা অলস মনে প্রেরণার প্রদীপ জালায়।
জানা যাবে ইলম হাসিলে কষ্ট মুজাহাদার বয়ান,যা অথৈ সাগরে ডুব দিতে সাহস যোগায়।
জানা যাবে অসামান্য ধৈর্য্য ও ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা,যা খুলে দিবে আমাদের অন্তরের রুদ্ধ কপাট।জানা যাবে উসতাযের প্রতি অসামান্য ভক্তি ও শ্রদ্ধাবোধ,যা আমাদের পৌছে দিবে অনন্য উচ্চতায়।
বড় যারা হতে চান,বইটি হবে তাদের সামনে আয়নার মতো।বড় হতে কি থাকতে হয়,কি নিতে হয় এবং কি ছাড়তে হয় –এসবের সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাবেন বইটিতে।
বইটিতে লেখক উল্লেখ করেছেন জিরো থেকে হিরো এবং শূণ্য থেকে তারকা হওয়ার অনেক গল্প।
এনেছেন অনেক মুগ্ধকর উপমা।গন্তব্যহীন উদাসদের লক্ষ্য খুজে দিয়েছেন।দ্বিধান্বিত মনকে স্থীর করেছেন।হীনমন্যতাকে শক্তিতে পরিণত করতে শিখিয়েছেন।শিখিয়েছেন কিভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়।দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে সাধ ও সাধ্যের মধ্যস্থতা খুজে বের করতে হয়।তিক্ত মুখে ইলমের মধুরতা কিভাবে আসে সেই কথা বলেছেন।এনেছেন দুঃসাধ্য সাধনার গল্প।
‘পড়ি তবে মনে থাকে না’র সমাধান খোজে বের করে দিয়েছেন।
একটি হাদীসের জন্য কিভাবে এক বছর গোলামির খাটুনি খাটা যায় সেই উপমা দেখিয়েছেন।
ইলমের প্রধান শর্ত ‘আদব’ নিয়ে বিস্তর আলোচনা এনেছেন।করেছেন উস্তায,কিতাব ও ইলম অর্জনের আসবাবের আদবের আলোচনা।
বাদশাহ আলমগীরের সেই বিখ্যাত উক্তি কি এত সহজে ভোলা যায়—–
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে চরণ
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল নাকো কেন সে চরণ,স্মরি ব্যথা পাই মনে
আদব হারিয়ে গেলে কি হবে সেই পরিণতির বাস্তব উপমা টানতেও দ্বিধা করেননি তিনি।
উল্লেখ করেছেন দীর্ঘ সান্নিধ্যের গুরুত্ব ও ফায়দা।
আরো আলোচনা করেছেন ইবারত সংক্রান্ত উপকারী পরামর্শ,দরসের পূর্ব ও পরবর্তী করণীয়,তাকরারের গুরুত্বের কথা।উদ্বুদ্ধ করেছেন হাতের লেখায় মনোযোগী হতে,দেখিয়েছেন লেখা সুন্দর করার পথ।স্বপ্ন দেখিয়েছেন একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক হবার।বলে দিয়েছেন এর জন্য করণীয় কর্মপন্থাও।
বইটিতে ঘুরেফিরে এসেছে ইলম পিপাসু সাহাবীদের (রাঃ) আলোচনা—মহান চার ইমাম ও তাঁদের ছাত্রদের কথা। এছাড়াও রয়েছে আমাদের নিকট অতীতের আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশমিরী, ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদের কথা।আছে আকাবিরে দেওবন্দের অনেকের কথা।যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে,এসব রুপকথা নয় কিংবা আগের যুগে সম্ভব ছিল,এখন আর হবে না –এমনও নয়।তাই তো লেখক প্রিয়তম উসতায মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী দা. বা. এর কথা স্মরণ করেন–
‘তোমার কাছে তো এ মর্মে অহী আসেনি যে,তুমি হাকীমুল উম্মত থানভী হতে পারবে না;বুখারীয়ে ওয়াক্ত কাশ্মিরী হতে পারবে না কিংবা শায়খুল ইসলাম মাদানী হতে পারবে না?’
বইটিতে এনেছেন প্রতিযুগের সমকালীন অনেক প্রসিদ্ধ সফলদের বিপরীতে ব্যর্থদের তুলনামূলক পর্যালোচনা।যেমন তিনি আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন, ‘কোথায় আজ সেই আবু জাফর মানসূর!?ইতিহাসের পাতায় পড়ে থাকা কতিপয় কালো বর্ণ মাত্র।আর আবূ হানিফা!সে তো পূর্ণিমার চাঁদ।
সুতরাং পাঠক ঘুরে আসবেন মক্কা, মদিনা, কুফা, বাগদাদ, সিরিয়া।দুরে থেকেও চোখ বুলাবেন আরব ও উপমহাদেশের অলিগলিতে। চামড়ার চোখে না দেখেও কল্পনায় চিত্রায়িত করবেন সেই সব মনিষীদের ইলম তৃষ্ণা। ইলম অনুসন্ধানী এই মানুষদের জীবনকথা পাঠককে মনে করিয়ে দিবে ইসলামের প্রথম কথা ছিলো—পড়।
★ভালো লাগার অ-নে-ক উক্তি থেকেঃ
-আমীরুল মুমিনীন ফীল হাদীস আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রহ. কে দেখার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।এই উৎসবদৃশ্য দেখে বাদশাহপত্নি বলে উঠল, ‘খোদার কসম! এই না রাজত্ব!হারুনের রাজত্ব কী!তিনি তো পুলিশ ও সহযোগী ছাড়া মানুষ জমাতে পারেন না!’
-একবার তাকে কেউ জিজ্ঞাসা করল,এই যে ঘরে একা একা পড়ে থাকেন এতে কি নিঃসঙ্গতা বোধ করেন না?এর উত্তরে তিনি যা বলেছিলেন তা আমাদের মনের পাতায় সোনার হরফে লিখে রাখার মতো।তিনি বলেছিলেন–
‘নিঃসঙ্গতা বোধ করব কিভাবে?আমি তো হযরত নবীয়ে কারীম এবং তার সাহাবীগণের সঙ্গে থাকি।’
-বড় হতে হলে–অন্তত জ্ঞানের জগতে–প্রথমে দেখতে হয় স্বপ্ন।তবে ঘুমের ঘোরে দেখা স্বপ্ন নয়।ঘুমের স্বপ্ন তো নিদ্রাজগতের সুখ।এই জাগ্রত পৃথিবীতে ‘রাজা’ হতে হলে স্বপ্ন দেখতে হবে জাগ্রত বসে।’
-ইমাম আবূ দাউদের ইলমে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন এক প্রসিদ্ধ শায়েখ তার কাছে নিবেদন জানালেন–
‘যে জিহ্বা দিয়ে আপনি নবীজির সা. হাদীস বর্ণনা করেন সেই জিহ্বাটি একটু বের করে দিন আমি তাতে চুমো খাবো’
-এক বালক তার উস্তাদকে প্রশ্ন করল,বেহেশতে পড়াশোনা থাকবে তো?
শায়েখ খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন,হ্যা।
এর উত্তরে এই বালক যা বলেছিল সেটাই বলার কথা।ইলমপাগল এই বালক তার শিক্ষককে বলেছিল–
‘আপনি যদি বলতেন বেহেশতে পড়ালেখা নেই, আমি বলতাম–তাহলে তো ওখানে কোনো মজাই নেই।’
-আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. মৃত্যুশয্যায় শায়িত।তবুও কিতবা পড়ে যাচ্ছেন।আল্লামা শিব্বীর আহমদ উসমানী রহ. সবিনয়ে আপত্তি জানালেন।উত্তরে তিনি বললেন,
‘ঠিকই বলেছ ভাই!এই কিতাব পড়াও একটি রোগ! এই রোগের কী চিকিৎসা বলো!
-শারীরিক সুখ বিসর্জন দেয়া ছাড়া আলেম হওয়া যায় না।
-তুমি তোমার পূর্ণসত্তা বিলিয়ে দিলেই ইলম তার সামান্য অংশ তোমাকে দিবে।
-এত ইলম কোত্থেকে পেলেন–এর উত্তরে ইমাম শা’বী বলেছিলেন-
কারো উপর ভরসা না করা,দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো,গাধার মতো ধৈর্য এবং কাকের মতো প্রত্যুষে নিদ্রাত্যাগের দ্বারা।
-সবচে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি ‘খুলে যায় রুদ্ধ কপাট’ লেখাটি পড়ে।নিজের কিছু মুখস্থ না হতে চাইলে এটা স্মরণ করি।অন্য কেউ এই অভিযোগ করলেও এটা শুনিয়ে দেই।
-বাবা হারা সন্তানেরা সত্যিকারের এতিম নয়,
ইলম এবং আদব হারাই এতিম সত্যিকারে।
-মনজিল পেলাম কী হারালাম সে আমার ভাবনা নয়
মনজিলের সন্ধানে হাটতে পারছি,এই আমার সান্ত্বনা!
★ভালো না লাগার মতো যা হলেও হতে পারে কারো কারো কাছেঃ
বইটিতে এক কথা বার বার এসেছে।এটা হয়ত কারো কারো কাছে অপছন্দের।তবে বলি কী….নসীহতের পুনরাবৃত্তি পাঠকের জন্যই কল্যাণকর।আমার মতো আত্মভোলা হলে তো কথাই নেই।তাছাড়া তিনি একই কথা দশ বার বলে থাকলে দশ রকমে ব্যক্ত করেছেন। যা পড়ার মাধুর্যতা বরং আরো বাড়ায়, কমায় না একটুও।
★পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
বইটা পড়ার পর আমার প্রতিক্রিয়া বলব?বিশ্বাস করুণ,নির্ভেজাল সত্যিটাই বলছি,একটুও বাড়িয়ে বলছি না—বইটি এশার পর পড়া শুরু করি।ওয়াল্লাহি!বইটি আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল।শুরু করার পর শেষ না করে রাখতে পারিনি।শেষ করেই ফজরে যেতে হয়েছে। এখনো–যখনি ইবলিসি কুমন্ত্রনা নাড়া দেয়, পড়তে ভালো না লাগে, তখনি বইটা নিয়ে বসে পড়ি।কাজ হয়ে যায়।
এক কথায় বলতে বললে এটুকুই বলতে পারি -বইটি আমার কাছে অসাধারণের উপরে কিছু থাকলে তা-ই।
আমি কী বলব?প্রখ্যাত লেখক ও সাহিত্যিক ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী সাহেব তো তার পাঠপ্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে লিখেন,
‘শিরোনাম ও লেখকের নাম দেখেই ভেবেছিলাম –অসাধারণ একটি বই হবে।ভেতরে প্রবেশ করলাম।পাঠক হলাম।দেখলাম–লেখা আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।সামনে, আরো সামনে।ইচ্ছেমতো সামনে গেলাম।গভীর রাত।ঘুম ছিলো চোখে।এখন আর ঘুম নেই।লেখার আদুরে পরশে আর লেখকের ‘নিদ্রাতাড়ানো’ ভঙিতে আমি নিবিষ্টচিত্তে পড়ে যেতে লাগলাম।এশার পরের ২১ তারিখ হয়ে গেলো ২২ তারিখ।আমি থামলাম।অনিচ্ছাতেই।সারা বইয়ে আছে মনি-মুক্তা-হীরা-জহরত।ইচ্ছে হলেই থামার উপায় নেই!’
আর পাঠক!আপনার অবস্থা কেমন হবে?মনে রাখবেন,বইটা অন্য দশটা বইয়ের চেয়ে ভিন্ন স্বাদের।
বই পড়তে গিয়ে আপনি একঘেয়েমি বোধ করবেন না। লেখক সে সুযোগ রাখেননি—মনে হবে একটানে শেষ করে তবেই উঠবো!
চিন্তার কিছু নেই।বইয়ের প্রচ্ছদ, বাধাই,কভার সবই ভালো লাগার মতো।
এক কথায় —-এর সবই ভালো।
পরিশেষে-
অন্তরের ভালোবাসাকে যদি সজীব রাখতে চাও
পূর্বসূরিদের জীবন-গল্পও মাঝেমধ্যে পড়ো।
mr.tahmid – :
বইটি মূলত তালিবুল ইলমদের জন্য। কীভাবে একজন তালিবুল ইলম যোগ্য আলিম হওয়ার পথে প্রথম পদক্ষেপ দিবে তারই কিছু দিকনির্দেশনা। তবে বইটি লেখা হয়েছে মোটিভেশনাল বইদের মত করে। তাই পড়তে কষ্ট হয়না।
একজন আলিম হওয়ার জন্য প্রথমে দরকার ইলম অর্জনের ক্ষুধা। তারপর দরকার ধারাবাহিকতা ও অধ্যাবসায়। আরো দরকার আদবের। এ জিনিসগুলো নিয়েই সালাফ ও খালাফদের জীবনের অনুপ্রেরণামুলক গল্পের সংকলন এ বইটি।
আলিম হওয়া বলতে কি বুঝেন? আমাদের দেশে সবাই আলিম বলতে যা বুঝে তেমন আলিম নয়, তোমাকে হতে হবে এমন আলিম যাতে তুমি হয়ে উঠো কালোত্তীর্ণ। এমন আলেম হওয়ারই কিছু সোনালী নীতি ছড়িয়ে আছে এ বইতে।
বইয়ের বিশেষ আকর্ষণঃ সালাফদের যুগ থেকে বড় বড় আলিমদের ইলম অধ্যায়ন নিয়ে অনেক বিচিত্র সব গল্প লেখক বইতে তুলে এনেছেন। কিছু গল্প অবাক করে দেয়, কিছু গল্প আবার হাসায়ও। সালাফদের গল্পই নয়, আমাদের আকাবিরে দেওবন্দেরে উস্তাদদের জীবনের অনেক সুন্দর সব কাহিনীও পাবেন বইতে। এতে করে পাঠক বুঝবে যে একই কাজ আমাদের সময়েও তো করা সম্ভব।
লেখক নীতিকথা কম, ঘটনা বেশি বলেছেন। ফাকে ফাকে নীতিবাক্যগুলোও শিখিয়ে দিয়েছেন। তাই পাঠক আরামসে বই পড়বেন। তালিবুল ইলমদের জন্য এ বই পড়া উপকারী সাব্যস্ত হবে।
লেখক যদিও বইটি তালিবুল ইলমদের জন্য লিখেছেন, তবে জেনারেল লাইনের লেখকেরাও বইটি থেকে উপকার পাবেন। কারণ, বই থেকে জানার ও শেখার আছে অনেক কিছু। লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কীভাবে দৃঢ় সংকল্প হতে হয় তা এ বই থেকে শেখা যাবে।
বইয়ের একটি সমালোচনাঃ মাঝে মাঝে লেখক একই কথা একাধিকবার বলেছেন। কিছু কিছু জায়গায় আরেকটু সংক্ষিপ্ত হলে ভাল হত। তবে, লেখকের সুন্দর লেখনীর কারণেই হয়তবা আমি অল্প কয়েকদিনেই বইটি পড়ে ফেলেছি।
রেটিংঃ ৪/৫/