বিশ্বাসের বহুবচন
লেখক : রশীদ জামীল
প্রকাশনী : কালান্তর প্রকাশনী
বিষয় : ইসলামি আদর্শ ও মতবাদ
কভার : হার্ড কভার, সংস্করণ : New Edition, 2022
ভাষা : বাংলা
হার্ড বাধাই
পৃষ্ঠা : ৩৬৮
প্রকাশকের কলাম থেকে-
শাহবাগ বললে এখন আর নাস্তিকতার কথা আলাদা করে বলা লাগে না। শাপলা বললে সাঁতার না-জানা বাচ্চাদের হাবুডুবু খাওয়া দৃশ্যের পাশাপাশি কিছু মুনাফিকের চেহারাও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আর কওমি ছেলেরা তো বরাবরই, ঠিক যেমন আগেই বলেছি—বিশ্বাসের কাঁচামাল।
শাহবাগের গণজাগরণকে খেয়েছে অ্যান্টি-ইসলাম বখাটে এবং ধান্ধাবাজ কিছু ব্লগার। হেফাজতের গণজাগরণকে আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে এনেছে আলেম নামধারী কিছু রাজনৈতিক মুনাফিক।
‘বিশ্বাসের বহুবচন’ হলো শাপলা এবং শাহবাগের পাণ্ডুলিপি একটু নেড়ে দেখা। বলা চলে নতুন করে হাশিয়া লেখা। সাথে একটু কওমিনামা। যাদের কাছে মনে হবে—কথা সত্য, তাদের জন্য ভালোবাসা। যাদের গা একটু জ্বালাপোড়া করবে, তাদের জন্য এন্টিবায়োটিক শুভ কামনা।
হার্ড বাধাই
পৃষ্ঠা : ৩৬৮
প্রকাশকের কলাম থেকে-
শাহবাগ বললে এখন আর নাস্তিকতার কথা আলাদা করে বলা লাগে না। শাপলা বললে সাঁতার না-জানা বাচ্চাদের হাবুডুবু খাওয়া দৃশ্যের পাশাপাশি কিছু মুনাফিকের চেহারাও চোখের সামনে... আরো পড়ুন
-
-
featureপ্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ
লেখক : আরিফ আজাদপ্রকাশনী : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স225 ৳কভার: হার্ড কভার পৃষ্ঠা: ১৬৮ বর্তমান যুগ হলো ...
-
featureচিন্তাপরাধ
লেখক : আসিফ আদনানপ্রকাশনী : ইলম হাউজ পাবলিকেশন190 ৳পৃষ্ঠা - ১৯২ 'যতক্ষণ সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্ব স্বীকার ...
-
hotপ্রত্যাবর্তন
লেখক : সমকালীন সংকলন টিমপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন350 ৳245 ৳মুসলিমের ঘরে জন্ম নিয়েও আমি হয়ে ...
-
hotডাবল স্ট্যান্ডার্ড
লেখক : ডা. শামসুল আরেফীনপ্রকাশনী : মাকতাবাতুল আযহার360 ৳252 ৳কিছু লোক ইসলামকে সে শত্রু হিসেবে ...
-
hotডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০
লেখক : ডা. শামসুল আরেফীনপ্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন392 ৳290 ৳দ্বীন নিয়ে অজ্ঞতা আমাদের সমাজের রন্ধে ...
-
hotআরজ আলী সমীপে
লেখক : আরিফ আজাদপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন260 ৳182 ৳আরজ আলী মাতুব্বর। জন্মেছেন বরিশালে। প্রাতিষ্ঠানিক ...
-
hotজবাব (পেপার ব্যাক)
লেখক : আরিফ আজাদ, জাকারিয়া মাসুদ, ডা. শামসুল আরেফীন, মহিউদ্দিন রূপম, মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার, রাফান আহমেদ, শিহাব আহমেদ তুহিনপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন300 ৳210 ৳আমরা হয়ত অনেকেই জানি না, জনপ্রিয় ...
-
hotকষ্টিপাথর
লেখক : ডা. শামসুল আরেফীনপ্রকাশনী : মাকতাবাতুল আযহার360 ৳252 ৳আরবীতে একটা প্রবাদ আছে, كل شيء يرجع ...
-
সংশয়বাদী
লেখক : ড্যানিয়েল হাকিকাতজুপ্রকাশনী : ইলম হাউজ পাবলিকেশন260 ৳ড্যানিয়েল হাক্বিকাতযু। হালের একজন দা'ঈ ইলাল্লাহ। ...
-
মুহাম্মাদ নুর উদ্দিন – :
মুহাম্মদ আতাউল্লাহ – :
রিভিউ নং- ২
বই- বিশ্বাসের বহুবচন
লেখক – রশীদ জামীল
প্রকাশিত – কালান্তর
প্রকাশক – আবুল কালাম আজাদ
মুদ্রিত মূল্য – ৩৪০
২০১৩ সনের ৫ ই ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে জড়ো হতে থাকে কথিত একদল ব্লগার। অনলাইন একট্রিভিস্ট। নেচে গেয়ে বাদ্য বাজিয়ে মোমবাতি জালিয়ে তারা রাস্তা অবরোধ করে ফাঁসির দাবিতে। এই জমায়েত শাহবাগ আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে। আওয়ামী সরকারের ভারতীয় মুনিবদের ইশারায়। সরকার করপোরেট জগত ও মিডিয়া ঝাপিয়ে পড়ে শাহবাগের সমর্থনে। এই আন্দোলনকে উপস্থাপন করে জনমানুষের শতস্ফুত আন্দোলন হিসেবে। কিন্তু কিছু সচেতন মিডিয়া ও অনলাইন এক্ট্রিভিস্টদের কল্যানে ধীরে ধীরে এই আন্দোলনের মুখোশ উন্মোচিত হতে শুরু করে। মুসলমানদের অবহেলার সুযোগ নিয়ে অনলাইন দুনিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া প্রিন্ট মিডিয়ার জগতে একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম করেছিল বামপন্থী মহল। সাহিত্য মুক্তি-বুদ্ধি চর্চার নামে দিধারচে চলছিলো অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রচার প্রশার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগ গুলোতে ইসলাম বিদ্বেষী লেখালেখি যেন ফ্যাশনে পরিনত হয়েছিলো। আল্লাহ ও রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়েও কটুক্তি ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ শুরু করেছিল এই নাস্তকেরা। ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য স্মরণকালের ইতিহাসে কোন কাফের করেছে কিননা তা আমার জানা নেই। ফেরাউন, নমরুদ,আবু জেহেল,আবু লাহাব, উৎবা, সাইবারাও রাসূলের ব্যাপারে এমন গোস্তাকি করার সাহস পায়নি। এই সকল নাস্তিক ব্লগার-বামপন্থীরাই যখন গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়। তখন মুসলমানদের সামনে এই আন্দোলনের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যায়। নাস্তকদের এমন আস্ফালনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বাংলার তাওহিদী জনতা। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ক্রমশ সংক্রমিত হতে থাকে মানুষের জনমত। বিভিন্ন জায়গায় নাস্তিকদের ফাঁসির দাবিতে সমাবেশ ও মিছিল হতে থাকে। ৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় রাজধানী ঢাকা অভিমুখে স্মরনকালের বৃহত্তম লংমার্চ। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে লংমার্চ পরবর্তী সমাবেশ জনসমুদ্রের রুপ নেয়। ধারণা করা হয় এতে অংশগ্রহণ করেছিলো প্রায় ৩০ লক্ষ নবী প্রেমিক জনতা। এই সমাবেশেই ঘোষণা করা হয় ১৩ দফা দাবির। কিন্তু নাস্তিক্যবাদী তাগুত সরকার জনগনের এই দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। বরং প্রতিটি সুযোগে তারা মুসলমানদের উপর হামলে পড়ে। এবং এই ঈমানী আন্দোলনকে বাঞ্চাল করার চেষ্টা করেছে। অন্য দিকে শাহবাগি নাস্তিক ও সাতীমে রাসুলদের পুলিশ পাহারা দিয়েছে। তাদেরকে বিরিয়ানি আর পানি সংগ্রহ করেছে। ফলে তাওহিদী জনতার সঙ্গে তাগুত সরকারের সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ে। কি হয়েছিল এই আন্দোলনে? কতদূর গড়িয়েছিল আন্দোলন? কাদের মুনাফেকিতে বাঞ্চাল হলো এই ঈমানী আন্দোলন? তথ্যের সাথে বিস্তারিত জানাবে – ‘বিশ্বাসের বহুবচন’
⚫ শেষ মন্তব্য –
‘বিশ্বাসের বহুবচন’ বইটি শাপলা ট্রাজেডির উপর একটি ভিন্নধর্মী গ্রন্থ। যার বর্ণনা দেওয়ার মত ভাষা আমার জানা নেই।শাপলা ট্রাজেডি নিয়ে এর থেকে ভালো কোন গ্রন্থ আছে বলে আমার জানা নেই।
রশীদ জামীল সাহেবের লেখা এমনিতেই একটু আলাদা তারপর আবার প্রশ্ন উত্তর সাক্ষাৎকার, সবমিলিয়ে দারুণ হয়েছে। আর হযরতের সম্পূরক মন্তব্যগুলো বইটিকে আরো চমকপ্রদ করে তুলেছে। বইটি পড়লে নিজের মধ্যে অনেক কিছু অনুভূত হয়, কিছু কথা মনে জাগে, মন কিছু বলতে চায়। আসলে শাপলার সেই কালো রাতের কথা যখনই কোন মুমিনের আয়নায় ভেসে ওঠে তখনই তার হৃদয় কেঁপে ওঠে, অশ্রুসিক্ত হয় তার চোখ দুটি। মনের অজান্তেই মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায় তার দুটি হাত। সাথে সাথে ভেসে ওঠে কিছু ক্ষমতা লোভী গাদ্দার এবং সার্থ অন্বেষী আলেমের অবয়ব। তাদেরকে নিয়েই যখন একটি বই পড়া হয় তখন মনের অবস্থা কেমন সেটা তো সবাই বুঝে। রশীদ জামীল সাহেব কওমি ছেলেদের “বিশ্বাসের কাচালাম” বলেছেন ১০০℅ সত্য এটা। আসলে পুরা কওমী অঙ্গনটাই বিশ্বাসের কাচামাল। কারন আমরা একবার সাপের ছোবল খেয়েও দ্বিতীয়বার সেই গর্তে পা দেই। বড়ই বোকা জাতি সেজছি আমরা।
যাই হোক সালাত যেমন খাওয়ার মাঝে একটু আলাদা স্বাদ আনে তেমনি বইটি আরো আলোড়িত করেছে সাক্ষাৎকারের ফাঁকে ফাঁকে ভিন্ন শিরোনামের কিছু কথা।
আল্লাহ লেখকের হাতকে আরো শক্তিশালী করুন। আমীন।
মঈন উদ্দীন লাবিব – :
বিশ্বাসের বহুবচন।
গ্রন্থটি নিয়ে ব্যক্তিগত চিন্তা।
‘ বিশ্বাসের বহুবচন’এমন একটি বই, যে বই আগামী প্রজন্মের জন্য ইতিহাস-গ্রন্থ হয়ে থাকবে।
আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যখন ইতিহাস-গ্রন্থের লিস্ট করবে, তখন ‘ বিশ্বাসের বহুবচন’ সেই তালিকাভুক্ত থাকবে।
ওরা যখন ৫ মে ২০১৩ সালের কালো রাতের, অধ্যয়ন করবে, ওদের চেহারায় কখনো হাসির ঝলক , কখনো-বা বিরহের চিহ্ন, কখনো-বা মলিনতার আভাস ফুটে ওঠবে।
আগামী প্রজন্ম আমার শহিদ ভাইদের গল্প অধ্যয়ন করবে, নির্যাতনের কাহীনিগুলো অধ্যয়ন করবে। কখনো গ্যাস ছেড়ে, আকষ্মিক, কখনো উত্তপ্ত পানি ছেড়ে, কখনো সাউন্ড গ্রেনেটের কলিজা ফাটা আওয়াজে, অসহ্য হয়ে উঠেছিলো শাপলার লাখো-জনতা।
আহ! সেই রাতটা কতইনা নির্মম ছিলো।
সেই রাতে, কত মায়েরবুক খালি হয়েছিলো।
আহ! সেই রাত!
যেই রাতে কত মা-ই তো শেষবারের মত তার ছেলের মুখটা দেখতে পারেনি। ছেলের লাশের সন্ধান পর্যন্ত পায়নি।
সেইদিন হয়তো ওরা খুব কাঁদবে। এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করবে।
ভালো লাগা- মন্দ লাগা।
মন্দ লাগার মত কোন কিছু পায়নি, ২৪০ পৃষ্ঠায়। তবে ভালো লাগার অনেক দিক রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম একদিক হচ্ছে, যেমন, এই বইয়ের একটা দিক এটা লেখক নিজ থেকে বানিয়ে লিখেন নি।বরং ব্যক্তির নিজের ভাষ্য তুলে ধরেছেন।
আর এতে পাঠক সংশয় ছাড়া একটা বিষয় জানবে।
ব্যক্তিগত মতামত।
আমি মনে করি কালান্তর প্রকাশনী! বিশ্বাসের বহুবচন প্রকাশ,পুরো বাঙালির দায়িত্ব পালন করেছে,আগামী প্রজন্ম থেকে বাঙালি ওলামায়ে কেরামকে ঋণ মুক্ত করেছেন লেখক, এবং প্রকাশক।
যদি আজ তাঁরা এই শ্রম না দিতো, তাহলে আমরা হয়তো বিশ্বাসঘাতকদের পরিচয় করতে পারতাম না। স্বার্থন্নাসীদের জানতে পারতাম না।
—————–
বই থেকে।
মাযলুম এক ভাইয়ের সাক্ষাৎকারের কিয়দাংশ।
যাকারিয়া আহমাদ
রেঙ্গা, সিলেট।
রাত ১২ টার পর হেফাজতের প্রথম সারীর নেতাদের মধ্যে একমাত্র জুনাইদ বাবুনগরী ছাড়া আর কাউকেই স্টেইজে দেখা গেলো না। সবাই যার যার মত সটকে পড়েছেন। মাগরিব পর থেকে গরম গরম বক্তৃতা দিয়ে পৃথিবী জয় করে ফেলা সেই নেতারা চুপি চুপি মঞ্চ ত্যাগ করলেন। আমরা বসে আছি। আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নাই। কপালে যা আছে তা-ই হবে । কিচ্ছু করার নেই। এদিকে আমরা সারাদিন চা- বিস্কুট কিছুই খাইনি। পানির পিপাসায় পেটের ক্ষিধার কথা ভুলে গেছি।
রাত ১ টার দিকে শুরু হলো বৃষ্টি । আমরা দু’ হাত মুনাজাতের মতো জড়ো করে পানি পান করলাম। বৃষ্টিকে আল্লাহর রহমত কেন বলা হয় এবং বৃষ্টি যে কিভাবে আল্লাহর রহমত হয় ; প্রথম বুঝলাম। চতুর্দিক থেকে ছেড়া ব্যানারের কাপড় জড়ো করে রাস্তায় বিছিয়ে আধা শোয়ার মতো পড়ে রইলাম আমরা। সারাদিন এবং সারা রাতের ক্লান্তিতে অবস্থা একেবারে কাহিল।
রাত পৌনে তিনটার মতো হবে তখন। ঘড়ি দেখি নাই। তখন ঘড়ির দিকে তাকানোর অবস্থা ছিলোনা। হঠাৎ তিনদিক থেকে প্রচন্ড গুলির শব্দে আতকে উঠলাম আমরা! প্রথমে ভাবলাম ভয় দেখানো হচ্ছে। এত মানুষ এখানে। মারধর করার সাহস পাবেনা। কিন্তু আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনদিক থেকে শুরু হলো আক্রমণ। মানুষ তখন পাগলের মতো ছোটাছুটি শুরু করছে। চতুর্দিক থেকে ‘ইয়া আল্লাহ’ ইয়া আল্লাহ ‘ ধ্বনি কানে আসছে। যে যেদিকে পারছে দৌড়াচ্ছে। আমার সামনে কিছু ভাই রক্তমাখা শরীর নিয়া রাস্তায় ছটফট করছে। কারও পায়ে গুলি কারও বুকে। কারও মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। কে কাকে সাহায্য করবে? সবাই সন্ত্রস্ত, আতংকিত। এবং কিংকর্তব্যবিমুঢ়।
নিজের জান বাঁচাবে নাকি অন্য কাউকে সহয়তা করবে!
এরই মধ্যে আমার পায়ে গুলি লাগলো! দঁড়ানো থেকে পড়ে গেলাম আমি। মনে মনে মৃত্যুর জন্য তৈরি হয়ে গেলাম । এরপরের গুলি আমার বুকে এসে লাগতে পারে। এই রাতেই আমার জীবনের শেষ রাত। এখান থেকে জীবন নিয়ে ফিরতে পারার আশা ছেড়ে দিলাম। প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, মারা যাচ্ছি।
বই : বিশ্বাসের বহুবচন।
লেখক : রশীদ জামীল।
কালান্ত প্রকাশনী।
পৃষ্ঠা : ৩৬৬
মূল্য : ৩৪০ টাকা মাত্র।
মাহমুদুল হাসান – :
৫মে ২০১৩।স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এক দি। এই দিন সারাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ নবীপ্রেমিক ঈমানী দাবী ১৩দফা নিয়ে ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমবেত হয়।অরাজনৈতিক এক সংগঠনের ব্যানারে এত বিশাল এক সমাবেশ নাড়িয়ে দিয়েছিল সবাইকে।এর মাধ্যমে আল্লামা শাহ আহমদ শফী(রহঃ)পৌঁছে যান এক অনন্য উচ্চতায়।তাওহিদী জনতার প্রাণের সংগঠনে পরিণত হয় হেফাজতে ইসলাম।কোনরকম সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ব্যাতীত বরং সরকারের বিরোধিতা এবং বৈরী পরিস্থিতিতেই এই অভূতপূর্ব গণসমাবেশ সত্যিই বিস্ময়কর বটে।কিন্তু এই দিন এই সমাবেশকে ঘিরে যে ক্র্যাকডাউনের ঘটনা ঘটল এবং ঘুমন্ত জনতার উপর পেশাদার বাহিনীর বর্বর আক্রমণ হলো এগুলো কোনভাবেই বরদাশত করার মতো নয়। একই সময় আরেকটি আন্দোলন দেখেছিল বাংলাদেশ।সেই গৃহপালিত আন্দোলন থেকে সরকারি বিরিয়ানী খেয়ে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের।হাস্যকর।স্বাধীন দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আন্দোলন করে আবার মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা! তবে এরচেয়ে ভয়ংকর কথা হলো এই বিরিয়ানিখোরদের গণ্যমাণ্যরা সীমালঙ্ঘনেেে এক পর্রযায়ে শুরু করলো অনলাইন ব্যাবহার করে প্রিয় নবীজী (সঃ)কে নি কটূক্তি করা।ইসলাম এবং তার বিভিন্ন ঐতিহ্যকে হেয় প্রতিপন্ন করা।স্বাভাবিকভাবেই তা মেনে নেয়নি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ।তাই হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুরের আহবানে গনজাগরণ সৃষ্টি হয়।সেই দুটি আন্দোলন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এবং উভয় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ থেকে বিতর্কিত বিভিন্ন কর্মকান্ডের উত্তর পেতে চাইলে এই বইটি পড়তে হবে।একই সাথে শাপলার কয়েকজন আহত ভাইয়ের এবং কিছু শহীদ পরিবারের হাল অবস্থাও জানা যাবে।আমার কাছে সবচেয়ে বেশি এই অংশটি ভালো লেগেছে।বইয়ের শেষ কয়েক পৃষ্ঠায় লেখক অত্যন্ত মজাদারভাবে ইসলামবিরোধী বিভিন্ন মহলের অভিযোগগুলো খন্ডনের চেষ্টা করেছেন।পরিশেষে,বইটি পড়লে উভয় আন্দোলনের ভেতরগত বিভিন্ন খবরসহ আকর্ষণীয় অনেক কিছুই জানাযাবে।তবে লেখকের কিছু দৃষ্টিভংগির সাথে কেউ কেউ দ্বিমত করতে পারেন।সমস্যা নেই।তারপরও বইটি চমৎকার একটি বই।দেরি না করে কিনে ফেলুন আজই।
মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান – :
স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা দেশের সাথে অপরাধ করেছিল তারা হল যুদ্ধাপরাধী। জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ স্থগিত করা হলো। ধারণা করা হচ্ছিল যে এর সাথে সরকারের হাত আছে। এই ধারণাকেই প্রতিবাদে রুপ দিতে লিখতে শুরু করল কয়েকজন ব্লগার। কাজ হলো তাতে। কয়েকজন তরুণ বিকেলে হাজির হল শাহবাগে। রাত যত গভীর হচ্ছিল মিডিয়ার কল্যাণে শাহবাগও হচ্ছিল তত উত্তাল। এক এক করে শাহবাগ রুপ নিল গণজাগরণে। এই পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল, কিন্তু তাদের ব্যানার, স্লোগান, ভিতরে জমে থাকা অনুভুতির আত্বপ্রকাশগুলো বলতে ছিল ভিন্ন কথা। নাটক-সিনেমা, গদ্য-পদ্য এবং উপন্যাসের সেই চিরাচায়ীত রুপটাই আবার দেখল জমিনের মানুষ। রাজাকার যুদ্ধাপরাধী মানেই যেন মুখ ভর্তি দাড়ি, লম্বা টুপি আর গোল জামা পরা একজন মানুষ। এই নামটা শুনলেও এখন আমাদের সামনে সেই রুপটাই ভেসে ওঠে। এটাও হয়ত মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু এর সাথে স।থে শুরু হল মুমিনের কলিজার টুকরো মানুষটার (সাঃ) প্রতি আক্রমণ। শুরু হল সৃষ্টিজগতের স্রষ্ঠার প্রতি বিদ্বেষ।
৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এগুলো চলতে লাগলো প্রকাশ্যে। ঠিক তখনই হুংকার দিলেন একজন আহমাদ শাফী। বয়স হয়েছে অনেক। নিজেই ঠিকমত চলাফেরা করতে পারেন না; অথচ লাখও মানুষকে পথ দেখালেন চলার। মানুষগুলো দ্বীনকে পুর্ণভাবে মানতে না পারলেও যখন ইসলামের প্রতি আঘাত আসে তখন তাঁরা বসে থাকতে পারেনা। পারলও না। নেমে আসতে থাকল সব এক এক করে ময়দানে। জেলায় জেলায় শুরু হল সম্মেলন। আহ্বান করা হল ৫ মে এর।
এরপর আসল আলোচিত সেই দিন। একদিন আগ থেকেই সব রওয়ানা দিল ঢাকার উদ্দেশ্যে। শত বাধা-বিপত্তি সত্বেও মানুষ জরো হল ছয় পয়েন্টে। এরপর আকস্মিকভাবেই জমা হতে বলা হল শাপলায়। নবী সাঃ এর মহব্বতে ক্ষুধা-তৃষ্ণা সত্বেও নবী-প্রেমীরা করতে থাকল যা বলা হচ্ছিল তাই। বিকেলেই লাখও জনতা দেখল কতক রক্তাক্ত শহীদের লাশ। আস্তে আস্তে আধার নামল। রাতের আধারেই যে কিছু একটা হতে যাচ্ছে সেই আভাস পেয়েছিল প্রায় সকলেই, কিন্তু ততক্ষণে আর তেমন কিছু করার ছিলনা। কেননা সেখানে অধিকাংশ মানুষ এমন যাঁরা প্রথম ঢাকায় এসেছেন।
রাত ২ টা ৩৭ মিনিটে শুরু হলো একশন। ৩৫-৪০ হাজার নিয়মিত বাহিনী নামল রক্ত ঝরাতে। এর সাথে আরও ছিল শত শত ক্যাডাররা। মানুষগুলোকে এমনভাবে মারা হয়েছিল যেমন সাপকে লাঠিপেটা করা হয়। গলা কেটে দেওয়া হয় অনেকের। জবাইকৃত গরুর মত ধরফর করতে করতে এক সময় নীরব হয়ে যায় দেহগুলো। রক্তে ভেসে যায় আশপাশের রাজপথ।
দু-একটি নির্যাতনের চিত্রঃ
>ছোট্ট একটা ছেলের অবস্থা বলতে গিয়ে এক ভাই বলেন, ‘ওর পেটে গুলি করে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল। পেট দিয়ে নাড়িভুড়ি এবং পায়খানা বের হচ্ছিল।’
>অন্য এক ভাই নিজের অবস্থা বলেন, ‘গ্রেনেডে পায়ের মাংস ফাটিয়ে ফেলেছিল। চারবার হসপিটালে নেওয়া লাগছে। ছয়-সাত মাস খুব বেশি কষ্টে ছিলাম। দুই মাসের মতো মেডিকেলেই ছিলাম। পায়ের মধ্যে এক্স্ট্রা চামড়া লাগিয়ে চিকিৎসা করেছে। অনেক দুঃ-কষ্টে এবং আতঙকে দিন কাটছে।’
এ মাত্র দুটি চিত্র। এমন আরও শত শত নবীপ্রেমী রয়েছেন যাদের কারর হাত নেই, কারর পা নেই, কারর চক্ষু নেই। কেউ কেউ আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে নিয়েছেন। অথচ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে, এমনকি সংসদে দাঁড়িয়েও তারা নির্জলা মিথ্যাচার করেছে এই বলে যে, সেদিন কোনো গুলাগুলি হয়নি। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ইনশাআল্লাহ এর বিচার একদিন হবে।
বই সম্পর্কেঃ
উপরের কথাগুলোই আসলে বইয়ের সংক্ষেপন।
এ ছাড়াও সেদিন কেন ঝরেছিল এত রক্ত, কাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে গিয়ে এত এত মানুষকে হতে হয়েছিল বলির পাঠা, কারা পুরো বিকেল মাইক গরম করে রাতে অভিযানের আভাস পেয়ে পালিয়েছিল মানুষগুলোকে রেখে, পাওয়া যাবে তাদের ইঙ্গিত।
বুঝতে পারবেন নেতৃত্বগুণ কতটা জরুরি। জানতে পারবেন মানুষগুলোকে বাচাঁতে নদভী সাহেবের এদিক সেদিক দৌড়ঝাপের গল্প। জানতে পারবেন শাহবাগের জন্ম-মৃত্যু।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, ১৭ সেপ্টেম্বারে দালাল- মুনাফিকদের বিরুদ্ধে আমাদের সেই হাটাজারির বিজয়ের ক্ষেত্রেও এ বইয়ের ভুমিকা ছিল অনেক।
হৃদয়ে দাঁগ কাটার মতো বইয়ের দু-এক লাইনঃ
>’কথা বললাম কয়েকটি এতিম ছেলে-মেয়ের সাথে-যারা তাদের বাবা হারিয়েছে ঝরের রাতে। বিধবা স্ত্রীর সাথে-৫ মে স্বাী হারা। বাবা এবং মায়ের সাথে-যাঁরা এখনো কাঁদেন।’
>’ধর্মের নামে দু-একট গালি দিলে যদি ফ্রিতে একটা হুমকি পাওয়া যায়, আর সেই হুমকিকে পুঁজি করে যদি এসাইলাম নিয়ে ইউরোপের নিশ্চিন্ত জীবন অর্জন করা যায়, তবে আর পায় কে?
লেখক সম্পর্কেঃ
ছাত্র সময় থেকেই লেখা লেখির প্রতি চরম আগ্রহ তাঁকে পৌছে দিয়েছে অধিক উচ্চতায়। ২০১০ থেকেই ব্লগে খন্ডন করে আসছেন বিভিন্ন ধর্মবিদ্বেষী এবং নাস্তিকদের অপপ্রচার। বইও লিখেছেন অনেক। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ আহাফী, পাগলের মাথা খারাপ, বেত্তামিজ ইত্যাদি।
পাঠককে লেখার সাথে কীভাবে বেঁধে রাখা যায় সেই পাঠ খুব ভালভাবেই আয়ত্ত করেছেন তিঁনি।
শুধু এই একটা বই পড়েই তাঁর প্রেমে পরে গিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
বইঃ বিস্বাসের বহুবচন।
লেখকঃ রশীদ জামিল।
প্রকাশকঃ আবুল কালাম আজাদ।
প্রচ্ছদঃ ইনাম বিন সিদ্দিক।
প্রকাশনাঃ কালান্তর।
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩৬৬।
মুদ্রিত মুল্যঃ ৩৪০