বেলা ফুরাবার আগে
বেলা ফুরাবার আগে…
নিজেকে আবিষ্কারের একটি আয়না। যে ভুল আর ভ্রান্তির মোহে, অন্ধকারের যে অলিগলিতে আমাদের এতোদিনকার পদচারণা, তার বিপরীতে জীবনের নতুন অধ্যায়ে নিজের নাম লিখিয়ে নিতে একটি সহায়ক গ্রন্থ এই বই, ইন শা আল্লাহ।
বইটি কাদের জন্য?
এই বই তাদের জন্য যারা আমার কাছে ‘সাজিদ হতে চাই’ বলে বিভিন্ন সময়ে আবদার করেন। পরামর্শের আবদার, পথনির্দেশের আবদার। সাজিদ হতে হলে, আমি মনে করি, সবার আগে একটা অন্ধকার বৃত্ত থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সাজিদ যেভাবে অন্ধকারের কৃষ্ণগহ্বর ছেড়ে, আলোর ফোয়ারাতে তার জীবন রাঙিয়েছে, সেরকম ঝলমলে আলোর মাঝে নিজেকে মেলে ধরাই ‘সাজিদ’ হবার প্রথম এবং প্রধান শর্ত। কেবল ভারি ভারি বই আর যুক্তির পশরা সাজিয়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার মধ্যেই ‘সাজিদ’ হয়ে উঠার সার্থকতা নেই। সাজিদ হয়ে উঠার সার্থকতা তখনই যখন সাজিদ যে আদর্শের আলো প্রাণে প্রাণে ছড়িয়ে দিতে চায়, তা আমরা জীবনে মেখে নিতে পারবো।
বইটি কাদের জন্য?
ভুলোমনা একঝাঁক তারুণ্যের জন্য এই বই। যে ভুলের গহ্বরে তারা জীবনের বসন্তগুলোকে পার করছে, সেই ভুল থেকে তাদের ‘বেলা ফুরাবার আগে’ টেনে তুলতেই এই বইটার অবতারণা।
এর বাইরেও থাকছেঃ
‘চোখের রোগ’, ‘বলো, সুখ কোথা পাই’, ‘বেলা ফুরাবার আগে’, ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’, ‘যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা’, ‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়’, ‘বসন্ত এসে গেছে’, ‘তুলি দুই হাত করি মোনাজাত’, ‘চলো বদলাই’ নামের আঠারোটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে, ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায়।
-
-
hotমনের ওপর লাগাম
লেখক : আল্লামা ইবনুল জাওযী (রহঃ)প্রকাশনী : ওয়াফি পাবলিকেশন173 ৳128 ৳বিবেক আছে বলেই মানুষ পশুপাখি থেকে ...
-
hotএবার ভিন্ন কিছু হোক
লেখক : আরিফ আজাদপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন340 ৳248 ৳প্রতিদিন একটা একঘেয়েমি চক্রে কেটে যাচ্ছে ...
-
hotটাইম ম্যানেজমেন্ট
লেখক : Ismail Kamdarপ্রকাশনী : সিয়ান পাবলিকেশন228 ৳160 ৳ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর রেশমি কাপড়ের ...
-
hotআল্লাহর প্রতি সুধারণা
লেখক : ইমাম ইবনু আবিদ দুনইয়াপ্রকাশনী : ওয়াফি পাবলিকেশন175 ৳129 ৳জাবের রদ্বি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ...
-
hotম্যাসেজ
লেখক : মিজানুর রহমান আজহারিপ্রকাশনী : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স300 ৳255 ৳ইসলাম এক নক্ষত্র, যার সংস্পর্শে সমস্ত ...
-
hotএপিটাফ
লেখক : সাজিদ ইসলামপ্রকাশনী : বুকমার্ক পাবলিকেশন228 ৳171 ৳ধরণ: লেকচার সংকলণ পৃষ্ঠা: ১৪৪ কভার: পেপার ব্যাক উস্তাদ ...
-
hotনফসের বিরুদ্ধে লড়াই
লেখক : মাহমুদ বিন নূরপ্রকাশনী : রাইয়ান প্রকাশন220 ৳154 ৳কতজন-ই তো বলে—আমি তাহাজ্জুদে উঠতে পারি ...
-
hotতিনিই আমার রব
লেখক : শাইখ আলী জাবির আল ফাইফীপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন290 ৳212 ৳প্রকাশকের কথা: বইটির রচয়িতা শায়খ আলী জাবের ...
-
রবিউল ইসলাম – :
হাফসা হোসেন – :
ইয়াসমিন – :
Wahida Akhtar Sanna – :
‘সাজিদ সিরিজ’ পড়ে তরুণ প্রজন্মের ‘সাজিদ’ হয়ে ওঠার যে আকুলতা, সেটা মাথায় রেখেই লেখক সাজিদ তৈরির প্রকল্প হিসেবে লিখেছেন এই বইটি, একে উল্লেখ করেছেন ‘সাজিদ তৈরির খসড়া প্রস্তাবনা, সেই স্বপ্ন ও সাহসের প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে। মূল রচনার কোথাও ‘সাজিদ’ নামটি একবারের জন্য উল্লেখ না করেই লেখক দেখিয়েছেন সাজিদ হতে হলে ব্যক্তিগত জীবনে আসলে কেমন হতে হবে!
মোট ১৮টি গদ্যের সংকলনে এটি মূলত একটি আত্ম-উন্নয়নমূলক বই, যা মোটাদাগে তরুণদের সামনে রেখে লেখা হলেও মূলত সকলের জন্যই।
ইদানীং মানুষের মধ্যে খুব কমন যে সমস্যাটা দেখা যায় – নিজেকে নিয়ে/নিজের জীবন নিয়ে কেউই ঠিক সন্তুষ্ট না।অপ্রাপ্তি আর হতাশার সাগরে হাবুডুবু খায় সবাই। পড়ালেখা-ক্যারিয়ার-সংসার-সন্তান – সব কিছুতেই আমার সেরা হওয়া আর লোক দেখানো চাইই! এই প্রবণতাকে লেখক উল্লেখ করেছেন – Rat Race হিসেবে; এ সংক্রান্ত মানুষের যে চাওয়া, তার পুরোটাই দুনিয়াবি। পরকালের পাথেয় সংগ্রহের দিকে মানুষের নজর থাকে না। আর যা চায় তা না পেলেই মানুষ হাঁ-হুতাশ শুরু করে – ‘Why always me?’
এই খারাপ থাকার কারণ কিন্তু প্রত্যেকের নিজ নিজ জীবনযাপন! লেখক আলোচনা করেছেন সেগুলোও।
তরুণ প্রজন্ম হরহামেশাই “ক্রাশ” খায়, সেই মানুষটাকে দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে, তাকে ভাবতে-কথা বলতে ভালোবাসে। অথচ নবীজী (সাঃ) এগুলোকে যথাক্রমে চোখের, মনের এবং জিহ্বার যিনা বলে উল্লেখ করেছেন। মুসলিম তরুণ-তরুণীদের ঠিক কয়জন নিজের এই এত বড় পাপের ব্যাপারে অবগত?
যেখানে আল-কুরআন বলছে, মুমিনদের ‘দৃষ্টি সংযত’ করার কথা, একবার ভুল ক্রমে চোখ পড়ে গেলে সাথে সাথেই ফিরিয়ে নেয়ার কথা, সেখানে ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশা আর বন্ধুত্বের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে আসলেই ইসলাম থেকে ঠিক কত দূরে সরে গেছি আমরা! আর বিবাহপূর্ব প্রেম-ভালোবাসা, পরকীয়া আর এখনকার নতুন ট্রেণ্ড ‘জাস্ট ফ্রেণ্ড’ বিষয়ে আর নাইই বা বললাম! এগুলোর প্রত্যেকটাকেই লেখক উল্লেখ করেছেন ‘হারাম রিলেশনশিপ’ হিসেবে। এই হারাম রিলেশনশিপের পাল্লায় পড়ে বনি ইসরাইলের সবচেয়ে নেককার ব্যক্তি বারসিসা কিভাবে পাপ-পঙ্কিলতায় আকণ্ঠমগ্ন হয়েছিলেন – তা আঁতকে ওঠার মতই, সেই ঘটনা উল্লেখ করেছেন লেখক; উল্লেখ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মিরপুর এলাকা এবং এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাম্প্রতিক ৩টি ঘটনা। যেই সম্পর্কে আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘিত হয়, যে সম্পর্কে আল্লাহর অসন্তুষ্টি, সেই সম্পর্কের সূচনা থেকে সমাপ্তি – কোথাও শান্তি আছে কি?
‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়’ শিরোনামে লেখক তুলে ধরেছেন কিভাবে মৃত্যুর পরও মানুষ তার পাপ কামানোর ব্যবস্থা চালু রেখে যায়!
এই ‘আমরা তো স্রেফ বন্ধু কেবল’ আর ‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়’ শিরোনামের গদ্য দুটি পড়ে আমি খুব বড় রকম ধাক্কা খেয়েছি। ইসলাম নারী-পুরুষের সম্পর্কের যে সীমারেখা ঠিক করে দিয়েছে, সেটা মাথায় রাখলে এটা একদম দিবালোকের মতোই পরিস্কার যে, মুমিন মুসলিম হোক সে নারী/পুরুষ আমাদের সমাজে আজকাল দেখা যায় না বললেই চলে! এটা চিন্তা করে আকাশ থেকে পড়েছি যে – ইসলামে মুমিনের যে সংজ্ঞা, আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবণের প্রায় সাড়ে ৫বছরে হাতেগোনা ২/১জন ছাড়া তেমন মুমিন ব্যক্তি আমার চোখেই পড়ে নি; আর সারাজীবনে কয়েকজন দেখেছি, সেটাও হাতে গুণে বলে দেয়া সম্ভব!!! আর পর্ণোগ্রাফিতে আসক্তি যাদের/ইউটিউবে নাটক-সিনেমা দেখে ভিউ বাড়িয়ে/নাটক-সিনেমার দেখে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে সেগুলোর ব্যবসাকেই উৎসাহিত করছি না আমরা? ভেবে দেখেছি কি কখনো!?
কিন্তু প্রায়শই আমরা দেখতে পাই – পাপে আকন্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তি প্রচুর টাকা-পয়সার মালিক, সুন্দরী স্ত্রী-সন্তানসন্ততি নিয়ে প্রাচুর্যের সংসার তার! মনে প্রশ্ন জাগে না – তাহলে আল্লাহর নেয়ামত কিভাবে বর্ষিত হচ্ছে তার উপর?
এই প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দরভাবে দিয়েছেন হাসান আল বাসরি রাহিমাহুল্লাহ, “আচ্ছা, তুমি কি রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে পারো?আন্তরিকতার সাথে কখনো আল্লাহর কাছে দুয়া করতে পারো? তুমি কি তৃপ্তি সহকারে কখনো সালাত আদায় করতে পারো? কুরআন পড়তে পারো? এসবই তো আল্লাহর নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হবার জন্য যথেষ্ট!”
তাহলে এই নামমাত্র মুসলমানদের পরিত্রাণের উপায় কি? সেটাও লেখক বাঁতলে দিয়েছেন আল-কুরআন আর হাদীসের বাণী উদ্ধৃত করে, যেখানে আল্লাহতালা বলেছেন, বান্দা যতই নিজের ওপর যুলুম,অত্যাচার করুক না কেন, যতই আকাশসমান পাপ করুক না কেন, মহান আল্লাহতালা বান্দাকে ক্ষমা করে দিবেন, শুধুমাত্র আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাওয়া আর তওবা করার অপেক্ষা! সেই সাথে আল্লাহর কাছে কিভাবে সাহায্য চাইতে হবে, তওবা করতে হবে, সেসব ছোট ছোট দুয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন লেখক।
লেখক উল্লেখ করেছেন হুমায়ুন আহমেদের ‘নুহাশপল্লী’র কথা, কি বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে দুনিয়াতেই সব আনন্দ ভোগ করতে চাইলেও নশ্বর জীবনের হুমায়ুন আহমেদকে ঠিকই সব ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। অথচ আল্লাহতালা কতই না সহজে জান্নাতে নিজের বাড়ি পাওয়ার উপায় বাতলে দিয়েছেন তাঁর বান্দাদের জন্য। সেসবের উল্লেখের পাশাপাশি লেখক আমাদের উপায় বাতলে দিয়েছেন সালাতে মন বসানোর এবং সময়মতো ঠিকঠাক ফজরের সালাত আদায় করার।
কোনো কাফিরও হৃদয়ের গভীর থেকে আকুলচিত্তে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার দুয়াও শুনে থাকেন। সেখানে আমাদের মতো মুসলমানের দুয়াও আল্লাহতালা শুনবেন। শুধু আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে ধৈর্য্য ধরে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
নিজেকে পরিবর্তন করলেই আশেপাশের পরিবর্তন করা সহজ হয়ে যায়। আমাদের জীবনে সেই পরিবর্তন আসুক আমাদের বেলা ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই!
এই বইটা নিয়ে যাইই লিখি, তাইই আসলে কম হয়ে যাবে; লিখা শেষ হবে না তবুও। ধাক্কা খাওয়ার মতো, নিমিষেই নিজের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানোর মত অসংখ্য ঘটনা লেখক উদ্ধৃত করেছেন, একটা রিভিউতে সব তুলে আনা সম্ভবও না! তাই মুসলমান হিসেবে নিজেকে খুঁজে পেতে বইটা পড়ার অনুরোধ করছি।
মুহা. হুসাইন আলী – :