আয়নাঘর
অনুবাদ – ইলমহাউস অনুবাদক টিম
সম্পাদনা – আসিফ আদনান
পৃষ্ঠা সংখ্যা – ২০০ (পেপার ব্যাক কভার)
আয়না!
.
হয়তো আমরা খেয়াল করি অথবা করি না, কিন্তু আমাদের জীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার সাথে জড়িয়ে থাকে আয়না। জীবনপথে ক্লান্ত হয়ে আয়নায় আশ্রয় খুঁজি আমরা। জান্নাত বা জাহান্নাম পর্যন্ত বিস্তৃত এই পথে চলতে গিয়ে ধুলো জমে আমাদের হৃদয়েও। চিরচেনা আয়নায় বিকৃত হতে থাকে প্রতিবিম্ব। পরতের পর পরত জমে ময়লা। একের পর এক হাতে তুলে নিই নানা মতবাদ, নানা ‘তন্ত্রমন্ত্রের’ আয়না। ধরা পড়ে না অসুখ। ক্রমাগত আয়না বদলাই। ভুল প্রতিবিম্ব আর ভুল চিকিৎসায় আরও বাড়ে যন্ত্রণা। পুরু হতে থাকে ময়লার পরত…
.
কিন্তু জানেন, রূপকথার স্নো-হোয়াইটের সেই জাদুর আয়নার চাইতেও শতগুণ বেশি নির্ভুল আয়না ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে? সেই আয়না দেখে পরিপাটি করে তাঁরা সাজিয়েছিলেন নিজেদের। সাজিয়েছিলেন এই পৃথিবীকে। সেজেছিল মেঘ, রোদ, জোছনা; সেজেছিল মরু, নদী, সাগর। তাঁরা মানুষকে ডেকেছিলেন সৃষ্টির দাসত্ব থেকে স্রষ্টার দাসত্বের দিকে; এ দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রশস্ততার দিকে। লিখেছিলেন মাটির পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে মহাকাব্যিক অধ্যায়টি…।
.
ধুলো পড়া সময়ে হারিয়ে যাওয়া সেই আয়নার কথা মনে করিয়ে দিতেই এই আয়োজন…
আয়নাঘর।
Out of stock
-
-
save offবাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান
লেখক : ড. মরিস বুকাইলিপ্রকাশনী : দারুস সালাম বাংলাদেশ400 ৳232 ৳১৯৮১ সালের কথা। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্যান্সিসকো ...
-
save offকুরআন দিয়ে নিজের চিকিৎসা করুন
প্রকাশনী : সবুজপত্র পাবলিকেশন্স70 ৳50 ৳অনুবাদ: হাফেয মাহমুদুল হাসান পৃষ্ঠা ৯৭ পকেট সাইজ ...
-
hotগল্পগুলো অন্যরকম
লেখক : সিহিন্তা শরীফা, আনিকা তুবা, আফিফা আবেদিন সাওদা, আরমান ইবন সোলাইমান, আরিফ আজাদ, আরিফ আবদাল চৌধুরী, আরিফুল ইসলাম, আলী আবদুল্লাহ, জাকারিয়া মাসুদ, নুসরাত জাহান, মাহমুদুর রহমান, যাইনাব আল-গাযি, শারিন সফি, শিহাব আহমেদ তুহিন, শেখ আসিফ, সাদিয়া হোসাইন, সানজিদা সিদ্দীক কথাপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন350 ৳245 ৳জীবনের কাছে মাঝে মাঝে গল্পও তুচ্ছ ...
-
hotহিউম্যান বিয়িং শতাব্দীর বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব
লেখক : ইফতেখার সিফাতপ্রকাশনী : নাশাত220 ৳154 ৳সম্পাদক : মুহাম্মাদ আফসারুদ্দীন পৃষ্ঠাসংখ্যা : ১৬০ বাঁধাই ...
-
সিক্রেটস অব জায়োনিজম
লেখক : হেনরি ফোর্ডপ্রকাশনী : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স300 ৳অনুবাদ: ফুয়াদ আল আজাদ আমেরিকার বিখ্যাত ফোর্ড ...
-
কাশগড় কত না অশ্রুজল
লেখক : মোহাম্মদ এনামুল হোসাইনপ্রকাশনী : ইলম হাউজ পাবলিকেশন260 ৳সম্পাদনা: আসিফ আদনান পৃষ্ঠা: ২৬৪ কভার: পেপার ব্যাক ত্রিশ ...
-
hotইমাম মাহদী: রূপকথা নয়, সত্য
প্রকাশনী : সীরাত পাবলিকেশন200 ৳150 ৳অনুবাদক: মহিউদ্দিন রূপম, আশিক আরমান নিলয় সম্পাদনা: ...
-
save offইলুমিনাতি
লেখক : আবদুল কাইয়্যুম আহমেদপ্রকাশনী : বইকেন্দ্র234 ৳187 ৳ইউরোপের সম্পদ কুক্ষিগত করার জন্য দীর্ঘ ...
-
মুহাম্মাদ নাফিস নাওয়ার – :
আমাদের রোজকার জীবনের সাথেই জড়িয়ে থাকে আয়না। কতশত আয়না থাকে আমাদের! কোন আয়নায় হয়তো আমরা মুখ দেখি, নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিই আয়নায় নিজের মুখচ্ছবি দেখে। কোন আয়নায় আবার আমাদের জীবনটাকেই দেখি, দেখে দেখে চেষ্টা করি যতোটা পারি জীবনটাকে মনের মত করে সাজিয়ে গুছিয়ে নেবার। কোন আয়নায় আবার প্রকৃতি দেখি, কোন আয়নায় হয়তো রাজনীতিকে দেখবার চেষ্টা করি, কোন আয়নায় হয়তো সমাজ, কোনটায় আবার অর্থব্যবস্থা, কোনটায় পরিবার এবং এমন আরো অনেক আয়নায় অনেক অনেক কিছু দেখবার চেষ্টা আমরা সারা জীবন ধরেই করে যাই।
আয়না তাই আমাদের জীবনপথের অবিচ্ছেদ্য অংশ, আমাদের সত্ত্বার সাথে মিশে থাকা এক বন্ধু। আর তাই আয়না বেছে নিতে আমাদের ভুলের মাশুলও দিয়ে যেতে হয় সারাটি জীবন। কোন আয়নায় জীবনকে দেখছি আমরা? কোন আয়নায় দেখছি সমাজকে? কোন আয়নায় দেখছি আমাদের চারপাশের সবকিছুকে? আমার আয়না আমাকে আসল প্রতিবিম্বটাই দেখাচ্ছে তো? নাকি বিকৃত, ভুলভাল আয়নায় ভুলভাল প্রতিবিম্ব দেখে দেখেই পার করে দিচ্ছি একজীবন?
হ্যাঁ, আজ থেকে অনেক আগে, অনেএএএক আগে আমাদের পূর্বপুরুষেরাও একটা আয়না ব্যবহার করতেন। তাঁদের আয়নাটা ছিল ঝকঝকে, নিখুঁত। সেই আয়নায় ধরা পড়তো সব জিনিসের সত্যিকারের রূপ, সেই আয়নায় দেখে দেখে তাঁরা সাজিয়েছিলেন নিজেদেরকে, সাজিয়েছিলেন নিজেদের পরিবারকে, সাজিয়েছিলেন সমাজ, দেশ আর এই পুরো পৃথিবীকে – সুন্দরতম উপায়ে। এই আয়নার প্রতিবিম্বেই তাঁরা দেখেছিলেন পথ, চিনে নিয়েছিলেন সেই রাস্তা – যেই রাস্তায় হাঁটলে মেলে মুক্তি আর সেই রাস্তাতে হেঁটেই তাঁরা ধূলির ধরণীর সংকীর্ণতায় আটকে থাকা বনী আদমকে দেখিয়েছিলেন উর্ধ্বারোহণের পথ, যেই পথ এই ধূলিময়, কাদাময় ধরিত্রী থেকে চলে গিয়েছে সোজা জান্নাতে – আমাদের সবার আদি নীড়ে।
ধূলো পড়া সময়ে হারিয়ে যাওয়া এই আয়নার কথা মনে করিয়ে দিতেই ইলমহাউস পাবলিকেশনের তরফ থেকে ছোট্ট একটা উপহার – “আয়নাঘর”।
আয়নাঘরের আয়নায় :
কি আছে আয়নাঘরে? আচ্ছা। আছে বলতে ৪৯ টি ছোটবড় প্রবন্ধ আর একেবারে শুরুতে অত্যন্ত চমৎকার একটা সম্পাদকীয় কলাম। এরপর যে মানুষটি লেখনী আর বক্তব্যের অনুবাদ সংকলন এই বইটি, সেই ডক্টর ইয়াদ আল কুনাইবী হাফিযাহুল্লাহর পরিচিতি। এরপরই শুরু হয়েছে বইয়ের প্রবন্ধগুলো।
বইয়ের ৪৯ টি প্রবন্ধ ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ডক্টর কুনাইবীর বিভিন্ন প্রবন্ধ ও লেকচারের অনুবাদ। ২০০ পৃষ্ঠাব্যাপী এই সংকলনের অনুবাদ সম্পন্ন হয়েছে ইলমহাউস অনুবাদক টিমের হাতে। সম্পাদনা করেছেন আসিফ আদনান।
বইয়ের ভেতর থেকে পাঠককে একটু ঘুরিয়ে আনা যাক। ৪৯ টি প্রবন্ধের সবগুলো নিয়ে তো আর কথা বলা সম্ভব না, চেষ্টা করবো সবচেয়ে হাইলাইটেড আর ডিপ কিছু টপিক নিয়ে কথা বলার। আশা করি, এতেই বই সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা হয়ে যাবে পাঠকদের ইনশাআল্লাহ।
যেমন প্রথম লেখাটা নিয়েই দু’চারটে কথা বলা যাক। নাম “জিপিএস”। জিপিএস তো আমরা সবাই চিনি, এর কাজ সম্পর্কেও আইডিয়া আছে কমবেশি। ডক্টর কুনাইবী এটা দিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছেন? পাঠক, অনুবাদের ভাষাশৈলী থেকে আপনার বোঝার উপায় থাকবে না ডক্টর এদেশি নাকি ভিনদেশী। যাই হোক, এটা আপনাদের অভিজ্ঞতার জন্য রেখে দিলাম। জিপিএস অধ্যায়ে শায়খ কুনাইবী জিপিএস হাতে কোন জায়গা খুঁজে বের করার একটা চিত্রকল্পের সাথে সূরা বাক্বারার ৪৬ নং আয়াতের এক অসাধারণ মিল দেখিয়েছেন। দেখিয়েছেন দ্বীন নিয়ে ইয়াক্বিন অর্থাৎ স্থির বিশ্বাস থাকার আর না থাকার পার্থক্য আর স্থির বিশ্বাসীদের কাছে প্রত্যাশিত কর্মপন্থা।
এরপরে আসে “কক্ষান্তরের প্রস্তুতি”। সত্য এক ঘটনার বরাত দিয়ে শায়খ আমাদের শিখিয়ে দিলেন মযলুম আর অসহায়দের উপর রহম করার, তাদের সাহায্য করার ফলাফল যে কত বড়!
এরপর অত্যন্ত মর্মস্পর্শী একটা লেখা – “বন্দীর হিসেবখাতা”। ছোট্ট, কিন্তু অন্তর ছুঁয়ে যায়। দুনিয়ার কারাগারে বন্দী এই আমাদের হিসেবখাতা নিয়ে এতো অন্তরছোঁয়া কথার জুড়ি মেলা ভার! বন্দী হিসেবে আমাদের চিন্তাভাবনা আর লক্ষ্য কি হওয়া উচিত, সেগুলোই অল্প শব্দে ব্যক্ত করেছেন শায়খ কুনাইবী।
গণতন্ত্রের খোলসটা এতো ছোট্ট পরিসরে বাস্তব উদাহরণ দিয়ে শায়খ কিভাবে যে খুলে দিয়েছেন, সেটা জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে “গাঁজা ও গণতন্ত্র” লেখাটি।
“শেকলে বাঁধা স্বাধীনতা” অধ্যায়টি আপনার ভাবনার জগতটাকে নাড়া দেবে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে আপনার আর আমার ভোগ করা “স্বাধীনতা”র আসল চিত্র। এই “স্বাধীনতা” তো পরাধীনতারই আরেক নাম, বরং এর চেয়েও যেন নিকৃষ্ট!
“বিশ্বকাপ তো শেষ হলো, তারপর?” – শিরোনামের লেখাটা পড়লে দ্বীনের প্রতি, উম্মাহর প্রতি আমরা যে কত বড় আর কত বেশি দায়িত্বহীনতা দেখাচ্ছি, কতটা বেশি যে আমাদের উদাসীনতার পরিমাণ সেটা সম্ভবত শায়খের দেওয়া কৌফম্যান ফাউন্ডেশনের উদাহরণ থেকেই বুঝে যাবেন আপনি।
“হ্যাঁ, ইসলাম বিজয়ী হবে, কিন্তু …” শিরোনামের লেখাটায় “আমরা কি শামিল থাকতে পারবো বিজয়ী এই অভিযাত্রায়” – এই প্রশ্ন আমাদেরকে করার মাধ্যমে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা আমাদের মাথায় গেঁথে দেবার প্রচেষ্টা করেছেন শায়খ কুনাইবী। তাঁর পুরো লেখার সারসংক্ষেপ যেন অসাধারণভাবে উঠে এসেছে লেখার শেষে উল্লেখ করা সাইয়্যেদ কুতুব রাহিমাহুল্লাহর কথাতে।
ইসলাম শান্তির ধর্ম – এই আপ্তবাক্য বলে বলে আজকাল শান্তির আড়ালে ইসলামকে বানিয়ে ফেলা হয়েছে এক গান্ধীবাদী ধর্ম। এমন এক ধর্ম, যে ধর্ম এক গালে চড় খেলে আরেক গাল পেতে দিতে বলে। যে ধর্ম সব জুলুম নির্যাতনকে মুখ বুজে সয়ে যেতে বলে। কোন রা নেই, কোন কথা নেই, অনলি পিস! এই শান্তি কবরস্থানের শান্তি। “ইসলাম কি শান্তির ধর্ম” – এই লেখাতে ইসলাম নিয়ে এসব মূর্খতাপূর্ণ কথা আর দাবির কাঁটাছেঁড়া করে শায়খ দেখিয়ে দিয়েছেন ইসলাম হচ্ছে ইনসাফের ধর্ম।
ভালোবাসা। এ এমন এক বৈশিষ্ট্য যা দ্বারা সত্যিকার অর্থে আপনি কোন পক্ষে আছেন সেটা নির্ধারিত হয়। আর ভালোবাসা কখনো গোপন করা যায় না। অথচ আজ আমরা যাকে ভালোবাসার দাবি করি, আমাদের কথা-কাজ-আচার আচরণে সেই দাবির সত্যায়ন করি না। বরং মুখের দাবির সাথে সেগুলো যেন সাংঘর্ষিকই হয়ে যায়। শায়খ আমাদের এই দ্বিচারিতাকে বড় সুন্দরভাবে এড্রেস করেছেন, নাসীহাহ দিয়েছেন “ভালোবাসা গোপন করা যায় না” অধ্যায়ে।
“পর্দা করার ‘স্বাধীনতা’?” অধ্যায়ে পর্দা বা হিজাবের পক্ষে বলতে গিয়ে আমরা যে প্রায়ই কিভাবে কৌশলগত ভুল করে বসি, কিভাবে ভুল যুক্তিতর্কে প্রতিপক্ষের উপর জেতার চেষ্টা করি, সেটা চিহ্নিত করে আমাদেরকে সঠিক ও বাস্তবসম্মত পন্থার শিক্ষা দিয়েছেন শায়খ। তিনি নিজে একজন দা’ঈ ইলাল্লাহ হওয়ার কারণে দা’ওয়াহর ময়দানের এই সমস্যাটা তাঁর নজর এড়ায় নি। দা’ওয়াহ দিতে যারা আগ্রহী, তারা চাইলে এই অধ্যায়ে শায়খ যে ভুলকে চিহ্নিত করেছেন ও ভুলের যেভাবে সমাধান দিয়েছেন, সেটাকে একই ধরণের অন্যান্য ভুল পদ্ধতির ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রয়োগ করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
অধঃপতনের এই যুগে মানুষকে আল্লাহর বিধানের কথা বললে বিনিময়ে শুনতে হয় অদ্ভুত অদ্ভুত সব যুক্তি। শুনতে হয় তথাকথিত “সহাবস্থান আর মানিয়ে নেয়া”র মত ফালতু নীতির কথা, যেখানে আল্লাহর আদেশের ব্যাপারে দ্বিমত করবার কোন সুযোগ নেই। “মূলনীতি” নামের এই অধ্যায়ে শায়খ তাই উল্লেখ করেছেন কুরআন আর সুন্নাহর ৫টি মূলনীতি, যেগুলোর অনুসরণ আমাদের উপর অত্যাবশ্যক।
পরিবার। সমাজ বিনির্মাণকারী এই এককটাও আজ ধ্বসে পড়ার সম্মুখীন। পরিবার সবসময়েই এই উম্মাহর জন্য কাজ করেছে দুর্গের মত। উম্মাহর সব দুর্গ ধ্বসে পড়তে পড়তে আজ এসে ঠেকেছে এই পরিবারে। পরিবার তাই উম্মাহর শেষ দুর্গ। “উম্মাহর শেষ দুর্গ” শিরোনামে শায়খ কুনাইবী দ্বীনের সংরক্ষণে পরিবারের ভূমিকা আর বাবা মায়ের করণীয় নিয়ে খুব উপকারি একটা আলোচনা করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যারা বিয়ে করছেন বা বাবা-মা হতে চলেছেন তাদের সবার জন্য এই পাঠটা অসম্ভব জরুরি।
শায়খের মেয়ের নাম সারা। নাবালিগা এই ছোট্ট মেয়েটা দু’বছর ক্যান্সারে ভুগে ভুগে আল্লাহর কাছে চলে যায় ২০১৯ সালে। মেয়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে শায়খ কুনাইবী অনন্য এক দা’ওয়াতি বক্তব্য দিয়েছিলেন, যার অনুবাদ উঠে এসেছে বইয়ের “প্রিয় সারার জন্যে…” প্রবন্ধটিতে। একজন জাত দা’ঈ ইলাল্লাহর মতই দা’ওয়াহর কোন উপলক্ষকেই হাতছাড়া করেন নি শায়খ কুনাইবী, এমনকি নিজের কলিজার টুকরার কবরের পাশে দাঁড়িয়েও মানুষকে ডেকেছেন আল্লাহর পথে। এই একটি লেখাতেই শায়খের জীবনের অনেক দিক একসাথে ফুটে ওঠে। দা’ঈ হিসেবে, পিতা হিসেবে তাঁর যে ভূমিকা, সেখানে থেকে আমাদের সবার জন্যই শিক্ষণীয় উপাদানের পরিমাণ প্রচুর।
একেবারেই ছোট্ট একটা লেখা “অভ্যন্তরীণ বিষয়”। একেবারে ছোট্ট। কিন্তু চরম বিপদে নিমজ্জিত এই উম্মাহর আলোচনাকে যখন আমরা অমুক দেশের, তমুক জাতির “অভ্যন্তরীণ বিষয়” বলে চালিয়ে দেই, তখন আমরা যে কি অসম্ভব বড় মাত্রার একটা অপরাধ করি – আমি জানি না, এই লেখাটা সেই অনুভূতি আপনার মনে জাগাবে কিনা। কিন্তু না, আমি নির্বিকার থাকতে পারি নি। কোন মানবীয় চেতনা সম্পন্ন এবং অবশ্যই কোন ঈমানদারের এখানে নির্বিকার থাকবার কোন সুযোগ নেই। কোন সুযোগ নেই!
নেট ঘাঁটলেই একটা ছবি পাবেন। সিরিয়ার কোন এক শহরের রাস্তার ছবি। দেখলে মনে হবে যেন রক্ত দিয়ে রাস্তাটাকে গোসল দেওয়া হয়েছে। না, এগুলো কোন এডিটিং নয়। কোন এডিটিং এর প্রয়োজন অন্তত সেখানে নেই। আমাদের – মুসলিমদের রক্ত আজ এতোই সস্তা যে সহজেই একটা রাস্তাকে ড্রাম ড্রাম রক্ত দিয়ে লাল করে দেওয়া যায়। এতোটাই সস্তা আর মূল্যহীন হয়ে পড়েছে আজ মুসলিমদের রক্ত। কিন্তু কেন? “মুসলিমদের রক্ত আজ সস্তা কেন?” – শিরোনামে তথ্য-উপাত্ত, উদাহরণ, সুস্থ বিবেকের যুক্তি আর নুসুসের উক্তি দিয়ে দিয়ে শায়খ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন এই প্রশ্নের জবাব, যে জবাব শুনতে রাজি নই আমরা অনেকেই।
“ইসলামের শান্তি বনাম গান্ধীর শান্তি” – অধ্যায়ে ইসলামের শান্তির স্বরূপ কি, সেটা শায়খ স্পষ্টভাবে আলোচনা করে দিয়েছেন। ইসলাম যে “ওম নমঃ নমঃ” টাইপের কোন শান্তির কথা বলে না, ইসলাম যে ”এক গালে চড় খেয়ে আরেক গালে পেতে দেওয়া”র শান্তির কথা বলে না – সেটা এই লেখাতে পরিষ্কার।
“চরমপন্থা এবং জঙ্গীবাদ” শিরোনামে কাফির মিডিয়া যে আমাদেরকে নিয়ে, ইসলামকে নিয়ে যে শব্দসন্ত্রাস করে বেড়ায়, শব্দের যে ধুম্রজাল বানিয়ে আমাদের নিয়ে খেলাধুলা করে – সেই বিষয়ে মুসলিমদেরকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন শায়খ। শিরোনামের দুটো শব্দের প্রকৃত অর্থ ও কাফিররা এগুলোকে কোন অর্থে ব্যবহার করে, সেটা নিয়েও আলোচনা করতে ভুল করেন নি শায়খ।
এই বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আর বাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠা লেখার যদি একটা সিরিয়াল করা হয়, তবে টপ থ্রিতে যে লেখাটা অবশ্যই রাখতে হবে, সেটা হল “বিজয়, আত্মত্যাগ আর সুবিধাবাদের গল্প”। অসাধারণ উপমা দিয়ে আমাদের আজকের দুনিয়ার বাস্তবতার এক নিখুঁত বিবরণ পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন শায়খ। কিভাবে একের পর এক আত্মত্যাগের নজরানার পর আসে বিজয় আর কিভাবে এই আত্মত্যাগের পুরোটা কাল যাবত আত্মত্যাগকারী মানুষগুলোকে নিয়ে হাসি-তামাশায় মত্ত থাকা সুবিধাবাদী আমরা বিজয়ের কালে মেতে উঠি আনন্দে, তীব্র উল্লাসে – যুগে যুগে এবং বিশেষ করে এই কালে দুনিয়ার প্রাঙ্গনে চিত্রিত হয়ে চলা এই চিত্র আমাদের চোখের সামনে স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছেন শায়খ কুনাইবী। সেই সাথে প্রত্যাশিত বিজয়ের আর উম্মাহ অগ্রসেনাদের একজন হবার জন্য দুটো শর্তের সবকও আমাদেরকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
“ইস্তিকামাত সবচেয়ে বড় কারামত” – অধ্যায়টিতে দ্বীনের উপর অটলতাই যে এই যুগের সবচেয়ে অলৌকিক বিষয়, এটার উপর আলোকপাত করা হয়েছে অত্যন্ত গোছানো ভঙ্গীতে। নিঃসন্দেহে সত্য পথের পথিকদের সাহস যোগাবে এই লেখাটি, ইনশাআল্লাহ।
শেষমেশ যে লেখাটির কথা বিশেষভাবে বলবো সেটার নাম হল “জরুরি অবস্থা”। উম্মাহর ব্যথায় ব্যথিত অসংখ্য প্রাণ আজ যে শুধু এই ব্যথা পাওয়ার চক্রেই আটকে পড়ে কাজের কাজ আর কিছুই করতে পারছেন না, এটাকেই শায়খ অভিহিত করেছেন জরুরি অবস্থা বলে। আমি এই অধ্যায়কে ব্যক্তিগতভাবে নিজের জন্য উপদেশ হিসেবে নিয়েছি এবং আমি মনে করি, আমাদের অধিকাংশেরই এটাই করা উচিত। কারণ এই অধ্যায়ে আমাদের যে অবস্থার কথা শায়খ বলেছেন আসলেই আমাদের অবস্থা হুবহু এরকমই। সমস্যা চিহ্নিত করার সাথে সাথে সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য যে সাজেশন এখানে দেওয়া হয়েছে, সেটা যথাযথভাবে ফলো করতে পারলেই এই লেখাটা পড়ার প্রকৃত সার্থকতা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
ভালোলাগার আয়না :
আয়নাঘরের কি কি ভালো লেগেছে আমার? এককথায়, সব। যেকোন বইয়ের ভালোমন্দ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আমার নীতি হল প্রথমে বইয়ের কন্টেন্টের ওজন দেখা আর সেই ওজন সাপেক্ষে বইয়ের বাদবাকি কমতি খামতির জাজমেন্ট করা। কন্টেন্টের ওজন বিচারে এই বইটি যেহেতু অনেক ওজনদার হিসেবেই আমার কাছে বিবেচ্য, তাই এর বাদবাকি ত্রুটি বিচ্যুতিও আমার কাছে কম গুরুত্ব পাবে। আসলে, খুব যে সমস্যা আছে বইটিতে তা না। পেপারব্যাক হলেও বইয়ের কাভার ভালো। প্রচ্ছদটা অসাধারণ, পারফেক্টলি রিপ্রেজেন্টেটিভ। ব্যাক কাভারের লেখাটা এতোটা মনকাড়া, বারবার পড়তে মন চায়! তাছাড়া বইয়ের বাইন্ডিং, ফন্ট সাইজ, শিরোনাম, পেইজ কোয়ালিটি – নাহ, অভিযোগের কিছু পাই নি আমি। বিশেষ করে বইয়ের অনুবাদের মান অসাধারণ আর আসিফ আদনান ভাইয়ের সুনিপুণ সম্পাদনার ছোঁয়ায় অনুবাদের মান এতোটাই উন্নত হয়েছে যে, ডক্টর কুনাইবীর ভাষা বাংলা নাকি বইটার লেখক আসিফ আদনান ভাই – এই নিয়ে একটা বিভ্রমে পড়ে যেতে হয়।
তবে অনেকেই বানান ভুল নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জানিয়েছেন বলে বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি, আমার কাছে এটাকে অতো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় নি। কেন? এমনিতে আমি বানানের বিষয়ে খুব খুঁতখুঁতে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে এই বইটির প্রকাশকাল ছিল একটা সমস্যাসংকুল সময় আর বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্টরাও সবাই মানুষ। এমনিতে ইলমহাউসের অন্যান্য বইগুলোতে বানান ভুল তেমন একটা নেই। সেখানে যদি এই বইয়ে এরকম কিছু ঘটেই থাকে, তবে সেটা নিঃসন্দেহে কন্সিডারেবল।
ইলমহাউস, তাদের অনুবাদক টিম আর সম্পাদক আসিফ আদনান ভাই, প্রত্যেককে অন্তরের গভীর থেকে ভালোবাসা জানাই এতো চমৎকার আর উপকারি একটা কাজ আমাদের পাঠকদের উপহার দেবার জন্য। পাঠক হিসেবে আমি টোটাল রেটিং-ই দিব এই বইকে। শেষ করছি বইয়ের ব্যাক কাভারে লেখা অসম্ভব প্রিয় কিছু কথার শেষাংশ দিয়ে –
“জান্নাত বা জাহান্নাম পর্যন্ত বিস্তৃত এই পথে চলতে গিয়ে ধুলো জমে আমাদের হৃদয়েও। চিরচেনা আয়নায় বিকৃত হতে থাকে প্রতিবিম্ব। পরতের পর পরত জমে ময়লা। একের পর এক হাতে তুলে নিই নানা মতবাদ, নানা ‘তন্ত্রমন্ত্রের’ আয়না। ধরা পড়ে না অসুখ। ক্রমাগত আয়না বদলাই। ভুল প্রতিবিম্ব আর ভুল চিকিৎসায় আরও বাড়ে যন্ত্রণা। পুরু হতে থাকে ময়লার পরত…
.
কিন্তু জানেন, রূপকথার স্নো-হোয়াইটের সেই জাদুর আয়নার চাইতেও শতগুণ বেশি নির্ভুল আয়না ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে? সেই আয়না দেখে পরিপাটি করে তাঁরা সাজিয়েছিলেন নিজেদের। সাজিয়েছিলেন এই পৃথিবীকে। সেজেছিল মেঘ, রোদ, জোছনা; সেজেছিল মরু, নদী, সাগর। তাঁরা মানুষকে ডেকেছিলেন সৃষ্টির দাসত্ব থেকে স্রষ্টার দাসত্বের দিকে; এ দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রশস্ততার দিকে। লিখেছিলেন মাটির পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে মহাকাব্যিক অধ্যায়টি…
.
ধুলো পড়া সময়ে হারিয়ে যাওয়া সেই আয়নার কথা মনে করিয়ে দিতেই আমাদের এই আয়োজন…
আয়নাঘর।”
ibnsia1 – :
সাকিবুল হাসান – :
মুহাম্মদ জমির উদ্দিন – :
ইকবাল আহমেদ – :