আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার
মূল প্রতিপাদ্য :
ক. আমেরিকা আবিষ্কারক বলে পরিচিত কলম্বাসের পর্যালোচনা।
খ. ইউরোপের নৌ-ক্রুসেড ও মুসলিম বিশ্বে তার ভয়াবহ প্রভাব।
গ. নৌ-ক্রুসেডার কলম্বাস, ভাস্কো ডা গামা, আল বুকার্কসহ ইতিহাসের বিখ্যাত নৌ-অভিযাত্রীদের দস্যুতা, গণহত্যা ও মুসলিম নিধনের ইতিবৃত্ত। পশ্চিমা ইতিহাসের অসারতা স্পষ্টকরণ।
ঘ. কলম্বাসের আগে মুসলিমদের আমেরিকা আবিষ্কারের অভিযানসমূহের অজানা ইতিহাস।
ঙ. স্পেন থেকে মুসলিম অভিযাত্রীদের আমেরিকা আবিষ্কারের ঐতিহাসিক প্রমাণ।
চ. আফ্রিকা থেকে মুসলিম অভিযাত্রীদের আমেরিকা আবিষ্কারের ঐতিহাসিক প্রমাণ।
ছ. চীন থেকে মুসলিম অভিযাত্রীদের আমেরিকা আবিষ্কারের ঐতিহাসিক প্রমাণ।
জ. জাভা থেকে মুসলিম অভিযাত্রীদের আমেরিকা আবিষ্কারের ঐতিহাসিক প্রমাণ।
ঝ. মুসলিম ভূগোলবিদদের আমেরিকা বিষয়ক তথ্যের পর্যালোচনা।
ঞ. কলম্বাস কীভাবে মুসলিমদের কাছে ঋণী, এর ইউরোপীয় স্বীকারোক্তিসমূহ।
ট. কলম্বাসের আগে আমেরিকায় মুসলিম সভ্যতার প্রামাণ্যতা।
ঠ. আমেরিকায় মুসলিম সভ্যতা ধ্বংসে কলম্বাসের বর্বরতা।
ড. আমেরিকার ভাষা, ভূগোল, সংস্কৃতি ও আদিবাসীদের নৃতাত্বিক বৈশিষ্ট্যে মুসলিম প্রভাব।
ঢ. প্রমাণ করা হয়েছে, হাজার বছর আগে আমেরিকায় ছিল মাদরাসা, মসজিদ, মক্কা-মদিনা নামীয় শহর। যা এখনও বিদ্যমান আছে আমেরিকায়। বিল গেটসসহ বহু বিখ্যাত আমেরিকানের জন্ম মদিনায়।
ণ. আমেরিকায় পাওয়া গেছে আটশ বছর আগের ক্যালিগ্রাফিতে রচিত কুরআনের আয়াত, রাসুল সা.’র নাম।
ত. বইটিতে আছে হাজার বছরের আমেরিকান মুসলমানদের সংক্ষিপ্ত কালপঞ্জী।
বিশ্বজুড়ে প্রচলিত ইতিহাসকে চ্যালেঞ্জকারী এ বই মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসের অলিখিত এক রাজ্য আবিষ্কার করেছে। বাংলা ভাষায় এমন এক বই প্রকাশ বাঙালি মুসলমানদের জন্য অনেক বড় সু-সংবাদ। মৌলিক গবেষণার এমন এক বই সংগ্রহ করে আবিষ্কার করুন মুসলিমদের আমেরিকা, মুসলিমদের গৌরবদীপ্ত অতীত।
-
-
hotশিকড়ের সন্ধানে
লেখক : হামিদা মুবাশ্বেরাপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন430 ৳314 ৳পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৯৬ টি কভার: পেপার ব্যাক ‘Know ...
-
hotঅবাধ্যতার ইতিহাস
লেখক : ডা. শামসুল আরেফীনপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন400 ৳292 ৳যেভাবে আর যে কারণে ধ্বংস হয়েছে ...
-
save offইতিহাসের আয়নায় বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা
লেখক : হেদায়াতুল্লাহ মেহমান্দপ্রকাশনী : রুহামা পাবলিকেশন414 ৳302 ৳'ইতিহাসের আয়নায় বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা' বইটি মূলত ...
-
hotভারতবর্ষে মুসলিম শাসন : হাজার বছরের ইতিহাস
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল ইসলাম770 ৳385 ৳ভাষান্তর : মুহাম্মাদুল্লাহ ইয়াহইয়া অতিরিক্ত টীকা সংযোজন ...
-
save offলস্ট ইসলামিক হিস্ট্রি (ইসলামের হারানো ইতিহাস) (পেপার ব্যাক)
লেখক : ফিরাস আল খতিবপ্রকাশনী : প্রচ্ছদ প্রকাশন260 ৳190 ৳লস্ট ইসলামিক হিস্ট্রি’র ভাষা প্রাঞ্জল ও ...
-
hotসীরাত বিশ্বকোষ (১১ খণ্ড)
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল আযহার11,000 ৳5,500 ৳মোট খণ্ড ১১ এবং পৃষ্ঠাসংখ্যা : ...
-
hotনবীজির পাঠশালা ﷺ
লেখক : ড. আদহাম আশ শারকাবিপ্রকাশনী : মাকতাবাতুল আসলাফ415 ৳290 ৳অনুবাদক – মুজাহিদুল ইসলাম মাইমুন সম্পাদনা – ...
-
featureমুসলিমজাতি বিশ্বকে কী দিয়েছে (চার খণ্ড)
লেখক : ড. রাগিব সারজানীপ্রকাশনী : মাকতাবাতুল হাসান1,450 ৳অনুবাদক : আবদুস সাত্তার আইনী (১ম, ...
-
hotআন্দালুসের ইতিহাস (দুই খণ্ড)
লেখক : ড. রাগিব সারজানীপ্রকাশনী : মাকতাবাতুল হাসান1,300 ৳650 ৳আন্দালুস। অতীত-পৃথিবীতে একটি সুদীর্ঘ সময় অতিবাহিত ...
-
hotবুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের ইতিবৃত্ত
লেখক : মাওলানা ইসমাইল রেহানপ্রকাশনী : নাশাত475 ৳347 ৳কাগজ : ৭০ গ্রাম অফহোয়াইট বর্তমান মুসলিম ...
-
ihsanmdtamimul07 – :
বইয়ের নাম: “আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার”
লেখক: মুসা আল হাফিজ
বিষয়: গবেষনাধর্মী ইতিহাস
প্রকাশক: কালান্তর প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্য: ২০০/-
প্রকাশকাল: এপ্রিল ২০১৭
> ১৪৯২ সাল, অক্টোবরের ১২ তারিখ,শুক্রবার সকাল।কলম্বাস এসে নামলেন বাহামা দ্বীপপুঞ্জের শান্ত রৌদ্রময় বালুময় উপকূলীয় এক দ্বীপে।একই বছরের ২রা জানুয়ারি যিনি ছিলেন ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার ক্রুসেডার বাহিনীর একজন অনুগত সৈনিক। ২রা জানুয়ারি মুসলিম শাসিত স্পেনের পতনের পর কলম্বাসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের পালা। অনেক কষ্টে রাজা ও রাণীকে বুঝাতে সক্ষম হন তিনি। এর আগে হাজারবার তাদের কাছে ধরণা দিলেও পাননি কোনো পাত্তা। কিন্তু সময় বদলেছে। ক্রুসেডার পাদ্রীরাও চাচ্ছিলেন নতুন ভূমিতে অভিযান করার কথা।যাতে তাদের ঈশ্বরের পবিত্র নাম ছড়িয়ে দেওয়া যায়। তাই অভিযানের অভিপ্রায়েই নতুন ভূমি জয় করতে কলম্বাস রওয়ানা হয়েছিলেন আটলান্টিকের পশ্চিম দিক ধরে। কারণ পূর্ব দিকের পথ ততদিনে আবিষ্কৃত হয়ে গিয়েছিল। আর তাই আটলান্টিকের পশ্চিম তীর ধরে ছুটছিলেন নতুন ভূমি জয়ের নেশায়। বহু বিপদসংকুল পথ অতিক্রম করে পশ্চিম তীর ধরে ছুটতে ছুটতে দেখা পান এক বালুময় ভূমির।
পাশ্চাত্যের ইতিহাস তাকে এই ভূমির আবিস্কারক বললেও এর পিছনে রয়ে যায় এক সূক্ষ্ম কুটচাল। কারণ বালুময় এই প্রান্তে আগেই এসে বসবাস করছিলো মানুষরা। কলম্বাসের ভাষায় “রেড ইন্ডিয়ান”। কিন্তু তারা তো আর আকাশ থেকে আসেনি। কারা ছিলো এরা,কী এদের পরিচয়? এরকম রোমাঞ্চকর গবেষণাধর্মী এক ইতিহাস নিয়েই লেখা ” আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার” বইটি। পাশ্চাত্যের ইতিহাস যখন কলম্বাসের যাত্রাকে গ্রাহ্য করে মুসলিমদের আবিষ্কারকে চেপে যায় তখন পাশ্চাত্যের চাকে ঢিল ছোড়া কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।আর তাই উস্তায “মূসা আল হাফিজ” রচনা করেছেন ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য গবেষণাধর্মী এই বই। যা ইতিহাসের আঁধারে থাকা প্রত্যেকটা পাঠককে আলোর পথ দেখতে বাধ্য করবে। ঘুরে আসা যাক ইতিহাসের এই তরীতে-
> বইটির লেখক উস্তায ” মূসা আল হাফিজ “। জন্ম সিলেটের বিশ্বনাথে। যার চেতনালোক সম্পর্কে বলতে গেলে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের এক লেখায়ই যথেষ্ট। যা বইটির ফ্লাপে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। নিরন্তর গবেষণা আর পরিশ্রমের ফল বক্ষমান এই গ্রন্থটি। এছাড়াও “শতাব্দীর চিঠি”, “সহস্রাব্দের ঋণ” সহ আরোও অসংখ্য জনপ্রিয় গবেষণাধর্মী বইয়ের গ্রন্থপ্রণেতা তিনি। বাস্তবেই তার বই থেকে পাঠক কিছু নিতে পারে। নিজের বিবেক,নিজের সুপ্ত বোধকে জাগানোর জন্য তাঁর বই এক কথায় অসাধারণ।
> একশ বারো পৃষ্ঠার এই বইটিকে ভাগ করা হয়েছে মোট সাতটি অধ্যায়ে। যার প্রতিটি অধ্যায়ে পাঠক দেখতে পাবেন নিরন্তর এক গবেষণার ছাপ। এত তথ্য আর এত রেফারেন্সে ভরপুর বইটিকে রিভার্স করা দুঃসাধ্য এক ব্যাপার।
• বইটির প্রথম অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে,কলম্বাসের আমেরিকা অভিযান সম্পর্কে। যেখানে মূলত উঠে এসেছে কীভাবে কলম্বাস আটলান্টিকের পশ্চিম তীর ধরে ভারত যাওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে যাত্রা শুরু করে আমেরিকা গিয়ে পৌঁছালেন, কলম্বাস কীভাবে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও রানী ইসাবেলাকে এই অভিযানের ব্যাপারে রাজি করালেন,কী উদ্দেশ্য নিয়ে আটলান্টিকের পশ্চিম তীর ধরে এত বিপদ সংকুল পথ ধরে তিনি গিয়েছিলেন সেই ভূমিতে? এছাড়াও এর পূর্বে কলম্বাস কোথায় ছিলেন,কার অধীনে কাজ করতেন এবং রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও রাণী ইসাবেলার স্পেনের ধ্বংস চিত্রের একটুকরো চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে অধ্যায়টিতে।
• দ্বিতীয় অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে অভিযানের প্রেরণা নিয়ে। যেখানে শুধু কলম্বাসের আলোচনায়ই করা হয়নি, পুরো চৌদ্দ থেকে আঠারো শতকের পর্তুগিজ ও ইউরোপীয় নৌ-ক্রুসেডারদের ইতিহাসও মোটামুটি চলে এসেছে। মূলত এই অভিযানগুলো ছিলো ক্রুসেড যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত অনুপ্রেরণার ফল। কারণ আরব এবং তুর্কীদের চাপে যখন স্থলপথে ক্রুসেডাররা কিছুই করতে পারছিলো না তখন হানা দেয় নৌ পথে। আমাদের এই ভারতবর্ষেও পর্তুগিজ নৌ-ক্রুসেডারদের যে দৌরাত্ম্য ছিলো তা ইতিহাস খুব ভালো করেই বলে দেয়। মূলত বিভিন্ন দেশে নৌ-ক্রুসেডারদের এইসব অভিযানের পিছনে কোন প্রেরণা কাজ করছিলো তাই উঠে এসেছে এই অধ্যায়টিতে। যেখানে স্বয়ং কলম্বাস কোন প্রেরণা নিয়ে অভিযানে বেরিয়েছিলেন তাও উল্লেখ করা হয়েছে অধ্যায়টিতে।
• তৃতীয় অধ্যায়, যেখানে আলোচনা করা হয়েছে ভৌগলিক জ্ঞান বা মতবাদ নিয়ে অর্থাৎ মুসলিমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে যেসব অবদান রেখেছে যা এই নৌ-ক্রুসেডারদের চলার সঙ্গী হয়েছে এবং এর প্রভাব কীভাবে তাদের উপর পড়েছে এই নিয়েই রচিত এই অধ্যায়টি। মূসা আল খাওয়ারিজমী ভৌগোলিক সূত্র, ইদ্রিসির মানচিত্র,ভূমধ্যসাগরের সামুদ্রিক চার্ট,আরবদের কম্পাস যা ছিলো নাবিকদের নিত্য সঙ্গী। মুসলিমদের আবিস্কার ব্যবহার করে কীভাবে তারা অগ্রসর হচ্ছিলো,কলম্বাস কীভাবে মুসলিম চিন্তাধারায় তাড়িত হয়ে এই অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এ নিয়ে এক বিস্তর আলোচনা অধ্যায়টিতে।
• চতুর্থ অধ্যায়টিতে আলোচনা করা হয়েছে কলম্বাসের আগে আমেরিকায় মুসলিম আগমন নিয়ে। কলম্বাসের আগমনের ৩০০ বছর পূর্বে আরবরা এই অঞ্চলে উপনীত হন। এছাড়াও কলম্বাসের এই সাফল্যের পিছনে যে মরিস্কু মুসলিমরা সহায়তা করেছিলেন। কারণ এই মরিস্কু নাবিকরা আটলান্টিক পারি দেয়ায় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার লালন করছিলেন। এছাড়াও লেখক অধ্যায়টিতে বহু তথ্য,ঐতিহাসিক সূত্র তুলে ধরেছেন যা দ্বারা পরিপূর্ণ স্পষ্ট হওয়া যায় যে, কলম্বাসের আগে মুসলিমরাই সর্বপ্রথম আমেরিকার মাটিতে পা ফেলেছিলো।
• পঞ্চম অধ্যায়টিতে আলোচনা করা হয়েছে আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার সম্পর্কিত আলোচনা নিয়ে। যেখানে মূলত আমেরিকা যে মুসলিমদের আবিষ্কার এটাই তথ্য, উপাত্ত ও রেফারেন্সের মাধ্যমে ভালো করে সাজানো হয়েছে।এ অধ্যায়টির তথ্য,উপাত্ত,রেফারেন্স সাধারণ পাঠকের মাথা ঘুরিয়ে দিতে বাধ্য।
• “আমেরিকা মুসলিমদের শিকড়” এভাবেই চমকপ্রদ নাম দিয়ে শুরু করা হয়েছে ষষ্ঠ অধ্যায়। যেখানে আলোচনায় এসেছে আমেরিকায় মুসলিমদের বিভিন্ন নিদর্শন সম্পর্কে। ড.বেরি ফিলের গবেষণায় উঠে আসা আমেরিকায় মুসলিমদের অবস্থান সম্পর্কে এক বিস্তর আলোচনা উঠে এসেছে অধ্যায়টিতে।
• সপ্তম অধ্যায় মূলত আমেরিকায় ইসলামের সংক্ষিপ্ত কালপঞ্জি নিয়ে। যেখানে ৯৪০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় ইসলাম ও মুসলিমদের ইতিহাস নিয়েই এই সংক্ষিপ্ত দিনপঞ্জি।
> কারা পড়বেন এবং কেন পড়বেন…??বইটি তারাই পরবেন যারা ইতিহাসের অন্ধকার দরজায় কুঠার আঘাত হেনে আলোর পথে ফিরে আসতে চান। পাশ্চাত্যের পক্ষপাতিত্বমূলক ইতিহাসকে ছুঁড়ে ফেলে সত্য জানতে চান তাদের জন্যই এই বইটি। ব্যক্তিগতভাবে ইতিহাসের উপর এত গবেষণাধর্মী বই খুবই কম পড়া হয়েছে। এত তথ্য, রেফারেন্স সাধারণত সাইন্স বা ধর্মতত্ত্ব সংশ্লিষ্ট বইগুলোর মধ্যে পাওয়া যায়। ইতিহাসের মধ্যে কালে ভদ্রে এরকম বই পাওয়া যায়। এককথায় মাস্টারপিস একটা বই।
মাআসসালাম……..
★ ব্যক্তিগত রেটিং: ৫/৫
-মুহাম্মাদ তামিমুল ইহসান
#কালান্তর_ওয়াফিলাইফ_রিভিউ_প্রতিযোগিতা
naimurnahid10 – :
∆
১৪৯২ সাল।
পুরো স্পেন তথা মুসলিম আন্দালুসিয়া তখন ফার্ডিনান্ড এবং ইসাবেলার দখলে। ইতালির জেনোভা শহরের তাঁতী পরিবারে জন্ম নেওয়া দুঃসাহসী কলম্বাস এবার পেয়ে গেল একটি সুযোগ। হাজির হলেন রানী ইসাবেলার দরবারে। রানী আর কীভাবে তাকে না করেন! সে যে মহান প্রভু যীশুর বাণী নিয়ে ভারত যেতে চাচ্ছে। ভারতের মানুষদের একটু সভ্য বানাতে চায়।
অবশেষে ৯০ জন সঙ্গী এবং তিনটি জাহাজ নিয়ে কলম্বাসকে বলে দিলেন, যাও বাছা যাও! অবশেষে দুই মাস পর কলম্বাস ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা গিয়ে পৌঁছালেন বাহামা দ্বীপপুঞ্জের সান সালভাদর দ্বীপে। তারপর পুরো আমেরিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ চষে বেড়িয়ে কলম্বাস ফিরে এলেন স্পেনে। এভাবেই আবিষ্কার হলো আমেরিকা।
এই হলো আমাদের আমেরিকা আবিষ্কার সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণা। কিন্তু এটা কি সত্য? না, মোটেই না। ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায় সর্বপ্রথম হাজার হাজার বছর আগে বরফ যুগে মঙ্গোলিয়া থেকে কয়েকটি নরগোষ্ঠী রাশিয়ার সাইবেরিয়া হয়ে তৎকালে বিদ্যমান বরফের সংযোগ রাস্তা হয়ে হেঁটে আলাস্কায় পৌঁছে গিয়েছিল। চীনারা গিয়েছিল ৫ হাজার বছর আগে। এগুলো তো সেই আদিম কালের কথা! আমরা সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে ফিরে আসি।
ইউরোপ তখন নানান কুসংস্কার এবং স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে ভরপুর। মানবতার মুক্তির দিশারী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের ১০০ বছরও পার হয়নি। সাহাবি উকবাহ নাফে’ রাদিয়াল্লাহু আনহু আটলান্টিক পর্যন্ত তাওহীদের বাণী প্রচার করে ফিরে আসলেন। তার ঠিক বছরখানেক পর আব্দুল্লাহ এবং মোবারক নামের দুইজন আরবীয় যুবক আটলান্টিকের পশ্চিমে ভ্রমণ করতে গিয়ে উলঙ্গ মানুষের এক দ্বীপে আশ্রয় পায়। সেই তো শুরু। তার পর আমরা একে একে কাজী আবু আমির হামদানি, আলখাল্লাল, আল-বিরুনী দের কিতাবে আমেরিকার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ পাই। এছাড়াও কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের ৫০০ বছর আগেই ইদ্রিসির মানচিত্রে আমরা দেখতে পাই আমেরিকার স্পষ্ট অবস্থান।
এছাড়াও আফ্রিকান মুসলিম রাজা বিখ্যাত মানসা মুসার বড় ভাই মানসা আবু বাকরী ২০০ জাহাজ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন আমেরিকায়। এরকম হাজারটা উদাহরণ রয়েছে কলম্বাসের আগে মুসলিমদের আমেরিকা আবিষ্কারের কথা।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের (খ্রিস্টান) অধ্যাপক ডক্টর বেরিফিল একটি প্রতিবেদনে লিখেন, “হিজরী প্রথম শতকে অর্থাৎ খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে আরবীয়রা আমেরিকার মাটিতে কেবল পা রাখেননি; দীর্ঘকাল আধিপত্যও বিস্তার করেছিল।”
এছাড়াও আমেরিকায় অনেক প্রাচীন পাথর আবিষ্কৃত হয়েছে যেখানে আরবিতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে আল্লাহ, মুহাম্মদ ইত্যাদি শব্দাবলী। তাছাড়াও পাওয়া গিয়েছে পুরাতন আফ্রিকার মুসলিম মানুষের কঙ্কাল। এমনকি কমপক্ষে দশটি স্থানে মাদ্রাসার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যেগুলো নির্মিত হয়েছিল ৭০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে।
এছাড়াও কলম্বাস খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের বিপরীতে গিয়ে মুসলিম মনীষীদের কিতাবে বলা পৃথিবীকে গোল ধরে নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন আটলান্টিকের পশ্চিমে। সাহায্য নিয়েছিলেন মুসলিমদের তৈরি কম্পাসের।
এতকিছুর পরেও মুসলিমরা ইতিহাসের অন্তরালে কেন? কারণ আমরা ইতিহাস কে আঁকড়ে ধরতে পারি না, ইতিহাসের দেখানো পথে কাজ করতে পারি না, সত্য ইতিহাস ছড়িয়ে দিতেই আমাদের যত অনীহা!
আমেরিকায় মুসলিমদের প্রথম প্রবেশ, আমেরিকা গঠনে মুসলিমদের অবদান, কলম্বাসের ভুলে আমেরিকায় পৌঁছে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে ‘আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার’ বইয়ে অত্যন্ত যৌক্তিক, তথ্যমূলক, তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন শাইখ মুসা আল হাফিজ। ইতিহাস থেকে বের করে এনেছেন সত্য নির্যাস। তার লেখার সৌন্দর্য, চমৎকার ভাষাশৈলী যেমন আমাকে আনন্দিত করেছে, রোমান্স দিয়েছে ঠিক তেমনি মুসলিমদের ইতিহাসের পিছনে পড়ে থাকা আমাকে মর্মাহত করেছে।
বইটি মূলত সাতটি পাঠে বিভক্ত। প্রত্যেকটি পাঠ শেষ করে পাঠক যেন ব্যাকুল ভাবে আরো জানার জন্য মুখিয়ে থাকবে! পাঠগুলো হলোঃ
১! অভিযান
২! অভিযানের প্রেরণা
৩! ভৌগলিক জ্ঞান
৪! কলম্বাসের আগে আমেরিকায় মুসলমান
৫! আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার
৬! আমেরিকায় মুসলিমদের শিকড়
৭! আমেরিকায় ইসলাম: সংক্ষিপ্ত কালপঞ্জি
••••••••••••••••••••••••••••••••••
বইঃ আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার
লেখকঃ শাইখ মুসা আল হাফিজ
পৃষ্ঠাঃ ১১২
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৪০ টাকা।
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৪.৬/৫
(বিঃদ্রঃ বইটি পড়ার সময় যদি সাথে বিশ্ব মানচিত্র নিয়ে বসেন তাহলে ভৌগোলিক বিবরণ গুলো বুঝতে সুবিধা হবে।)
Muhammad Tamimul Ihsan – :
Redwan ahmad – :
#বই_রিভিউ
নাম= আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার
লেখক= শায়েখ মূসা আল হাফিজ হাফিজাহুল্লাহ
পৃষ্ঠা= ১১০
মূল্য= BD ৳ 200.00, US $10.99, UK £ 6.99.
প্রকাশক= কালান্তর প্রকাশনী
একটা সময় ছিলো, যখন পৃথিবীর মানুষ জানতো না আমেরিকা নামে কোন ভূখণ্ড পৃথিবীতে আছে। তখন এ-তো বড় একটা ভূখণ্ড পৃথিবীতে থেকেও, ছিলো অদৃশ্য। পৃথিবীর অন্যসব ভূখণ্ড থেকে আমেরিকা আলাদা। আটলান্টিক মহাসাগরের ওপারে। কেউ তখন কল্পনাও করেনি, ওপারে-ও থাকবে কোন ভূমি। থাকবে গাছ-গাছালি। তারপর একটা সময় আসে, আমরা জানতে পারি এই নতুন বিশ্ব বা আমেরিকা সম্পর্কে। আমরা যেমন জানতাম না,ঠিক পৃথিবীর অন্য ভূখণ্ডের মানুষও জানত না। তাহলে এই আমেরিকা আবিষ্কার হলো কিভাবে? কে করলো এই আবিষ্কার? কে-ই বা জানলো মহাসাগরের ওপারে রয়েছে এক সবুজ খণ্ডভূমি?
অজানা ওপারে কি আছে, জানার জন্য শুরু হয় অভিযান। বলা হয়, এসব অভিযানের প্রথম সফল ব্যক্তিত্ব ছিলেন ‘ ক্রিস্টোফার কলম্বাস’ । যিনি আবিষ্কার করেছেন আমেরিকা। এটাই আমরা জানি। পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ’ই এটা বিশ্বাস করেছে। কিন্তু এটা ভুলে যাওয়ার নয় যে,পৃথিবী ছেঁয়ে আছে মিথ্যার অন্ধকারে। বিকৃতভাষ্য আর লেখনীতে ভরে ওঠেছে সব অঙ্গন। ইতিহাসের খুটিনাটি বিষয়-গুলোও সন্দেহের বেড়াজালে আচ্ছাদিত। পশ্চিমা বিকৃত ইতিহাসের সুরাপানে সবাই ব্যস্ত। ওঁরা যেটা’ই আমাদের সামনে দাঁড় করিয়েছে, আমরা অবলীলায় গ্রহণ করেছি গো-গ্রাসে। কারণ,’ ইতিহাস রচিত হয় বিজয়ীদের হাতে’ এই চিরন্তন সত্যটা আমরা মানতে বাধ্য। এবং মেনেও নিয়েছি। তবে যেটা যানি, সেটা কি সঠিক? ‘ বই’ বলবে। লেখক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে এসব অন্ধকার ছিড়ে ফুটিয়েছেন আলোর বিচ্ছুরণ। সাজিয়েছেন আসল কাহিনীর গল্পগুচ্ছো।
> আমেরিকা আবিষ্কার করেছেন একজন খৃষ্টান।
খৃষ্টানদের পূর্বপুরুষ ছিলেন ‘ক্রিস্টোফার কলম্বাস’। তিঁনি একজন ধর্মযোদ্ধা ও ধর্মপ্রচারক এবং একজন বণিক ও অভিযাত্রী হিসেবে পরিচিত। আর বিশেষত যখন’ ই আমেরিকা আবিষ্কারের কথাওঠে সবাই একবাক্যে বলে দেই। ওহ্! তিঁনিতো ‘কলম্বাস’। এজন্য বরাবরই খৃষ্টানরা বড়ত্বের দর্পনে আমেরিকার অন্যসব নাগরিকদের তুলনায় এগিয়ে থাকে। বিশেষত মুসলিম নাগরিক ওদের কাছে ভাড়াটিয়া বা অন্যদেশ থেকে আগত জনগোষ্ঠী বলে বিবেচিত। একচ্ছত্রভাবে অধিকার খাটায় খৃষ্টানরা বর্তমানে কিছুটা স্ফীতি ঘটলেও অতীত ছিলো জঘন্য। যেন মুসলিমরা মূর্খ এক জাতি, যাঁদের কোন ইতিহাস-ঐতিহ্য নেই। আমেরিকার ভূমিতে তাঁদের কোন অধিকার নেই। সত্যি-ই কি এমন! এটা-নাহয় বই থেকেই যানবো।
>বইয়ে যা আছে।
কলম্বাসের আরো একটা পরিচয়। যা সবাই জানিনা। যাঁরা জানেন তাঁরা সেটা বলেন না। সেই পরিচয়ও বই বলেছে আমাদের। কলম্বাসের আগে কেউ কি গিয়েছিলো আমেরিকা নামক নতুন এই বিশ্বে? হ্যাঁ। কে বা কারা ছিলেন উনারা? বই সেটাও বলবে। লেখক চিন, স্পেন, আফ্রিকাসহ আরো বিভিন্ন দেশের মুসলিম অভিযাত্রীদের আমেরিকা অভিযানের বর্ণনা তাত্ত্বিক ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন বইয়ের অনেকাংশেই। বর্ণনা করেছেন, ক্রুসেড ও ক্রুসেডের মতো মুসলিম নিধনের কিছু অকল্পনীয় গল্প। যা আমি ভাবিইনি কখনো। হাতে কলমে দেখিয়েছেন, আমেরিকার পরতে পরতে মুসলিমদের ছড়িয়ে থাকা নিদর্শনগুলো। যাতে আমাদের জন্য রয়েছে বিস্ময় ও গৌরব। এগুলো মুসলিম অমুসলিম বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকের বর্ণনায় নিখুঁত ও চমৎকার ভাবেই তুলে ধরেছেন। আমি খানিকটা ইঙ্গিত দেই, বই থেকে-
“১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারি আত্মসমর্পণ করে গ্রানাডা। ফার্ডিন্যান্ড ও রানী ইসাবেলা পূর্ব চুক্তি ভঙ্গ করলো। খুন হলেন হাজারো মুসলিম। স্পেনের গ্রাম ও উপত্যকা হয় মানুষের কশাইখানা। যাঁরা পর্বত গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলো, তাদেরকে আগুনের ধোঁয়াদিয়ে খুন করা হয়।”
“আমেরিকার বিখ্যাত ঐতিহাসিক S. Frederick starr (জন্ম ২৪-৩-১৯৪০) আবু রায়হান মুহাম্মদ আল বেরুনিকে আমেরিকা আবিষ্কারের জনক বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এই গবেষক রাশিয়া-ইউরেশিয়া গবেষক হিসেবে বিশ্বজুড়ে বরেণ্য। সেন্ট্রাল এশিয়া ককেশাস ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বই লিখেছেন ২০ টিরও বেশি। তাঁর গবেষণা নিবন্ধ ২৫০ এর উপরে।”
” কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের ৫০০ বছর আগে মহান ইদ্রিসির (১১০০-১১৮৪)মানচিত্রে আমেরিকার ভূখণ্ড অঙ্কিত ছিলো।”
> বইটা ভালোবাসার কারণ।
১/ বিশেষত বইয়ের নামের ক্ষেত্রে লেখকের বিবেচনা ছিলো শতভাগ নিখুঁত। এবং প্রচ্ছদের লেখা, আমেরিকার বিভিন্ন শহরের নামগুলোর ইতিহাস, পাঠককে প্রথমেই আগ্রহী করে তুলে।
২/ প্রত্যেকটা আলাদা বিষয়কে বোধগম্য করার জন্য পাঠের বিন্যাস। এবং প্রত্যেকটা পাঠকে পাঠকের কাছে আরো বেশি ভালোলাগার হয়েছে শিরনামের উপরের ছোট্ট লাইলগুলো।
যেমনঃ- ‘কলম্বাসের আগে আমেরিকায় মুসলমান’
এই পাঠের উপরের বক্তব্য- ‘তাদের মাথা ছিলো রঙিন রুমালে বাঁধা, ঠিক যেন স্পেনিশ মুসলিমদের পাগড়ি’।
৩/ পাঠের বিচ্ছেদগুলো ইতিহাসেরমতো জটিল বিষয়কে সাধারণ আর সহজলভ্য করেছে।
৪/ লেখক মনের খামখেয়ালীর ঠাই না দিয়ে, অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে লেখার সূত্রের উল্লেখ করেছেন। যা বইয়ের বেইসকে আরো মজবুদ করেছে।
৫/ সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে, বইয়ের শেষ পাতাগুলোতে বইয়ে ব্যবহৃত প্রতিটা ইম্পরট্যান্ট বিষয়ের সন বা তারিখের পুনরাবৃত্তি টেনেছেন। এতে সহজেই পাঠক তা স্বরণ রাখতে পারেন।
> বইটি কেন পড়তেই হবে?
মুসলমানের হারানো, গৌরবের ও মহত্বের ইতিহাস জানতে এবং আমেরিকার ভূখণ্ডে বসবাসের মৌলিক অধিকার লাভের জন্য। তাচ্ছিল্যের হাসিতে কালি মাখানোর জন্য। আর-
১/ওখানে মুসলিমদের উপস্থিতি আন্দাজে, ওঁদের সাথে কলম্বাসের ব্যবহার কেমন ছিলো?
নমনীয় না-কি অবর্ণনীয়।
২/ যদি মুসলিমরাই ওখানে যেয়ে থাকে, তা কিভাবে সম্ভব হয়েছিলো?
৩/কোন শ্রেণির বা কোন যায়গার মুসলিমরা ওখানে প্রথম গিয়েছিলো?
৪/মুসলিমরাই কি সবার প্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলো?
৫/আমেরিকা কে আবিষ্কার করেছেন?
ক্রিস্টোফার কলম্বাস নাকি আবু রায়হান মুহাম্মদ আল বেরুনি?
এসকল প্রশ্নের সঠিক, যৌক্তিক ও প্রামাণিক উত্তর জানার জন্য। বিশেষত মূসা আল-হাফিজ’র মতো বিজ্ঞ-প্রাজ্ঞ গবেষক যখন গবেষণা মূলক বই লিখেন,তখন সেটাতো অবশ্যই পাঠ্য। সবশেষে আমার রিভিউ এবং বইয়ের মিলটা কত, সেটাও-যে পাঠকের নজরে নেয়া উচিৎ।
মানসূর আহমাদ – :
_______________
আমেরিকাকে বর্তমান বিশ্বের সবচে বড় পরাশক্তি মনে করা হয়। কিন্তু এই আমেরিকার ইতিহাস প্রসঙ্গ এলেই গবেষকরা নড়েচড়ে বসেন! আমেরিকার আবিষ্কারক কারা— এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।
ইসলাম-ফোবিয়ার কারণে আমেরিকায় মুসলিমদের উপস্থিতিকে হুমকি মনে করা হয়; আমেরিকা থেকে মুসলিমদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়; পামেলা গেলাররা ‘আমেরিকা থেকে মুসলিম খেদাও’ বলে শ্লোগান তোলে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যেদিন ঘোষণা করেন, ‘আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার’, সেদিন অমুসলিমদের পাশাপাশি অনেক মুসলিমও হতবাক হন! মুসলিমরা আমেরিকার অভিবাসী নন; শতশত বছর ধরে ইসলামই আমেরিকার অন্যতম প্রধান ধর্ম; কলম্বাসের শতশত বছর পূর্বে মুসলিমরাই আমেরিকা আবিষ্কার করেছেন— এসব কথা খোদ মুসলমানদেরও মানতে কষ্ট হয়!
‘আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার’ নতুন কোনো দাবি বা শ্লোগান নয়। শতশত বছর ধরে অমুসলিম গবেষক ও ইতিহাসবিদরা পর্যন্ত এ সম্পর্কে প্রামাণ্য বই, নিবন্ধ রচনা করে আসছেন! এ সত্যের নতুন এক সংযোজন ‘আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার’ বইটি।
লেখকের ভাষায়— “পশ্চিমা ইতিহাস কলম্বাসের যাত্রাকে গ্রাহ্য করেছে, মুসলিমদের আবিষ্কারকে চেপে গিয়েছে বেমালুম। এ বই গোপন সেই ইতিহাসকে সামনে নিয়ে আসার প্রয়াস। নৌ-ক্রুসেড এবং আমেরিকায় এর নির্মমতার দিকেও চোখ রেখেছে বইটি। নিয়ে এসেছে আমেরিকায় মুসলমানদের হাজার বছরের কালপঞ্জি।”
.
লেখক পরিচিতি
__________________
মুসা আল হাফিজ একাধারে কবি, গবেষক, আলেম ও শিক্ষক। গল্প দিয়ে লেখালেখি শুরু হলেও তিনি কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত। ‘আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার’ ছাড়াও তাঁর বেশ কয়েকটি ছড়া, কবিতা, সাহিত্য সমালোচনা, জীবনী ও ইতিহাস-গ্রন্থ রয়েছে। পেশায় শিক্ষক হলেও সারাদেশে লেখক ও কবি হিসেবেই সমাদৃত।
.
বিস্তারিত রিভিউ
__________________
প্রতি বছর ১২ই অক্টোবর আমেরিকায় কলম্বাস দিবস পালন করা হয়। কারণ, সেদিন নাকি তিনি আমেরিকা ‘আবিষ্কার’ করেছিলেন! এদিন অনেকেই আনন্দ উল্লাস করে। তবে সবাই নয়; কেউ কেউ পরিতাপ করে, সেই ‘মহান আবিষ্কার’ নিয়ে ব্যঙ্গও করে!
“আমেরিকার এক শিক্ষক বিল বিগলো কলম্বাস দিবসে ক্লাসে ঢুকে টেবিলের ওপর রাখা তার ছাত্রীর পার্সটি বগলদাবা করে হাঁটতে শুরু করেন। ছাত্রীটি চেঁচিয়ে ওঠে, একি! আপনি আমার পার্স নিয়ে যাচ্ছেন কেন? বিগলো বলেন, নিলাম কোথায়, আমি তো এটা আবিষ্কার করলাম। কলম্বাস এভাবেই আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকাকে— ছাত্রছাত্রীদের বললেন বিগলো। তিনি বলেন, ওটা আবিষ্কার নয়; স্রেফ লুটতরাজ।”
লুটতরাজ কীভাবে হয়েছে, সেটা জানা যাবে বইটা পড়লে।
‘আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার’ বইটি মোট সাতটি অধ্যায়ের সমষ্টি। অধ্যায়গুলো হল—
♦অভিযান
♦অভিযানের প্রেরণা
♦ভৌগোলিক জ্ঞান
♦কলম্বাসের আগে আমেরিকায় মুসলিম
♦আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার
♦আমেরিকায় মুসলিমদের শিকড়
♦আমেরিকায় ইসলাম : সংক্ষিপ্ত কালপঞ্জি
প্রথম তিনটি অধ্যায়ে কলম্বাসের অভিযান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এসব প্রবন্ধে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কলম্বাসের ডায়েরি ও তার সহযাত্রী ডা. চানার ডায়েরির উদ্ধৃতি স্থান পেয়েছে। তাদের কথাতেই জানা গেছে তাদের অভিযান এবং অভিযান পরিচালনার প্রেরণা ও কারণ।
কলম্বাস অভিযান পরিচালনা করেন স্পেনের ক্যাডিজ বন্দর থেকে। উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পশ্চিম দিকে ঘুরে ভারতে যাবেন। কিন্তু তিনি গিয়ে বসেন আমেরিকায়। তিনি আমেরিকাকেই ভারত মনে করেন এবং সারা জীবন ভারত বলেই প্রচার করেন। ভারতী মানুষের চেয়ে আমেরিকান মানুষরা লাল হওয়ায় তিনি তাদের নাম দেন ‘রেড ইন্ডিয়ান’— তবুও ইন্ডিয়া শব্দ ছাড়তে রাজি না! কারণ, তার মনমগজে কেবল ইন্ডিয়াই ঘুরপাক খাচ্ছিল।
খোদ কলম্বাসের ডায়েরি ও তার সহযাত্রী চিকিৎসক ডা. চানার ডায়েরিতে যেসব বিষয় স্পষ্ট হয়, তন্মধ্যে কয়েকটি হল—
১. তারা আমেরিকা আবিষ্কারে নয়; ভারত অভিযানে বেরিয়েছিলেন।
২. ভারতের প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ লুটতরাজ করা ছিল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
৩. ইসলামের বিরোধিতা এবং খ্রিস্টবাদের প্রচার ছিল তাদের অন্যতম লক্ষ্য।
৪. তারা প্রচুর স্বাধীন মানুষকে দাস বানিয়েছে।
৫. তারা নিরপরাধ অনেক মানুষকে হত্যা করেছে।… তখনকার রেড ইন্ডিয়ানরা মুসলিম ছিল, সংখ্যায়ও ছিল প্রচুর। কলম্বাস তাদের অনেককে হত্যা করেন, অনেককে দাস বানিয়ে রাজার কাছে পাঠিয়ে দেন!
এছাড়া তৃতীয় প্রবন্ধে তাদের ভৌগোলিক জ্ঞান কতটুকু ছিল বা কীভাবে অর্জন হয়েছে, সে সম্বন্ধে অন্যান্য অনেক ঐতিহাসিক ও গবেষকের গুরুত্বপূর্ণ রচনার উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে প্রমাণ করা হয়েছে, মুসলিমদের মানচিত্র ও ভৌগোলিক জ্ঞান থেকেই কলম্বাস পেয়েছিলেন অভিযান পরিচালনার দিশা।
পরবর্তী তিনটি প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে, কলম্বাসের শতশত বছর পূর্বেই আমেরিকায় মুসলিমদের বসবাস, তারও আগে মুসলমানদের আমেরিকা আবিষ্কার এবং শতশত বছর ধরে আমেরিকায় মুসলমানদের আদিবাসীত্ব।
আমেরিকায় কলম্বাস পান আরবীয় বৃক্ষ, মশলা, ও ফলদ গাছের উপস্থিতি। মশলার ব্যবহার, পোশাক আশাক, স্পেনিশ পদ্ধতির কাপড় বুনন, নারীদের পর্দা, মুসলিম সংস্কৃতি, জীবনোপকরণসহ অনেক ক্ষেত্রে তাদের বৈশিষ্টাবলী বহুকাল ধরে চলে আসা মুসলিমদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল স্পষ্টভাবে।
“প্রফেসর ড. বেরি ফিল (১৯১৭-১৯৯৪) এর বিখ্যাত ‘Saga America 1980′ গ্রন্থ উন্মোচন করেছে প্রাচীন আমেরিকায় মুসলিমদের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রসঙ্গ। ১৯৮৩ সালের ১২ জুলাই Three Rivers Press থেকে বইটি প্রকাশিত হওয়ার পরে আমেরিকার বুদ্ধিবৃত্তিক মহলে সৃষ্টি হয় ভিন্নরকম বিতর্ক। ড. ফিল বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যুক্তি, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখান, প্রি-কলম্বিয়ান আমেরিকায় অন্তত দশটি স্থানে মাদরাসার অস্তিত্ব ছিলো। সবচে’ প্রসিদ্ধ মাদরাসা ছিলো নেভাদা, নিউ মেক্সিকো, কলোরাডো ও ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে। এসব মাদরাসা প্রতিষ্ঠার অনুমিত সময়কাল ৭০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে।…”
ড. ইউনুস মারওয়ার অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত ৫৬৫টি নদী, হ্রদ, গ্রাম ও নগরের আরবি নাম উন্মোচিত হয়েছে। এরমধ্যে ৪৮৪টি আছে আমেরিকায় এবং ৫১টি কানাডায়।
শতশত বছর ধরে আমেরিকার অনেক গ্রাম, শহর ও উপশহরের নাম মক্কা, মদিনা! এছাড়া কানাডা, জামাইকা ও মেক্সিকোতেও এমন নামে আছে শত বছর পুরনো গ্রাম, শহর ও জনপদ।
আমেরিকার নেভাদায় পাওয়া গেছে সাতশো বছর আগের প্রস্তরখণ্ড, যাতে পরিষ্কার আরবিতে লেখা আছে ‘মুহাম্মাদ’। ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা পাথর, পাহাড়ের গায়ে ‘লা গালিবা ইল্লাল্লাহ’…
এসব বিষয় স্পষ্ট প্রমাণ করে, আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার। মুসলিমরা আমেরিকার অভিবাসী নন; আদিবাসী! ইসলাম আমেরিকার বহিরাগত ধর্ম নয়; সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম!
লেখক বলছেন— “আমরা যখন বলি ‘আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার’, তখন মুসলিমদের আগে আমেরিকায় আগত বিভিন্ন জাতির অস্তিত্বকে ভুলে যাই না। তারা এসেছিল এবং হারিয়ে ফেলেছিল বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ। মুসলিমরা সৃষ্টি করেন সামুদ্রিক যোগাযোগ রোড। রচনা করেন বিভিন্ন ম্যাপ ও পথের নির্দেশনা। কলম্বাস সে রোড দিয়েই ভারতে যেতে চেয়ে পৌঁছে যান আমেরিকায়। তার চেতনায় লুকানো ছিল নৌ-ক্রুসেড।”
শেষ রচনাটিতে ৯৪০ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় ইসলামের একটা সংক্ষিপ্ত কালপঞ্জি তুলে ধরা হয়েছে। এতে আমেরিকায় ইসলামের অগ্রযাত্রা সম্পর্কে জানা গেছে অনেক তথ্য।
.
পাঠ প্রতিক্রিয়া
_________________
বইটা পড়ে বেশ ভালো লেগেছে। প্রামাণ্য ইতিহাস হওয়ার কারণে এবং অমুসলিম ঐতিহাসিকদেরও গ্রহণযোগ্য উদ্ধৃতি থাকায় বইটি লাভ করেছে অনন্য শ্রেষ্ঠত্ব। এ সম্পর্কিত অন্যান্য অনেক বইয়ের সঙ্গে এটার পার্থক্য হল— এটাতে কলম্বাসের অভিযানকে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। খোদ কলম্বাসের ডায়েরি থেকেই এর প্রমাণ দেওয়া হয়েছে।
তবে কলম্বাস মুসলিমদের ভৌগোলিক ও বৈজ্ঞানিক সূত্র কাজে লাগিয়ে আমেরিকায় পৌঁছেছিলেন— মর্মে আলোচনা করাটা এক ধরনের দুর্বলতা মনে করি। এটা কেমন যেন কলম্বাসের ‘আবিষ্কার’কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়; মুসলমানদের জন্য কেবল এতটুকু কৃতিত্ব রাখা হয় যে, তারা তার আবিষ্কারের ‘কারণ’ হয়েছিলেন! কেননা, যদি ধরা হয়, কলম্বাস মুসলমানদের ভূগোল ও মানচিত্র কাজে লাগিয়ে আমেরিকায় উপস্থিত হয়েছিলেন, তবুও তো তার আবিষ্কার স্বীকার করা হল!
আমি মনে করি, এসব বিষয়ে আলোচনা না করে কেবল মুসলমানরা আমেরিকার আদিবাসী, মুসলমানরাই আবিষ্কার এবং ইসলামই আমেরিকার প্রাচীন ধর্ম— এ মর্মে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখলেই যথেষ্ট হত।
যাইহোক, বইটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো বই। সবাই পড়তে পারেন। জেনে নিতে পারেন আমেরিকায় মুসলমানদের ইতিহাস। প্রামাণ্য ইতিহাসের মাধ্যমে জানতে পারেন আমেরিকার প্রকৃত আবিষ্কার কে বা কারা… হ্যাপি রিডিং…!