মেন্যু
abbasi khilafah

আব্বাসি খিলাফাহ

পৃষ্ঠা : 450, কভার : হার্ড কভার, সংস্করণ : ১ম সংস্করণ
বাঁধাই: হার্ডকভার ডায়েরি বাঁধাই কাগজ: ৮০ গ্রাম অফহোয়াইট দীর্ঘ সময়কাল ধরে রাজত্ব করা আব্বাসি খিলাফাহর রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে কলম ধরেছেন তরুণ আলেম ইমরান রাইহান৷ ইতিহাসের জটিল আলাপ ও গভীর... আরো পড়ুন
পরিমাণ

440  800 (45% ছাড়ে)

পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন
পছন্দের তালিকায় যুক্ত করুন

3 রিভিউ এবং রেটিং - আব্বাসি খিলাফাহ

4.7
Based on 3 reviews
5 star
66%
4 star
33%
3 star
0%
2 star
0%
1 star
0%
 আপনার রিভিউটি লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  1. 4 out of 5

    Tahsan:

    Alhamdulilah boi ta Onek sundor porar Moto akta boi
    2 out of 2 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  2. 5 out of 5

    আব্দুল্লাহ আফনান:

    কিছুদিন আগেও `আমাদের মহলে’ ইতিহাসের বই খোঁজ করলে বিশুদ্ধ, নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের কয়েকটা বই খুঁজে পাওয়া যেত না। আলহামদুলিল্লাহ, বাংলা ভাষায় এখন ইতিহাস নিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। কাজের এই ধারাবাহিকতা চালু থাকলে, কিছুদিন পর ইতিহাসের ব্যাপারে আমাদের উদাসীনতার যেই বদনাম আছে তা ঘুচে যাবে— ইনশাআল্লাহ। অবশ্য বাংলা ভাষায় এখন পর্যন্ত ইতিহাস নিয়ে মৌলিক তেমন কাজ হয়নি। অনুবাদ হচ্ছে প্রচুর হারে। যেকোনো শাস্ত্রের প্রাথমিক ভিত অবশ্য অনুবাদের মাধ্যমেই দাঁড় করাতে হয়। তবে আমরা আশাবাদি লেখকগণ মৌলিকের দিকেও নজর দিবেন। এ বিষয়ে প্রকাশক মহোদয়দের আরও ত্যাগ ও উদারতার আহ্বান করছি।

    সুখের বিষয় হলো, আমাদের আলোচিত এই বইটি আব্বাসিদের স্বর্ণোজ্জ্বল শাসনকাল নিয়ে রচিত মৌলিক একটি বই। বইটি লেখক লিখেছেন একদম সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশে। লেখকের ভাষায়, “শুরু থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল বইটি লেখা হবে একদম সাধারণ পাঠকদের জন্য, যারা আরবি বা উর্দু জানেন না। তারা যেন এমন একটি বই সামনে পান, যেখানে আব্বাসি খিল|ফাহর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোটাদাগের কথাগুলো চলে আসবে।” একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে আমার বিশ্বাস, লেখক তার লক্ষ্যে সফল হয়েছেন— আলহামদুলিল্লাহ।

    || বই সম্পর্কে ধারণা ||

    মোটাদাগে বইটিকে দুই অধ্যায়ে বিভক্ত করা যায়।
    ১. আব্বাসিদের রাজনৈতিক ইতিহাস।
    ২. আব্বাসিদের শাসনামলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস।

    তবে সহজে বুঝার জন্য বইটিকে সাতটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা যেতে পারে।

    * ভূমিকার পরই ‘উমাইয়াদের শাসন’ শিরনামে উমাইয়াদের শুরু থেকে নিয়ে তাদের পতন ও আব্বাসিদের উত্থান নিয়ে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেছেন লেখক। আব্বাসিদের দুনিয়ায় প্রবেশের আগে সংক্ষিপ্ত পরিসরে করা এই আলোচনা দ্বারা পাঠক নতুন আমল সম্পর্কে কিছুটা তুলনা-প্রতিতুলনা করতে পারবেন। নতুন আমল বুঝতেও সহজ হবে৷

    তারপর প্রায় আড়াইশো পৃষ্ঠা জুড়ে লেখক পরিমিতভাবে আলোচনা করেছেন, আব্বাসিদের ছত্রিশজন খলিফার জীবন-চরিত্র, শাসনকাল, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ধর্মীয় অবস্থান, আকীদা, সংস্কারকাজ ইত্যাদি নানা রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে। সবশেষে ত্রিশ পৃষ্ঠাব্যাপী আব্বাসি আমলের পতনের এক সুলুকসন্ধানী পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রথম অধ্যায়ের সমাপ্তি টেনেছেন।

    * দ্বিতীয় অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন ‘আব্বাসি যুগের সমাজব্যবস্থা’ নিয়ে। এ অধ্যায়ের কিছু উপশিরোনাম তুলে ধরলেই অধ্যায়টি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। উপশিরোনামগুলো নিম্নরুপ—
    — পোশাক
    — ঘরের আসবাবপত্র
    — বিনোদন
    — আতিয়েথতা
    — ঋতুবদলের দিনগুলোতে
    — বাগান ও লেক
    — জনগণের নিরাপত্তা
    — অর্থনৈতিক জীবন
    — কৃষি
    — হাসপাতাল ও ইত্যাদি ধর্মীয় ফিরকা।

    প্রসঙ্গত খারেজিদের আবির্ভাব, মুতাজিলাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাস ও তাদের খন্ডনে বিকল্প ধর্মতাত্ত্বিক প্রকল্প, ইখওয়ানুস সাফা ইত্যাদি বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ জীবনের নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুসঙ্গও আলোচিত হয়েছে।

    * “আব্বাসি শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থা” শিরোনামে সন্নিবেশিত হয়েছে অসাধারণ তৃতীয় অধ্যায়টি। এ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে সেসময়ের শিক্ষাপদ্ধতি,  প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষার ধরণ নিয়ে। আরও আলোচিত হয়েছে ইলমের জন্য সালাফদের আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠার কথা৷ যে ইতিহাস একই সাথে গৌরবময় ও আগ্রহউদ্দীপক। তাছাড়াও কিতাব সংরক্ষণ, পাঠাগার ও মুসলিমদের কুতুবখানার সংগ্রহশালার ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে এই অধ্যায়ে। যা পাঠককে শুধু বিস্মিতই করবে না, (আমার মতো কম জানাশোনা পাঠককে) হতবাক করে দিবে।

    * “আব্বাসিদের রাষ্ট্রব্যবস্থা” নিয়ে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায় রচিত হয়েছে; যা বইটির চতুর্থ অধ্যায়।

    * পঞ্চম অধ্যায় সজ্জিত হয়েছে “আব্বাসি শাসনামলে চারুকলা, স্থাপত্যবিদ্যা ও লিপিকলা” শিরনামাধীনে।

    * “সমকালীন অন্যান্য সাম্রাজ্যের সাথে সম্পর্ক” নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ষষ্ঠ অধ্যায়ে।

    * সর্বশেষ হাদিস, ফিকহ, সাহিত্য, চিকিৎসা, দর্শন, ভূগোল, গণিত, রসায়ন ইত্যাদি শাস্ত্রে মুসলিমদের আগ্রহ, অবদান নিয়ে আলোচনা করেছেন “আব্বাসি শাসনামলে জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতি” শীর্ষক শিরোনামাধীন অধ্যায়ে। যা বইটির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।

    || বইটির কিছু বৈশিষ্ট্য ||

    ★ বইটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, ইতিহাসের বই হলেও এটি সুখপাঠ্য একটি বই। গৎবাঁধা অন্যান্য দশটা ইতিহাসের বইয়ের মতো নয়। পাঠক গল্পের মতো করে তরতর করে পড়ে যাবেন, কোনো ক্লান্তি অনুভব হবে না। কখনো কখনো পাঠক হয়তো ভুলেই যাবেন, আপনি তথ্যাদি দিয়ে ভরপুর ইতিহাসের বই পড়ছিলেন। এই বইটি পাঠে ‘ইতিহাসের বই মানেই একঘেয়েমি আলোচনা’ নামক ভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। ইতিহাসও যে এমন সুখপাঠ্য করে লেখা যায়, সেটা নতুনভাবে জানা যাবে।

    ★ ইতিহাস পাঠের উদ্দেশ্য হলো, অতীতের ঘটনাবলী থেকে উপদেশ গ্রহণ করা। অতীতের আয়নায় বর্তমানকে দেখতে চেষ্টা করা। কিন্তু আমরা যখন পড়ি, তখন এতকিছু চিন্তাভাবনা করার সময় পাই না, দেদারসে পড়তে থাকি। লেখক খুব সুন্দরভাবে হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতিতে বিভিন্ন জায়গায় ইতিহাসের শিক্ষা তুলে ধরেছেন। কখনও চোখে আঙুল দিয়ে অতীতের সাথে বর্তমানের মিলটুকু দেখিয়ে দিয়েছেন।

    ব্যক্তিগতভাবে আমার এমনও হয়েছে যে, বই বন্ধ করে নিস্তব্ধ হয়ে বসে থেকেছি কতক্ষণ। চোখ বন্ধ করে ভেবেছি— আসলেই তো এই দুনিয়াটা কত ক্ষণস্থায়ী!

    ★ ইতিহাসগ্রন্থে সাধারণত রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়েই আলোচনা করা হয়। শুধু সমকালীন বিভিন্ন প্রেক্ষাপট, যুদ্ধ-বিগ্রহ নিয়ে কথা বলা হয়। কিন্তু লেখক মহোদয় এই বইয়ে একই সাথে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক  সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন। যা বইটিকে অন্য দশটা সাধারণ বই থেকে অনন্য করে তুলেছে বলেই আমার ধারণা।

    || বইটি কেন পড়বেন? ||

    পাঠক! এই বইটি আপনি পড়বেন মুসলিম উম্মাহর এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়কে জানার জন্য। বইটি পড়ে আপনি আব্বাসি খলিফাদের ইতিহাসের পাশাপাশি জানতে পারবেন, জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের অগ্রগতি ও অবদান সম্পর্কে। সাহিত্যচর্চায়, শিল্পকলায়, স্থাপত্যে মুসলিমদের উন্নতি সম্পর্কে। সেসময়কার মানুষের যাপিত জীবন কেমন ছিল তার মূর্ত চিত্রও ভেসে উঠবে আপনার সামনে। কেমন ছিল সেকালের মানুষের খাবারদাবার, পোশাকআশাক, চালচলন। কেমন ছিল তাদের অর্থনৈতিক জীবন, নগর জীবন ও গ্রামীণ জীবন। আরও জানতে পারবেন কেমন ছিল সেসময়কার শিক্ষাব্যবস্থা। জ্ঞানের জন্য সালাফদের ত্যাগের গল্পও শুনবেন। ঐতিহাসিক পাঠাগারগুলোর বর্ণনা শুনে আপনার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাবে। এছাড়াও জানতে পারবেন, আব্বাসিদের রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে। ইত্যাদি ইত্যাদি।

    || আমার অনুভূতি ||

    ব্যক্তিগতভাবে বইটি পড়ে আমি অনেক অনেক উপকৃত হয়েছি। আমাদের নিজেদের এই গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে অনবগত থাকার কারণেই আমরা আজ হীনমন্যতায় ভুগি। পূর্ব থেকেই জানতাম আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য গর্বের। কিন্তু তৎকালীন সময়ের এমন স্পষ্ট কোনো চিত্র সামনে ছিল না। এই বই পড়ে আমার আত্মবিশ্বাস ও আত্মনিমগ্নতা আরও বহুগুণ বেড়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। লেখকের প্রতি নিবেদন থাকবে, সাধারণ পাঠকদের উপযোগী করে— সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও— মুসলিম উম্মাহর পুরো ইতিহাসকে লিখে ফেলা। বিশেষত উসমানী খিল|ফাহ নিয়ে এমন আরও একটা বই চাই-ই চাই। আমরা আল্লাহর দরবারে লেখকের দীর্ঘায়ু কামনা করি।

    সবশেষে ফ্ল্যাপে দেওয়া কাজী আবুল কালাম সিদ্দীকির একটি কথাকে নিজের মতো নকল করে রিভিউটির ইতি টানছি।

    “সোহাগার দ্বারা সহজেই সোনা গলানো যায় বলে ‘চমৎকার মিলন’—এর উপমা দিতে গিয়ে আমর বলে থাকি ‘সোনায় সোহাগা’। ইমরান রাইহানের সোহাগা হাতে আব্বাসিদের সোনালি ইতিহাসের লিখিত এই রূপ, আমাদেরকে উপমাটি বারবার মনে করিয়ে দেয়….।”

    1 out of 1 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
  3. 5 out of 5

    kazi.sobur.dvm:

    খোলাফায়ে রাশেদীনের পরবর্তী ইসলামী স্বর্ণযুগের ইতিহাস সাধারণের মন থেকে অনেকটা বিস্মৃতির পথে। বর্তমান সময়ে অনলাইন এবং বইপত্রে অনেকগুলো ভাল মানের বই অনূদিত হলেও বাংলায় মৌলিক ইসলামের ইতিহাস গ্রন্হ আজও হাতে গোনা। তরুণ লেখক ইমরান রায়হানের আব্বাসি খিলাফাহ বইটি সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
    ৪৫৬ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত কলেবরে দীর্ঘ ৫০০ বছরের ইতিহাস খুব সাবলীলভাবে বর্ণনা করেছেন লেখক। অনেকদিন পর এরকম একটি ইতিহাস বই এক দিনে শেষ করলাম। আব্বাসী আন্দোলন থেকে শুরু করে তাতার আক্রমণে বাগদাদের পতন পর্যন্ত সকল খলিফাদের আলাদা আলাদা বর্ণনা রয়েছে। এসকল বর্ণনার ভিতরেই তৎকালীন বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সংক্ষিপ্ত পরিসরে বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও সেই পরিসর পাঠককে তৃপ্ত করে। যেমন, ইমামদের সাথে আব্বাসীদের দ্বন্দ্ব, ইমাম আবু হানিফার সাথে জাফর মনসুর কিংবা মামুনুর রশিদের সাথে খলকে কোরআন নিয়ে ইমাম হাম্বলের ঘটনা গুলো ভালভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ক্রুসেডের সময় আব্বাসী খিলাফতের নিষ্ক্রিয়তা কিংবা হাজরে আসওয়াদ চুরি হলেও উদ্ধারে নিষ্ক্রিয়তা গুলো লেখক ধর্মীয় এবং সামরিক দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছোট ছোট ঘটনা খলিফাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বর্ণনায় তুলে ধরা হয়েছে। সচেতন পাঠকের ঘটনাগুলোর সাথে সমসাময়িক বিষয়ের যোগসূত্র খুজে পাওয়ার মত করেই লেখেছেন লেখক। যদিও আব্বাসি খিলাফতের বাইরে খুব একটা দৃষ্টিপাত করা হয়নি বা সংক্ষিপ্ত পরিসরে সে সুযোগও ছিলনা। তবে সমসাময়িক অনান্য গুরুত্বপূর্ণ শাসকদের নাম প্রয়োজনে অনুচ্ছেদ আকারে উল্লিখিত হয়েছে।
    লেখক অধিকাংশ খলিফার শারীরিক বর্ণনা এবং তাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করেছেন। ক্ষমতার মোহে কিংবা নিজ পরিবারে ক্ষমতা ধরে রাখতে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত গুলোর সাবলীল বর্ণনা আছে।

    খলিফাদের জীবনী অংশের পর সামগ্রিকভাবে আব্বাসী সমাজব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, যুদ্ধ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সাহিত্য, জ্ঞান- বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলাদা আলাদা অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। পোশাক কিংবা খাবারের মতো ছোট বিষয়গুলোকেও লেখক বাদ দেন নি। আব্বাসি খিলাফতের পতনের কারণ সমূহ আলোচনায় লেখক স্বরণ করিয়ে দিয়েছেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে আলোচনা ছাড়া ইসলামের ইতিহাস পূর্ণতা পায়না।

    বইটির বাচনভঙ্গি সাবলীল হলেও অনুসন্ধানী পাঠক কিংবা গবেষকদের জন্য রয়েছে প্রতি পাতায় পাদটীকা। যার সংখ্যা ৫৫৮ টি, তমধ্যে সর্ব্বোচ্চ পাদটীকা আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্হের।। এছাড়াও গ্রন্থপঞ্জিতে ১২৭ টি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তকের রেফারেন্স দেওয়া আছে।
    আব্বাসী যুগে অনেক ভ্রান্ত আকিদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, অনেকগুলো মারাত্বক ভ্রান্ত আকিদা আব্বাসী খলফাগণ স্বয়ং মদদ দিয়েছিল। এই সব দল-মতের নাম (যেমন জিন্দিক, কারামেকাত প্রভৃত বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ থাকলেও ইনডেক্সে তাদের কোন বর্ণনা না পেয়ে হতাশ হয়েছি। আরেকটি জিনিস আশা করছিলাম, সেটা হল আব্বাসী খিলাফাহ এর সীমানা সম্বলিত ম্যাপ। গুরত্বপূর্ণ সময়ের মানচিত্র শুধু বইয়ের জৌলুস বৃদ্ধির জন্য নয়, পাঠকের অনুধাবনে প্রচুর সহায়ক। আমার মতে ইতিহাস বইয়ে এটা আবশ্যক।

    আমি মনে করি অনলাইন বুক রিভিউ বইয়ের বিষয়ের সাথে বস্তুর সংমিশ্রণ না ঘটলে অসম্পূর্ণই থেকে যায়। তাই বইটি সম্পর্কে বলি। ৮০গ্রাম অফ হোয়াইট অফসেটে ছাপানো বইটির ছাপ চমৎকার। প্রুফ রিডিং ও ভাল হয়েছে। ডায়েরি হার্ড বাধাই করা হয়েছে। বাধাই কোয়ালিটি সর্বোচ্চ মানের। সংক্ষিপ্ত এবং বিস্তারিত সূচিপত্র দেওয়া হয়েছে। বইয়ের মলাটে প্লাস্টিক প্রিন্টে খোদাই করা। সেই সাথে প্রচ্ছদের সাথে মিলিয়ে নীল বুকমার্ক। শাহ ইফতিখার তারিকের প্রচ্ছদ সাধারণের ভিতরে ইসলামের চিরায়ত ঐতিহ্য ঢাল তলোয়ার শোভা পাচ্ছে। বইয়ের শেষে পাঠকের নোট করার জায়গাও আছে।

    পরিশেষে ইতিহাস পাঠে প্রয়োজনীয়তা অসীম, ইতিহাস অজানাকে জানায়। অতীতে কি ছিল, বর্তমানের সাথে তার সম্পর্ক কি? কিংবা অতীতের ভুলগুলো আবার করলে কি পরিণত হতে পারে? ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়। ইসলামের স্বর্ণযুগ যেমন বলা যায় আব্বাসী আমলের প্রথম দিককে, তেমনি নানাবিধ ফিতনা ও মতানৈক্য ধীরে ধীরে দূর্বল করেছিল খিলাফাতের ভিতকে। সেই সাথে খলিফারা সরে যাচ্ছিলেন ইসলামের সুমহান আদর্শ থেকে। সর্বশেষ শিয়া আমিরের পরামর্শে সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে পতনকে আরো ত্বরান্বিত করেছিল। বাইতুল মোকাদ্দাস আক্রমণে আব্বাসী খলিফা যেমনি নীরবতা অবলম্বন করেছিলেন, তেমনি তাতার আক্রমণের সময় নীরব হয়ে গিয়েছিল বাগদাদ নগরী। ৫০০ বছরের সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে ফোরাতের জলে ভেসে গিয়েছিল ইসলামের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে। বইটা সকল পাঠককে নাড়া দিবে। তাই সবাইকে বইটি পড়ার অনুরোধ করছি।

    8 out of 8 people found this helpful. Was this review helpful to you?
    Yes
    No
Top