17 রিভিউ এবং রেটিং - বিয়ে স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর
Showing 12 of 17 reviews (5 star). See all 17 reviews
বিয়ের মতো অনবদ্য একটি আশীর্বাদ দুঃসহ অভিশাপে পরিণত হতে পারে যদি বিয়ের আগের ও পরের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করা না হয়। কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সাজানো দাম্পত্য জীবন শুধু স্বামী-স্ত্রী উপরই নয় বরং গোটা সমাজের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ বয়ে আনে। বিয়েকে পার্থিব জীবনের সুখ ও পরিপূর্ণতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে প্রধান বিষয়গুলো এই বইয়ে আলোচিত হয়েছে। একজন আন্তরিক পাঠক বইটি থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলে সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনে সক্ষম হবেন, ইন-শা আল্লাহ।
Out of stock
Fateha Zishan – :
Tasnim Bin Sekander – :
বিয়ে সম্পর্কিত পড়া এটাই আমার প্রথম বই। কিন্তু মাত্র ৬২ পৃষ্ঠার বইটাতে লেখক সত্যিই সুন্দরভাবে জীবনসঙ্গিনীর প্রেমে বারবার পড়ার মন্ত্র সাবলীলভাবে বলেছেন।
আসলে শুধু লাইফ পার্টনার না, লেখক এমন অনেক পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছেন যেগুলো পরিবার পরিজন এমনকি বন্ধু-বান্ধবিদের সাথেও প্রয়োগ করা যায় বা করা উচিত।
দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার মন্ত্র গুলো লেখক যখন আলোচনা করছিলেন তখন সত্যিই খায়েশ জন্মাচ্ছিল ৩০ বছর পরেও যেন আমি আমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে প্রেমে পড়তে পারি।
সুখী দাম্পত্য জীবনে কী কী ভূমিকা রাখে এমন প্রশ্নে লেখক মোটামুটি তিনটি বিষয়ে ফোকাস করতে চেয়েছেন তা হলো-
১- সত্যবাদিতা
২- যত্নবান হওয়া
৩- পারস্পরিক সম্মানবোধ
এছাড়াও অনুরাগ প্রকাশে পাগলামি করা। উপহার দেয়া। শুধু মেয়েরা না, ছেলেরাও যে উপহার পেলে খুশি হয় এবং বরং মেয়েদের তুলনায় বেশি খুশি হয় সেটাও হয়ত অনেকের ভাবনাতেও থাকে না।
বিয়েঃ স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর বইতে লেখক মূলত ২০ টি প্রশ্নের উত্তরের উপর আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে আরো একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় আমার কাছে লেগেছে যে, দুজনার একটা ভাষা তৈরি করে ফেলা।
‘যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এ সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে তাদের আপনি দেখবেন যে, তারা হয়ত কোনো বিষয় নিয়ে মুচকি হেসে যাচ্ছে, কী কারণে তারা দুজন হাসছে তা কেবল তারাই বুঝতে পারে। হয়তো দেখবেন তারা এমন একটা ভাষায় কথা বলছে যা কেবল তারাই বুঝতে পারছে। তাদের কথাগুলো হয়তো অন্যদের কাছে একেবারেই সাধারণ মনে হয়, কিন্তু তা তাদের পরস্পরের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এটা যদি আপনি গড়ে তুলতে পারেন তাহলে ৩০ বছর পরেও দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে প্রেমে পড়বেন বারবার।’
এ বিষয়টা লিখতে গিয়ে লেখকের আরো একটা উক্তিও অবশ্য মনে পড়ে গেল,
‘আমি প্রায়ই বলি, ‘ঝগড়াটে কাউকে বিয়ে করার চেয়ে একটি ঘোড়া কেনা ভালো; ঘোড়াটি অন্তত বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে আনতে পারতো।’ ‘ঝগড়াটে’ একটা উভয়লিঙ্গ শব্দ; নারী বা পুরুষ উভয়ের খেত্রেই প্রযোজ্য।’
আমার কাছে মনে হয়েছে অল্প কলেবরের বইটিতে লেখক অত্যান্ত মূল্যবান আলোচনা করেছেন দাম্পত্য নিয়ে। যদিও আমার মনে হয়েছে দাম্পত্যের বাইরেও অন্যান্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গুলোর খেত্রেও বইয়ের নাসিহা গুলো মূল্যবান মুক্তোর মত।
লেখক মির্জা ইয়াওয়ার বেইগের সম্পর্কে বলতে গেলে এটা আমার পড়া তার প্রথম বই। তবে তার প্রথম বই পড়েই আমি মুগ্ধ হয়েছি সত্যি। প্রকাশকের কথা থেকে লেখকের পরিচয় টুকলে বলতে হয়,
‘মির্জা ইয়াওয়ার বেইগের জন্ম প্রাচ্যে। জীবনের বড় একটা অংশ পশ্চিমে কাটিয়েছেন। কর্পোরেট জগতের বহু ডাকাবুকোর গুরু তিনি। ইসলামের আলোয় আলোকিত এ মানুষটি এমন এক চশমা দিয়ে দুনিয়াটাকে দেখেন যার জুঁড়ি নেই। আদর্শিক পা হড়কানো থেকে উদ্ভূত সমস্যাগুলোকে তিনি ঝানু ব্যাবসায়ীর চোখ দিয়ে দেখেন, ব্যবচ্ছেদ করেন। এরপর ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান সাধেন।’
এবার আসি প্রকাশনীর কথায়। সিয়ান পাবলিকেশন সম্পর্কে কিছু বলার নেই আসলে। আজ যে এত সুন্দর সুন্দর প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা কনটেন্ট আর নজর কাড়া লুক পৃষ্ঠা বিন্যাস, সুন্দর সাবলীল বানান এবং রুচিশীল শব্দচয়ন ইসলামী প্রকাশনী-বইয়ে আমরা দেখি তার অনেক অবদান সিয়ান পাবলিকেশনের। যার সুচনাটা হয়েছিল তাদের হাত দিয়েই।
সত্যি বলতে অনুবাদ পড়ার সময় মনেই হয়নি আমি অনুবাদ পড়ছি। আল্লাহ সিয়ানের কাজে আরো বারাকাহ দ্বান করুন। আমার ব্যক্তিগত রেটিং যদি সার্বিকভাবে দেই বইটা সম্পর্কে তাহলে বলতে হবে, সুন্দর প্রচ্ছদ সুন্দর অনুবাদ অসাধারণ কিছু নসিহা যা বইটা পড়ে শেষ করার পর বাস্তব জীবনে এ্যপ্লাই করতে ইচ্ছে করবে। তাই আমার রেটিং- ৯.৪/১০
‘বিয়েঃ স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর’ পড়ার পর আমি উপহার লিস্টে বইটা যুক্ত করেছি। আমার পরিবারের সদস্যদেরকেও যারা বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে বা বিয়ে করেছে তাদেরও বইটা উপহার দেয়ার নিয়াত করেছি। শুধু তো দাম্পত্য নয় পরিবারের সকলের সাথে সম্পর্কটা পোক্ত করা প্রয়োজন। আমার অনুরোধ থাকবে বইটা ছেলে-মেয়ে সকলের পড়ার এবং উপহার দেয়ার…
Wahida Akhtar Sanna – :
বিয়ের জন্য বর/কনে নির্বাচন থেকে শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জীবণের বিভিন্ন পর্যায়ে মুসলিম দম্পতির করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো খুব সাধারণ কিন্তু সুন্দর উপমা এবং উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।
“আজ আমরা এমন একটি পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে হালালকে ব্যয়বহুল, জটিল এবং কঠিন করে ফেলা হয়েছে; আর হারামকে করা হয়েছে সহজলভ্য – ফ্রি! কিন্তু ইসলাম হালালকে সহজ করেছে আর হারামকে করেছে কঠিন।আর এজন্যই বিয়ে এতটা সহজ, সরল এবং বাহুল্য ব্যয় থেকে মুক্ত।” ইসলামে বিয়ে কতটা সহজ, তার বিবরণ আছে বইটিতে।
আবার যারা তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাচ্ছেন এবং পরিবার-সমাজের কারণে বিয়ে করতে না পেরে আফসোস করছেন, তারা বইটা পড়ে উপলব্ধি করতে পারবেন যে, বিয়ের পর সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য আপনি নিজে তৈরি কি না? সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য পারস্পরিক আচরণ এবং সৎ মানসিকতার গুরুত্ব যে সবচেয়ে বেশি তা উপলব্ধি করা যায়।
কিভাবে বিয়ের ২৫/৫০ বছর পরও প্রতিদিন সকালে সম্পূর্ণ নতুনভাবে আপনার জীবনসঙ্গীর প্রেমে পড়া পুরোপুরি সম্ভব, লেখক সেটাও দেখিয়ে দিয়েছেন বইটিতে।
শেষ করছি বইটির ভূমিকায় লেখকের লিখা দুটি বাক্য দিয়ে, ” দাম্পত্য জীবনের সুখশান্তি কেবল স্বামী-স্ত্রীর মন-মানসিকতা ও আচার-আচরণের উপরই নির্ভর করে। তারা যদি সত্যিই সুখী হতে চায় তাহলে কেউ তা রোধ করতে পারবে না; আর তারা যদি অশান্তি সৃষ্টি করে তাহলে কেউই তাদের শান্তি এনে দিতে পারবে না।”
mr.tahmid – :
★ সংক্ষিপ্ত বই পরিচিতিঃ বিয়ে। দুই অক্ষরের একটি শব্দ। কিন্তু বিয়ের মাধ্যমেই তো সব শেষ নয়। এ যে সবে শুরু – নতুন এক সম্পর্কের, নতুন এক জীবনের, নতুন কিছু দায়িত্ববোধের। অথচ দুঃখের বিষয় জীবনের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, দাম্পত্য জীবন আমরা শুরু করি একেবারে অজ্ঞতা থেকে। বড় বড় ডিগ্রী থাকে, দ্বীনদ্বার, কিন্তু দাম্পত্য জীবন মধুর হয় না- এরকম দৃষ্টান্তও দেখা যায়। এর কারণ আমরা দাম্পত্য জীবন সম্বন্ধে আগে থেকে জানার চেষ্টা করি না। কীভাবে একজন আদর্শ স্বামী হব, আদর্শ স্ত্রী হব, আদর্শ পিতা-মাতা হব এসব জানার চেষ্টা করি না। স্বামী-স্ত্রী একে-অপরের প্রতি কীরূপ আচরণ কাম্য, বিয়ের পর নিজ পিতা-মাতা ও স্ত্রীর বিরোধ হলে কী করণীয়, পুত্রবধুর সাথে কীরূপ আচরণ হওয়া উচিত ইত্যাদি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে ভাবি না। জানার চেষ্টা করি না। এই বই এসব জিনিসকে আলোকপাত করেই লেখা।বিবাহিত অবিবাহিত প্রায় প্রত্যেকের জন্য অবশ্যপাঠ্য বই বলা যায়।
★ লেখক পরিচিতিঃ মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ প্রাচ্যের প্রতিনিধি, জন্ম ভারতের হায়দ্রাবাদে। তিনি একাধারে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্কলার, বক্তা, লেখক, করপোরেট কনসালটেন্ট, বিজনেস এনালিস্ট ও লাইফ কোচ।বিজনেস কনসালটেন্সি ও ফ্যামিলি বিজনেসের উপর তিনি বিশেষভাবে খ্যাতি অর্জন করেন। কনসাল্টেন্সি করেছেন ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা আর শ্রীলংকার অসংখ্য মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। মাইক্রোসফট, ইউনিলিভার, রয়টার্স, সিমেন্স, মটোরোলাসহ অসংখ্য কোম্পানিকে দিয়েছেন পরামর্শ। রাসূলুল্লাহ (সা) এর নেতৃত্বের গুণাবলীর সমন্বয় করে গ্লোবাল লিডার প্রস্তুত করতে শুরু করছেন নিজস্ব প্রতিস্টান স্ট্যান্ডার্ড বিয়ারারস ট্রাস্ট। লিখেছেন অসংখ্য জ্ঞানগর্ভ ইসলামিক বই আর সুন্দর লেকচার।ইসলামিক কন্টেন্ট এর কপিরাইটের ঘোরবিরোধী এ শায়খ প্রায়ই পশ্চিমা দায়ীদের ইসলামকে বাণিজ্যিকরণের বিরোধিতা করেও নজর কেড়েছেন। লিখেছেন ইসলামের বিয়ে, দাম্পত্য জীবন, রাসূলুল্লাহ (স) এর জীবন থেকে লিডারশিপ লেসন, শিশুলালন পালন, ইসলামের প্রাথমিক পরিচয় সহ সুন্দর বেশ কিছু বই।
★ বিস্তারিত বই পরিচিতিঃ লেখক দীর্ঘদিন দাম্পত্য সমস্যার সমাধান দিয়েছেন অসংখ্য মানুষকে। অনুসন্ধান করেছেন দাম্পত্য সমস্যার মূল কারণ। নিরূপণ করেছেন সফলতার কিছু সোনালী নীতি।এই বইটি তারই এক ক্ষুদ্র প্রয়াস।সূরা রোমের ২১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহতালা বলেছেন, বিয়ে আল্লাহরই একটি নিদর্শন। এ আয়াতে আল্লাহ তিনটি তাৎপর্যমূলক শব্দ উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেছেন তিনি আমাদের মধ্য থেকে আমাদের জন্য জীবনসঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে ক/ আমরা সুকুন লাভ করতে পারি, খ/ আমাদের একে অপরের জন্য ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন আর গ) একে অপরের জন্য পয়দা করে দিয়েছেন রাহমাহ বা মমতা। লেখক এভাবেই বিয়ের তিনটি তাৎপর্য বর্ণনা করে সেগুলোর আলোকে দাম্পত্য জীবনের শুরু থেকে অস্টপ্রহর পর্যন্ত চলার বেশ কিছু সোনালী নীতি দিয়েছেন। বর-কনে দেখা বা খোঁজা থেকে শিশু লালনপালন – ছোট্র এ বইয়ে মোটামুটি সবকিছুরই কিছু সুন্দর মূলনীতি তুলে ধরেছেন।
আমি এখানে অল্প কয়েকটি পয়েন্ট আকারে তুলে ধরব। বিস্তারিত জানতে বইটি পড়তে পারেন।
ক) ইসলামে বিয়ে
১/ ভালবাসা তৈরি হয় সম্মান থেকে। আমরা যাকে সম্মান করিনা, তাকে ভালোবাসতে পারিনা। তাই স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্বাবোধ থাকতে হবে।
২/ স্বামী-স্ত্রী পরস্পর একটি বিশেষ আয়নার মত। চেস্টা করতে হবে স্মৃতির এ আয়নায় ভাল স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে আর মন্দগুলো ভুলে যেতে। আমরা যেন মানুষের ভাল গুণগুলি পাথরের উপর আর ভুলগুলো বালির উপর লিখি। তাহলে ভালোটির প্রভাব দীর্ঘদিন রয়ে যাবে আর মন্দটা বাতাসের প্রথম ঝাপটাতেই মুছে যাবে।
৩/ জীবনসঙ্গীকে সময় দেয়া, তাদের ভাল বন্ধু হওয়া, তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা অত্যাবশ্যক। দুজনে মিলে করেন এমন কিছু কাজ বানিয়ে নিতে হবে। আলাদা একটি চোখের ভাষা যদি তৈরি করা যায় সবচেয়ে ভাল হয়। এজন্য পরিশ্রম করতে হবে, সবর করতে হবে। একে অপরের পরিপূরক হতে হবে।
খ) বিয়ে – স্বপ্নের শুরুঃ জীবনসঙ্গী নির্বাচনের জন্য ছয়টি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১/ ইসলামঃ ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো পালন করে কিনা। যেমনঃ সালাত,সাওম, যাকাত, কুরআনের জ্ঞান ইত্যাদি। আখলাকের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। চেহারায় ইসলাম আছে কিনা সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েদের ক্ষেত্রে পর্দা আর ছেলেদের ক্ষেত্রে দাড়ি। দেখে পছন্দ হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক মাস বাদেই রূপলাবণ্য বা স্মার্টনেসের আকর্ষণ হারিয়ে যাবে। তাই দ্বীনদ্বারি ও তাকওয়ায় গুরুত্ব দেন। কারণ এই মানুষটিই আপনার ভবিষ্যত সন্তানের দেখভাল করবে।
২/ প্রেমে পড়ে যাওয়ার কথা ভুলে যান। পড়ে যাওয়া কখনোই ভাল নয়। সম্মানবোধই সত্যিকার ভালোবাসা তৈরি করবে। সত্যিকার ভালবাসা হয় সম্মান, শ্রদ্ধা ও মর্যাদা থেকে। তখন বিয়ের ২৫ বছর পরেও বউ এর প্রেমে পড়বেন।
৩/ তার ঘরের মানুষের সাথে নিজের আচার ব্যাবহার কেমন জানলে ভাল হয়। দ্বীনদ্বার অনেক মানুষেরও আচার ব্যাবহার ভাল হয়না এমন উদাহারণ আছে। অথচ আচার ব্যাবহার গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এমন আচার ব্যাবহারই আপনি সারাজীবন পাবেন।
৪/ কথোপকোথনঃ মানসিকতা সম্পর্কে ধারণা পেতে চাইলে তার দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতা, গঠনমূলক চিন্তাভাবনা বা কোন পরিস্থিতির ব্যাপারে সামগ্রিক বিবেচনা জানার চেস্টা করুন। সে কি সমালোচনা করতে বেশি ভালবাসে নাকি সমাধানেও আগ্রহী? পার্থিব বিষয় নিয়ে বেশি কথা বলে নাকি আখিরাত নিয়ে? যখন ধর্ম নিয়ে কথা বলে, অন্যের দোষ ধরতে বেশি মত্ত নাকি নিজের সীমাবদ্ধতা ও উন্নয়ন নিয়েও আগ্রহী? বিয়ের আগেই দ্বীনি দুনিয়াবি জরুরি লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলে নিন। বিয়ের পরে চেঞ্জ হওয়ার আশা করবেন না। যদি এমন মানুষকে পছন্দ হয় যার পরিবর্তন প্রয়োজন, তবে সে কাজটি তাকেই করতে দিন। আপনি বরং এমন কাউকে খুজুন যাকে দেখে মুগ্ধ হবেন, তার মত হতে চাইবেন।ইন্টারনেটে কারো প্রোফাইল দেখে বিয়ে করা জুয়া খেলার মত, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। যথেস্ট খোজখবর নেয়া ও মাহরামের উপস্থিতিতে সাক্ষাতের অনুমোদন ইসলাম দিয়েছে, যাতে করে আগেই ভালোভাবে জেনে নিতে পারেন।স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক কথোপকথন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন যেন না হয়, বিয়ের কয়েক বছর পর তার সাথে কথা বলার কমন টপিকই খুঁজে পাচ্ছেন না, শুধু দায়সাড়া প্রয়োজনীয় কথাই হচ্ছে। তাই এমন কাউকে বিয়ে করেন, যার সাথে মন খুলে কথা বলা যাবে, প্রিয় বিষয়গুলো আলোচনা করা যাবে।
৫/ অভিন্ন লক্ষ্য নির্ধারণঃ জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন হওয়া উত্তম। নতুবা সমগ্র জীবন লড়াই করতে হবে। এমন কাউকে খুঁজুন – যে হবে আপনার আনন্দ বেদনার সাথী। তার সাথে এমন কিছু কাজ করতে পারবেন যাতে উভয়েরই আগ্রহ আছে। দীর্ঘকালীন অভিন্ন পরিকল্পনাকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার মধ্যেই নিহিত সুখী দাম্পত্য জীবনের রহস্য।
৬/ পরিবারঃ সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর পরিবারের প্রতি খেয়াল রাখুন। তাদের আকিদা, ধর্মীয় প্রথা, সংস্কৃতি, অভ্যাস, রীতিনীতি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সাথে থাকতে পারবেন কিনা, তা অনেকাংশে এগুলোর উপর নির্ভর করে। একেবারে মন মত না হোক, অমিল যাতে কম হয়, মানিয়ে যাতে কম নিতে হয়।ভিন্নতা যত কম, সুখী হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশী।
গ/ বিয়ে- স্বপ্ন থেকে সংসারে এ অধ্যায়ে সংসার জীবনের প্রয়োজনীয় অনেক সোনালী নীতি উঠে এসেছে। সেগুলোর কয়েকটি হলঃ
১/ সুন্দর দাম্পত্য জীবনের বৈশিষ্ট্য হলঃ সত্য বলা, যত্ন নেয়া আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। ভালোবাসা এগুলো থেকেই সৃষ্টি হয়। জীবনসঙ্গীকে সম্মান করতে হবে, গুণগুলোর মূল্যায়ন করতে হবে, তাকে পেয়ে গর্ববোধ করতে হবে। এগুলোই হৃদয়ে ভালোবাসার প্রদীপ জ্বেলে দেয় যা সময়ের সাথে আরো উজ্জ্বল হয়। সম্মান করার কারণগুলো বয়সের সাথে বাড়ে আর শারীরিক আকর্ষণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়।
২/ সুখী হওয়ার সূত্রঃ এমন কাউকে বিয়ে করুন যাকে শ্রদ্ধা করা যায়, অনুকরণ করতে ইচ্ছা হয়, যার কাছ থেকে ক্ষমা করা শেখা যায়। একে অপরের ক্রুটিগুলোও ক্ষমাশীল চোখে দেখতে হবে।
৩/ দাম্পত্য জীবন সফল করার জন্য কাজ করতে হবে। প্রয়োজন উদ্দ্যেগ, সময় ও শক্তি।
৪/ অনুরাগ প্রকাশে পাগলামি করুন। ফুল বা প্রিয় কিছু উপহার দিন। সম্ভব হলেই উপহার দিন। দামী হতে হবে এমন কথা নেই। যত্নের সাথে র্যাপিং পেপারে মুড়িয়ে, ফিতে দিয়ে মুড়িয়ে, সুগন্ধি লাগিয়ে ফুলসহ তার হাতে দিন। একাকী সময়ে উপহার দিন। এভাবে দেয়া সাধারণ উপহারও ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে, তোমরা উপহার দাও কারণ তা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা বাড়িয়ে দিবে।
৫/ যে দম্পতি একসাথে আনন্দ উপভোগ করতে পারে তারাই একসাথে দীর্ঘদিন থাকতে পারে। মুখের হাসিটা যেন সত্যিকার হাসি হয়।
৬/ অসুখী দাম্পত্যজীবনে সুখ ফিরিয়ে আনার উপায়ঃ আসলেই কী সুখ চান? তাহলে সত্যিকার চেস্টা করুন। জীবনসঙ্গী যা পছন্দ করেন তার তালিকা বানান। তার গুনগুলো লেখুন, সমস্যা গুলোও। তার ভাল কাজকে মূল্যায়ন করুন। সমস্যা হলে সে কথা অকপটে তার সাথে শেয়ার করুন ও সমস্যা নিরুপণের উপায় খুঁজুন।
৭/ দাম্পত্য জীবনে বাইরের মানুষকে জড়াবেন না। নিজেরাই সমাধান করুন। সমস্যা হলেই বাবা মার কাছে দৌড় দিবেন না। পরিবারের সবাইকে যার যার অবস্থানে রেখে সবার সাথে সম্পর্কের হক বজায় রেখে চলতে হবে।
৮/ মতপার্থক্য হলে মানিয়ে নেয়াটা জরুরি। সবকিছুতে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না, যদি না তা অনৈতিক বা অবৈধ কিছু হয়। খাপ খাইয়ে, পার্থক্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েও অনেক বিষয় মানিয়ে নিতে হবে। ছাড় দিলে সবসময় আপনি হেরে যান না, মাঝে মাঝে অন্তরও জয় করে নেন। বিষয়টি মনে রাখবেন।
৯/ নিজের দায়িত্ব পালনের পরও কিছু দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়া ভাল গুণ। যেমন বাসার কাজে তাকে সাহায্য করা। সব কিছু না হোক, অন্তত যে কাজে নিজের আনন্দ লাগে সেটিতে। পুরুষের মূল দায়িত্ব উপার্জন ও জীবিকা নির্বাহ করা। নারীর মূল দায়িত্ব সংসারকে সুখের নীড়ে পরিণত করা ও সন্তান লালনপালন।সন্তানকে জীবনের বাস্তবতা থেকে দূরে রাখবেন না। তাকে কঠিন দুনিয়াতে টিকে থাকার উপযোগী করে গড়ে তুলুন। অধিক স্নেহ অনুচিত। তাকে শেখান আমরা ভাল কাজ এজন্য করিনা যে লোকে তা দেখে বাহবা দিবে। তাকে সমস্যা সমাধানের সুযোগ দিন, সাহসী বানান।
১০/ সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য বাচ্চাকাচ্চার গুরুত্ব কতটুকু, জীবনসংগীর কাছে নিজের গুরুত্ব কীভাবে ধরে রাখা যায়, সংসার সুখী করতে টাকা পয়সার গুরুত্বই বা কতখানি? সাংসারিক জীবনের ক্ষতিকারক কাজুগুলিই বা কী কী? দাম্পত্য জীবনের সমস্যা নিয়ে কার সাথেই বা পরামর্শ করবেন? এসব গুরুত্বপূর্ণ জিনিসও আলোচনা হয়েছে শেষ অধ্যায়ে। যুক্ত হয়েছে বিয়ের খুতবা ও তার সুন্দর একটি অনুবাদ ও সুন্দর কিছু শেষ কথা।
★ পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ দাম্পত্য জীবনে অজ্ঞতার পরিণামস্বরুপ অনেক সংসার নস্ট হয়ে যায়। জীবনের জটিল এ অধ্যায়ে অধিকাংশ মানুষ প্রবেশ করে একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থায়। এধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা ছোট্র কিন্তু উপকারী এ বইটি অবশ্যই অবশ্যপাঠ্যা হবার দাবী রাখে। লেখক নিজের দেখা সুখী দাম্পত্য জীবনের মূলনীতিগুলো বর্ণনা করেছেন পাকা জহুরীর মত, ইসলামের চোখে। এ ব্যাপারে এই বইটি সময় নিয়ে পড়লে ও সোনালী নীতিগুলো কাজে লাগাতে পারলে সকলের জন্যই উপকারী বই সাব্যস্ত হবে সন্দেহ নেই।বইয়ের প্রচ্ছদ চমৎকার। অনুবাদ ভাল হয়েছে। কলেবরও খুব বড় নয়। বইটি নিজে পড়ার জন্য বা নবদম্পতিকে উপহার দেবার জন্য কিনতে পারেন।
ratul.nowkhoir – :