মিরআতুল মামালিক : দ্য অ্যাডমিরাল
লেখক : সাইয়িদি আলি রইস
প্রকাশনী : নবপ্রকাশ
বিষয় : ইসলামী সাহিত্য
১৫৫২ খৃস্টাব্দে উসমানি খেলাফতের এক তুর্কি অ্যাডমিরাল (নৌসেনাপতি) পর্তুগিজ জলদস্যুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে জাহাজ নিয়ে চলে আসেন ভারত মহাসাগরে। সেখানে প্রলয়ঙ্কাররী ঝড়ের কবলে পড়ে হারিয়ে ফেলেন তার নৌবহর, ভেঙে পড়ে তার যুদ্ধজাহাজ। বিপদসঙ্কুল অবস্থায় গিয়ে উঠেন হিন্দুস্তানের উপকূলে। সেখান থেকে দিল্লি, দিল্লি থেকে মুলতান, কাবুল, বুখারা, সমরকন্দ, ইরানসহ আরও নানা শহর ঘুরে হাজারো ঝঞ্ঝা পেরিয়ে একসময় উপস্থিত হন তুর্কিতে…। টান টান উত্তেজনা আর রহস্যময় সেই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সফরনামাই বিবৃত হয়েছে মিরআাতুল মামালিক : দ্য অ্যাডমিরাল বইয়ে।
এ শুধু এক ভ্রমণকাহিনি নয়, যেনো ঐতিহাসিক সময়ের এক পরিপূর্ণ উপাখ্যান। একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে উপায় নেই…
১৫৫২ খৃস্টাব্দে উসমানি খেলাফতের এক তুর্কি অ্যাডমিরাল (নৌসেনাপতি) পর্তুগিজ জলদস্যুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে জাহাজ নিয়ে চলে আসেন ভারত মহাসাগরে। সেখানে প্রলয়ঙ্কাররী ঝড়ের কবলে পড়ে হারিয়ে ফেলেন তার নৌবহর, ভেঙে... আরো পড়ুন
-
-
hotজীবন যেখানে যেমন
লেখক : আরিফ আজাদপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন275 ৳192 ৳আরিফ আজাদের নতুন বই 'জীবন যেখানে ...
-
hotকুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ
লেখক : আরিফ আজাদপ্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন330 ৳231 ৳প্রি-অর্ডার করলেই গিফট! ১. আরিফ আজাদের কথা, ...
-
hotগল্পগুলো অন্যরকম
লেখক : সিহিন্তা শরীফা, আনিকা তুবা, আফিফা আবেদিন সাওদা, আরমান ইবন সোলাইমান, আরিফ আজাদ, আরিফ আবদাল চৌধুরী, আরিফুল ইসলাম, আলী আবদুল্লাহ, জাকারিয়া মাসুদ, নুসরাত জাহান, মাহমুদুর রহমান, যাইনাব আল-গাযি, শারিন সফি, শিহাব আহমেদ তুহিন, শেখ আসিফ, সাদিয়া হোসাইন, সানজিদা সিদ্দীক কথাপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন350 ৳245 ৳জীবনের কাছে মাঝে মাঝে গল্পও তুচ্ছ ...
-
save offফেরা ২
লেখক : বিনতু আদিলপ্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন190 ৳133 ৳জাগতিক নিয়মে, সব পাখি নীড়ে ফেরে। ...
-
hotপ্রদীপ্ত কুটির
লেখক : আরিফুল ইসলামপ্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন192 ৳125 ৳মাহির আর লাফিজা। ভার্সিটিতে পড়াবস্থায় দুজনের ...
-
save offদুজন দুজনার
লেখক : মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহপ্রকাশনী : মাকতাবাতুল আযহার240 ৳120 ৳এক ছাদের নিচে একত্রে অনেক বছর ...
-
hotআই লাভ কুরআন
লেখক : মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহপ্রকাশনী : মাকতাবাতুল আযহার600 ৳420 ৳প্রতিটি মুমিনই কুরআন কারীমকে ভালোবাসে। সবাই ...
-
hotচার বন্ধুর সমুদ্র অভিযান
লেখক : আলী আবদুল্লাহপ্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন200 ৳164 ৳ইশকুলের এক বাচ্চাকে পর্ণ দেখা অবস্থায় ...
-
save offজীবন জাগার গল্প ১৩ঃ ওগো শুনছো
লেখক : মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহপ্রকাশনী : মাকতাবাতুল আযহার260 ৳130 ৳বইটি পড়লে অবিবাহিতদের মনে হবে এখনি ...
-
moh.salehin.09 – :
(“আমি সেই ব্যাক্তি যে, এই ভ্রমণবৃত্তান্ত পেশ করেছি। তাকে স্বরণে রাখবেন প্রার্থণার পর আপনার প্রতিটি হৃৎস্পন্দনে নয়, তাকে স্বরণে রাখবেন আপনার শান্ত-দুর্লঙ্ঘ্য হৃদয়ে যখন স্বরণ হবে। সত্যিকারের মানবিক দূঢ়তা লুক্কায়িত থাকে ওখানেই, যা কখনোই মলিন হয়ে যায়না”)।
মানসূর আহমাদ – :
.
সংক্ষিপ্ত কথা:
__________________
আমরা অনেকেই বিখ্যাত উসমানি নৌসেনাপতি খাইরুদ্দিন বারবারোসার নাম শুনেছি, তাঁর জীবনভিত্তিক বই পড়েছি। কিন্তু আরেক উসমানি নৌসেনাপতি সাইয়িদি আলি রইসের নাম শুনিনি বা তাঁর সম্পর্কে তেমন কিছু পড়িওনি। অনেকে তাঁর নাম শুনে থাকলেও বিকৃতভাবে শুনেছেন, সিদি আলি রেইজ নামে।
তিনি ছিলেন উসমানি সালতানাতের সবচে প্রভাবশালী সুলতান সুলাইমানের সময়কার একজন অ্যাডমিরাল। বেশ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ছিলেন তিনি। এজন্যই উসমানি খেলাফতের অধীন মিসরি নৌবাহিনীর পরপর দুজন অ্যাডমিরাল যখন পর্তুগিজ দস্যুদের সঙ্গে না পেরে পর্যুদস্ত হয়ে যান, তখন এই বাহিনীর নতুন অ্যাডমিরাল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাইয়িদি আলি রইসকে।
তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করতে যান, কিন্তু তিনিও পর্তুগিজদের সঙ্গে পেরে ওঠেননি; ব্যর্থ হন। ভাগ্যবিড়ম্বিত হয়ে বিভিন্ন রাজ্য ও শহর পেরিয়ে তিনি আশ্রয় নেন ভারতে! তখনকার সময়ে এখানেও ছিল নানান সাম্রাজ্য আর রাজত্বের মারামরি। ততদিনে তিনি দেশে ফিরে যাওয়ার চিন্তায় মশগুল। এখানকার বিভিন্ন সমস্যা ও সংকট মোকাবেলা করে তিনি ফিরতি পথে যাত্রা করেন। কিন্তু তাঁর যাত্রাপথ মশ্রিণ ছিল না। তবুও অটুঁট সংকল্প তাঁকে বিভিন্ন দেশ-শহর-নগর অতিক্রম করে এগিয়ে নিয়ে চলে। এভাবেই পারস্য-ইরান, ইরাক পেরিয়ে একসময় গিয়ে পৌঁছান তাঁর প্রিয় মাতৃভূমিতে, তাঁর হৃদয় জুড়িয়ে দেওয়া তুরস্কে, ইস্তাম্বুলে! এর মাঝে কেটে যায় দীর্ঘ চারটি বছর!
ভারত মহাসাগরের অ্যাডমিরাল হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দেশে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত নানা চড়াই-উৎড়াইয়ের এই কাহিনিই তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর ‘মিরআতুল মামালিক’ গ্রন্থে। গ্রন্থটি সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে। মূল বইটি ছিল তুর্কি ভাষায়, পরে পৃথিবীর প্রায় পনেরোটি ভাষায় তা অনূদিত হয়।
.
লেখক পরিচিতি:
__________________
সাইয়িদি আলি রইসের জন্ম ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে, তুরস্কের গালাতা অঞ্চলে। তিনি ছিলেন ষোড়শ শতকে উসমানি খেলাফতের নামজাদা অ্যাডমিরাল। ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে বিখ্যাত প্রিভিজার নৌযুদ্ধে তুর্কি রাজকীয় নৌবাহিনীর বাম বাহুর নেতৃত্ব দিয়ে প্রভূত সুনাম অর্জন করেন। পরবর্তীতে ভারত মহাসাগরে তুর্কি নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল পদে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি ছিলেন গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিদ, কবি ও ভূগোলবিদ। মিরআতুল মামালিক গ্রন্থের সুবাদে তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।
ভারত মহাসাগরে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানসহ মধ্যএশিয়ার বৃহদাঞ্চল ভ্রমণ করেন। সেই সফরনামাই বিবৃত হয়েছে এই গ্রন্থে। তুর্কি ভাষায় রচিত তাঁর এই গ্রন্থটি পরবর্তীতে ইংরেজি, ফরাসি, ইতালিয়ান, জার্মান, গ্রিক, আরবি, ফারসি, উরদু ও রাশিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়েছে। মিরআতুল মামালিক ছাড়াও তিনি ‘মিরআতুল কায়েনাত’ ও ‘কিতাবুল মুহিত : আলমুহিত ফি ইলমিল আফলাকি ওয়াল বুহুর’ নামে সামুদ্রিক নৌবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের ওপর আরও দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৫৬৩ সালের জানুয়ারিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সাইয়িদি আলি রইস মারা যান। রাহিমাহুল্লাহ তাআলা।
প্রায় পনেরোটি ভাষায় অনূদিত হওয়া এ বইটির বাংলা কোনো অনুবাদ ছিল না। আমাদের অনেকেরই প্রিয় লেখক ও অনুবাদক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর সাহেব বাংলাভাষাভাষী পাঠকদের জন্য এই অভাবটা পূরণ করেছেন। মূল তুর্কি ভাষা জানা না থাকায় তিনি বইটা ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন। তাঁর লেখার হাত বেশ ভালো। অনেকেরই প্রিয় লেখক তিনি। তাঁর প্রকাশিত বেশ কয়েকটি বই ইতোমধ্যে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। এ বইটাও তিনি যথাসম্ভব নির্ভুল অনুবাদে সচেষ্ট হয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে কবুল করুন।
.
বিস্তারিত রিভিউ:
__________________
সে সময় তুরস্কের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন সুলতান সুলাইমান কানুনি। তাঁর রাজ্য ছিল তিন তিনটা মহাদেশে বিস্তৃত। সেসব শাসনাঞ্চলের মধ্যে মিশরও ছিল। মিশরীয় নৌবাহিনীর দায়িত্ব ছিল ভারত মহাসাগরে পর্তুগিজ দস্যুদের তাণ্ডব দমিয়ে রাখা। এসময় নৌসেনাপতি ছিলেন পীরি বেগ। তিনি ত্রিশটি রণতরী নিয়ে অভিযানে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় পর্যুদস্ত হয়ে বাহিনী ছেড়ে মিশরে ফিরে যান।
রাজধানী কন্সটান্টিনোপলে সংবাদটা পৌঁছার পর সেই বাহিনীর দায়িত্ব অর্পিত হয় আরেক নৌসেনাপতি মুরাদ বেগের ওপর। তিনি সরাসরি পর্তুগিজদের দ্বারা আক্রান্ত হন এবং তার সকল সৈন্য হয় শহিদ হয়, নয়তো পর্তুগিজদের হাতে বন্দি হয়।
পরপর দুজন নৌসেনাপতির ব্যর্থতার পর ভারত মহাসাগরের উসমানীয় নৌবাহিনীর দায়িত্ব পড়ে সাইয়িদি আলি রইসের ওপর।
আলেপ্পো থেকে ঘোড়ায় চড়ে শুরু হয় তাঁর এ অভিযান। বিভিন্ন শহর-নগর, নদী-সাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যান বাগদাদে। সেখান থেকে জাহাজে করে যাত্রা শুরু হয়, পৌঁছে যান বসরায়। বসরা থেকে নৌবহর সহকারে শুরু হয় তাঁর আসল অভিযান।
বসরা বন্দর থেকে পারস্য উপসাগর হয়ে হরমুজ প্রণালির দিকে যাত্রা শুরু হয়। চল্লিশটা দিন পেরিয়ে গেলেও পর্তুগিজদের দেখা মিলে না; রমজানের দশ তারিখে হঠাৎই দেখে যায় পর্তুগিজদের পঁচিশটা রণতরী ধেয়ে আসছে তাঁদের দিকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত লড়াই করে পর্তুগিজরা পালিয়ে গেল।
আবারও যাত্রা শুরু, রমজানের ছাব্বিশ তারিখে আবারও পর্তুগিজদের হামলা করল। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের পর অনেক ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিয়ে ইসলামি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু বাঘের থাবা থেকে বাঁচতে গিয়ে কুমিরের মুখে পড়ল তারা— সামুদ্রিক ঝড় তাদেরকে বিধ্বস্ত করে দিল।
সামুদ্রিক ঝড়ো বাতাস ও ঘূর্ণিঝড় যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা নাবিক মাত্রই জানেন। একটানা কয়েক দিন ঝড়ের মুখে কোনো রকম টিকে থেকে স্রোতের টানে পৌঁছে যান ভারতের গুজরাট অঞ্চলে! তখন তিনি দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন।
সে সময় ভারতে ছিল অনেক রাজা-বাদশাহর শাসন। একেক রাজার অনুমতিপত্র নিয়ে কিছুদূর এগিয়ে গেলেও ধরা পড়েন আরেক রাজার হাতে। এভাবে রাজা-বাদশাহর হাত বদল হতে হতে একসময় পৌঁছে যান সম্রাট হুমায়ুনের দরবারে! মাঝে সইতে হয় নানান বিড়ম্বনা ও মানসিক যাতনা। দুই রাজা-বাদশাহর রেষারেষির মাঝে পড়ে তিনিও পিষ্ট হন।
সাইয়িদি আলি রইস কেবল নৌসেনাপতিই ছিলেন না; ছিলেন একজন সফল কবিও। সম্রাট হুমায়ুনের নামে দুয়েকটা কবিতা রচনার পর দরবারে তাঁর কদর বেড়ে যায়। হুমায়ুনের সাথে অনেক বিষয়ে তাঁর কথাবার্তা হয়। সম্রাটের দরবারে তিনি বেশ কিছুদিন থাকেন। এ সময়টাতেই সম্রাট হুমায়ুন একদিন মারা যান। আবারও নানান সমস্যায় পড়তে হয় তাঁকে; আবারও বিভিন্ন অনুমতিপত্র নিয়ে সফর অব্যাহত রাখেন।
একসময় আফগানিস্তান হয়ে পারস্য সাম্রাজ্য পৌঁছেন তিনি। সেখানে শিয়াদের ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হয়ে গ্রেফতার হন।
বইয়ের শুরু থেকেই বিভিন্ন নবি-রাসুল, পীর-বুজুর্গের মাজার জিয়ারতের ব্যাপার তুলে ধরেছেন তিনি। মাজার ও পীরদের প্রতি তাঁর আলাদা টান। আর এই টানই তাঁকে শিয়াদের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়! তবে তারা তাঁর মূল্যবান কিছু জিনিসপত্র রেখে দেয়। তন্মধ্যে দুষ্প্রাপ্য কয়েকটি গ্রন্থও ছিল। একসময় ইরানের শাহ’র সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। শাহ তাঁর সম্মানে ভোজের আয়োজন করেন।
ওখান থেকে আস্তে আস্তে পৌঁছে যান ইরাক এবং সেখান থেকে আবারো বাগদাদ হয়ে পাড়ি দেন তিকরিত, মসুল-সহ আরও অনেক শহর। একসময় স্বদেশ ভূমে পৌঁছে তাঁর দীর্ঘ সফরের ইতি ঘটে।
ততদিনে তুরস্কে তাঁর মৃত্যুর খবর চাউর হয়ে গেছে। স্বভাবতই তাঁর সরকারি চাকরিটাও বাকি নেই। তবে সুলতান তাঁকে দেখে খুবই খুশি হলেন এবং তাঁকে সেনাবাহিনীর এক উচ্চ পদে নিয়োগ করেন। তাঁর সঙ্গে যে দুয়েকজন তখনও ছিলেন, সবাইকেই বাহিনীতে নেওয়া হয়, ভাতাও বাড়িয়ে দেওয়া হয় আগের চেয়ে অনেক বেশি। এসব কাহিনি বর্ণনার মাধ্যমেই শেষ হয় ‘মিরআতুল মামালিক’ গ্রন্থটি।
.
সাইয়িদি আলি রইস একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিও ছিলেন, আধ্যাত্মিক বিষয়াবলীর প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস ও টান। এজন্যই সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন মাজার জিয়ারতের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। বিভিন্ন বুজুর্গের সাহচর্য পাওয়ার কথাও বলেছেন বেশ আগ্রহের সঙ্গে। কয়েক জায়গায় স্বপ্নের কথা এবং স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ার বিষয় উল্লেখ করতেও ভুলেননি।
তিনি একজন কবিও ছিলেন। বিভিন্ন রাজা বাদশাহর নামে কবিতা রচনার মাধ্যমে তাদের প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন এই অ্যাডমিরাল। এমনকি তাঁর কিছু কবিতা ভারতবর্ষে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সম্রাট হুমায়ুন তাঁকে তুরস্কের সেরা একজন কবি বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কাব্যপ্রেমী শাসকরা কবিতা নিয়ে তাঁর সঙ্গে করেছেন অনেক আলোচনা-পর্যালোচনা। তাই দ্য অ্যাডমিরাল বইটি একজন নৌসেনাপতির কাহিনি হলেও এতে উঠে এসেছে ভিন্ন স্বাদের অনেক আয়োজন।
.
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
__________________
সমুদ্র আমাকে বরাবরই টানে; অন্যদিকে উসমানি সালতানাতও আমার আগ্রহের বিষয়। আবার নৌবাহিনীর যুদ্ধ কেমন হয়, সেটাও জানার খুব ইচ্ছে ছিল। সব বিষয় মিলে সাইয়িদি আলি রইসের সফরনামা ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।
টানটান উত্তেজনার এক অ্যাডভেঞ্চার হল দ্য অ্যাডমিরাল। শুরু থেকে শেষপর্যন্ত এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো একটা বই। বইটা পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। জানা গেছে অনেক কিছু। পরিচয় হয়েছে অনেক বিষয়ের সাথে।
.
সমালোচনা:
__________________
বইয়ের সবকিছুই আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাগার মতো। তবে বইটা মূল ভাষা থেকে অনুবাদ না হয়ে তৃতীয় আরেকটা ভাষা থেকে অনুবাদ হওয়ায় কিছু ভুল রয়ে গেছে বলে মনে করি। দুয়েকটা জায়গার নামে ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রায় টীকাভাষ্যেই ‘হয়তো’ ‘সম্ভবত’ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে আমার বিশ্বাস আরেকটু খোঁজাখুঁজি করলে, আরেকটু শ্রম দিলা ‘হয়তো’ ‘সম্ভবত’ শব্দগুলো বাদ দিয়ে নিশ্চিতভাবেই কিছু বলা সম্ভব হত। পাঠকরা পেত বিশুদ্ধ জ্ঞান।
কেবল একজন নৌসেনাপতির কাহিনি পড়তে গিয়ে প্রায় জায়গায় মাজার জিয়ারতের প্রসঙ্গ চলে আসায় কোনো কোনো পাঠক বিরক্ত হতে পারেন। এই বিষয়টা একজন অ্যাডমিরালের টানটান উত্তেজনাপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চারকে কিছুটা হলেও বিঘ্নিত করেছে বলে মনে করি।
বইটার বাঁধাই আরেকটু ভালো করা যেত। নতুন বই মাত্র দু-চারদিন পড়লেই যদি বাঁধাই খুলে যায়, তবে সেটা অবশ্যই দুঃখজনক। (আশা করি প্রকাশক মহোদয় পরবর্তী সংস্করণে বিষয়গুলো আমলে নেবেন।)
যাইহোক, তবুও বইটা অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রত্যেককেই বইটা পড়ার আমন্ত্রণ।
বইয়ের শেষের দিকে লেখক আমাদের কাছে একটা আরজি পেশ করেছেন— আমরা যেন তাঁকে ভুলে না যাই; যেন তাঁর জন্য দোয়া করি। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাঁর এই বান্দাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন, আমিন।